আলোকপাত

একুশের অর্থনীতি

ড. মোহাম্মদ আবদুল মজিদ

ছবি : বণিক বার্তা

কোনো কোনো বিশেষ ঘটনা, কোনো কোনো আত্মত্যাগ আদর্শগত কারণে সুদূরপ্রসারী তাৎপর্যবহ রূপ লাভ করতে পারে। সেই আত্মত্যাগ যদি হয়ে থাকে মহত্তম কোনো আদর্শের প্রশ্নে, সেই বিশেষ ঘটনায় যদি ঘটে অনির্বাণ আকাঙ্ক্ষার অয়োময় প্রত্যয়ের প্রতিফলন। স্থান-কাল-পাত্রের সীমানা পেরিয়ে সেই ঘটনা ভিন্নতর প্রেক্ষাপটেও নতুন নতুন চেতনার জন্মদাত্রী হিসেবে প্রতিভাত হয়ে থাকে। ২১ ফেব্রুয়ারি আমাদের জীবনে তেমনি এক অসীম তাৎপর্যপূর্ণ ঘটনা, যা আমাদের সার্বিক জাগরণের উৎসমুখও। একুশের চেতনা কখনো প্রত্যক্ষ, কখনো পরোক্ষ অনুপ্রেরণার সঞ্চারী হিসেবে অন্তরে অনির্বাণ শিখা হয়ে জ্বলে। একুশের চেতনা বারবার সংকটে দিকনির্দেশক, বিভ্রান্তিতে মোহজাল ছিন্নকারী এবং আপাত বন্ধ্যাত্বে সৃষ্টিমুখরতার দ্যোতক বলে প্রমাণিত হয়েছে।

সাত দশক আগে ১৯৫২-এর ২১ ফেব্রুয়ারিতে ঐতিহাসিক ভাষা আন্দোলনের যে প্রেক্ষাপট নির্মাণ হয়, তার তাৎক্ষণিক তাৎপর্য মাতৃভাষা বাংলার রাষ্ট্রীয় মর্যাদা প্রতিষ্ঠার প্রশ্নে সীমাবদ্ধ ছিল। কিন্তু কাল-পরিক্রমায় এর তাৎপর্যের পরিধি বিস্তৃত হয়। ১৯৪৭-এর ভারত বিভক্তির পর নবসৃষ্ট পাকিস্তান রাষ্ট্রের পূর্ববঙ্গ প্রদেশবাসীদের জাতীয় সত্তা ও সাংস্কৃতিক বৈশিষ্ট্যের বিকাশ বাধাগ্রস্ত হতে শুরু করে প্রথম থেকেই। পাকিস্তান রাষ্ট্রের সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণের মাতৃভাষাকে রাষ্ট্রীয় ভাষার স্বীকৃতিদানে প্রকাশ্য অস্বীকৃতি পূর্ববঙ্গবাসীদের জাতীয়তাবাদী চেতনার মর্মমূলে হানে আঘাত। ’৫২-এর ২১ ফেব্রুয়ারির আত্মত্যাগ ’৫৪-এর সাধারণ নির্বাচনে যুক্তফ্রন্টের বিজয়, ’৬২-এর শিক্ষা আন্দোলন, ’৬৬-এর ছয় দফা আন্দোলন ও ’৬৯-এর গণ-অভ্যুত্থানে এক নতুন প্রত্যয় ও প্রতীতি দান করে। ’৭১-এর মহান মুক্তিযুদ্ধে একুশের চেতনাই ছিল প্রাণশক্তি। সেই চেতনা ছিল ক্রমান্বয়ে ভাষা-সাহিত্য-সংস্কৃতি, সামাজিক ও সর্বোপরি রাজনৈতিক অর্থনীতির প্রেক্ষাপট। 

একুশের চেতনা যে সাংস্কৃতিক চেতনার জন্ম দেয় তার মধ্যে জাতীয়তাবোধের বিকাশমুখী আন্দোলনের একটা সুস্পষ্ট ইঙ্গিতও ছিল। একুশের চেতনা এমনই প্রগতিশীল ছিল, এমনই প্রগাঢ় ছিল যে যার জন্য স্বাধিকার আদায়ের সংগ্রাম তীব্রতর হয়েছিল। একুশের ভাবধারা প্রথমদিকে কতিপয় ছাত্রসমাজ ও বুদ্ধিজীবী মহলের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকলেও পরবর্তীকালে তাতে দেশের আপামর জনসাধারণও উদ্বুদ্ধ ও সংশ্লিষ্ট হয়ে পড়ে। একুশের মূল্যবোধ যা অন্যায়ের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে, স্বৈরাচারের পতনকার্যে একতাবদ্ধভাবে অংশগ্রহণ করতে, শোষণ-বঞ্চনার বিরুদ্ধে নিপীড়িত জনগণের পাশে এসে দাঁড়াতে এবং সর্বোপরি মানবতাবোধে উদ্বুদ্ধ হতে শিক্ষা দেয়। একুশের চেতনা দেশের সাহিত্য অঙ্গনেও এক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল। জাতীয়তাবোধের উচ্চারণে সমৃদ্ধ সাহিত্যের পাশাপাশি গণমুখী সাহিত্য রচনায় মনোনিবেশ করেন দেশের কবি-সাহিত্যিকরা। সাহিত্যধারায় সূচিত হয় এক নবযুগ। একুশের চেতনা স্বাধীনতা-পূর্ব বাংলাদেশে একটি মহান আত্মপ্রত্যয়ী, স্বধর্মে নিষ্ঠাবান এবং নিজ ঐতিহ্যের ধারক-বাহক হওয়ার জাতিসত্তার চেতনাকে জাগ্রত করেছিল। একুশের আন্দোলন ছিল মূলত বাঙালির আত্মমর্যাদা ও আত্মবিশ্বাসের উদ্বোধন।

স্বাধীনতা-উত্তর বাংলাদেশেও তাই একুশের চেতনা গোটা জাতির দীর্ঘ পরাধীনতার অভিশাপপ্রসূত দারিদ্র্য বিমোচনের মাধ্যমে আত্মসম্ভ্রমবোধ জাগিয়ে তোলার ক্ষেত্রে গঠনমূলক প্রতীতির জন্ম দিয়েছিল। এটা সুস্পষ্ট হয়ে ওঠে যে ব্যক্তি, সমাজ ও জাতীয় জীবনে স্বাধীনতার সুফল পৌঁছে দেয়ার মধ্যেই একুশের চেতনার সার্থক স্বীকৃতি। স্বাধীনতার স্পর্শে জাতীয় জীবনে নৈতিকতা, পরস্পর শ্রদ্ধাবোধ, সহনশীলতা, বলিষ্ঠ জাতীয় চরিত্র-চেতনার বিকাশ এবং দারিদ্র্যমোচনের মাধ্যমে স্বনির্ভরশীলতা অর্জনের মধ্যেই একুশের প্রকৃত প্রত্যয় নিহিত।

বায়ান্ন সালে ভাষা আন্দোলনের ব্যানারে চলেছিল মূলত বাঙালির আত্মরক্ষার সংগ্রাম আর স্বাধীনতা লাভের পর তা প্রতিভাত হয় আত্মবুদ্ধি ও চেতনা প্রসারে। আবেগের তীব্রতায় একুশের চেতনা স্বাধীনতা-পূর্ব বাংলাদেশে যেভাবে উদ্দীপ্ত ও উজ্জীবিত করেছিল সবাইকে, সেখানে মৃত্যুও তুচ্ছ ছিল। স্বাধীনতা-উত্তরকালে আজ সেই চেতনা আমাদের তা সম্মানসহকারে বেঁচে থাকার প্রেরণা জোগায় এবং যার জন্য এখন নিছক আবেগ নয়, সার্বিক উন্নয়ন অভিপ্সায় আজ সুষ্ঠু পথনকশা পরিকল্পনা প্রয়োজন। সমগ্র ও বিপুলভাবে বাঁচার প্রয়োজনে সমষ্টিগত পূর্ণাঙ্গ জীবনাদর্শ ও নিরুদ্ধ সাংস্কৃতিক প্রতিভার পূর্ণবিকাশ প্রয়োজন। জাতীয়তাবোধকে দীর্ঘায়ু করার লক্ষ্যে অর্থনীতিকে সুদৃঢ় করাও আবশ্যক। কৃষিভিত্তিক দেশে কৃষির বাস্তবমুখী প্রসার ঘটানোর মাধ্যমে সমাজ কাঠামো বিনির্মাণ যন্ত্র শিল্পের শ্রমিকের গুরুত্ব নির্ধারণে তার তৈরি পণ্যের প্রয়োজনীয়তাকে অর্থবহকরণ, কর্মে অনীহা দূরীকরণে এবং জনজীবন থেকে অদৃষ্টের দোহাই দূরীকরণের মাধ্যমে ভবিষ্যতের উন্নত জীবনবোধের প্রতিষ্ঠা নিশ্চিত করার তাগিদ অনুভূত হয়। একটি সংহত অর্থনৈতিক ভিত্তিতেই তা সম্ভব। বাংলাদেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হলে সমাজের সব স্তরের লোকদের বর্তমান ও ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা সম্পর্কে সচেতন হয়ে ওঠার কোনো বিকল্প নেই।

একুশের চেতনা গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ, জ্ঞানের অধিকারের প্রতি শ্রদ্ধাবোধ ও নিপীড়িত মানুষের প্রতি সম্মানবোধকে জাগিয়ে তুলেছিল। স্বাধীনতা-উত্তর বাংলাদেশে সেই মূল্যবোধের বলিষ্ঠ বিকাশ প্রত্যাশিত রয়ে গেছে আজও। তবে সেই মূল্যবোধের বাঞ্ছিত বিকাশের সুযোগ সুদূর পরাহত নয়। একুশের চেতনা কালপরিক্রমায় সেই মনোভঙ্গি ও দূরদৃষ্টিকে করে সবল ও স্বচ্ছ। অনেক চড়াই-উতরাই পেরিয়ে অনেক ত্যাগ-তিতিক্ষার মাধ্যমে বাঞ্ছিত লক্ষ্যে আজ এগিয়ে সবাই। এটি একুশের চেতনার অবিনশ্বর অভিযাত্রা।

দেশের বিপুল জনসমষ্টিকে মানবসম্পদে রূপান্তরের মধ্যেই সার্বিক অর্থনৈতিক মুক্তির উপায় নিহিত। স্বনির্ভর অর্থনীতি উৎসারিত আত্মমর্যাদাবোধ জাতীয় স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের অন্যতম রক্ষাকবচ। সে লক্ষ্যে পৌঁছতে হলে মানবসম্পদের উন্নয়ন আবশ্যক। বলিষ্ঠ চরিত্র চেতনা বিকাশের ক্ষেত্রে এটি এক মুখ্য বিবেচ্য বিষয়। নৈতিকতা, দেশপ্রেম ও আত্মমর্যাদাবোধের ভিত্তি রচনা করে যেসব চরিত্র-চেতনা, তার বলিষ্ঠ ও বাঞ্ছিত বিকাশ প্রয়োজন। একুশের চেতনা সেই আকাঙ্ক্ষাকে অর্থবহ রূপদান করতে পারে। ইতিহাসের বিচিত্র পরিক্রমণে কখনো মানুষের নেতৃত্বে যুগের পরিবর্তন ঘটে, কখনো-বা ঘটনার নেতৃত্বাধীনে মানুষ পরিবর্তিত মূল্যবোধে সংস্কৃত হয়ে ওঠে। একুশের চেতনা এ মুহূর্তে দেশবাসীকে সেই প্রত্যয় ও প্রতিজ্ঞার কথা স্মরণ করিয়ে দিতে পারে এবং জাগাতে পারে শক্তি ও সাহস। নৈতিক চরিত্র ও কর্তব্যবোধকে সচেতন করতে মূল্যবোধ সংকট উত্তরণে সচেষ্ট হতে দেশের চিন্তাভাবনার রাজ্যে ও মূল্যবোধের প্রাসাদে একুশের চেতনার সজীব উপস্থিতি একান্ত আবশ্যক।

যেমন অমর একুশে এখন ‘‌একুশে গ্রন্থমেলা’র প্রতীকী প্রকাশে দীপান্বিত হচ্ছে। ১৯৭২ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি জনপ্রিয় প্রকাশক চিত্তরঞ্জন সাহা বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণের বটতলায় কলকাতায় সৃজিত তার মুক্তধারা প্রকাশনীর কিছু বই নিয়ে মেলার সূচনা করেন। ১৯৭২ থেকে ১৯৭৮ সাল পর্যন্ত স্বল্প পরিসরে মেলা চলতে থাকে, ১৯৭৮ সালে বাংলা একাডেমির তৎকালীন মহাপরিচালক বাংলা একাডেমিকে বই মেলার সঙ্গে সমন্বিত করেন। তারই উদ্যোগে ১৯৭৯ সাল থেকে বাংলাদেশ পুস্তক বিক্রেতা ও প্রকাশক সমিতি বইমেলার ব্যবস্থাপনায় অংশীদার হয়ে ওঠে। ১৯৮৩ সালে বাংলা একাডেমি কর্তৃক প্রাতিষ্ঠানিকভাবে বইমেলার আয়োজনের দায়দায়িত্ব গৃহীত হয়। ১৯৮৪ সাল থেকে পুরো উদ্যমে মেলা অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে এবং বাংলা একাডেমি চত্বরে জায়গা না হওয়ায় ২০১৪ সাল থেকে বইমেলা সোহরাওয়ার্দী উদ্যান পর্যন্ত সম্প্রসারিত হয়েছে। শোনা যায়, আগামীবার থেকে বইমেলা সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সম্প্রসারিত হবে না। 

অমর একুশে বইমেলা কেন্দ্র করে প্রতি বছর অসংখ্য নতুন বই প্রকাশ হয়। মেলায় অংশগ্রহণ করেন উদ্যোক্তা সংস্থা, লেখক-লেখিকা, পাঠক ও প্রকাশক যার সঙ্গে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের একটি যোগসূত্র রয়েছে। এসব অংশীদারের নিজস্ব একটা ব্যবসায়িক দিক রয়েছে শিল্প-সংস্কৃতিচর্চার অন্তরালে। বাংলা একাডেমি এ আয়োজন থেকে যে রাজস্ব আয় করে থাকে তা বাংলা একাডেমির মতো একটি স্বায়ত্তশাসিত সংস্থার জন্য অন্যতম আয়ের উৎস। এ বাড়তি আয় সরকারের রাজস্ব আয়ের ভাণ্ডারেও যেমন নতুন সংযোজন, তেমনি সরকারের রাজস্ব ব্যয় খাতে সাশ্রয়ী সোপান হিসেবে কাজ করে। যারা স্টল বরাদ্দ নিয়ে তাদের বই প্রদর্শনের আয়োজন করেন বিক্রির উদ্দেশ্যে (যার মধ্যে প্রকাশক, লেখক, ব্যবসায়ী), তাদেরও দিন শেষে আয়-ব্যয়ের একটি ইতিবাচক স্থিতিপত্র রচিত হয়। বইমেলা নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি করে, বেকারত্বের অবসান ঘটায়। সেই হিসেবে একুশে বইমেলা বই বিক্রেতা, প্রকাশক, ছাপাখানা, বই বাইন্ডিং ইত্যাদি খাতে জড়িতদেরও কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে সহায়তা করে। একটি বইকে পূর্ণাঙ্গ রূপ দিতে থাকে অনেক মানুষের অবদান, যেমন প্রথমত লেখক লেখেন, কম্পোজিটর হাতের লেখাকে কম্পিউটারে কম্পোজ করেন, প্রচ্ছদ শিল্পী বইয়ের চরিত্র অনুযায়ী প্রচ্ছদ আঁকেন, প্রকাশক পাণ্ডুলিপিভেদে নির্ধারিত মাপে কাঠামো দাঁড় করান, এরপর কাগজে প্রিন্ট করার পর পাণ্ডুলিপি যায় বানান সংশোধকের কাছে, লেখক-প্রকাশকের সম্মিলিত উদ্যোগে পাণ্ডুলিপি ফাইনাল করা হলে প্রেসে যায়’, ছাপার পর বই বাঁধাইয়ের সঙ্গে একটি মোটা অংকের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড সংশ্লিষ্ট হয়ে ওঠে। 

শত শত ছাপাখানা, বাঁধাইখানা দু-তিন মাস ধরে কম্পোজ, পেস্টিং, প্লেট, ফাইনাল শব্দে মুখর হয়ে ওঠে। ছুটি বাতিল করে বইয়ের কারিগররা দিন-রাত পরিশ্রম করেন প্রতিটি ছাপাখানায়। কারখানা-সংলগ্ন কম্পোজের দোকানগুলোর ব্যস্ততা থাকে চরমে, যেন কথা বলার সময়টুকু নেই কারো। ছাপা, বাঁধাই ও নান্দনিক মোড়ক লাগানোর পর কর্মচারীর হাত থেকেই বই চলে যায় অমর একুশে গ্রন্থমেলায়। বছরের বেশির ভাগ সময় বসে থাকলেও বইমেলার কারণে ব্যস্ততা বেড়ে যায়, প্রতিদিন ৫০-৬০ সেট করে বই ডেলিভারি দিতে হয়। সব মিলিয়ে কাজের চাপ অনেক বাড়ে। অন্যান্য মাসের চেয়ে শ্রমিকরাও নিয়মিত বেতনের চেয়ে ১০-১৫ হাজার টাকা বাড়তি আয় করেন মেলার কয়েক মাস আগে থেকেই। মেলা উপলক্ষে প্রায় ৩০ শতাংশ বই প্রকাশিত হয় নতুন। সারা বছরই বই প্রকাশের কাজ চললেও বইমেলা উপলক্ষে ছাপাখানা ও বাঁধাইখানায়ও কাজের চাপ বাড়ে। ফলে এখানে খণ্ডকালীন চাকরির সুযোগ হয়, মজুরিও দিতে হয় তুলনামূলক বেশি, ঘণ্টা হিসেবে, দৈনিক হিসেবে, মাসিক হিসেবে নানাভাবে শ্রমিক নিয়োগ দেয়া হয়। 

বই প্রকাশনাকে শিল্প হিসেবে বিবেচনার বিকল্প নেই। বই ছাপানোর কাগজ ও কালি দেশে তৈরি হলেও উপকরণ বিদেশ থেকে আমদানি করতে হয়। ইউক্রেন রাশিয়ার সমর আমদানি খরচ আগের তুলনায় বেড়েই চলেছে। বইমেলায় স্টল ভাড়া এবং বিক্রেতা হিসেবে যারা আছে সব ক্ষেত্রেই ব্যয় আগের তুলনায় বেশি। সুস্থ ও সুন্দর জাতি গড়ে তুলতে বইয়ের কোনো তুলনা নেই। বই শিল্পকে মূল্যবৃদ্ধির প্রভাবমুক্ত রাখার বিবেচনার অবকাশ রয়েছে। উৎপাদন ছাড়া বই বিপণনের ক্ষেত্রেও বিজ্ঞাপন ব্যবসা, দৈনিক পত্রিকা থেকে শুরু করে অনলাইন নিউজ পোস্টার ও বইমেলাকেন্দ্রিক বুলেটিনে ছাপানো হয় কোটি কোটি টাকার বিজ্ঞাপন। পণ্য হিসেবে বইয়ের ক্রেতা—যেমন কেউ ছাত্রছাত্রী, গবেষক, শৌখিন ক্রেতা, কবি-সাহিত্যিক, খুদে পাঠক, প্রাতিষ্ঠানিক প্রতিনিধি যারা নিজের প্রতিষ্ঠানের গ্রন্থাগারকে সমৃদ্ধ করার জন্য ক্রেতা হিসেবে আবির্ভূত হয়। একুশের বইমেলা নিজেই একটি অর্থনীতিতে রূপান্তরিত হয়। একুশের চেতনা এভাবেই সুদূরপ্রসারী ভূমিকায় দিকদর্শন হয়ে উঠছে আমাদের দেশ, সমাজ ও সাহিত্যে। 

ড. মোহাম্মদ আবদুল মজিদ: সাবেক সচিব ও এনবিআর চেয়ারম্যান

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন