অনানুষ্ঠানিক বা ব্যক্তিপর্যায়ে বহু আগে থেকেই দেশে ক্রাউড ফান্ডিং প্রচলিত রয়েছে। আহছানিয়া মিশন ও কিডনি ফাউন্ডেশন এ ধরনের অর্থায়নের বড় উদাহরণ। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এরই মধ্যে ক্রাউড ফান্ডিং প্রতিষ্ঠানিক রূপ পেয়েছে। সময়ের চাহিদা বিবেচনায় বাংলাদেশেও এটিকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেয়ার প্রস্তাব করেছেন বিশেষজ্ঞরা।
তারা বলছেন, ক্রাউড ফান্ডিং প্রাতিষ্ঠানিক রূপ পেলে দেশের ব্যাংকিং খাতের তারল্য সংকট নিরসন হবে। উন্মুক্ত হবে দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগের দ্বার। তবে এজন্য প্রয়োজন স্বচ্ছতা, বিশ্বস্ততা ও জবাবদিহিতার নিশ্চয়তা।
বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ব্যাংক ম্যানেজমেন্টের (বিআইবিএম) এক গোলটেবিল আলোচনায় দেশের ব্যাংকিং খাতসংশ্লিষ্টরা এসব বিষয় তুলে ধরেন।
গতকাল রাজধানীর মিরপুরে বিআইবিএম অডিটোরিয়ামে ‘ক্রাউড ফান্ডিং অ্যান্ড ইটস ইমপ্লিকেশনস ইন বাংলাদেশ’
শীর্ষক এ গোলটেবিল বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।
অনুষ্ঠানে বক্তারা বলেন, বিশ্বস্ততা ক্রাউড ফান্ডিংয়ের মূল ভিত্তি। একদিনে এ বিশ্বস্ততা তৈরি করা সম্ভব নয়। বাংলাদেশে ক্রাউড ফান্ডিং ব্যবস্থায় সফলতা পেতে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে হবে।
ক্রাউড ফান্ডিং একটি বিকল্প অর্থায়ন ব্যবস্থা। এ পদ্ধতিতে ইন্টারনেটের মাধ্যমে বড় জনগোষ্ঠীর কাছ থেকে অর্থ সংগ্রহ করে তহবিল গঠন করা হয়। এসব ক্ষেত্রে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক, টুইটার, লিংকডইন ও ব্লগ কার্যকরী ভূমিকা রাখতে পারে।
গোলটেবিল বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন বিআইবিএমের মহাপরিচালক এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক মহা. নাজিমুদ্দিন। প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর এসএম মনিরুজ্জামান। অনুষ্ঠানে বিআইবিএমের অধ্যাপক ড. প্রশান্ত কুমার ব্যানার্জ্জী স্বাগত বক্তব্য রাখেন।
বিআইবিএমের সহযোগী অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম গোলটেবিল বৈঠকে একটি গবেষণা প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর এসএম মনিরুজ্জামান বলেন, প্রকল্পের শুরুতে অর্থায়ন ঘাটতি মেটাতে ক্রাউড ফান্ডিং গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। তবে এ ধরনের অর্থায়নে কিছু ঝুঁকি এবং সমস্যা রয়েছে। এমনকি ক্রাউড ফান্ডিং পোর্টালে হ্যাকিংয়ের ঝুঁকি রয়েছে। ক্রাউড ফান্ডিং বিষয়ে নাগরিকদের মধ্যে সচেতনতা বাড়ানোর এখনই উপযুক্ত সময় বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
বাংলাদেশের ব্যাংকগুলোর ক্রাউড ফান্ডিংয়ের মাধ্যমে অর্থ সংগ্রহের অপার সম্ভাবনা রয়েছে বলে উল্লেখ করেন বিআইবিএমের মহাপরিচালক এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক মহা. নাজিমুদ্দিন। ক্রাউড ফান্ডিং সম্পর্কিত সুনির্দিষ্ট নীতিমালা প্রণয়নের পরামর্শ দেন তিনি।
ক্রাউড ফান্ডিংয়ের ইতিবাচক দিক তুলে ধরে পাশাপাশি এর অব্যবহার রোধে গুরুত্ব দেয়ার কথা বলেন পূবালী ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও বিআইবিএমের সুপারনিউমারারি অধ্যাপক হেলাল আহমদ চৌধুরী এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক নির্বাহী পরিচালক ও বিআইবিএমের সাবেক সুপারনিউমারারি অধ্যাপক মো. ইয়াছিন আলি।
সমাপনী বক্তব্যে বিআইবিএমের চেয়ার প্রফেসর এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের সাবেক অধ্যাপক ড. বরকত-এ-খোদা বলেন, অনানুষ্ঠানিক ও ব্যক্তিপর্যায়ে ক্রাউড ফান্ডিং একটি পুরনো অর্থায়ন ব্যবস্থা। আহছানিয়া মিশন ও কিডনি ফাউন্ডেশন এর বড় উদাহরণ। কিন্তু এটি প্রাতিষ্ঠানিক খাতে ব্যবহার করার সুযোগ রয়েছে।