জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের চলমান আন্দোলন ও বাস্তবতা

প্রকাশ: অক্টোবর ০১, ২০১৯

নীলাঞ্জন কুমার সাহা

বর্তমানে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি সমস্যা নিয়ে এর ভেতরে ও বাইরে বেশ কিছুদিন ধরে আলোচনা, সমালোচনা, সভা, বিভিন্ন দৈনিক পত্রিকায় লেখালেখি, টিভিতে টকশো চলছে। আলোচনার বিষয়বস্তু হচ্ছে ১ হাজার ৪৪৫ কোটি ৩৬ লাখ টাকার অধিকতর উন্নয়নের বিশেষ প্রকল্পে দুর্নীতি ও এর মাস্টারপ্ল্যানের গ্রহণযোগ্যতা। এ সমস্যাকে কেন্দ্র করে এরই মধ্যে ছাত্র-শিক্ষকের সমন্বয়ে ছোট্ট একটি দল গত ৩, ৪ ও ৫ সেপ্টেম্বর প্রশাসনিক অফিস অবরোধ করে রাখে এবং ৮ সেপ্টেম্বর কর্মবিরতি পালন করে। যদিও এর কোনো প্রভাব বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাভাবিক কাজকর্মে অর্থাৎ ক্লাস, পরীক্ষা ও প্রশাসনিক কর্মকাণ্ডে পরিলক্ষিত হয়নি, তথাপি বিশ্ববিদ্যালয়ে এ সমস্যাকে কেন্দ্র করে এক ধরনের অস্থিরতা সৃষ্টি হয়েছে, যা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা, গবেষণা ও উন্নয়নের জন্য কখনই কাম্য নয়।

এ বিশ্ববিদ্যালয় আমাদের সবার প্রাণের বিশ্ববিদ্যালয়। এর উন্নয়ন আমরা সবাই চাই এবং এ নিয়ে কোনো দ্বিমত নেই। তাহলে সমস্যা কোথায়? সমস্যা হচ্ছে আমাদের নিজস্ব চিন্তাধারা, তার প্রকাশনা ও বাস্তবায়নের ভিন্নতা। প্রথমেই আসা যাক মাস্টারপ্ল্যানের গ্রহণযোগ্যতা? আন্দোলনকারী ছাত্র-শিক্ষকরা বলছেন যে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান মাস্টারপ্ল্যান কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়, কেননা একটি ভালো মাস্টারপ্ল্যানের যেসব উপাদান থাকা বাঞ্ছনীয়, তার অনেকগুলো এতে অনুপস্থিত। যেমন এটি করতে গিয়ে কোনো জিওলজিক্যাল সার্ভে, ইমপ্যাক্ট ফ্যাক্টর স্টাডি, ভবিষ্যৎ প্রাক্কলন, স্টেকহোল্ডারদের সঙ্গে আলোচনা ইত্যাদি করা হয়নি। সর্বোপরি, মাস্টারপ্ল্যান তৈরিতে কোনো পরিকল্পনাবিদের অন্তর্ভুক্তি কিংবা তাদের কোনো মতামত নেয়া হয়নি এবং মাস্টারপ্ল্যানটি সবার জন্য উন্মুক্ত করা হয়নি।

আমরা সবাই জানি, ১৯৭১ সালের ৪ জানুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয় উদ্বোধন এবং ১২ জানুয়ারি থেকে ক্লাস শুরু হয়। বিশ্ববিদ্যালয় উদ্বোধনের আগে এবং পরে আজ পর্যন্ত বিভিন্ন প্রশাসনের সময় বেশকিছু স্থাপনা নির্মাণ করা হয়েছে এবং এসব নির্মাণে বিশ্ববিদ্যালয়ের মাস্টারপ্ল্যানকে যে বিবেচনায় নেয়া হয়েছে, তার তেমন নজির বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস থেকে পাওয়া যায় না। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের মাস্টারপ্ল্যানটি প্রথম আলোচনায় আসে ২০১৫ সালে, যখন বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিকতর উন্নয়নের জন্য বর্তমান প্রশাসন ৩১৫ কোটি ৬৫ লাখ টাকার একটি প্রাথমিক প্রকল্প একনেকে জমা দেয়। তখন একনেক থেকে বলা হয়, এ প্রকল্প অনুমোদনের জন্য প্রকল্পের অপরিহার্য উপাদান হিসেবে অবশ্যই বিশ্ববিদ্যালয়কে একটি ত্রিমাত্রিক মাস্টারপ্ল্যান এ প্রকল্পের সঙ্গে জমা দিতে হবে। ঠিক তখন থেকেই আলোচনা শুরু হয় যে এ মাস্টারপ্ল্যান কীভাবে করা যায় এবং কাকে দিয়ে করা যায়? সে সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্ল্যানিং অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট কাউন্সিলের (পিএনডিসি) আলোচনায় উঠে আসে যে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য স্থপতি মাজহারুল ইসলামের তৈরি একটি মাস্টারপ্ল্যান আছে, যা ১৯৭০ সালে তৈরি করা হয়েছে। কাউন্সিল সভায় সর্বসম্মতিতে সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়, বিশ্ববরেণ্য স্থপতি মাজহারুল ইসলামের তৈরি মাস্টারপ্ল্যানের মূল কাঠামো ঠিক রেখে বুয়েটের সাহায্য নিয়ে বর্তমান অবস্থার নিরিখে একটি হালনাগাদ ও সংশোধিত ত্রিমাত্রিক মাস্টারপ্ল্যান তৈরি করা হবে এবং এটি তৈরিতে আমাদের দেশের স্বনামধন্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বুয়েটের সাহায্য নেয়া হবে। কেননা যদি এ ত্রিমাত্রিক মাস্টারপ্ল্যানের কাজটি বুয়েটকে দিয়ে করানো যায়, তাহলে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় হালনাগাদ একটি সুন্দর ও সর্বজনগ্রাহ্য মাস্টারপ্ল্যান পাবে। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের লিখিত অনুরোধের পরিপ্রেক্ষিতে বুয়েট প্রশাসন ড. আহাসান উল্লাহ মজুমদার, সহযোগী অধ্যাপক, স্থাপত্য ও পরিকল্পনা বিভাগ, বুয়েটের নেতৃত্বে কয়েকজন স্থপতি ও পরিকল্পনাবিদের সমন্বয়ে একটি টেকনিক্যাল টিম গঠন করে দেয়। এ টেকনিক্যাল কমিটির তৈরে হালনাগাদ ও সংশোধিত ত্রিমাত্রিক মাস্টারপ্ল্যানটি কয়েক দফা পিএনডিসিতে উপস্থাপিত হওয়ার পর চূড়ান্ত আকারে সিন্ডিকেটের অনুমোদনক্রমে একনেকে প্রেরণ করা হয়। এখানে উল্লেখ করা প্রয়োজন যে, বর্তমান প্রশাসন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের পুরনো মাস্টারপ্ল্যানটি শুধু হালনাগাদ করে ত্রিমাত্রিক ফরমেটে তৈরি করেছে মাত্র, কোনোভাবেই নতুন করে তৈরি করেনি। যেহেতু বর্তমান প্রশাসন এ মাস্টারপ্ল্যানটি নতুন করে তৈরি করেনি, শুধু প্রয়োজনের নিরিখে হালনাগাদ করেছে মাত্র, সেহেতু মাস্টারপ্ল্যানের জন্য যেসব উপাদান বাদ যাওয়ার কথা, আন্দোলনকারীরা বলছেন তা বর্তমানে কোনো অবস্থাতেই যৌক্তিক নয়। তাছাড়া একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের মাস্টারপ্ল্যানে এগুলোর গুরুত্ব নিয়েও অনেকে সন্দিহান। বিশ্ববিদ্যালয়ে ২০১৫-১৮ সালে বেশকিছু বড় স্থাপনা, যেমন বেগম সুফিয়া কামাল হল, বঙ্গমাতা ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হল, বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর হল, ওয়াজেদ মিয়া বিজ্ঞান গবেষণা কেন্দ্র, মাইক্রোবায়োলজি বিল্ডিং ইত্যাদির কাজ শেষ হয়েছে। যদিও তখন এ ব্যাপারে কেউ কোনো স্থাপনা বা মাস্টারপ্ল্যানের ব্যাপারে কোনো অভিযোগ করেননি কিন্তু এখন করছেন। যদি এর কোনো গলদ থেকে থাকে, তাহলে তা মাস্টারপ্ল্যানের গোড়াতেই হয়েছে, বর্তমান প্রশাসনের আমলে নয়। তাছাড়া আমরা সবাই জানি, বিশ্ববিদ্যালয়ের যেকোনো ভৌত অবকাঠামো উন্নয়নের পরিকল্পনা ও তা বাস্তবায়নের সুপারিশ বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট কর্তৃক গঠিত পিএনডিসিতেই নেয়া হয় এবং বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের ঊর্ধ্বতনরা, সব ডিন মহোদয়, পরিকল্পনা ও প্রকৌশল বিভাগের পরিচালক, সিন্ডিকেটের অনুমোদনক্রমে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেতর ও বাইরের পরিবেশ ও পরিকল্পনাবিদরা এর সদস্য হিসেবে থাকেন। কাজেই বিশ্ববিদ্যালয়ের সব সংশ্লিষ্ট পরিকল্পনাবিদসহ দায়িত্বপ্রাপ্তরা এ মাস্টারপ্ল্যান সম্পর্কে ওয়াকিবহাল। এমনকি আন্দোলনকারীদের অনেকেই এর সুপারিশ কিংবা অনুমোদন কমিটির সদস্য হিসেবে উপস্থিত থেকে কোনো রকম বিরোধিতা না করে এর সুপারিশ বা অনুমোদন দিয়েছেন। কাজেই আন্দোলনকারীরা বলছেন সব স্টেকহোল্ডারের সঙ্গে আলোচনা করা হয়নি, তা ঠিক নয়। হয়তো এটি সবার জন্য উন্মুক্ত হয়নি কিন্তু সব দায়িত্বপ্রাপ্ত সংশ্লিষ্টরা প্রয়োজনে এটি পেতে বা দেখতে পারতেন। হালনাগাদ মাস্টারপ্ল্যানের সুপারিশ বা অনুমোদনের সময় এর বিরোধিতা না করে যখন উন্নয়ন কার্যক্রম শুরু হয়েছে, তখন এর বিরোধিতা করা কতটুকু যৌক্তিক? আন্দোলনকারীদের উদ্দেশ্য কি অন্যরকম? ভেবে দেখার বিষয় আছে! প্রায় ৫০ বছর আগে তৈরি মাস্টারপ্ল্যানের দায় বর্তমান প্রশাসনের ওপর চাপিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের অবকাঠামো উন্নয়ন ব্যাহত করা, বিশেষভাবে শিক্ষার্থীদের আবাসন হল তৈরি বন্ধ করা কোনোভাবেই বিশ্ববিদ্যালয়ের সুশীল সমাজের কাজ হতে পারে না। অন্যদিকে সুশীল সমাজের যেকোনো গঠনমূলক সমালোচনা অবশ্যই প্রশাসনকে বিবেচনায় নিতে হবে, কেননা এতে করে কাজের দক্ষতা ও উত্কর্ষ বাড়ে এবং সর্বোপরি বিশ্ববিদ্যালয়ই লাভবান হয়। তবে ব্যক্তিগত রেষারেষি কিংবা চাওয়া-পাওয়া গঠনমূলক সমালোচনার গুরুত্ব অনেকাংশে কমিয়ে দেয় এবং এক্ষেত্রে তা-ই হয়েছে। তার পরও উপাচার্য মহোদয় আন্দোলনকারীদের সঙ্গে আলোচনায় তাদের প্রধান দুটি দাবি অর্থাৎ ছাত্র হল তৈরির জায়গা পুনর্নির্ধারণ ও উন্নয়ন কার্যক্রম রিভিউ কমিটি পুনর্গঠনের সম্মতি জ্ঞাপন করেছেন। যেকোনো বড় উন্নয়নেরই কিছু না কিছু অসুবিধা থাকে, আর আমরা এ ছোটখাটো অসুবিধা মেনে নিই ভবিষ্যতে বড় কিছু সুবিধা পাওয়ার আশায়। কাজেই আমাদের কোমলমতি শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে প্রত্যাশা, উন্নয়নের ভালো দিকগুলো অনুধাবন করে তারা আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন ত্বরান্বিতে সর্বাত্মক সহযোগিতা করবে।

এবার আসা যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন প্রকল্পে দুর্নীতি? আন্দোলনকারীরা অভিযোগ করছেন, দরপত্র আহ্বানে অস্বচ্ছতাসহ এ উন্নয়ন প্রকল্পে প্রায় কোটি টাকার মতো দুর্নীতি হয়েছে, যা প্রকল্পের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগকে ঘুষ হিসেবে প্রদান করেছে। যেহেতু এর সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের পরিবার জড়িত, তাই এর জন্য আমরা উপাচার্যের পদত্যাগ চাই, যদিও এর কোনো অকাট্য প্রমাণ এখন পর্যন্ত আন্দোলনকারীরা উপস্থাপন করতে পারেনি। এ বিষয়ে কিছু ফোনালাপের রেকর্ড বিভিন্ন মিডিয়ায় প্রকাশ পেলেও প্রমাণ হিসেবে তা খুবই দুর্বল। কেননা যে কেউ এটি শুনলে বুঝতে পারবে যে, ঘটনার আলোকে পরবর্তী সময়ে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে নির্মিত হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্মুক্ত দরপত্র আহ্বানের মাধ্যমে উন্নয়ন প্রকল্পের হল নির্মাণের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান বৈধ উপায়ে কাজ পেয়েছে। এর অবৈধতার ব্যাপারে এখন পর্যন্ত অন্য কোনো ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান নিজস্ব নামে কোনো অভিযোগ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনের কাছে জমা দেয়নি। ২০১৮ সালের অক্টোবরে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় অধিকতর উন্নয়ন প্রকল্প একনেকে অনুমোদন পাওয়ার পর প্রথম পর্যায়ে জরুরি ভিত্তিতে শিক্ষার্থীদের জন্য ছয়টি আবাসিক হলের নকশা প্রণয়ন, মাটি পরীক্ষা এবং অন্য আনুষঙ্গিক কাজ করতে বেশকিছু সময় পেরিয়ে যাওয়ার পর ২০১৮-১৯ অর্থবছরের শেষ দিকে স্বল্প সময়ে প্রকল্পের সিড মানি হিসেবে কিছু অর্থ ছাড় করানোর জন্য পত্রিকায় উন্মুক্ত দরপত্র আহ্বান ছাড়া প্রশাসনের কাছে কোনো বিকল্প ছিল না এবং তা বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেটের অনুমোদনক্রমেই হয়েছে। ই-টেন্ডার ভালো হলেও বিশ্ববিদ্যালয়ের সক্ষমতার অভাবে ই-টেন্ডারের মাধ্যমে অতি স্বল্প সময়ে দরপত্র আহ্বান করা সম্ভব হয়নি। আমরা আশা করব, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ভবিষ্যতে বড় অংকের দরপত্র আহ্বানে অবশ্যই ই-টেন্ডার পদ্ধতি অবলম্বন করবে। এখন পর্যন্ত প্রকল্পের অর্থ থেকে প্রকল্পের প্রাথমিক আনুষাঙ্গিক ব্যয় নির্বাহ ছাড়া কোনো অর্থ খরচ করা হয়নি বলে প্রশাসন জানিয়েছে, যার সত্যতা প্রকল্পের ব্যাংক হিসাব নিরীক্ষা করে দেখা যেতে পারে। যদি প্রকল্পের উন্নয়ন খরচ বাবদ এখন পর্যন্ত কোনো অর্থ খরচ না হয়ে থাকে, তাহলে প্রকল্পে দুর্নীতি হলো কোত্থেকে? নাকি নিজেদের ব্যক্তিগত স্বার্থ চরিতার্থ করতে আমাদের পদ্মা সেতুর মতোই আন্দোলনকারীরা দুর্নীতির গন্ধ বাতাসে পেয়ে উপাচার্য অপসারণের আন্দোলনে মেতে উঠেছেন। আন্দোলনকারীদের সঙ্গে আলোচনায় উপাচার্য মহোদয় এও বলেছেন যে, তার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ খতিয়ে দেখার জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ যদি কোনো তদন্ত করে, তবে তিনি এ ব্যাপারে সর্বাত্মক সহযোগিতা করবেন কিন্তু আন্দোলনকারীরা তাতেও সন্তুষ্ট নন। আন্দোলনকারীদের কাছে যদি উপযুক্ত প্রমাণ থাকে, তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার পরিবেশ নষ্ট না করে নিজেরাই আদালতের বা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের শরণাপন্ন হতে পারেন। আন্দোলনকারীদের কাঠামো বিশ্লেষণ করলে জাতীয়তাবাদী, বাম ও আওয়ামীপন্থী কিছু শিক্ষক পাওয়া যাবে, যারা উপাচার্য মহোদয়কে ততদিনই সমর্থন দিয়েছেন, যতদিন তার কাছ থেকে ব্যক্তিগত সুযোগ-সুবিধা আদায় করতে পেরেছেন। বিশেষ করে ২০১৮ সালের মার্চে দ্বিতীয় মেয়াদে ড. ফারজানা ইসলাম উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ পাওয়ার পর থেকেই ব্যক্তিগত সুযোগ-সুবিধা আদায় বন্ধ হয়ে যাওয়ায় এ দলটি উপাচার্যের বিরোধিতা শুরু করে। কথিত যে, আন্দোলনকারীদের মাঝে অনেকেই আছেন, যাদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ ধামাচাপা পড়ে আছে। আর এসব ব্যক্তির সম্পৃক্ততায় দুর্নীতিবিরোধী আন্দোলন কতটুকু সফলতা পাবে, তা নিয়ে অনেকের মনেই প্রশ্ন রয়েছে। কিছুদিন আগে আমি নিজেও প্রশাসনবিরোধী আওয়ামীপন্থী শিক্ষকদের সঙ্গে ছিলাম, কেননা বর্তমান উপাচার্য মহোদয় সিনেট কর্তৃক উপাচার্য প্যানেল নির্বাচনকে পাশ কাটিয়ে উপাচার্য হিসেবে দ্বিতীয় মেয়াদে নিয়োগ পেয়েছেন, যা আমরা মেনে নিতে পারিনি। পরবর্তী সময়ে অনুধাবন করলাম, প্রধানমন্ত্রীর সুপারিশক্রমে রাষ্ট্রপতি নিয়মতান্ত্রিক পন্থায় যাকে উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ দিয়েছেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের মঙ্গল ও উন্নয়নের জন্য আমাদের তাকে মেনে নিয়ে সহযোগিতা করা উচিত। উল্লেখ্য, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে আওয়ামীপন্থী শিক্ষকদের মধ্যে বিভাজন বেশ প্রকট, আর এটাকে সুকৌশলে জিইয়ে রাখেন বিএনপি ও বামপন্থী শিক্ষকরা, যাতে তাদের সুবিধা ও অস্তিত্ব সবসময় অক্ষত থাকে। কাজেই এখন সময় হয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের শান্তি, স্থিতিশীলতা ও উন্নয়নের স্বার্থে তথা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উচ্চশিক্ষার মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নে আওয়ামীপন্থী শিক্ষকরা যারা প্রকৃত বঙ্গবন্ধুর আদর্শে অনুপ্রাণিত ও প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বের ওপর আস্থাশীল, তাদের সব ব্যক্তিগত রেষারেষি ভুলে একাট্টা হয়ে কাজ করার। আর তাতেই দেশ ও জাতির অর্থাৎ আমাদের সবার মঙ্গল হবে।

 

নীলাঞ্জন কুমার সাহা: ডিন, বিজনেস স্টাডিজ অনুষদ (সহযোগী অধ্যাপক, ফিন্যান্স অ্যান্ড ব্যাংকিং বিভাগ), জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়


সম্পাদক ও প্রকাশক: দেওয়ান হানিফ মাহমুদ

বিডিবিএল ভবন (লেভেল ১৭), ১২ কাজী নজরুল ইসলাম এভিনিউ, কারওয়ান বাজার, ঢাকা-১২১৫

বার্তা ও সম্পাদকীয় বিভাগ: পিএবিএক্স: ৫৫০১৪৩০১-০৬, ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন ও সার্কুলেশন বিভাগ: ফোন: ৫৫০১৪৩০৮-১৪, ফ্যাক্স: ৫৫০১৪৩১৫