বাংলাদেশের সুপ্রাচীনকালের সমৃদ্ধ ঐতিহ্যের গৌরবময় স্মারক হলো মসলিন। প্রথম খ্রিস্টাব্দের প্রথম শতকেই রোম সাম্রাজ্যের স্বর্ণযুগে অভিজাত রোমান নারীরা ঢাকার মসলিন পরে দেহ-সৌষ্ঠব প্রদর্শন করতে ভালোবাসতেন। একই শতকে রচিত ‘পেরিপ্লাস অব দি এরিথ্রিয়ান সি’ শীর্ষক গ্রন্থে মসলিন সম্পর্কে বিশেষ ধরনের তথ্য পাওয়া যায়। এতে মোটা ধরনের মসলিনকে মলোচিনা, প্রশস্ত ও মসৃণ মসলিনকে মোনাচি এবং সর্বোত্কৃষ্ট মসলিনকে গেনজেটিক বা গঙ্গাজলী বলে উল্লেখ করা হয়েছে। মজার ব্যাপার হলো, শেষোক্ত ‘গঙ্গাজলী’ বা ‘গঙ্গার জল’ শাড়ির কথা খ্রিস্টীয় বিশ শতকের বাংলাদেশে প্রচলিত ‘সোনাই বিবির পালা’তে প্রত্যক্ষ করা যায়, যেমন— ‘পরথমে পাইড়াইল শাড়ি ভাইরে/ শাড়ির নামে গঙ্গার জল/ নুখেতে নইলে শাড়ি/ আরও করে টল্মল রে!/ পানিতে থইলে গো শাড়ি/ শাড়ি পানিতে মিলায়/ শুখেনায় থইলে শাড়ি ভাইরে/ পিঁপড়ায় টাইন্যা লইয়া যায় রে।’ এখানে প্রথম খ্রিস্টাব্দে ভিনদেশীদের বর্ণিত মসলিনের বিবরণের সঙ্গে বাংলাদেশের মৌখিক রীতিতে প্রচলিত কিস্সা পালার বর্ণনার অসাধারণ সাদৃশ্য প্রত্যক্ষ করা যায়। তার অর্থ মসলিনের দুই হাজার বছরের স্মৃতিসত্তা লোকায়ত বাংলাদেশের মানুষের চেতনায় সজীব রয়ে গেছে। পাশাপাশি মসলিনের ইতিহাস অন্বেষণে প্রাচীনকালের হেরোডোটাস, স্ট্র্যাবো থেকে টলেমি, প্লিনি পর্যন্ত অনেক ইতিহাসবিদের রচনায় ঢাকাই মসলিনের উল্লেখ পাওয়া যায়।
গবেষক বার্ড উড প্রমুখ গবেষণা করেছেন যে, ঢাকাই মসলিন প্রাচীন এশিরীয় ও বেবিলনে বিশেষ খ্যাতিলাভ করতে সক্ষম হয়েছিল। উইলফোর্ড মন্তব্য করেছেন, একটি বেবিলিয়ান বস্ত্র ফিরিস্তিতে ঢাকাই মসলিনের উল্লেখ রয়েছে। প্রাচীন মিসরীয় সভ্যতার বিলাস-ব্যসনেও ঢাকাই মসলিন
ব্যবহার হতো। মিসরের প্রাচীন কবরে বাংলাদেশের নীলে রঞ্জিত ও মসলিনে জড়ানো মমির সন্ধান পাওয়া গেছে। ইয়েট বলেন, খ্রিস্টপূর্ব দ্বিতীয় শতাব্দীতে ঢাকাই মসলিন গ্রিসে বিক্রি হতো।
মসলিনের সূক্ষ্মতার কথা ইতিহাসের বিভিন্ন ঘটনা থেকে জানা যায়। যেমন— প্লিনি অভিযোগ করেছেন যে, মসলিনের ক্ষীণ আব্রুর ফাঁকে রোমান সুন্দরীরা দেহের বঙ্কিম রেখা প্রকাশ করতেন। শুধু তাই নয়, ঢাকার ‘ঝুনা’ মলমল নামের বিশেষ ধরনের মসলিন পরার কারণে গ্রিক যুবকরা সেখানকার দার্শনিক ও ব্যঙ্গকাব্য লেখক-কবিদের কঠোর সমালোচনার পাত্র হয়েছিলেন। এছাড়া কুলভা নামের একটি প্রাচীন তিব্বতি গ্রন্থে ঝুনা মলমল পরিহিতা এক ভ্রষ্টা ধর্মযাজিকাকে তীব্র সমালোচনা করা হয়েছে। এমনকি সাত প্যাঁচ আবরোঁয়া মসলিন পরার পরও উলঙ্গ ভ্রমে শাহজাদী জেব-উন্নেছাকে পিতা বাদশাহ আওরঙ্গজেব তিরস্কার করেছিলেন। বিভিন্ন দেশকালের এসব ঘটনা মসলিনের সূক্ষ্ম বুননশৈলী ও মিহি কাপড়ের বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে ধারণা দেয়।
বাংলাদেশের মসলিন ও বস্ত্রের সূক্ষ্মতা ও সৌন্দর্য বহু বিদেশী পর্যটককে মুগ্ধ করেছে। খ্রিস্টীয় নবম শতকে আরব পর্যটক ও ভূগোলবিদ সুলেইমান সিলসিলাত-উত্-তাওয়ারিখ শীর্ষক গ্রন্থে বর্ণনা করেছেন— রুমী নামের এক রাজ্যে (খুব সম্ভবত বর্তমান বাংলাদেশ) এমন এক ধরনের মিহি ও সূক্ষ্ম বস্ত্র পাওয়া যায় যে, ৪০ হাত লম্বা ও দুই হাত চওড়া এমন একটি কাপড় একটা ছোট আংটির মধ্য দিয়ে অনায়াসে চালাচালি করা যায়। চতুর্দশ শতকের মাঝামাঝি বাংলাদেশে আসেন আফ্রিকার মরক্কো দেশীয় পর্যটক ইবনে বতুতা, তিনি সোনারগাঁয়ে উত্কৃষ্ট মসলিন তৈরি হতে দেখেন। তিনি তা দেখে চমত্কৃত হয়ে মন্তব্য করেন— এমন উন্নত মানের বস্ত্র হয়তো সারা দুনিয়ায় আর কোথাও পাওয়া সম্ভব নয়। পঞ্চদশ শতকে চীনা পর্যটক মাহুয়ান সোনারগাঁয়ে মলমল ও অন্যান্য প্রকৃতির মসলিন তৈরি প্রত্যক্ষ করেন। এর পর ষোড়শ শতকে ইংরেজ পর্যটক রলফ ফিচ, পর্তুগিজ পর্যটক ডুয়ার্টে বারবোসা এবং অষ্টাদশ শতকের ডাচ পর্যটক স্ট্যাভোরিনাস বাংলাদেশের কয়েকটি বিশেষ অঞ্চলে মসলিন তৈরি প্রত্যক্ষ করেন এবং মসলিনের সূক্ষ্ম ও মিহি বুননের প্রভূত প্রশংসা করেন। শুধু বিদেশী পর্যটক নন, বাংলাদেশে তৈরি মসলিনের সূক্ষ্ম, মিহি ও দৃষ্টিনন্দন বুননে বিস্ময় প্রকাশ করেন ইংরেজ কোম্পানির সরকারি ঐতিহাসিক রবার্ট ওরম। তিনি খ্রিস্টীয় ১৭৫০ সালে বাংলাদেশে অবস্থান করার সূত্রে মসলিনের বুনন ও ঐতিহ্য প্রত্যক্ষ করতে সক্ষম হন। তিনি লিখেছেন— ‘এমন অবিশ্বাস্য রকমের সূক্ষ্ম কাপড় কী করে যে এখানকার মানুষ তৈরি করতে পারে, তা আমার কাছে একটি ধাঁধা। বিশেষ করে এই কারণে যে, এসব কাপড় তৈরি করতে যেসব যন্ত্রপাতি অপরিহার্য মনে হয়, তা থেকে এরা বঞ্চিত।’ রবার্ট ওরম বাদশা ও তার হারেমের জন্য ঢাকায় যেসব আশ্চর্য সূক্ষ্ম ও মিহি বস্ত্র তৈরি হতো, তাও প্রত্যক্ষ করেন এবং বলেন— এসব বস্ত্র এতই উত্কৃষ্ট ছিল যে এগুলোর দাম ইউরোপীয়দের জন্য যে বস্ত্র তৈরি হয়, তার ১০ গুণ। ব্যাখ্যায় তিনি জানিয়েছেন, বাংলার তাঁতিদের বিশেষ ধরনের অনন্য দক্ষতার জন্যই এত উচ্চমানের বস্ত্র তৈরি সম্ভব হয়েছিল। তিনি আরো বলেন— যান্ত্রিক ব্যাপারের এদেশীয় তাঁতিদের দক্ষতার অভাব থাকলেও তাদের মধ্যে সার্বিক সংবেদনশীল নমনীয়তা ছিল। এ দেশের রাঁধুনির হাত যেকোনো ইউরোপীয় সুন্দরীর হাতের চেয়ে আরো কোমল আর সুন্দর ছিল।
১৭৮৯ খ্রিস্টাব্দে ড্যানিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির রিপোর্ট থেকে জানা যায়, বাংলার তাঁতীরা কোনো ‘মেশিন’ ছাড়াই নিজেদের উদ্ভাবিত অতি সাধারণ কিছু যন্ত্রপাতি দিয়ে অত্যন্ত সুন্দর ও অতিসূক্ষ্ম বস্ত্র তৈরি করেন।
প্রসঙ্গত বলে রাখা ভালো যে, বাংলাদেশে সেকালে মসলিন বা অন্যান্য সূক্ষ্ম-মিহি বস্ত্রের পাশাপাশি প্রচুর পরিমাণে সস্তা ও মোটা বা মাঝারি মানের বস্ত্রও তৈরি হতো। সস্তা বা মোটা ও মাঝারি মানের বস্ত্র ইউরোপীয় কোম্পানিগুলো আসার আগে এশিয়া ও উত্তর আফ্রিকার বিভিন্ন দেশে প্রচুর রফতানি হতো। কিন্তু সূক্ষ্ম ও মিহি বস্ত্র রফতানি হতো মূলত আগ্রা, লাহোর, মুলতান, পারস্য উপসাগর ও লোহিত সাগর অঞ্চলে। ইউরোপীয় কোম্পানিগুলোও সাধারণ বস্ত্রের সঙ্গে কিছু মিহি সুতার বস্ত্র রফতানি করত। তবে রাজা-বাদশাদের জন্য তৈরি খুব বেশি দামি মসলিন তারা তেমনভাবে রফতানি করত না, কারণ তার খদ্দের পাওয়া বেশ মুশকিল হতো।
গবেষকদের মতে, মসলিন তৈরির প্রাচীনতম কেন্দ্র ছিল অধুনা ভাওয়াল জঙ্গলে পরিবেষ্টিত কাপাসিয়া। মধ্যযুগে ঢাকাই মসলিন তৈরির প্রধান উত্পাদনকেন্দ্রে পরিণত হয় সোনারগাঁ এবং আধুনিক যুগে পদ্মা, ব্রহ্মপুত্র ও মেঘনাবেষ্টিত ১ হাজার ৯৬০ বর্গমাইলজুড়ে উত্কৃষ্ট মসলিন তৈরি হতো। এ অঞ্চলে ১৮৪১ খ্রিস্টাব্দে ৪ হাজার ১৬০টি তাঁতে মসলিন তৈরি হতো। ঢাকা, সোনারগাঁ, ডেমরা, তিতবদ্ধী, বালিয়াপাড়া, নাপাড়া, মৈকুলি, বাছারক, চরপাড়া, বাশটেকি, নবীগঞ্জ, শাহপুর, ধামরাই, সিদ্ধিগঞ্জ, কাঁচপুর প্রভৃতি জায়গা মসলিন তৈরির প্রধান কেন্দ্র ছিল।
মসলিন তৈরির জন্য প্রয়োজন হতো বিশেষ প্রকারের সূক্ষ্ম সুতা, যা অন্য কোথাও থেকে আমদানি করা হতো না। বরং বাংলাদেশের মেঘনা ও শীতলক্ষ্যা নদী-তীরবর্তী এলাকায় বয়রাতি ও ফুটি কার্পাসের আবাদ করা হতো। সেই কার্পাসের তুলা থেকে ১৬ থেকে ৩০ বছরের মেয়েরা তাদের স্পর্শকাতর আঙুলের সাহায্যে মিহি সুতা তৈরি করতেন। তবে মেঘনা নদী-তীরবর্তী ফুটি কার্পাসের তুলা থেকে তৈরি সুতাই ছিল উন্নত মানের মসলিন তৈরির মূল উপকরণ। বয়রাতি কার্পাসের সুতায় অপেক্ষাকৃত নিকৃষ্ট মানের মসলিন তৈরি হতো।
কার্পাস তুলা থেকে সুতা উত্পাদনের পর সুতা নাটান, টানা হোতান, সানা বাঁধা, নারদ বাঁধা, বু-বাঁধা ইত্যাদি পর্যায় অতিক্রম করার পর মসলিন বোনা হতো। কিন্তু মসলিন বোনার পর আরো অন্তত তিনটি পর্যায় অতিক্রমের মাধ্যমে মসলিন বাজারজাত হতো। যার মধ্যে ছিল— কাপড় ধোয়া, সুতা সুবিন্যস্ত করা ও রিফু করা এবং ইস্ত্রি, রঙ ও ছুঁচের কাজ। পরিশেষে থাকত কাপড়ের গাঁটরি বাঁধা। মজার ব্যাপার হলো, মসলিন উত্পাদন ও বিপণনের জন্য প্রতিটি ধাপে আলাদা আলাদা পেশাজীবী ছিলেন। প্রতিটি পর্যায়ে ভিন্ন ভিন্ন ব্যক্তি বা পেশাজীবী কাজগুলো সম্পন্ন করতেন। তাই মসলিন তৈরি ও বিপণন ছিল মূলত এক ধরনের সামাজিক পেশাজীবীর কর্ম, যার প্রতিটি স্তরে দক্ষতার সুষম বিন্যাস ছিল।
বিভিন্ন গবেষণায় অন্তত ১৫ প্রকার মসলিনের নাম পাওয়া যায়, যেমন— ১. মলবুস খাস: যা সাধারণত মোগল বাদশাহ ও পরিবারের লোকজন ব্যবহার করতেন, অষ্টাদশ শতকের শেষের দিকে মোগল বাদশাহদের জন্য মসলিন পাঠানো বন্ধ হয়ে গেলে মলমল খাস নামে আরেক ধরনের উন্নত মানের মসলিন তৈরি শুরু হয়। ২. সরকার-ই-আলা (আলি): বাংলার নবাব সুবাদারদের জন্য এগুলো তৈরি হতো। ৩. আব-ই-রওয়ান: প্রবহমান পানির সঙ্গে মিশে যেতে পারত এ ধরনের মসলিন। ৪. ঝুনা: নবাব-বাদশাহ শুধু নয়, ধনী ও বিত্তশালী পরিবারের মেয়েরা ঝুনা ব্যবহার করতেন; তাছাড়া গায়িকা ও নর্তকীরাও ঝুনার তৈরি জামা ব্যবহার করতেন। ৫. শবনব: এত মিহি ছিল যে, ভোরবেলা শিশির ভেজা ঘাসে শুকোতে দিলে শিশির আর এ মসলিনের পার্থক্য বোঝা যেত না। ৬. নয়নসুখ বা তনসুখ: সাধারণত গলাবন্ধ রুমাল হিসেবে ব্যবহূত হতো। ৭. খাসা: অত্যন্ত মিহি, সূক্ষ্ম ও ঘন করে বোনার জন্য বিখ্যাত ছিল। ৮. আলাবালি বা আলিবালি। ৯. তনজেব: শরীর বা দেহের সৌন্দর্যবর্ধক হিসেবে এ মসলিনের সুনাম ছিল। ১০. তরন্দাম: অন্যান্য মসলিনের তুলনায় কিছুটা মোটা। ১১. সরবন্দ: ইউরোপের মেয়েরা সরবন্দ দিয়ে তৈরি জামা, রুমাল ও স্কার্ফ ব্যবহার করতেন এবং উচ্চপদস্থরা সরবন্দ মসলিনে তৈরি মাথার পাগড়ি পরতেন। ১২. ডুরিয়া বা ডোরিয়া: সাধারণত ভোগা বা সিরোঞ্চ জাতীয় তুলা থেকে ডোরিয়া মসলিন বোনা হতো, এ ধরনের মসলিন একটু মোটা ছিল বলে তা দিয়ে ছেলেমেয়েদের জামা বানানো হতো। ১৩. চারকোনা: চার কোণবিশিষ্ট মসলিনকে চারকোনা বলা হতো। ১৪. জামদানি: সেসব মসলিনে তাঁতেই নকশা করা হতো, সেগুলোকে জামদানি বলা হতো। মোগল বাদশাহদের মলবুস খাস তাঁতখানার এক বড় অংশে শুধু জামদানিই বোনা হতো। বাদশাহ, আমির-ওমরাহ, নবাব, সুবাদার ছাড়াও বহু ধনী ও অভিজাত শ্রেণীর কাছে জামদানির বেশ চাহিদা ছিল। ১৫. বদন-খাস: সূক্ষ্ম বুননের বদন-খাস দিয়ে গায়ে পরার সাধারণ জামা তৈরি করা হতো।
ব্রিটেনের কার্পাস শিল্পের ইতিহাসপ্রণেতা বেইন্সকে বাংলার মসলিন এতটাই বিস্ময়ের ধাঁধায় ফেলে দেয় যে, তিনি বলতে বাধ্য হন— ‘এগুলো কোনো পরী বা কীটপতঙ্গের বোনা— মানুষের দ্বারা এ বুনন সম্ভব নয়।’ আসলে মসলিনের সূক্ষ্মতার যে বর্ণনা কালে কালে ইতিহাসের পাতায় গাথা আছে, তাকে বাস্তব মনে হয় না, রূপকথার গল্পের মতো শোনায়। কিন্তু তার বাস্তব ইতিহাস বহু দেশের বহু ঐতিহাসিকের তথ্যে প্রমাণ।
সম্প্রতি আমার সৌভাগ্য হয়েছে বাংলাদেশের দুই সহস্রাধিক বছর প্রাচীন মসলিনের ইতিহাস-ঐতিহ্য নিয়ে হাওয়ায় ইন্দ্রজাল নামে একটি নৃত্যনাট্য রচনার। ৬ ফেব্রুয়ারি গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের সংস্কৃতি-বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে দেশ-বিদেশী উচ্চপর্যায়ের ব্যক্তিদের সামনে সাধনা নামের একটি সংগঠন তা ঢাকার আহসান মঞ্জিল প্রাঙ্গণে মঞ্চস্থ করে। সেই নৃত্যনাট্যে বাংলাদেশের মসলিনের বিবর্তনের ইতিহাস এবং দেশীয় তাঁত শিল্পের গৌরবগাথার সামগ্রিকতা গ্রথিত করতে সক্ষম হয়েছি বলে মনে করি। শুধু তা-ই নয়, আমাদের প্রাচীনতম সাহিত্যকীর্তি চর্যাপদ থেকে শুরু করে সাম্প্রতিক বাংলাদেশে প্রচলিত মৌখিক ঐতিহ্যে মসলিন প্রসঙ্গ কীভাবে চর্চিত হচ্ছে, তার কিছু সূত্র উল্লেখ করেছি। অদূর ভবিষ্যতে মসলিনের সামগ্রিক ইতিহাস নির্মাণে তা সহায়ক হলে আমাদের শ্রম ও স্বপ্ন সার্থক হবে বলে মনে করি।
উল্লেখ্য, এ প্রবন্ধ রচনায় যাদের গবেষণাকর্ম গৃহীত হয়েছে, তারা হলেন— ঢাকাই মসলিন রচয়িতা আবদুল করিম, আমাদের প্রাচীন শিল্প গবেষক তোফায়েল আহমদ, ঢাকার মসলিনের লেখক মুনতাসীর মামুন, পৃথিবীর তাঁতঘর বাংলার বস্ত্রশিল্প ও বাণিজ্যের লেখক সুশীল চৌধুরী, জামদানীর লেখক মোহাম্মদ সাইদুর, ভিক্টোরিয়া অ্যান্ড আলবার্ট মিউজিয়াম থেকে প্রকাশিত মসলিন শীর্ষক গ্রন্থের লেখক সোনিয়া অ্যাশমোর প্রমুখ।
পাঠকের মতামত