সান্ধ্য ও ছুটির দিনভিত্তিক স্নাতক প্রোগ্রাম

ইউজিসির আপত্তিকে অযৌক্তিক বলছে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়

প্রকাশ: আগস্ট ০৬, ২০১৯

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রয়োজন বিবেচনায় স্নাতক পর্যায়ে সন্ধ্যাকালীন ও সাপ্তাহিক ছুটির দিনভিত্তিক প্রোগ্রাম অফার করে থাকে বিশ্বের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়। বাংলাদেশেও বেশ কয়েকটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় এ ধরনের প্রোগ্রাম চালু রেখেছে। এতে আপত্তি রয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের (ইউজিসি)। যদিও ইউজিসির এ আপত্তিকে অযৌক্তিক মনে করছে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো।

জানা গেছে, শুক্র-শনিবারকেন্দ্রিক ও সন্ধ্যাকালীন স্নাতক প্রোগ্রাম পরিচালনাকারী বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর তালিকা করে তাদের কয়েক দফা সতর্ক করেছিল ইউজিসি। এরপর কিছুদিন অননুমোদিত এসব প্রোগ্রামের বিজ্ঞাপন ও বিজ্ঞপ্তি বন্ধ রেখেছিল বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো। তবে সম্প্রতি বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইট ও ভর্তি অফিসে অনুসন্ধান করে দেখা যায়, পুনরায় এসব প্রোগ্রামে শিক্ষার্থী ভর্তি করাচ্ছে বেশ কয়েকটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়।

এ বিষয়ে ইউজিসির সদস্য অধ্যাপক ড. মো. আখতার হোসেন বণিক বার্তাকে বলেন, সাপ্তাহিক ছুটির দিন বা ইভিনিংয়ে কোনো স্নাতক প্রোগ্রাম পরিচালনার অনুমোদন ইউজিসি দেয় না। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো যেন এমন কোনো প্রোগ্রামে শিক্ষার্থী ভর্তি না করে এবং এ বিষয়ে কোনো ধরনের বিজ্ঞপ্তি কিংবা বিজ্ঞাপন প্রকাশ না করে, সে বিষয়েও চিঠি দেয়া হয়েছে। অননুমোদিত এসব প্রোগ্রামে শিক্ষার্থী ভর্তি ইউজিসির নীতিমালার সঙ্গে সংগতিপূর্ণ নয়।

ইউজিসি বলছে, বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর অধিকাংশেরই মানসম্মত কোনো ল্যাব নেই। প্রোগ্রাম অনুমোদনের সময় যেসব শর্ত দেয়া হয়েছিল, সেগুলোও বাস্তবায়ন করা হচ্ছে না। উল্টো নানা নামে ও সময়ে প্রোগ্রাম খুলে শিক্ষার্থীদের আকৃষ্ট করার চেষ্টা করা হচ্ছে। দেশের বিভিন্ন প্রান্তে কর্মরতদের, বিশেষ করে ডিপ্লোমাধারীদের ছুটির দিনকেন্দ্রিক প্রোগ্রাম অফার করে ভর্তি করানো হচ্ছে। তারা নিয়মিত বিরতিতে এসে ফি বাবদ অর্থ জমা দিয়ে যায়। হাতেগোনা কিছু ক্লাস-পরীক্ষা করে খুব সহজেই স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করে নিচ্ছে তারা। সপ্তাহে দুই-একদিন ক্লাস-পরীক্ষা নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ কিছু বিষয়ে সনদ দেয়ার বিষয়টি তাই যৌক্তিক নয়। এ কারণে এ ধরনের কার্যক্রম পরিচালনার অনুমোদন দেয়নি ইউজিসি।

ইউজিসির বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় বিভাগের পরিচালক ড. মো. ফখরুল ইসলাম বলেন, প্রোগ্রাম দেয়ার সময় স্পষ্টভাবে লিখে দেয়া হয়, এসব প্রোগ্রাম নিয়মিত। ছুটির দিন বা ইভিনিং লিখে বিজ্ঞপ্তি দেয়ার কোনো সুযোগ নেই। এর পরও যদি কোনো বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় তা অনুসরণ না করে কোনো প্রোগ্রাম অফার করে, সেটি অননুমোদিত হিসেবে গণ্য হবে।

তবে কারিকুলাম একই হওয়ায় এ ধরনের কার্যক্রম পরিচালনার জন্য আলাদা করে অনুমোদন নেয়ার বিষয়টিতে আপত্তি রয়েছে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো বলছে, শিক্ষার্থীদের সুবিধার কথা বিবেচনায় নিয়েই তারা বিশেষ সময় বা দিনে প্রোগ্রাম পরিচালনা করছেন। এছাড়া নিয়মিত প্রোগ্রাম ও বিশেষ প্রোগ্রামের কারিকুলামও একই। এ বিষয়ে সাউথইস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. এএনএম মেশকাত উদ্দীন বলেন, মূলত কিছু চাকরিজীবী শিক্ষার্থীর সুবিধার্থে আমরা এ প্রোগ্রামগুলো চালু করেছি। নিয়মিত প্রোগ্রামে যে কারিকুলাম; শুক্র-শনি কিংবা সন্ধ্যাকালীন প্রোগ্রামেও একই কারিকুলাম অনুসরণ করা হয়। তাই ইউজিসি থেকে নতুন কোনো অনুমোদন নেয়া প্রয়োজন পড়েনি।

কর্মজীবীদের আকৃষ্ট করতে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর সন্ধ্যাকালীন ও ছুটির দিনভিত্তিক কার্যক্রমে ইউজিসির আপত্তি থাকলেও যুক্তরাজ্য, কানাডা, থাইল্যান্ডসহ বিশ্বের অনেক দেশেই এ ধরনের কার্যক্রম চালু রয়েছে। এসব দেশের স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের অনেকেই রয়েছেন, যারা দিনে বিভিন্ন জায়গায় খণ্ডকালীন বা পূর্ণ সময়ের জন্য চাকরি করে থাকেন এবং ফ্লেক্সিবল ও পার্টটাইম ডিগ্রি কার্যক্রমের আওতায় সন্ধ্যায় বা ছুটির দিনে বিশ্ববিদ্যালয় বা কলেজে ক্লাস করেন।

উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, যুক্তরাজ্যের ইউনিভার্সিটি অব লন্ডনেও শর্ট কোর্সের আওতায় সন্ধ্যাকালীন ও ছুটির দিনকেন্দ্রিক কার্যক্রমের আওতায় ব্যবসায় প্রশাসন, আইন ও কম্পিউটার প্রোগ্রামিংভিত্তিক বিভিন্ন বিষয় পড়াশোনার সুযোগ রয়েছে। একইভাবে কানাডার বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়েও বিভিন্ন বিষয়ে স্নাতক বা স্নাতকোত্তর পর্যায়ে পার্টটাইম স্টাডির সুযোগ রয়েছে, যা মূলত সন্ধ্যাকালীন ও উইকেন্ডভিত্তিক কার্যক্রম। উচ্চশিক্ষায় ঝরে পড়ার হার কমানোর পাশাপাশি শিক্ষায় সবার প্রবেশাধিকার এবং শিক্ষার্থীদের নিজের খরচ নিজে বহনের সুযোগ দেয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করতে এ ধরনের কার্যক্রম পরিচালনা করে থাকে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো।


সম্পাদক ও প্রকাশক: দেওয়ান হানিফ মাহমুদ

বিডিবিএল ভবন (লেভেল ১৭), ১২ কাজী নজরুল ইসলাম এভিনিউ, কারওয়ান বাজার, ঢাকা-১২১৫

বার্তা ও সম্পাদকীয় বিভাগ: পিএবিএক্স: ৫৫০১৪৩০১-০৬, ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন ও সার্কুলেশন বিভাগ: ফোন: ৫৫০১৪৩০৮-১৪, ফ্যাক্স: ৫৫০১৪৩১৫