অন্নপূর্ণা দেবীর জীবনী নিয়ে ছবি

গুরু মা

প্রকাশ: অক্টোবর ১৩, ২০১৯

অন্নপূর্ণা দর্শক এবং হাততালি নিয়ে আগ্রহী ছিলেন না। একটা কথা আছে যে বনে যখন ময়ূর নাচে, তখন তো কেউ দেখে না...

আজ অন্নপূর্ণা দেবীর প্রথম মৃত্যুবার্ষিকী। তার সমাধিফলক থাকলে সেখানে হয়তো এমনটা লেখা যেত

একটি অনুরোধ 

অনুগ্রহ করে তিনবার বেল বাজাবেন 

কেউ দরজা না খুললে আপনার কার্ড কিংবা

বার্তাটি রেখে যান সহযোগিতার জন্য ধন্যবাদ

শ্রীমতি অন্নপূর্ণা দেবী

 

ভারতীয় শাস্ত্রীয় সংগীতের অন্যতম রহস্যঘেরা চরিত্র অন্নপূর্ণা দেবীর মুম্বাইয়ের বাসস্থানের দরজার বাইরে উপরের নোটিসটি ঝোলানো ছিল। জীবনের শেষ কয়েকটি দশক অন্নপূর্ণা লোকচক্ষুর আড়ালেই ছিলেন, তার সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে পেরেছেন এমন মানুষের সংখ্যা একেবারেই নগণ্য। কোনো পারফরম্যান্স কিংবা সাক্ষাত্কারের অনুরোধে একেবারেই সাড়া দেননি। রহস্য ভেদ করা কঠিন, কারণ সেতার সুরবাহারে তার দক্ষতা প্রশ্নাতীত।

এমন অন্নপূর্ণা দেবীকে নিয়ে নির্মল চন্দরের প্রামাণ্যচিত্র গুরু মা আজ মুম্বাইয়ে প্রদর্শিত হবে। আজ অন্নপূর্ণা দেবীর প্রথম মৃত্যুবার্ষিকী। নির্মলের প্রামাণ্যচিত্রটিকে বিভিন্ন ক্ষেত্রে একটি বড় অর্জন হিসেবে দেখা হচ্ছে। ৬৯ মিনিটের প্রামাণ্যচিত্র নির্মাণ করেছে সংগীত নাটক একাডেমি। গুরু মা-তে দর্শক অন্নপূর্ণা দেবীর জীবন কিংবদন্তি সম্পর্কে বিশদ জানতে পারবে। খুব সামান্য আর্কাইভাল তথ্য, পরিচিত শিষ্যদের সঙ্গে আলাপ, সাক্ষাত্কারকে ব্যবহার করে নির্মল এমন নারীর জীবনচিত্রকে তুলে ধরেছেন; যিনি ছবি তুলতে কিংবা ভিডিও ক্যামেরার সামনে আসতে পছন্দ করতেন না। তবে নির্মল চন্দর গুরু মা-তে অন্নপূর্ণা দেবীর নিজস্ব জীবনধারার প্রতি শ্রদ্ধা দেখিয়ে তার আড়ালে থাকার কারণ সম্পর্কে কোনো সিদ্ধান্ত টানেননি। আমরা হয়তো ১০ জন মানুষের সামনেই নিজের কোনো দক্ষতা প্রদর্শনের সুযোগ ছাড়তে চাইব না, কিন্তু অন্নপূর্ণা দেবী সবকিছু পেছনে ফেলে গেছেন’—সানতুর বাদক শিব কুমার শর্মা নির্মলকে এমনটাই বলেছেন। গুরু মা প্রামাণ্যচিত্রটি সম্পাদনা করেছেন নির্মল চন্দর রীনা মোহন এবং চিত্রগ্রহণ করেছেন রঞ্জন পালিত।

২০১৮ সালে আজকের দিনে ৯১ বছরে বয়সে মারা যান অন্নপূর্ণা দেবী। তার শেষকৃত্যে দায়িত্ব পালন করেন তার এক শিষ্য বাঁশিবাদক নিত্যানন্দ হলদিপুর। অন্নপূর্ণা দেবী সম্পর্কে অনেক তথ্য পাওয়া যায় তার কাছে। গুরু মা ছবিটি শুরু হয় অন্নপূর্ণা দেবীর শেষকৃত্যের ফুটেজ দিয়ে।

ওস্তাদ আলাউদ্দিন খাঁর কন্যা অন্নপূর্ণার বিয়ে হয়েছিল আরেক বিখ্যাত সেতার গুরু রবি শঙ্করের সঙ্গে। ১৯৪১ থেকে ১৯৮২ সময়কালে তারা বিয়ের বন্ধনে আবদ্ধ ছিলেন। তারা একসঙ্গে মঞ্চে উঠেছেন মাত্র কয়েকবার। তারপর অন্নপূর্ণা নিজেকে বাইরের প্রদর্শনী থেকে গুটিয়ে নিয়ে শিক্ষাদানে ব্যস্ত হন। অন্নপূর্ণা দেবীর মাত্র তিনটি রেকর্ডিং টিকে আছে। বেশির ভাগ পণ্ডিতই মনে করেন, নানা বিবেচনায় অন্নপূর্ণার কাজ রবি শঙ্করের চেয়ে উন্নত মানের। অন্নপূর্ণা দেবী কেন জনসমক্ষে প্রদর্শনী থেকে সরে গিয়েছিলেন, তার একটি কারণ জড়িয়ে আছে মূল্যায়নের সঙ্গে। শোনা যায়, রবি শঙ্কর তার স্ত্রী অন্নপূর্ণা দেবীর প্রতিভায় শঙ্কিত হয়েছিলেন, তাই তিনি অন্নপূর্ণাকে দিয়ে প্রতিজ্ঞা করিয়ে নিয়েছিলেন যেন আর কখনো জনসমক্ষে পারফরম্যান্স না করেন এবং এর মাধ্যমে অন্নপূর্ণা দেবীর সামনে তার হেরে যাওয়ার আশঙ্কা দূর হয়।

সম্পাদক ও প্রকাশক: দেওয়ান হানিফ মাহমুদ

বিডিবিএল ভবন (লেভেল ১৭), ১২ কাজী নজরুল ইসলাম এভিনিউ, কারওয়ান বাজার, ঢাকা-১২১৫

বার্তা ও সম্পাদকীয় বিভাগ: পিএবিএক্স: ৫৫০১৪৩০১-০৬, ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন ও সার্কুলেশন বিভাগ: ফোন: ৫৫০১৪৩০৮-১৪, ফ্যাক্স: ৫৫০১৪৩১৫