মোবাইল ব্যাংকিংয়ে আফ্রিকায় সবচেয়ে পিছিয়ে নাইজেরিয়া

প্রকাশ: অক্টোবর ১৪, ২০১৯

বণিক বার্তা ডেস্ক

প্রতি মাসে নাইজেরিয়ার সবচেয়ে বড় শহর লাগোস চার্চের সেক্রেটারি আইফেইনওয়া আবেল আয়ের এক-চতুর্থাংশই ব্যয় করেন তার মায়ের ডায়াবেটিসের ওষুধ কিনতে। তার মা তার থেকে ৪৩০ মাইল দূরে আবিয়া ওহাফিয়ার একটি ছোট্ট কৃষিভিত্তিক গ্রামে বাস করেন।

প্রতি মাসে মায়ের কাছে অর্থ পাঠানোর বিষয়টি যেন এক মহাযজ্ঞ। প্রথমে ৩৫ বছর বয়সী আবেলকে লাগোসের একটি বাণিজ্যিক ব্যাংকে যেতে হয় এবং আবিয়া রাজ্যে ইবেম ওহাফিয়া নামে এক বন্ধুর অ্যাকাউন্টে ৬ হাজার নাইজেরিয়ান নায়রা পাঠাতে হয়। সেখান থেকে মায়ের কাছে ২ হাজার থেকে ৪ হাজার নায়রা পাঠানো হয়। ৬৫ বছর বয়সী মা ইউচি আরুয়া মেয়ের পাঠানো অর্থ সংগ্রহে ওহাফিয়ার গ্রামে যান। আট মাইল দীর্ঘ এ পথ পাড়ি দিতে তাকে মোটরসাইকেলে চড়তে হয়।

নাইজেরিয়ার প্রত্যন্ত অঞ্চলের মানুষের আর্থিক জ্ঞান এবং সেসব অঞ্চলে অর্থব্যবস্থার উপস্থিতি সবল নয়। সাধারণ অর্থ লেনদেনের ক্ষেত্রে নাইজেরিয়ার মানুষকে কত কষ্ট পোহাতে হয়, অথচ মোবাইল ব্যাংকিংয়ের সহায়তায় সারা বিশ্বে আর্থিক লেনদেন প্রায় হাতের মুঠোয় চলে এসেছে।

আবার এ রকম একটি ব্যবস্থায় আর্থিক লেনদেন কীভাবে আরো কঠিন হতে পারে, তা দেখার মতো। কখনো কখনো আবেলের পক্ষে মোটরসাইকেল ভাড়া বহনের সামর্থ্য থাকে না। আবার অন্য সময় বৃষ্টির কারণে রাস্তাঘাট চলাচলের উপযোগী থাকে না।

আবেল বলেন, মাঝে মধ্যে আমি অর্থ পাঠাতে পারি না এবং মা ওষুধ ছাড়া থাকেন। এটি আমাকে খুব পীড়া দেয়। তার হাতে অর্থ পৌঁছানো দরকার, যাতে ওষুধগুলো কিনে টিকে থাকতে পারেন।

সাব-সাহারান আফ্রিকায় আবেলের গল্পটা বেশ বেখাপ্পা ঠেকবে। ওই অঞ্চলটিতে বিশ্বের মোট ৮৬ কোটি ৬০ লাখ মোবাইল ব্যাংকিং ও পেমেন্ট অ্যাকাউন্টের প্রায় অর্ধেকই রয়েছে। যেখানে মোট আর্থিক লেনদেনের দুই-তৃতীয়াংশই ফোনে ফোনে সম্পন্ন হয়, সেখানে বেশ পিছিয়ে আছে নাইজেরিয়া। আফ্রিকার সবচেয়ে জনসংখ্যাবহুল এ দেশটিতে মোবাইল ব্যবহারকারীর সংখ্যা ১৭ কোটি ২০ লাখ। কিন্তু গত জুলাইয়ের আগ পর্যন্ত কোনো মোবাইল কোম্পানিকে মোবাইল ব্যাংকিং চালুর অনুমতি দেয়নি দেশটির সরকার। দক্ষিণ আফ্রিকার মোবাইল কোম্পানি এমটিএন গ্রুপ এ সুযোগ পেয়েছে। এ রকম পশ্চাত্পদ আর্থিক নীতি অনুসরণ করার কারণে ২০ কোটি ৯০ লাখ জনসংখ্যার এ দেশটি আর্থিক সমন্বয়ের দিক থেকে বেশ পিছিয়ে রয়েছে।

বৈশ্বিকভাবে ৭৫০টি মোবাইল ফোন অপারেটরের প্রতিনিধিত্বকারী সংগঠন জিএসএমএ বলছে, মহাদেশটির বৃহত্তম অর্থনীতি দক্ষিণ আফ্রিকার সঙ্গে লড়ছে নাইজেরিয়া, কিন্তু ফিনটেক বিশ্বে আফ্রিকার সবচেয়ে জনবহুল দেশটি যেনএকটি ঘুমন্ত দৈত্য

এদিকে এমটিএন যদিও নতুন লাইসেন্স পেয়েছে, তবে তা কোনো ব্যাংকের মতো কাজ করতে পারছে না; এটি ঋণ দিতে পারে না, আবার সুদও প্রদান করতে পারে না। বিপরীতে কেনিয়ায় ব্যাংকের মতো কাজ করছে সাফারিকম।

নিম্ন সাক্ষরতার হার এবং সরকারের আন্তরিকতার অভাবে মোবাইল ব্যাংকিংয়ে পিছিয়ে রয়েছে নাইজেরিয়া। নতুন একটি আইনের ফলে এমটিএনকে অনুসরণ করে তার প্রতিপক্ষ; ভারতী এয়ারটেল, গ্লোবাকম ও নাইনমোবাইল হয়তো মোবাইল ব্যাংকিং সেবা চালু করবে, কিন্তু ঋণ প্রদান বা সুদ প্রদানের সুযোগ বঞ্চিত হওয়ায় মোবাইল অপারেটররা হয়তো তাদের গ্রাহকদের উৎসাহিত করতে পারবে না। সূত্র: ব্লুমবার্গ


সম্পাদক ও প্রকাশক: দেওয়ান হানিফ মাহমুদ

বিডিবিএল ভবন (লেভেল ১৭), ১২ কাজী নজরুল ইসলাম এভিনিউ, কারওয়ান বাজার, ঢাকা-১২১৫

বার্তা ও সম্পাদকীয় বিভাগ: পিএবিএক্স: ৫৫০১৪৩০১-০৬, ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন ও সার্কুলেশন বিভাগ: ফোন: ৫৫০১৪৩০৮-১৪, ফ্যাক্স: ৫৫০১৪৩১৫