বাচ্চাদের পুষ্টিকর খাবার খাওয়াতে রীতিমতো যুদ্ধ করতে হয়। মা-বাবা এই যুদ্ধে জয়ে নানা কৌশল নিয়ে থাকেন। টিভি বা মোবাইলে কার্টুন দেখানো, ভূতের ভয়, মিউজিক ভিডিও, গেমস কতো কিছুকেই না হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করেন তারা! তবে গবেষকরা বলছেন, রান্নার অনুষ্ঠান দেখালে বাচ্চাদের খাবার খাওয়ার কাজটি সহজ হয়ে যাবে। অনুষ্ঠান দেখলে বাচ্চাদের মধ্যে নানা ধরনের খাবার খাওয়ার প্রতি আগ্রহ তৈরি হবে।
সম্প্রতি নিউট্রিশন এডুকেশন অ্যান্ড বিহেভিয়ার সাময়িকীতে প্রকাশিত একটি গবেষণায় দেখা গেছে, স্বাস্থ্যকর খাবার রান্নার অনুষ্ঠান দেখা শিশুরা নাস্তায় পুষ্টিকর খাবার বেছে নেয়। এমনকি এসব বাচ্চার পুষ্টিকর খাবার গ্রহণের পরিমাণ অস্বাস্থ্যকর খাবার রান্নার অনুষ্ঠান দেখা বাচ্চাদের চেয়ে দ্বিগুণেরও বেশি।
১০ থেকে ১২ বছর বয়সী ১২৫টি শিশুর ওপর এই গবেষণা চালানো হয়। তাদের ১০ মিনিটের একটি ডাচ টিভি শো দেখানো হয়। যেখানে কিছু বাচ্চাকে দেখানো হয় স্বাস্থ্যকর খাবার রান্নার ভিডিও এবং অন্যরা দেখে অস্বাস্থ্যকর খাবার রান্না। মান ভেদে বিভিন্ন খাবারকে ১০ পয়েন্ট স্কেলে সাজনো হয়।
স্বাস্থ্যকর খাবারের ভিডিওটিতে ছিল ফল, টমেটো, পেঁয়াজ, ব্রাসেলস স্প্রাউটসহ বিভিন্ন শাকসবজি। অন্যদিকে অস্বাস্থ্যকর খাবার রান্নার ভিডিওতে ছিল হ্যামবার্গার, মেয়োনেজ দেয়া ফ্রেঞ্চফ্রাই এবং ক্রোস্যান্ট। ভিডিও দেখা শেষে তাদের নাস্তা পছন্দ করতে বলা হয়। স্বাস্থ্যকর খাবারের গ্রুপ থেকে ৪১ শতাংশেরও বেশি নাস্তা হিসাবে স্বাস্থ্যকর খাবার বেছে নেয়। অন্য গ্রুপটিতে এর পরিমাণ ছিল মাত্র ২০ শতাংশ।
নেদারল্যান্ডসের টিলবার্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের স্কুল অব হিউম্যানিটিজ অ্যান্ড ডিজিটাল সায়েন্সের সহকারী অধ্যাপক এবং প্রধান গবেষক ড. ফ্রান্স ফোকভরি বলেন, আপনি যদি শিশুদের স্বাস্থ্যকর খাবার বেশি বেশি দেখান তবে তারা তা গ্রহণে আগ্রহী ও উপকৃত হবে।
তিনি আরো বলেন, বাবা-মা নানা উপায়ে শিশুদের স্বাস্থ্যকর খাবারের সঙ্গে পরিচয় করাতে পারে। তার মধ্যে অন্যতম উপায় হলো রান্নার অনুষ্ঠান দেখানো। এগুলো তাদের আচরণ এবং মনোভাবের ওপর ইতিবাচক প্রভাব ফেলে। গুড ইটস, কিডস বেকিং চ্যাম্পিয়নশিপ, আমেরিকা’স টেস্ট কিচেনের মতো বেশ কিছু রান্নার অনুষ্ঠান বাচ্চাকে স্বাস্থ্যকর খাবারের প্রতি আগ্রহী করে তোলে।
এছাড়া বাবা-মাকেও বদলাতে হবে কথা বলার ধরন। ‘তুমি চিনি খেতে পারবে না’, ‘চকলেট ধরবে না’ এভাবে নেতিবাচক বাক্য ব্যবহার করা যাবে না। কারণ শিশুরা নিষিদ্ধ জিনিসের প্রতি আকৃষ্ট হয় বেশি। বরং বলতে হবে, ‘তুমি এই মজাদার ব্রোকোলিটা টেস্ট করবে?’। এভাবে বললে বাচ্চারা পুষ্টিকর খাবারের প্রতি আগ্রহী হবে। তাছাড়া ইউটিউব দেখে বাচ্চাকে সঙ্গে নিয়ে স্বাস্থ্যকর উপাদান দিয়ে বাড়িতেই বানানো যায় বার্গার, পিৎজা। নিজের হাতে বানানো খাবার খেতে শিশুরও ভালো লাগবে।
সূত্র: সিএনএন