ঢাকায় গতকাল শুক্রবার (১২ জানুয়ারি)
সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড হয়েছিল যথাক্রমে ২২ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস
ও ১৩ দশমিক ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এদিন চুয়াডাঙ্গা ও কিশোরগঞ্জে দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা
রেকর্ড করা হয়েছিল ৯ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
তাপমাত্রা উল্লেখ করে বিবিসি বাংলার
এক প্রতিবেদনে বলা হয়, কয়েকটি জেলা বাদে কোথাও শৈত্যপ্রবাহ না চললেও প্রচণ্ড শীতে ঢাকাসহ
সারাদেশেই জনজীবন পর্যুদস্ত। আবহাওয়াবিদরা বলছেন, পুরো জানুয়ারিজুড়েই শীতের প্রকোপ
থাকবে।
আবহাওয়া অফিসের পূর্বাভাসে বলা হয়েছে,
আকাশ কিছুটা মেঘলা থাকলেও আগামী তিনদিন আবহাওয়া শুষ্ক থাকতে পারে। এসময় মধ্যরাত থেকে
সকাল পর্যন্ত সারাদেশে মাঝারি থেকে ঘন কুয়াশা পড়তে পারে, যা দুপুর পর্যন্তও থাকতে পারে।
কুয়াশার কারণে বিমান চলাচল, নৌ পরিবহন
এবং সড়ক যোগাযোগে সাময়িকভাবে বিঘ্ন ঘটতে পারে বলে গতকাল প্রকাশিত বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে।
সারাদেশে দিন ও রাতের তাপমাত্রার হ্রাস-বৃদ্ধিসহ
দেশের কোথাও কোথাও দিনে ঠাণ্ডা পরিস্থিতি থাকতে পারে।
এত শীতের কারণ কী? এমন প্রশ্নে বাংলাদেশ
আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ ড. মুহাম্মদ আবুল কালাম মল্লিক বলেন, সর্বোচ্চ এবং সর্বনিম্ন
তাপমাত্রার পার্থক্য যদি ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে আসে, সেখানে শীতের অনুভূতি বাড়তে
থাকে। কিন্তু পার্থক্য যদি পাঁচ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে নেমে আসে তবে শীতের অনুভূতি
প্রকট থেকে প্রকটতর হয়। অর্থাৎ হাড়কাঁপানো শীত অনুভূত হয়।
গতকাল শুক্রবারের বিভিন্ন জেলার সর্বোচ্চ
ও সর্বনিম্ন তাপমাত্রার তুলনা করে দেখা গেছে রংপুর, দিনাজপুর, তেতুলিয়ার মতো উত্তরবঙ্গের
বেশিরভাগ অঞ্চলেই তাপমাত্রার পার্থক্য পাঁচ ডিগ্রি সেলসিয়াসের কম।
এছাড়া ঢাকা, বগুড়া, ময়মনসিংহ ও সিলেট
অঞ্চলেও তাপমাত্রার পার্থক্য ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের কম।
বেশিরভাগ জেলাতেই সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন
তাপমাত্রার পার্থক্য কমে যাওয়াতে শীতের অনুভূতি বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং কোথাও কোথাও তা তীব্র
থেকে তীব্রতর হচ্ছে বলে ড. মুহাম্মদ আবুল কালাম।
নিয়ম অনুযায়ী, তাপমাত্রা ৮-১০ ডিগ্রি
সেলসিয়াস হলে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ, ৬-৮ ডিগ্রি সেলসিয়াসে নামলে মাঝারি শৈত্যপ্রবাহ আর
৪-৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস হলে তীব্র শৈত্যপ্রবাহ ধরা হয়। আর তাপমাত্রা ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াসের
নিচে নেমে গেলে হয় অতি তীব্র শৈত্যপ্রবাহ।
আপাতভাবে কিশোরগঞ্জ, ঈশ্বরদী ও চুয়াডাঙ্গার
তাপমাত্রাই কেবল ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে আছে। তবে শীতের তীব্রতা সারাদেশেই অনুভূত
হচ্ছে। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে বাতাসের গতিবেগ। আবহাওয়াবিদ ড. মুহাম্মদ আবুল কালাম বলেন,
বাতাসের গতিবেগ তুলনামূলকভাবে একটু বেশি থাকার কারণে রাজশাহী, রংপুর, ময়মনসিংহ, সিলেট
এবং ঢাকার পশ্চিমাঞ্চল ও খুলনার ওপরের দিকে যশোর, সাতক্ষীরা, কুষ্টিয়া, চুয়াডাঙ্গা-
এসব অঞ্চলে শীতের অনুভূতি তীব্র থেকে তীব্রতর হচ্ছে।
এছাড়া ঊর্ধ্ব আকাশের বাতাস খুব ঠাণ্ডা
হওয়ায় কোনো কোনো ক্ষেত্রে ‘জেড স্ট্রিম’ বা প্রচণ্ড গতিবেগ সম্পন্ন বাতাস কখনো নিচে
নেমে আসছে, কখনো ওপরে উঠে যাচ্ছে, যেটা ভাইব্রেট (কম্পন) হচ্ছে।
অর্থাৎ ঊর্ধ্ব আকাশের বাতাসের নিম্নমুখী
বিচরণ হচ্ছে। এই নিম্নমুখী বিচরণও অনেক সময় শীতের অনুভূতিকে বাড়িয়ে দেয় বলে জানান এ
আবহাওয়াবিদ।
পুরো জানুয়ারি মাসজুড়েই শীতের অনুভূতি
থাকবে বলে জানিয়েছেন তিনি। তবে ১৬ থেকে ১৮ জানুয়ারির দিকে দেশজুড়ে অস্থায়ীভাবে দমকা
হাওয়া ও ঝড়ো বাতাসসহ বৃষ্টি বা বজ্রসহ বৃষ্টি হবার সম্ভাবনা রয়েছে।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের বর্ধিত পাঁচ দিনের
আবহাওয়ার অবস্থায় বৃষ্টি ও বজ্রসহ বৃষ্টির পূর্বাভাস করা হয়েছে।
এই বৃষ্টিপাত থেমে গেলে তাপমাত্রা কমে
গিয়ে ২০ জানুয়ারির পর মৃদু বা মাঝারি ধরনের শৈত্যপ্রবাহ আবার শুরু হতে পারে।