প্রাণঘাতী রোগ ক্যান্সার। দেশে প্রতি বছর ক্যান্সারে আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার গ্লোবাল ক্যান্সার অবজারভেটরি গ্লোবোক্যানের ২০২০ সালের তথ্য অনুযায়ী, দেশে প্রতি বছর দেড় লাখেরও বেশি মানুষ ক্যান্সারে আক্রান্ত হচ্ছে। এর মধ্যে পুরুষ রোগী ৮৮ হাজার ও নারী রোগীর সংখ্যা প্রায় ৬৯ হাজার। তাদের মধ্যে প্রায় ১ লাখ ১০ হাজার জনই মারা যাচ্ছে। পাঁচ বছরে দেশে মোট ক্যান্সারে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা হয়েছে ২ লাখ ৭০ হাজার।
জাতীয় ক্যান্সার গবেষণা ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের তথ্যমতে, এ সংখ্যা তার চেয়েও বেশি। প্রতিষ্ঠানটি বলছে, প্রতি বছর দেশে ক্যান্সারে আক্রান্ত হচ্ছে দুই-আড়াই লাখ মানুষ। যাদের মধ্যে চিকিৎসা নিতে পারছে মাত্র ৫০ হাজারের মতো। এসব রোগীর মধ্যে সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত ও মারা যাচ্ছে ফুসফুস ক্যান্সারে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, তামাক ও অ্যালকোহল সেবন, শারীরিক পরিশ্রমের অভাব এবং শাকসবজি ও ফল কম খাওয়ার কারণে ক্যান্সারে মৃত্যু হচ্ছে। এর মধ্যে অন্যতম ফুসফুসের ক্যান্সার। দেরিতে রোগ নির্ণয় ও সঠিক সময়ে চিকিৎসা না হওয়ার কারণে ফুসফুসের ক্যান্সারের ভয়াবহতা বাড়ছে। বৈশ্বিকভাবে ক্যান্সারে মৃত্যুর সংখ্যায় শীর্ষে রয়েছে ফুসফুসের ক্যান্সার। যদিও বাংলাদেশে এটির অবস্থান দ্বিতীয়। বাংলাদেশে ক্যান্সার আক্রান্তদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি মৃত্যু হয় খাদ্যনালির ক্যান্সারে। আর ফুসফুসের পর মুখগহ্বর, স্তন, পাকস্থলীর ক্যান্সারে মারা যাচ্ছে বেশি।
গ্লোবাল ক্যান্সার ইনসিডেন্স, মর্টালিটি অ্যান্ড প্রিভ্যালেন্সের (গ্লোবোক্যান) তথ্যমতে, বাংলাদেশে ফুসফুস ক্যান্সারে বছরে মৃত্যু হচ্ছে ১২ হাজার ৩ জন মানুষের, যা মোট ক্যান্সারে মৃত্যুর ১১ শতাংশ। বাংলাদেশে ৭৪ বছর বয়স পর্যন্ত জনসংখ্যার প্রতি ১০১ জনে ১ জন ফুসফুস ক্যান্সারের ঝুঁকিতে রয়েছে। পুরুষের ক্ষেত্রে প্রতি ৬৮ জনে ১ জন, নারীর ক্ষেত্রে প্রতি ২০১ জনে ১ জন। খাদ্যনালি ক্যান্সারে মারা যাচ্ছে বছরে ২০ হাজার ৩১৯ জন।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, ২০২০ সালে বিশ্বে ফুসফুস ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে ১৮ লাখ মানুষ মৃত্যুবরণ করে। ক্যান্সারে মৃত্যুর প্রায় এক-তৃৃতীয়াংশের কারণ তামাক ও অ্যালকোহল সেবন, শাকসবজি ও ফল কম খাওয়া, শারীরিক পরিশ্রমের অভাব। আর ফুসফুস ক্যান্সারে আক্রান্তদের ৯০ ভাগই প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ তামাক সেবনকারী।
বাংলাদেশে মূলত পুরুষের ক্ষেত্রে ফুসফুস ও নারীর ক্ষেত্রে স্তন বা জরায়ুর ক্যান্সারের রোগী বেশি। ফুসফুস ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার উল্লেখযোগ্য কারণ হলো তামাক ও তামাকজাতীয় দ্রব্যের ব্যবহার। এ ক্যান্সার হওয়ার ক্ষেত্রে এটি ৯০ ভাগ দায়ী। ধূমপায়ীরা ফুসফুস ক্যান্সারের ঝুঁকিতে তো থাকেই সঙ্গে অন্যরাও পরোক্ষ ধূমপানের শিকার হয়ে এ রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। পরোক্ষ ধূমপানের কারণে অধূমপায়ীদের মধ্যে ফুসফুস ক্যান্সারে আক্রান্তের হার ১৭ ভাগ।