মহাসমারোহে শুরু হয়ে গেছে শারদীয় দুর্গোৎসব। পূজা উপলক্ষে দর্শনার্থী বেড়েছে চট্টগ্রামের বোয়ালখালীর করলডেঙ্গা পাহাড়ের মেধস মুনির আশ্রমে। পুরাণ মতে, এ আশ্রমেই প্রথম সাকার দুর্গা পূজা করেছিলেন রাজা সুরথ।
রামায়ণ অনুসারে, শরত্কালে আশ্বিনে দুর্গা পূজার প্রচলন রামচন্দ্রের হাত ধরে। তবে বিভিন্ন পুরাণ থেকে জানা যায়, তারও আগে দুর্গা দেবীর পূজা করেছিলেন সুরথ নামে এক রাজা। আর তিনি এ পূজা করেছিলেন মেধস মুনির আশ্রমে। প্রখ্যাত সাধক স্বামী বেদানন্দের মতে, এ আশ্রমের অবস্থান অন্য কোথাও নয়, চট্টগ্রামের বোয়ালখালীর করলডেঙ্গা পাহাড়ে।
সাধারণত সনাতন ধর্মাবলম্বীদের পদচারণায় সবসময় মুখরিত থাকে মেধস মুনির আশ্রম। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানি বাহিনী এ আশ্রম ও সংলগ্ন মন্দির ধ্বংস করেছিল। পরে স্থানীয় হিন্দু সম্প্রদায়ের অর্থায়নে পুনরায় মন্দির ও আশ্রম নির্মাণ করা হয়। ৬৮ একর জায়গাজুড়ে এ আশ্রমে প্রতি বছর মহালয়ার মধ্য দিয়ে দেবী পক্ষের সূচনা হয়। ধর্মীয় রীতি মেনে অনুষ্ঠিত হয়ে দুর্গা পূজা।
বোয়ালখালী পূজা উদযাপন কমিটির আহ্বায়ক সুনিল চন্দ্র ঘোষ বণিক বার্তাকে বলেন, প্রতি বছরই এখানে দুর্গা পূজা অনুষ্ঠিত হয়। করলডেঙ্গা পাহাড়ে মেধস মুনির আশ্রম এমনিতেই হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের তীর্থভূমি। তাই সবসময়ই এখানে দর্শনার্থীদের ভিড় হয়। তবে দুর্গা পূজার সময় ভক্ত ও পূণ্যার্থীর ভিড় বাড়ে। এবারের পূজা উপলক্ষে পুলিশ ও প্রশাসনের পক্ষ থেকে সার্বিক নিরাপত্তা দেয়া হবে বলে আমাদের নিশ্চিত করা হয়েছে।
আশ্রমের অধ্যক্ষ বুলবুলানন্দ ব্রহ্মচারী বলেন, বাঙালি সনাতন ধর্মাবলম্বীদের প্রধান ধর্মীয় উৎসব দুর্গা পূজার উত্পত্তি এ মেধস মুনির আশ্রমেই। প্রাচীন কাল থেকেই এ আশ্রমে দুর্গা পূজা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। এ বছর আমাদের পূজার আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়ে গেছে। তবে আশ্রমের প্রবেশের রাস্তা সংস্কার না করায় দর্শনার্থীদের একটু সমস্যা হচ্ছে।
এদিকে মেধস আশ্রম নিয়ে রচিত গ্রন্থ থেকে জানা যায়, বরিশালের গৈলায় পণ্ডিত জগবন্ধু চক্রবর্তীর ঘরে জন্ম নেন চন্দ্রশেখর। পরে তিনি মহাযোগী স্বামী বেদানন্দজী নামে পরিচিত হন। প্রায় ১৩৬ বছর আগে বেদানন্দ স্বামী দৈব ক্ষমতার মাধ্যমে তিনি জানতে পারেন, পুরাণে বর্ণিত মেধস মুনির আশ্রমের অবস্থান চট্টগ্রামের বোয়ালখালীর করলডেঙ্গার পাহাড়ে। তখন তার উদ্যোগেই এখানে এই আশ্রম গড়ে ওঠে। তার রচিত মেধসাশ্রম মাহাত্ম্যে তিনি এ আশ্রমের কথা উল্লেখ করেন।
দুর্গা পূজা শুরুর ইতিহাস পর্যালোচনা করে জানা যায়, রাজ্যহারা হয়ে রাজা সুরথ ও স্বজনদের মাধ্যমে বিতাড়িত হয়ে বণিক সমাধি বৈশ্য মেধস মুনির এ আশ্রমে আসেন। তারা দুজনে নিজ নিজ দুঃখের কথা বলেন মেধস মুনির কাছে। তখন মেধস মুনি তাদের দুর্গা পূজার উপদেশ দেন। তখন সুরথ মৃন্ময়ী প্রতিমা গড়ে মর্ত্যলোকে সর্বপ্রথম দশভুজা দূর্গা দেবীর পূজা করে হারানো রাজ্য উদ্ধার করেন।