হঠাৎ করে মারা যাওয়া শত শত শ্রমিকের মৃত্যুর কোনো তদন্ত করেনি কাতার। ব্রিটিশ সংবাদপত্র গার্ডিয়ানের তদন্তে এ তথ্য উঠে এসেছে।
আগামী ফুটবল বিশ্বকাপ আয়োজক এ দেশটিতে প্রতি বছর শত শত শ্রমিক মারা যাচ্ছেন, যেসবের বেশির ভাগকেই হার্ট অ্যাটাকের কারণে ‘স্বাভাবিক মৃত্যু’ বলে বর্ণনা করছে কাতারি কর্তৃপক্ষ। কয়েক লাখ অভিবাসী শ্রমিক বিশ্বকাপ আয়োজনের প্রয়োজনীয় অবকাঠামো তৈরিতে প্রতিদিন ১০ ঘণ্টা ৪৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসে কাজ করে যাচ্ছেন। অধিক তাপমাত্রা মানুষের কার্ডিওভাসকুলার সিস্টেমে ব্যাপক চাপ সৃষ্টি করে এবং হূদরোগ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, গরমের মাসগুলোয় অধিক হারে যুবক শ্রমিকদের মৃত্যুতে অত্যধিক তাপমাত্রার সম্পর্ক রয়েছে। মৃত্যুর পর শ্রমিকদের শরীরের আংশিক ময়নাতদন্ত শেষে কাতারি কর্তৃপক্ষ জানিয়ে দেয়, ‘হূদরোগে’ বা ‘স্বাভাবিক’ বা ‘প্রাকৃতিক কারণে’ এসব মৃত্যু হয়েছে।
২০১৪ সালে কাতারি কর্তৃপক্ষের নিজস্ব আইন ফার্ম ডিএলএ পাইপার থেকে ‘জোর পরামর্শ’ দেয়া হয়েছিল যেন হার্ট অ্যাটাকে আক্রান্ত হয়ে মারা যাওয়া অভিবাসী শ্রমিকদের মৃত্যুর তদন্ত করা হয়। কিন্তু এ বিষয়ে কোনো পদক্ষেপ নিতে ব্যর্থ হয়েছে তারা।
২০১২-১৭ সালের মধ্যে ১ হাজার ২৫ নেপালি শ্রমিক মারা গেছেন, যাদের ৬৭৬ জনের মৃত্যুকে স্বাভাবিক মৃত্যু হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছে। নেপালের শ্রমিক কল্যাণ সংস্থা ফরেন এমপ্লয়মেন্ট বোর্ডসহ (এফইবি) বেশ কয়েকটি সরকারি প্রতিষ্ঠান ওইসব মৃত্যুর সুনির্দিষ্ট যেসব কারণ উল্লেখ করেছে, সেগুলো হচ্ছে কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট, হার্ট অ্যাটাক, শ্বাস সংকট ও অসুস্থতা। কাতার সরকার কর্তৃক ইস্যুকৃত ডেথ সার্টিফিকেট থেকে এ উপাত্তগুলো সংগ্রহ করেছে এফইবি।
ভারত সরকার থেকে প্রাপ্ত উপাত্তে দেখা গেছে, ২০১২-১৮ সালের আগস্ট পর্যন্ত কাতারে ১ হাজার ৬৭৮ জন ভারতীয় মারা গেছেন। সেগুলোর মধ্যে ১ হাজার ৩৪৫টি মৃত্যুকেই ‘স্বাভাবিক মৃত্যু’ হিসেবে অভিহিত করা হয়েছে। এছাড়া প্রতি সপ্তাহে কাতারে গড়ে চারজন করে শ্রমিক মারা গেছেন।
কোনো ধরনের অপরাধ তদন্ত ছাড়া কাতারি আইনে মৃত ব্যক্তির পোস্টমর্টেম/ময়নাতদন্ত নিষিদ্ধ। তবে ২০১৪ সালে প্রকাশিত ডিএলএ পাইপার প্রতিবেদনে অপ্রত্যাশিত কিংবা আকস্মিক মৃত্যুর ময়নাতদন্তের সুপারিশ করা হয়েছিল।
কাতারের এক ফরেনসিক বিশেষজ্ঞ গার্ডিয়ানকে জানান, মৃত্যুর কারণ অনুসন্ধানে শুধু এ রকম ময়নাতদন্তের ক্ষেত্রে বাহ্যিক পরীক্ষা (এক্সটার্নাল এক্সামিনেশন) চালানো হয়। মৃত্যুর কারণ অনুসন্ধানে কাতারি কর্তৃপক্ষের অনিচ্ছা নিহতদের