বাংলার আদি গির্জা ও খ্রিস্ট সমাজ

প্রকাশ: অক্টোবর ১৫, ২০১৯

তাহমিদাল জামি

বাংলার চার প্রধান ধর্মের মধ্যে খ্রিস্টধর্মের আগমনই সবার শেষে। মোটামুটি ইসলামের আবির্ভাবের প্রায় ৫০০ বছর পর বাংলায় খ্রিস্ট ধর্মের আবির্ভাব ঘটে। বাংলায় আগত প্রথম খ্রিস্টান ছিলেন সম্ভবত নেস্টরীয় খ্রিস্টানরা, তবে তারা ছিলেন পেশায় সওদাগর। দেশে ধর্ম প্রচারের অভিসন্ধি তাদের ছিল না বললেই চলে। তেমনি বাংলায় আসা আর্মেনীয় বণিকেরাও বেশি ধর্ম বিস্তারে মন দেয়নি।

এর পরিবর্তন ঘটে যখন ধর্মীয় জোশে অনুপ্রাণিত পর্তুগিজরা বাংলায় প্রবেশ করে। সুলতানি আমলেই তথা হোসেন শাহি আমলে পর্তুগিজ প্রতিনিধিরা বাংলায়, বিশেষত চাটগাঁয় বেশ কায়েম হয়ে বসলেও বারভূঁইয়া আমল থেকে শুরু করে বাংলায় মোগল সাম্রাজ্যের প্রসারের সাথে সাথেই দেশে খ্রিস্টীয় ধর্মীয় মিশন প্রতিষ্ঠানের বিকাশ ঘটে। বাংলায় ১৫৭৬ সালে প্রথম জেসুইট পাদ্রিরা আসেন। ১৫৭৯-৮০ সালে বাদশাহ আকবর পর্তুগিজদের সাতগাঁওতে বসবাস, ধর্ম প্রচার গির্জা নির্মাণের জন্য অনুমতি দিয়ে ফরমান জারি করেন। তবে ততদিনে সাতগাঁও শহরটির আর আগের রমরমা নেই, তার স্থান নেয় হুগলি। হুগলিতে পর্তুগিজরা এসে জপমালা রানীর গির্জা (আওয়ার লেডি অব রোজারি) তৈরি করে। বড়সড় গির্জাটা সাধারণ পাদ্রিরা প্রতিষ্ঠা করেন। বাংলায় খ্রিস্ট ধর্মীয় স্থাপত্যের সূচনা ঘটে হুগলির গির্জার মধ্য দিয়ে। ১৫৯৯ সালে অগাস্টিনিয়ান সংঘের পাদ্রিরা সেই গির্জার সাথে সন্ত নিকলাও তলেন্তিনোর নামে একটি কনভেন্ট প্রতিষ্ঠা করেন। গির্জার পাশাপাশি তারা একটা সেবাশ্রম বা লঙ্গরখানা টাইপের ছত্র খোলেন। হুগলির এই গির্জার সাথে একটি হাসপাতালও ছিল। এতে একটি কলেজও স্থাপিত হয়। হুগলির ব্যান্ডেলের গির্জাটি বাংলার সব গির্জার মাতৃগির্জাসম।

তবে বাংলায় খ্রিস্টানির আরো বিকাশ হয় ১৫৯৮ সালে প্রেরিত বাংলার প্রথম পূর্ণাঙ্গ জেসুইট মিশনে। সে বছরের মে মাসে দুজন এবং পরে আরো দুজনএই চারজন জেসুইট পাদ্রি বাংলায় বসবাসরত পর্তুগিজ দেশী খ্রিস্টানদের ধর্মীয় আচার পালনে এবং সেই সাথে খ্রিস্ট ধর্ম প্রচারে মুলুকে প্রবেশ করেন। তাদের নাম ফ্রান্সিস ফারনান্দেজ, ডমিনিক সুজা, মেলচিওর ফনসেকা আন্দ্রে বোভেজ। উল্লিখিত চার পাদ্রি পূর্ব বাংলায় গির্জা প্রতিষ্ঠায় অগ্রণী ভূমিকা রাখেন। তারা একে একে যশোর, বরিশালের বাকালা, শ্রীপুর চাটগাঁয় গির্জা নির্মাণের উদ্যোগ গ্রহণ করেন। প্রথমে যশোরের রাজা প্রতাপাদিত্য তাদের নিজ খরচে গির্জা বানিয়ে দেন। এরপর শ্রীপুরের কেদার রায়, প্রতাপাদিত্যের জামাই তথা বাকলার রাজা রামচন্দ্র আরাকানের রাজা মান রাজা-ক্রিও তাদের নিজ নিজ রাজত্বে গির্জা বানাতে দেন।

সে সময় বাংলায় বারভূঁইয়া শাসনের শেষ পর্যায়। স্থানীয় রাজারা সামরিক বাণিজ্যিক স্বার্থে বাংলায় আসা পর্তুগিজদের খাতির করতেন। গোয়াকেন্দ্রিক যে সর্বভারতীয় পর্তুগিজ প্রশাসন, বাংলায় বসবাসরত পর্তুগিজরা ছিল অনেকটাই তার আওতার বাইরে। তারা স্বাধীনভাবে সৈনিক, জলদস্যু, বণিক প্রভৃতি জীবিকা অবলম্বন করত। পশ্চিম বাংলায় তাও কেন্দ্রীয় পর্তুগিজ নিয়ন্ত্রণ ছিল, কিন্তু পূর্ব বাংলা বা ভাটি অঞ্চলে পর্তুগিজরা একান্তই খুদখুশিতে জীবন

সম্পাদক ও প্রকাশক: দেওয়ান হানিফ মাহমুদ

বিডিবিএল ভবন (লেভেল ১৭), ১২ কাজী নজরুল ইসলাম এভিনিউ, কারওয়ান বাজার, ঢাকা-১২১৫

বার্তা ও সম্পাদকীয় বিভাগ: পিএবিএক্স: ৫৫০১৪৩০১-০৬, ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন ও সার্কুলেশন বিভাগ: ফোন: ৫৫০১৪৩০৮-১৪, ফ্যাক্স: ৫৫০১৪৩১৫