শেয়ার ইস্যুর অনুমোদন : ৩ হাজার ৭১০ কোটি টাকা মূলধন বাড়াবে বাংলালিংক

প্রকাশ: আগস্ট ১৭, ২০১৯

নিজস্ব প্রতিবেদক

বকেয়া ঋণের বিপরীতে শেয়ার ইস্যু করছে সেলফোন অপারেটর বাংলালিংক। সম্প্রতি প্রতিষ্ঠানটির এ-সংক্রান্ত আবেদনে অনুমোদন দিয়েছে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি)। পরিশোধিত মূলধন বৃদ্ধির মাধ্যমে ৩ হাজার ৭১২ কোটি টাকার বেশি ঋণ পরিশোধে শেয়ার ইস্যু করবে প্রতিষ্ঠানটি।

জানা গেছে, গত বছরের ডিসেম্বর শেষে হোল্ডিং প্রতিষ্ঠান টেলিকম ভেঞ্চারস লিমিটেডের (টিভিএল) কাছে বাংলালিংকের মোট ঋণ ছিল ৪৩ কোটি ২০ লাখ ৪৪ হাজার ডলার। চলতি বছরের মার্চ শেষে এ ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৪৩ কোটি ৬৭ লাখ ৯৬ হাজার ডলার। ডলারের বিনিময়মূল্য ৮৫ টাকা হিসাবে দেশী মুদ্রায় এ ঋণের পরিমাণ হিসাব করা হয়েছে ৩ হাজার ৭১২ কোটি ৭৭ লাখ ৩০ হাজার ৪২০ টাকা। এরই পরিপ্রেক্ষিতে প্রতিটি শেয়ার ১০ টাকা করে মোট ৩৭১ কোটি ২৭ লাখ ৭৩ হাজার ৪২টি শেয়ার বাড়ানোর আবেদন করে বাংলালিংক। বর্তমানে টিভিএলের হাতে বাংলালিংকের শেয়ার রয়েছে ৪৭৬ কোটি ৩ লাখ ৭৭ হাজার ৩৯৬টি। পরিশোধিত মূলধন বাড়াতে ঋণের বিপরীতে শেয়ার ইস্যু করা হলে টিভিএলের শেয়ার সংখ্যা দাঁড়াবে ৮৪৭ কোটি ৩১ লাখ ৫০ হাজার ৪৩৮টিতে।

ঋণ পরিশোধে শেয়ার ইস্যুর এ আবেদনে সম্প্রতি অনুমোদন দিয়েছে বিটিআরসি। এর আগে চলতি বছরের জানুয়ারিতে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) ও বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) কাছে পরিশোধিত মূলধন বৃদ্ধি ও ঋণের বিপরীতে শেয়ার ইস্যুর বিষয়ে আবেদন করে বাংলালিংক।

গত এক দশকের বেশি সময়েও মুনাফা অর্জন করতে পারেনি বাংলালিংক। ২০১৫ সালে একটি প্রান্তিকে মুনাফা হলেও সামগ্রিকভাবে বছরটিতে মুনাফা করতে পারেনি টেলিকম অপারেটর প্রতিষ্ঠানটি। বাংলালিংকের হোল্ডিং প্রতিষ্ঠান গ্লোবাল টেলিকম হোল্ডিংসের (জিটিএইচ) আর্থিক প্রতিবেদন অনুযায়ী, গত বছর বাংলালিংক আয় করেছে ৪ হাজার ৪০০ কোটি টাকা। ২০১৭ সালে প্রতিষ্ঠানটির আয় ছিল ৪ হাজার ৬৫০ কোটি টাকা। আর ২০১৬ সালে এ আয় ছিল ৪ হাজার ৮৭০ কোটি টাকা। চলতি বছরের দ্বিতীয় প্রান্তিক শেষে টেলিকম অপারেটর প্রতিষ্ঠানটির আয় হয়েছে ১ হাজার ১৫০ কোটি টাকা।

দীর্ঘদিনের পুঞ্জীভূত লোকসানের পাশাপাশি প্রতিষ্ঠানটির রয়েছে বড় অংকের ঋণের বোঝাও।

তহবিল সংগ্রহে ২০১৪ সালে আন্তর্জাতিক বাজারে পাঁচ বছর মেয়াদি ৩০ কোটি ডলার মূল্যের বন্ড ছাড়ে বাংলালিংক। সংগৃহীত অর্থ দিয়ে ঋণ পরিশোধ ও মূলধনি ব্যয় নির্বাহের লক্ষ্য নিয়ে এ বন্ড ছেড়েছিল বাংলালিংক, যার মেয়াদ পূর্ণ হয় চলতি বছরের মে মাসে।

গত দুই বছরে বিপুল পরিমাণে কর্মী ছাঁটাইয়ের পাশাপাশি নানা ধরনের ব্যয় সংকোচনের পথে হাঁটছে প্রতিষ্ঠানটি। ২০১৬ সাল থেকে একাধিক পর্যায়ে কর্মী ছাঁটাইয়ের মাধ্যমে এ কার্যক্রম শুরু করে প্রতিষ্ঠানটি। যদিও এটিকে প্রাতিষ্ঠানিক পুনর্গঠন কার্যক্রমের অংশ হিসেবে উল্লেখ করা হচ্ছে।

২০০৫ সালে ১০ লাখ গ্রাহকসংখ্যা অর্জন করে বাংলালিংক। গ্রাহকসংখ্যার ভিত্তিতে দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম সেলফোন অপারেটর হিসেবে প্রতিষ্ঠানটির আবির্ভাব ঘটে ২০০৭ সালে। ২০০৮ সালে এক কোটি গ্রাহকের মাইলফলক অর্জন করে প্রতিষ্ঠানটি। তবে রবি-এয়ারটেলের একীভূতকরণের পর গ্রাহকসংখ্যার ভিত্তিতে দীর্ঘদিন দ্বিতীয় স্থানে থাকা বাংলালিংক নেমে এসেছে তৃতীয় স্থানে।

বিটিআরসির সর্বশেষ তথ্যানুযায়ী, চলতি বছরের জুন শেষে দেশে সেলফোন অপারেটরদের সংযোগ সংখ্যা ১৬ কোটি ১৭ লাখ ছাড়িয়েছে। এর মধ্যে গ্রামীণফোনের ৭ কোটি ৫৩ লাখ, রবি আজিয়াটার ৪ কোটি ৭৯ লাখ, বাংলালিংকের ৩ কোটি ৪৬ লাখ ও টেলিটকের ৩৮ লাখ ৩৬ হাজার সংযোগ রয়েছে।

প্রসঙ্গত, ২০০৪ সালের সেপ্টেম্বরে সেবা টেলিকমের শতভাগ শেয়ার কিনে নিয়েছিল মিসরভিত্তিক প্রতিষ্ঠান ওরাসকম টেলিকম হোল্ডিংস (ওটিএইচ)। পরের বছর বাংলালিংক ব্র্যান্ড নামে সেবা চালু করে প্রতিষ্ঠানটি। ২০১১ সালে ওটিএইচের সিংহভাগ শেয়ার কিনে নেয় ভিম্পেলকম (বর্তমানে ভিয়ন)। আর ২০১৩ সালে ওটিএইচের নাম পরিবর্তন করে গ্লোবাল টেলিকম হোল্ডিংস (জিটিএইচ) এবং ওরাসকম বাংলাদেশ লিমিটেডের নাম বাংলালিংক ডিজিটাল কমিউনিকেশন্স লিমিটেড রাখা হয়। মূলত সাবসিডিয়ারি প্রতিষ্ঠান টেলিকম ভেঞ্চারস লিমিটেডের মাধ্যমে বাংলালিংকের কার্যক্রম নিয়ন্ত্রণ করছে জিটিএইচ।


সম্পাদক ও প্রকাশক: দেওয়ান হানিফ মাহমুদ

বিডিবিএল ভবন (লেভেল ১৭), ১২ কাজী নজরুল ইসলাম এভিনিউ, কারওয়ান বাজার, ঢাকা-১২১৫

বার্তা ও সম্পাদকীয় বিভাগ: পিএবিএক্স: ৫৫০১৪৩০১-০৬, ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন ও সার্কুলেশন বিভাগ: ফোন: ৫৫০১৪৩০৮-১৪, ফ্যাক্স: ৫৫০১৪৩১৫