৭৪তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর বক্তৃতায় রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েন

বহিরাগত হস্তক্ষেপের বিরোধিতায় বাংলাদেশকে সমর্থন করে চীন

নিজস্ব প্রতিবেদক

ছবি: ঢাকার চীনা দূতাবাস

বাংলাদেশের জাতীয় সার্বভৌমত্ব, স্বাধীনতা ও আঞ্চলিক অখণ্ডতা রক্ষায় এবং বহিরাগত হস্তক্ষেপের বিরোধিতায় সমর্থন করে চীন। যাতে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ ঐক্য ও স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে পারে এবং উন্নয়ন ও পুনরুজ্জীবন অর্জন করতে পারে- এসব কথা বলেছেন বাংলাদেশে নিযুক্ত চীনের রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েন।

গতকাল সোমবার (২৫ সেপ্টেম্বর) রাজধানীর একটি হোটেলে চীনের ৭৪তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন তিনি।

রাষ্ট্রদূত বলেন, চীন ও বাংলাদেশ অটল পারস্পরিক আস্থাসহ সময়ের পরীক্ষিত বন্ধু। ২০১৬ সালে চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যৌথভাবে আমাদের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ককে সহযোগিতার কৌশলগত অংশীদারিত্বে উন্নীত করেছেন। যা ২০১৯ সালে চীনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকারি সফরের সময় আরো গভীর হয়েছে।

গত মাসে দুই নেতা চার বছর পর দক্ষিণ আফ্রিকায় একটি সফল বৈঠক করেন, সেখানে চীন-বাংলাদেশ সম্পর্কের উন্নয়নে কৌশলগত দিকনির্দেশনা পায় বলেও উল্লেখ করেন তিনি।

ইয়াও ওয়েন বলেন, দুই পক্ষই দীর্ঘদিন ধরে একে অপরকে নিজ নিজ মূল স্বার্থ ও উদ্বেগের বিষয়ে সমর্থন করে আসছে। চীন বাংলাদেশের জাতীয় সার্বভৌমত্ব, স্বাধীনতা ও আঞ্চলিক অখণ্ডতা রক্ষায় এবং বহিরাগত হস্তক্ষেপের বিরোধিতা করতে সমর্থন করে। যাতে দেশটি অভ্যন্তরীণ ঐক্য ও স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে পারে এবং উন্নয়ন ও পুনরুজ্জীবন অর্জন করতে পারে। বাংলাদেশ দৃঢ়ভাবে এক-চীন নীতি অনুসরণ করে এবং আঞ্চলিক শান্তি ও স্থিতিশীলতা বৃদ্ধিতে চীন যে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে তার প্রশংসা করে। উভয় পক্ষ কৌশলগত সহযোগিতা আরো গভীর করতে এবং এর মাধ্যমে চীন-বাংলাদেশ সম্পর্ককে নতুন যুগে উচ্চতর স্তরে উন্নীত করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।

চীন বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্কের উন্নতিকে অত্যন্ত গুরুত্ব দেয় উল্লেখ করে ইয়াও ওয়েন বলেন, দূতাবাস দুই দেশের মধ্যে কৌশলগত অংশীদারিত্বকে একটি নতুন স্তরে উন্নীত করার জন্য সর্বস্তরের বাংলাদেশী বন্ধুদের সঙ্গে যৌথ প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। আমি বাংলাদেশে চীনা সংস্থাগুলোকে সক্রিয়ভাবে সামাজিক দায়িত্ব পালনের জন্য এবং বাংলাদেশের চীনা নাগরিকদের স্থানীয় সমাজে আরো একীভূত হওয়ার আহ্বান জানাই, যাতে দুই দেশের মধ্যে বন্ধুত্বের প্রচারে আরও বেশি অবদান রাখতে পারে।

ইয়াও ওয়েন বলেন, একটি দেশের সঙ্গে আরেকটি দেশের ভাল সম্পর্ক উদ্ভূত হয় ঘন ঘন যোগাযোগের মাধ্যমে জনগণের মধ্যে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক থেকে।

জনগণের মধ্যে মিথস্ক্রিয়া ও সাংস্কৃতিক বিনিময়কে আরো জোরদার করতে চীন ও বাংলাদেশের নেতাদের মধ্যে এ বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ ঐকমত্য রয়েছে বলেও জানান রাষ্ট্রদূত।

তিনি বলেন, চীন আন্তর্জাতিক ভ্রমণ ও কর্মী বিনিময়ের বিশাল চাহিদা মেটাতে একাধিক সুবিধামূলক ব্যবস্থা চালু করেছে। আপাতত দুই দেশের মধ্যে সপ্তাহে ৫০টি সরাসরি ফ্লাইট রয়েছে, যেখানে ১০ হাজার লোকের যাতায়াতের সক্ষমতা রয়েছে।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান। আরো উপস্থিত ছিলেন জাতীয় সংসদের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সভাপতি ফারুক খান, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী ড. মো. এনামুর রহমান, সেনাবাহিনীর চিফ অব জেনারেল স্টাফ লেফটেন্যান্ট জেনারেল আতাউল হাকিম সারওয়ার হাসান, কোয়ার্টার মাস্টার জেনারেল লেফটেন্যান্ট জেনারেল মো. সাইফুল আলম, আলিফা চিন ও তার পরিবারের সদস্যরা, সরকারি সংস্থার প্রধান, সামরিক ও রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধি, কূটনৈতিক মিশনের প্রধানরাসহ এক হাজারেরও বেশি অতিথি। এছাড়া ছিলেন বাংলাদেশে আন্তর্জাতিক সংস্থার প্রতিনিধি, চীনা কোম্পানির প্রতিনিধি, কনফুসিয়াস ইনস্টিটিউট ও বাংলাদেশের চীনা সম্প্রদায় এবং গণমাধ্যম ও থিঙ্ক ট্যাঙ্ক সদস্যরা।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন