স্বাস্থ্যবিধি মেনে পরীক্ষামূলকভাবে এবার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেয়া হোক

জালালউদ্দিন ওমর

করোনা ভাইরাসে পুরো পৃথিবীটাই এখন আক্রান্ত । দেশে দেশে করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে ইতিমধ্যে  আট লক্ষাধিক মানুষ মারা গেছে এবং  দু’কোটির বেশি মানুষ আক্রান্ত হয়েছে । করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে নিহত এবং অসুস্থ হওয়া অব্যাহত রয়েছে । আক্রান্তদের অনেকেই সুস্থ হয়ে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে এসেছে এবং এ ক্ষেত্রে সুস্থতার হার নব্বই শতাংশের বেশি । করোনা  ভাইরাস থেকে রক্ষা পেতে  বিশ্বের  প্রায় প্রতিটি দেশই কিছু সময়ের জন্য নিজেদেরকে লকডাউন করেছে । এই লকডাউনের সময় দেশে দেশে অফিস আদালত, কলকারখানা, নির্মাণ কাজ, স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়, খেলাধুলা, যানবাহন চলাচল, যাতায়াত, শপিং মল, পর্যটন, হোটেল রেস্তোরাঁ এবং এক কথায় সবই বন্ধ ছিল। যা কিছু চালু ছিল তা সীমিত আকারেই চালু ছিল । ফলে বিশ্ব জুড়ে মানুষের জীবনে এক প্রকার স্থবিরতা নেমে আসে । এই লকডাউনের সময় অর্থনীতির চাকা বন্ধ থাকায় অর্থনীতিতে বির্পযয় নেমে আসে । শ্রমজীবী এবং দিনে এনে দিনে খাওয়া মানুষ গুলো কর্মহীন হয়ে পড়ে , ফলে তাদের জীবনে সীমাহীন কষ্ট নেমে আসে । এ সময়ে প্রতিটি দেশের সরকার জনগণকে  আর্থিক  সাহায্য দিয়েছে , ব্যবসায়ী এবং শিল্পপতিদেরকে আর্থিক  প্রণোদনা দিয়েছে ।  লকডাউনের কারণে সৃষ্ট ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে প্রতিটি দেশই বেইলআউট প্যাকেজ  ঘোষণা করেছে । বাংলাদেশ সরকার ও মানুষকে সাধ্যমত সাহায্য করেছে, জনগণের পাশে দাঁড়িয়েছে এবং প্রণোদনা দিয়েছে । কিন্তু দীর্ঘমেয়াদে লকডাউন কোনো অবস্থায়ই সমাধান নয় । তাই পৃথিবীর প্রতিটি  দেশই ২/৩ মাস পর ক্রমান্বয়ে লকডাউন তুলে নেয় এবং আস্তে আস্তে সব কিছু খুলে দিতে শুরু করে । ফলে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড পুনরায় চালু হতে শুরু করে এবং বর্তমানে বিশ্বব্যাপী মানুষের জীবনযাত্রা প্রায় স্বাভাবিক । মূলত মানবজাতির জন্য এর কোনো বিকল্প নেই ।

করোনাভাইরাসের প্রকোপ ঠেকাতে বাংলাদেশ সরকার মার্চের শেষে সাধারণ ছুটি ঘোষণা করে। অফিস আদালতে, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সাধারণ ছুটি এবং যানবাহন চলাচল ও দোকান পাঠ বন্ধ ঘোষণা করায় বাংলাদেশেও লকডাউন শুরু হয়। এই লকডাউনের সময়  অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড প্রায় বন্ধ হয়ে যায়। এদেশে মূলত এপ্রিল এবং মে –এই দুই মাস লকডাউন ছিল । জুনের শুরু থেকেই সরকার স্বাস্থ্যবিধি মেনে অন্যান্য দেশের মত লকডাউন শিথিল করা শুরু করে ।  আস্তে আস্তে অফিস , কল কারখানা, দোকানপাট, শপিং মল চালু  করে । যাতায়াতের জন্য বাস, ট্রেন, লঞ্চ এবং বিমান চলাচল ও শুরু করে । লকডাউনের সময় ব্যাংক-বীমা সীমিত পরিসরে চালু থাকলে ও লকডাউন পরবর্তী সময়ে এসবের কর্মপরিধি বেড়েছে । পুঁজিবাজার ও চালু হয়েছে । খেলাধুলা ও শুরু হয়েছে এবং হোটেল-রেস্টুরেন্ট ও চালু হয়েছে । পর্যটন কেন্দ্রসমূহ ও খুলে দেয়া হয়েছে । এভাবে পুনরায় অর্থনৈতিক কর্মকান্ড চালু হয় এবং ক্রমান্বয়ে এর পরিধি আস্তে আস্তে বেড়েছে । ইতিমধ্যেই সরকার তার সকল সুস্থ কর্মকর্তা-কর্মচারীদেরকে নিয়মিত অফিসে উপস্থিত থাকার নির্দেশ দিয়েছে । বাংলাদেশ ব্যাংক ও সকল ব্যাংকের সুস্থ কর্মকর্তা-কর্মচারীদেরকে নিয়মিত অফিসে উপস্থিত থাকার নির্দেশ দিয়েছে ।অর্থাৎ সুস্থ ব্যক্তিদের জন্য বাড়িতে বসে অফিস করার সুযোগ বাতিল করা হয়েছে । বর্তমানে এদেশে জীবন যাত্রা প্রায় স্বাভাবিক হয়ে এসেছে । শহরে প্রচুর জনগন চলা ফেরা করছে । কিন্তু সকল প্রকার শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এখনো বন্ধ রয়েছে । এ অবস্থায়  মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর প্রতি  বিনীত  অনুরোধ বলে বলছি , স্বাস্থ্যবিধি মেনে পরীক্ষামূলকভাবে  এবার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসমূহ খুলে দিন । কারণ দীর্ঘ দিন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসমূহ বন্ধ থাকার কারণে শিক্ষা ব্যবস্থার অনেক ক্ষতি হয়েছে এবং শিক্ষার্থীদের ও অনেক ক্ষতি হয়েছে । তাছাড়া দীর্ঘ মেয়াদে এভাবে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকতে পারে না । আজ হোক, কাল হোক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান কিন্তু খুলতেই হবে । যেহেতু করোনার প্রকোপ অনেকটাই কমে এসেছে এবং দীর্ঘদিন বন্ধের কারণে ইতিমধ্যেই শিক্ষা ব্যবস্থার অনেক ক্ষতি হয়েছে , তাই শিক্ষা ব্যবস্থার ক্ষতি কাঠিয়ে ওঠতে স্বাস্থ্যবিধি মেনে পরীক্ষামূলকভাবে এবার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো  খুলে দেয়া হোক । শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলে দেয়ার কারণে যদি কোন সমস্যা দেখা দেয় তাহলে প্রয়োজনে পুনরায় বন্ধ করে দেয়ার সুযোগ তো হাতেই রয়েছে । 

চিকিৎসা বিজ্ঞানীরা করোনাভাইরাস থেকে রক্ষা পেতে কিছু স্বাস্থ্য বিধি মেনে চলার কথা বলেছেন । সেগুলো হচ্ছে কিছুক্ষণ পর পর সাবান দিয়ে কমপক্ষে বিশ সেকেন্ড হাত ধোয়া, মুখে মাস্ক পরা এবং যতটুকু সম্ভব ঘরে অবস্থান করা । অপরিষ্কার হাত মুখে দেয়া যাবে না , হ্যান্ডশেক করা যাবে না এবং কোলাকুলি করা যাবে না । হাঁচি কাশি দেয়ার সময় হাত বা রুমাল দিয়ে মুখ ঢেকে রাখা ইত্যাদি । এছাড়াও আক্রান্ত ব্যক্তিদেরকে হোম কোয়ারেন্টাই এবং আইসোলেশনে থাকতে হবে। সামাজিক দূরত্ব বিধি মেনে চলতে হবে অর্থাৎ দুই জনের মাঝখানে কম পক্ষে তিন ফুট দূরত্ব বজায় রাখতে হবে। কোনো অবস্থাতেই জন সমাগাম করা যাবে না।

এদিকে বিজ্ঞানীদের নিরন্তর প্রচেষ্টা সত্ত্বে ও এখনো র্পযন্ত করোনা ভাইরাসের কোন ভ্যাকসিন বা ওষুধ আবিষ্কৃত হয়নি। কোনো কোনো দেশ ভ্যাকসিন বা টিকা আবিষ্কারের ঘোষণা দিলেও , তা নিয়ে বিতর্ক চলছে এবং সর্বসম্মতভাবে তার প্রয়োগ এখনো শুরু হয়নি । বিজ্ঞানীরা আশংকা প্রকাশ করে বলেছেন, এই করোনাভাইরাস বছরের পর বছর ধরে বিদ্যমান থাকবে এবং এ সংকট থেকে মানব জাতির সহসা মুক্তির কোনো সম্ভাবনা নেই । এ অবস্থায় করোনা পরিস্থিতিকে একটি সমস্যা হিসাবে মানতে হবে এবং এই সমস্যার মাঝ দিয়েই মানব জাতিকে সামনের দিকে পথ চলতে হবে । মানব জাতির সামনে এর কোনই বিকল্প নেই । 

করোনাভাইরাসের হাত থেকে শিক্ষার্থীদেরকে রক্ষায় পৃথিবীর প্রায়  প্রতিটি দেশই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসমূহ বন্ধ ঘোষণা করে । বাংলাদেশ  সরকার ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসমূহ বন্ধ ঘোষণা করেছে  এবং  এর কোন বিকল্প ছিল না । গত ১৭ ই মার্চ থেকে  সকল ধরনের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সাধারণ ছুটি চলছে । প্রাইমারি স্কুল থেকে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত সরকারি বেসরকারি সকল প্রকার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানই বন্ধ। এ ছুটি কয়েক দফায় বাড়ানো হয়েছে এবং সর্বশেষ ঘোষণায় এ ছুটি  ৩১ শে আগস্ট পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে । সরকারের প্রতি এ ছুটি আর না বাড়ানোর জন্য অনুরোধ করছি এবং ১ সেপ্টেম্বর থেকে সকল ধরনের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলে দেয়ার জন্য অনুরোধ জানাচ্ছি । 

শিক্ষা হচ্ছে জাতির মেরুদণ্ড। সুতরাং শিক্ষা ব্যবস্থা চালু রাখতেই হবে । করোনার কারণে এখনো সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ এবং এবছরের এইচএসসি পরীক্ষা এখনো সম্পন্ন হয়নি। অথচ  সেটা গত  ১ এপ্রিল থেকে শুরু হওয়ার সিডিউল ছিল ।

এদিকে  এবারের এসএসসি উত্তীর্ণদের এইএসসিতে  ভর্তি এখনো কমপ্লিট হয়নি । ৯ আগস্ট থেকে ভর্তি প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে মাত্র । স্বল্প  সময়ের ব্যবধানে এইচএসসি পরীক্ষা সম্পন্ন না হলে বিরাট সমস্যা হবে। তাই অতি দ্রুত এইচএসসি পরীক্ষা সম্পন্ন করার ব্যবস্থা করা হোক।  আবার বিশ্ববিদ্যায় , মেডিকেল, প্রকৌশল শিক্ষায় প্রথম বর্ষের ছাত্ররা দ্বিতীয় বর্ষে উত্তীর্ণ না হলে এইচএসসি উত্তীর্ণরা ভর্তি হয়ে সেশন জটে পড়বে । অর্থাৎ শিক্ষা ব্যবস্থার সর্ব স্থরে সেশন জট লেগে যাবে । ফলে স্নাতক ক্লাসের শেষ বর্ষের ছাত্ররা শিক্ষাজীবন শেষ করে কর্মজীবনে প্রবেশে পিছিয়ে পড়ছে । এ অবস্থার উত্তরণ ঘটাতে হলে অতিদ্রুত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসমূহ চালু করতে হবে । স্বাস্থ্যবিধি মেনে , সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে ছাত্র শিক্ষক সবাই যার যার ক্লাসে উপস্থিত থাকবে এবং এটাই সমাধান । লকডাউনের সময়েও, কিছু মানুষ কিন্তু কন্টিনিউ কাজ করেছে । প্রধানমন্ত্রীসহ সরকারের কর্মকর্তারা নিয়মিত কাজ করেছে এবং স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে বেশি কাজ করেছে। ডাক্তার , নার্সসহ চিকিৎসার সাথে জড়িতরা সবাই কিন্তু কাজ করেছে এবং স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে বেশি কাজ করেছে । সেনাবাহিনী এবং পুলিশ বাহিনীর সদস্যরা কাজ করেছে এবং তারাও স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে বেশি কাজ করেছে। ব্যাংকাররাও কাজ করেছে। প্রচুর মানুষ ব্যাংকে গিয়েছে এবং লেনদেন করেছে। একইভাবে রাষ্ট্রের জরুরি বিভাগের লোকজন ও কাজ করেছে । ঔষধ কারখানার লোকজন কাজ করেছে এবং ঔষধ উৎপাদন করেছে । ঔষধের দোকান এবং ডিপার্টমেন্টাল স্টোর খোলা ছিল ।আবার কাঁচাবাজারের দোকানসমূহ ও খোলা ছিল । রাস্তাঘাটে রিকশা চলাচল অবাধ ছিল। হাজারো রিকশাচালক জীবিকার সন্ধানে রিকশা চালিয়েছে । জরুরি প্রয়োজনে বিমান ও চলাচল করেছে এবং যাত্রী ও পরিবহন করেছে । কৃষকেরা দল বেঁধে ধান কেটেছে এবং শত শত মানুষ এক সাথে হাওড়ের ধান কেটেছে । সাংবাদিক ভাইয়েরা কাজ করেছে । মিডিয়ার কর্মীরা কাজ করেছে । টিভিসমূহ আগের মতই সার্বক্ষনিক খোলা ছিল এবং চব্বিশ ঘণ্টাই অনুষ্ঠান প্রচার করেছে । দৈনিক পত্রিকাসমূহ নিয়মিতই প্রকাশিত হয়েছে । পদ্মা সেতু নির্মাণে শ্রমিকরা নিয়মিত কাজ করেছে । এসব কাজে যারা নিয়োজিত ছিল তারা তেমন কোনো সমস্যায় কিন্তু পড়েনি। একইভাবে লকডাউন পরবর্তী সময়ে পুনরায় অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড চালু হবার পর ও তেমন কোন সমস্যা হয়নি । এমনকি বর্তমান করোনা কালে  পোশাক শিল্পে হাজারো শ্রমিক এক সাথে কাজ করলে ও তেমন কোনো সমস্যা হয়নি। সুতরাং  এবার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসমূহ খুলে দেয়া হউক ।

সরকার যদিও অনলাইনে ক্লাসের ব্যবস্থা করেছে , অনেক শিক্ষক অনলাইনে  ক্লাস নিয়েছে ,  অনেক স্টুডেন্ট অনলাইনে  ক্লাস করেছে  এবং অনলাইনে পাঠ দান এখনো অব্যাহত রয়েছে তবু  এটা বিদ্যমান শিক্ষা পদ্বতির  বিকল্প নয়  । এটি হচ্ছে  সহায়ক এবং সাময়িক সমাধান মাত্র । আর এদেশের স্টুডেন্টদের কাছে অনলাইনে ক্লাস করার জন্য প্রয়োজনীয় সরঞ্জামও কিন্তু নেই । মনে রাখতে হবে শিক্ষার জন্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের বিকল্প নেই । দীর্ঘদিন ধরে ক্লাসে অনুপস্থিতির কারণে স্টুডেন্টরা লেখাপড়া থেকে কিছুটা হলে ও দূরে আছে। ফলে তারা অন্য কিছুতে মনোযোগী হয়ে পড়ছে , যা তাদের ভবিষ্যতকে ঝুঁকির মধ্যে ফেলছে ।  

এদিকে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কর্মরত শিক্ষক কর্মচারীরা সমস্যায় পড়েছে এবং তাদের অনেকেই ঠিক মত বেতন ভাতা পায়নি । সুতরাং শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসমূহ খুলে দেয়ার বিকল্প নেই। যেহেতু করোনা ভাইরাস পুরোপুরি নির্মূল হয়নি এবং  শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসমূহ  খুলে দেয়া দরকার, সেহেতু শিক্ষাব্যবস্থায় কিছুটা পরিবর্তন আনতে হবে । অর্থাৎ  করোনাকালীন সময়ে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কিছুটা পরিবর্তন  আনতে হবে  আর এ পরিবর্তন হতে হবে বাস্তবসম্মত ।

এ বিষয়ে আমি কিছু  প্রস্তাবনা পেশ করছি ।  ছাত্র শিক্ষক সবাই স্বাস্হ্যবিধি মেনে ক্লাসে আসবে এবং ক্লাস শেষ করেই বাসায় চলে যাবে। স্টুডেন্টরা দূরত্ব বজায় রেখেই ক্লাসে বসবে এবং কোন ধরনের জমায়েত করবে না । ছাত্রছাত্রীদেরকে  ক্লাসে উপস্থিত থাকতে কোন রকম বাধ্য করা যাবে না ।  স্টুডেন্টরা তাদের সুবিধা এবং ইচ্ছামত ক্লাসে উপস্থিত থাকবে , তবে যথাসময়ে পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করবে । এ বছর  প্রাইমারি এবং হাইস্কুলে কোনো মিডটার্ম পরীক্ষা হবে না । শুধু ফাইনাল পরীক্ষা হবে । পরীক্ষার  সময় হবে এক ঘণ্টা এবং সেটার প্রশ্ন হবে এমসিকিউ  ।  আগে যেখানে পরীক্ষার সময় ছিল তিন ঘণ্টা, সেখানে এখন পরীক্ষার সময় হবে এক ঘণ্টা । ফলে একদিনে কয়েক শিফটে পরীক্ষা নেয়া যাবে  এবং  এর ফলে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভিড় কম হবে। পিইসি এবং জেএসসি পরীক্ষা বাতিল করা ঠিক হবে না এবং তা বরাবরের মতই অনুষ্ঠিত হবে। তবে সেই পরীক্ষার সময় ও হবে এক ঘণ্টা এবং প্রশ্নপত্র হবে এমসিকিউ । একইভাবে কলেজ , বিশ্ববিদ্যালয় কোনটাতেই শিক্ষার্থীদেরকে ক্লাসে উপস্থিত থাকতে বাধ্য করা যাবে না । শিক্ষার্থীরা তাদের সুবিধামত ক্লাসে উপস্থিত থাকবে ,তবে যথাসময়ে পরীক্ষা দেবে । আর করোনার প্রভাব পুরোপরি  শেষ না হওয়া র্পযন্ত  সকল পরীক্ষার সময় হবে এক ঘণ্টা এবং প্রশ্নপত্র হবে এমসিকিউ । কোনো স্টুডেন্ট অসুস্থতার কারণে পরীক্ষার হলে  উপস্থিত  হতে না পারলে তার পরীক্ষা বাসায় নেয়ার ব্যবস্থা করতে হবে । ইতিমধ্যেই শিক্ষাবর্ষ ছয় মাস পিছিয়ে গেছে এবং বিশ্ববিদ্যালয় সমুহে  ছয় মাসের সেশন জট সৃষ্টি হয়েছে ।  এ অবস্থায় করোনা কালীন সময়ে শিক্ষা পদ্ধতিকে সহজ করতে হবে এবং এভাবেই শিক্ষা ব্যবস্থাকে চালিয়ে নিতে হবে ।  আর শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসমূহ খুলে দেয়ার পর যদি করোনার সংক্রমন দেখা  যায় তাহলে প্রয়োজনে  আবারো ছুটি ঘোষণা করা হবে  এবং সে সুযোগ তো আমাদের হাতে রয়েছে । সুতরাং স্বাস্থ্যবিধি মেনে পরীক্ষামুলক ভাবে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসমূহ খুলে দেয়ার জন্য সরকারের প্রতি সবিনয় অনুরোধ জানাচ্ছি । 

এই পৃথিবীতে বিভিন্ন ধরনের রোগ ব্যাধি রয়েছে, যা আগেও ছিল এখনো আছে । জ্বর , ডায়াবেটিস, হার্ট অ্যাটাক, ক্যান্সার , স্ট্রোক, ডায়রিয়া, নিউমোনিয়া, কিডনি নষ্ট, প্যারালাইসিস, শ্বাসকষ্টসহ শত ধরনের জানা অজানা রোগ ব্যাধি রয়েছে ।এ সব রোগে প্রতিদিনই বহু মানুষ আক্রান্ত হচ্ছে  এবং আক্রান্ত হয়ে বহু মানুষ মারা যাচ্ছে এবং এসংখ্যা নেহায়েত কম নয় । তাই বলে জীবন কিন্তু থেমে নাই । যানবাহনের দুর্ঘটনায় ওপ্রতিদিন বহু লোক হতাহত যাচ্ছে । কিন্তু তাই বলে যানবাহনের চলাচল কিন্তু বন্ধ নাই । এই পৃথিবীতে বিদ্যমান শত ধরনের রোগ ব্যাধির মতই করোনা ও একটি রোগ ।অন্যান্য রোগ ব্যাধির সাথে যুদ্ধ করে মানুষ যেমন বেঁচে আছে, ঠিক তেমনি করোনার সাথে যুদ্ধ করে ও মানব জাতিকে টিকে থাকতে হবে । কিন্তু কোন অবস্থায় জীবনকে স্থবির করা যাবে না , অর্থনীতির চাকা বন্ধ রাখা যাবে না এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখা যাবে না । অনেকে হয়ত বলবেন, করোনা একটি ছোঁয়াচে রোগ ।আমি সেটা মানলাম এবং এটি এই রোগের একটি বৈশিষ্ট্য । সংক্রমণের মাধ্যমে এই রোগ ছড়ায় এবং মানুষ আক্রান্ত হয় ।কিন্তু আমার কথা হচ্ছে ছোয়াছে না হওয়া সত্ত্বেও অনেক লোক তো প্রতিদিনই অন্যান্য রোগে আক্রান্ত হচ্ছে ।তাহলে ফলাফল তো একটাই আর তা হচ্ছে মানুষ রোগ ব্যাধিতে আক্রান্ত হচ্ছে এবং মারা যাচ্ছে । তা ছাড়া যানবাহনের দুর্ঘটনায় অনেক মানুষ তো হঠাৎ করেই মারা যাচ্ছে । আর এসব মৃত্যুকে আমরা মেনেও নিই । এ কথা ঠিক করোনা সংক্রমন ঠেকাতে  শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধের  প্রয়োজন  রয়েছে । কিন্তু সেটা কত দিন ? ইতিমধ্যেই শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধের সময় পাঁচ মাস পূর্ণ হয়েছে । করোনা ভাইরাসের প্রকোপ যদি চলতেই থাকে , তাহলে কি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের বন্ধ ও চলতেই থাকবে? এ প্রশ্নের উত্তর হচ্ছে না । সুতরাং স্বাস্থ্য বিধি মেনে সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান পুনরায় খুলে দেয়া হোক । কোনো অবন্থাতেই করোনার ভয়ে আতংকিত হব না, ভীত হব না, সাহস হারাব না এবং করোনাকে মোকাবেলা করে এগিয়ে যাব—এটাই হোক আমাদের প্রত্যয় ।   


প্রকৌশলী এবং উন্নয়ন গবেষক 

ইমেইল : [email protected]

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন