বেক্সিমকোর গ্রিন সুকুকের ৪২২ কোটি টাকার সাবস্ক্রিপশন

প্রাইভেট প্লেসমেন্টে সংগ্রহ করা হবে ২ হাজার ৪২৮ কোটি টাকা

নিজস্ব প্রতিবেদক

পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত বেক্সিমকো লিমিটেডের গ্রিন সুকুক আত ইসতিসনার পাবলিক সাবস্ক্রিপশন শেষ হয়েছে। পাবলিক অফারের জন্য নির্ধারিত ৭৫০ কোটি টাকার মধ্যে ৪২২ কোটি টাকা বা ৫৬ দশমিক শতাংশ আবেদন জমা হয়েছে। নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) বাধ্যবাধকতা অনুসারে ন্যূনতম ৩০ শতাংশ সাবস্ক্রিপশন না হলে সুকুকটি বাতিল হয়ে যেত। পাবলিক সাবস্ক্রিপশন শেষে বর্তমানে প্রাইভেট প্লেসমেন্টের মাধ্যমে হাজার ৪২৮ কোটি টাকা সংগ্রহের প্রক্রিয়া চলছে।

বেক্সিমকোর হাজার কোটি টাকার শরিয়াহভিত্তিক সুকুকটির প্রাইভেট প্লেসমেন্ট প্রাথমিক গণপ্রস্তাবের (আইপিও) মাধ্যমে অর্থ সংগ্রহ করা হবে। এর মধ্যে প্রাইভেট প্লেসমেন্টের মাধ্যমে ৭৫০ কোটি টাকা বিদ্যমান শেয়ারহোল্ডারদের কাছ থেকে আর হাজার ৫০০ কোটি টাকা বিদ্যমান শেয়ারহোল্ডারদের বাইরে অন্য বিনিয়োগকারীদের কাছ থেকে সংগ্রহ করা হবে। এর বাইরে ৭৫০ কোটি টাকা আইপিওর মাধ্যমে সংগ্রহ করা হবে। প্রতিটি সুকুকের অভিহিত মূল্য ১০০ টাকা। একজন বিনিয়োগকারীর জন্য ন্যূনতম ৫০টি সুকুক বরাদ্দ রয়েছে। এক্ষেত্রে ন্যূনতম সাবস্ক্রিপশন ফি হাজার টাকা।

আইপিওর মাধ্যমে বরাদ্দকৃত ৭৫০ কোটি টাকার মধ্যে ৪২২ কোটি টাকার সাবস্ক্রিপশন হয়েছে। এর মধ্যে যোগ্য বিনিয়োগকারীরা (ইআই) কিনেছেন ৩৬০ কোটি টাকা এবং সাধারণ বিনিয়োগকারীরা কিনেছেন ৬২ কোটি টাকার সুকুক। এর বাইরে ২০ শতাংশ বা ১৫০ কোটি টাকা অবলেখন করা রয়েছে। এর মধ্যে ১০০ কোটি টাকা অগ্রণী ইকুইটি অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট এবং এআইবিএল ক্যাপিটাল ম্যানেজমেন্ট এবি ব্যাংক ইনভেস্টমেন্ট ২৫ কোটি টাকা করে মোট ৫০ কোটি টাকা অবলেখন করেছে। ফলে নির্ধারিত ৭৫০ কোটি টাকার মধ্যে বাকি রয়েছে ১৭৮ কোটি টাকা। নিয়মানুসারে অবশিষ্ট অর্থ চাইলে প্রাইভেট প্লেসমেন্টের মাধ্যমে সংগ্রহ করার সুযোগ রয়েছে। এতে প্রাইভেট প্লেসমেন্টের মাধ্যমে সুকুকটির সংগৃহীতব্য অর্থের পরিমাণ হাজার ২৫০ কোটি থেকে বেড়ে হাজার ৪২৮ কোটি টাকায় দাঁড়িয়েছে।

বেক্সিমকোর গ্রিন সুকুকের পাবলিক অফারের মাধ্যমে ৭৫০ কোটি টাকা সংগ্রহের জন্য বছরের ১৬ আগস্ট থেকে সাবস্ক্রিপশন শুরু হয়। প্রথম দফায় সাবস্ক্রিপশনের শেষ সময় নির্ধারিত ছিল বছরের ২৩ আগস্ট বিকাল সাড়ে ৫টা পর্যন্ত। এরপর দ্বিতীয় দফায় ১০ কার্যদিবস সময় বাড়িয়ে সেপ্টেম্বর বিকাল সাড়ে ৫টা পর্যন্ত করা হয়েছিল। সময়ের মধ্যে উল্লেখযোগ্যসংখ্যক সাবস্ক্রিপশন না হওয়ার কারণে তৃতীয় দফায় ২৪ কার্যদিবস সময় বাড়িয়ে ৩০ সেপ্টেম্বর বিকাল সাড়ে ৫টা পর্যন্ত নির্ধারণ করা হয়।

বেক্সিমকো গ্রিন সুকুক আত ইসতিসনা নামে হাজার কোটি টাকার শরিয়াহভিত্তিক বন্ডটির মাধ্যমে সংগৃহীত অর্থ বেক্সিমকো লিমিটেডের সাবসিডিয়ারি তিস্তা সোলার লিমিটেড করতোয়া সোলার লিমিটেডের নির্মাণকাজে ব্যয় করা হবে। এছাড়া বেক্সিমকোর বস্ত্র খাতের ব্যবসা সম্প্রসারণে প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি কেনা এবং পরিবেশ উন্নয়ন সংরক্ষণ নিশ্চিত করতে অর্থ ব্যবহার করা হবে। বেক্সিমকো গ্রিন সুকুক ট্রাস্ট নামে স্পেশাল পারপাস ভেহিকলের মাধ্যমে সুকুক ইস্যু করা হবে।

সুকুকের মেয়াদ হবে পাঁচ বছর। শতাংশ ভিত্তিমূল্যের সঙ্গে মার্জিন যোগ করে ছয় মাস অন্তর বন্ডটিতে বিনিয়োগের বিপরীতে রিটার্ন দেয়া হবে। বেক্সিমকো লিমিটেডের আগের বছরের বার্ষিক সাধারণ সভায় (এজিএম) ঘোষিত লভ্যাংশ ভিত্তিমূল্যের ব্যবধানের ১০ শতাংশ মার্জিন হিসেবে নির্ধারণ করা হবে। যদি লভ্যাংশের হার ভিত্তিমূল্যের সমান বা কম হয় সেক্ষেত্রে ভিত্তিমূল্যের হিসাবে রিটার্ন প্রদান করা হবে। আর লভ্যাংশ শতাংশের বেশি হলে তার ১০ শতাংশ সুকুকের মুনাফার সঙ্গে যুক্ত হবে।

সুকুকে বিনিয়োগকারীদের বিনিয়োগের শতভাগ বেক্সিমকো লিমিটেডের শেয়ারে রূপান্তরের সুযোগ থাকবে। এক্ষেত্রে প্রতি বছর সর্বোচ্চ ২০ শতাংশ হারে সুকুক শেয়ারে রূপান্তর করা যাবে। গুণিতক হারে অর্থাৎ , ১০, ১৫ ২০ শতাংশ রূপান্তরের সুযোগ থাকছে। কোনো বছর শেয়ারে রূপান্তরের সুযোগ গ্রহণ না করলে সেটি পরবর্তী বছরের করা যাবে। রূপান্তরের মূল্য নির্ধারিত হবে রেকর্ড তারিখের আগের ২০ কার্যদিবসে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) বেক্সিমকোর শেয়ারের ভারিত গড় মূল্যের ৭৫ শতাংশ। যদি কোনো বিনিয়োগকারী সুকুককে শেয়ারে রূপান্তর করতে না চান, তাহলে পাঁচ বছরে ওই সুকুকের অবসায়ন হবে।

গত মাসে অনুষ্ঠিত বিএসইসির ৭৭৯তম কমিশন সভায় বেক্সিমকো লিমিটেডের সুকুকটি অনুমোদন করা হয়। এর আগে বছরের এপ্রিলে বেক্সিমকো লিমিটেডের হাজার কোটি টাকার সুকুক ইস্যুর পরিকল্পনায় অনুমোদন দিয়েছেন কোম্পানিটির শেয়ারহোল্ডাররা। বেক্সিমকোর সুকুক অনুমোদনের ক্ষেত্রে বেশকিছু শর্তারোপ করেছে বিএসইসি। মূলত শরিয়াহভিত্তিক গ্রিন বন্ডের বিনিয়োগকারীদের সুরক্ষা নিশ্চিত করতেই এসব শর্তারোপ করা হয়েছে।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন