ফোন স্ক্রিন বা কম্পিউটার ব্যবহারকারীর সংখ্যা ক্রমান্বয়ে বাড়ছে। কম্পিউটারের স্কিন ও ফোনের ডিসপ্লে দীর্ঘক্ষণ ব্যবহারের কারণে চোখের পলক পড়ার সংখ্যা কমে যায়, চোখ দিয়ে পানি পড়ে এবং তা পরবর্তী সময়ে ড্রাই আই বা শুষ্ক চোখের দিকে নিয়ে যায়। অতিরিক্ত কম্পিউটার ব্যবহার করলে এবং চোখের পানি যখন খুব দ্রুত বাষ্পীভূত হয়ে যায় কখন এ সমস্যা তৈরি হয়।
সম্প্রতি আমেরিকান অপটোমেট্রি অ্যাসোসিয়েশন নতুন এক ধরনরে সমস্যার কথা তুলে ধরেছে, যা কম্পিউটার ভিশন সিনড্রোম বা ডিজিটাল চোখের ক্লান্তি নামেও পরিচিত। সংস্থাটি জানায়, দীর্ঘমেয়াদি কম্পিউটার, ট্যাবলেট ও সেল ফোন ব্যবহারকারীদের মধ্যে এ ধরনের চোখের সমস্যা দেখা যায়। এ ধরনের সমস্যার মূল লক্ষণগুলো হলো চোখের ক্লান্তি ভাব থাকা, মাথা ব্যথা, চোখে ঝাপসা দেখা ও চোখে শুষ্কতা। এছাড়া ডাবল ভিশন বা এক জিনিস দুবার দেখা এবং ঘাড় ব্যথাও থাকতে পারে।
চোখের শুষ্কতা বর্তমানে একটি সাধারণ সমস্যা হয়ে উঠেছে। এসব লক্ষণের কারণে জীবনযাত্রার মান কমে যাওয়ার পাশাপাশি দৈনন্দিন কাজকর্মকে প্রভাবিত করছে। এছাড়া এর চিকিৎসা ব্যয় বাড়ার কারণে তা গুরুত্বপূর্ণ জনস্বাস্থ্য সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে।
কয়েক বছর আগে আমেরিকার ন্যাশনাল লাইব্রেরি অব মেডিসিন ৩০ জন মানুষের ওপর একটি সমীক্ষা চালায়, যারা দৈনিক ৮ ঘণ্টা করে কম্পিউটার ব্যবহার করে। আরো ৩০ জন মানুষকে বাছাই করা হয় যারা দিনে ১ ঘণ্টা করেও কম্পিউটার ব্যবহার করে না। তাদের ওপর বিভিন্ন চোখের পরীক্ষা যেমন টিয়ার ব্রেকআপ টাইম (টিবিউটি) এবং অকুলার সারফেস ডিজিজ ইনডেক্স (ওএসডিআই) করা হয়। গবেষণায় ব্যক্তিদের ডান চোখ মূল্যায়ন করা হয়েছে শুধু। এছাড়া যারা আগে থেকেই অন্যান্য রোগে আক্রান্ত, চোখের সার্জারি বা লেজার সার্জারি করেছেন এবং কৃত্রিম টিয়ার ড্রপ বা কন্টাক্ট লেন্স ব্যবহার করে তাদের বাদ দেয়া হয়েছে।
এ গবেষণায় উঠে এসেছে কম্পিউটার দীর্ঘমেয়াদি ব্যবহারের কারণে চোখের পানি খুব দ্রুত বাষ্পীভূত হয়। চোখের পলক পড়া কমে যায় এবং চোখের পলক অসম্পূর্ণ থাকে।
একটি দীর্ঘমেয়াদি কম্পিউটার ব্যবহারে শুষ্কতা ছাড়াও অন্যান্য চোখের সমস্যা যেমন ভার্জেন্স ফাংশনগুলোকেও প্রভাবিত করে। অর্থাৎ চোখের নড়াচড়া বা নির্দিষ্ট বস্তুর ওপর ফোকাস দিতে সমস্যা হয়। গবেষণায় আরো প্রকাশ পায় যারা নিয়মিত ৪ ঘণ্টার বেশি সময় ধরে কম্পিউটার ব্যবহার করে তারা কনভারজেন্স অপ্রতুলতা (আশপাশের বস্তুগুলোতে ফোকাস করতে অসুবিধা), এক্সোফোরিয়া, কম ফিউশনাল কনভারজেন্স থাকে।
সব বয়সে ডিসপ্লে স্ক্রিনসহ ডিভাইসের ক্রমবর্ধমান ব্যবহার কম্পিউটার ভিশন সিনড্রোমকে একটি গুরুত্বপূর্ণ জনস্বাস্থ্য সমস্যা করে তুলতে শুরু করেছে। এ সমস্যা চোখের স্বাস্থ্য এবং কাজের কর্মক্ষমতা উভয়ই প্রভাবিত করে।