গত সপ্তাহজুড়ে কোটা সংস্কার চাওয়া শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে স্থবির হয়ে পড়ে গোটা দেশ। শনিবার থেকে শিক্ষার্থীদের শাটডাউন কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে পুরো দেশে কারফিউ জারি করা হয়। দেশব্যাপী চোখ এখন চলমান আন্দোলনের দিকে। দেশের যখন এ অবস্থা, বিনোদন পাড়াও তখন প্রভাবিত হচ্ছে। এ অবস্থায় তাদের কাজকর্ম নিয়ে বণিক বার্তার সঙ্গে কথা বলছেন নাট্যজনরা।
দেশের বিদ্যমান পরিস্থিতিতে চলচ্চিত্র ও নাটকের বর্তমান সময় সম্পর্কে অভিনেতা ও পরিচালক তারিক আনাম খান বণিক বার্তাকে বলেন, ‘আন্দোলনে আমাদের কাজে ভীষণ প্রভাব পড়ছে। কাজ আসলে দিনের হিসেবে চলে। দেশে সামান্য কিছু হলেও নাটক সিনেমায় এর প্রভাব পড়ে। শিক্ষার্থীরা যখন রাস্তায় বসে আন্দোলন করছিলেন, তখন শুটিংয়ে পৌঁছতে দিনের অধিকাংশ সময় চলে যেত। এখানে তো সব শিডিউল অনুসারে হয়। ধরেন, ৯টায় শুটিং শুরু হবে, অনেকের শুটিং স্পটে আসতে দেরি হচ্ছে। আমার কয়েকটা কাজ ছিল যা এ পরিস্থিতির কারণে বন্ধ হয়ে গেছে। ’
আন্দোলনে সাধারণ মানুষের ভোগান্তি নিয়ে তিনি বলেন, ‘শুধু যে আমাদের কাজ বন্ধ হয়ে গেছে এমনটা নয়। বাজারে সাপ্লাই নেই, পণ্যসামগ্রীর অভাব। এককথায় সবাই বিপদে আছে। সাধারণ মানুষ হিসেবে পক্ষ-বিপক্ষ যেটাই বলি না কেন, যারা কাজকর্মে জড়িত তাদের প্রত্যেকের ভোগান্তি হচ্ছে। আমরা সবসময় শান্তি চাই। আমাদের সমাজে পক্ষ, বিপক্ষ, মত, ভিন্নমত থাকবেই। কিন্তু সেটা আলোচনার মাধ্যমে সমাধানের পথ খুঁজতে হবে। আমি কোনো পক্ষে যাচ্ছি না, আমার কাছে এক পক্ষ দোষী বা অন্য পক্ষ ঠিক, এমন নয়। তবে আমি মনে করি, আলোচনার মাধ্যমে সব সমস্যার সমাধান সম্ভব।’
চলমান আন্দোলন ও কারফিউতে চলচ্চিত্র বা নাটকে কেমন প্রভাব পড়ছে, এমন প্রশ্নের উত্তরে অভিনেতা চঞ্চল চৌধুরী বণিক বার্তাকে বলেন, ‘ছয়দিন ধরে বাসায় বসে আছি। কাজকর্ম সব বন্ধ। এ সপ্তাহের যা যা কাজ ছিল সব বন্ধ হয়ে গেছে।’ দেশের চলমান পরিস্থিতি নিয়ে তিনি বলেন, ‘এ পরিস্থিতিতে নিরাপদে ঘরে থাকাটা হচ্ছে সবচেয়ে বেশি জরুরি। দেশে এখন কারফিউ চলছে। বর্তমানে কাজকর্ম থেকে বড় কথা হচ্ছে চলমান পরিস্থিতির দ্রুত উন্নতি, দেশের মানুষ এটাই আশা করে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে মানুষ আবার কাজে ফিরবে। আমরাও আবার আমাদের বন্ধ হয়ে যাওয়া কাজগুলো শুরু করতে পারব।’
এ বিষয়ে তরুণ নাটক নির্মাতা মাবরুর রশিদ বান্নাহ কথা বলেন বণিক বার্তার সঙ্গে। চলমান কোটা সংস্কার আন্দোলন ও কারফিউতে নাটক নির্মাণে কোনো প্রতিবন্ধকতা আছে কিনা এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘আমার দুটি কাজ এরই মধ্যে বন্ধ হয়ে গেছে। দুটি নাটকের শুটিং ছিল, আন্দোলনের কারণে কাজগুলো করা সম্ভব হয়নি। পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত এগুলো করা সম্ভব হবে না। যতক্ষণ পর্যন্ত সবকিছু স্বাভাবিক না হয়, ততক্ষণ কিছু বলা যাচ্ছে না।’
দেশের কোটা সংস্কার আন্দোলন ও সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে বান্নাহ বলেন, ‘আসলে দেশের সার্বিক পরিস্থিতি বা মানুষ কেমন আছে এটা সবারই জানা। এটা নতুন করে আমার বলার কিছু নেই। তবে আমি দেশের একজন নাগরিক হিসেবে প্রত্যাশা করি, একটা দেশের নাগরিক তার দেশের সর্বোচ্চ মৌলিক অধিকার ভোগ করবে এবং সেখানে কোনো বাধা দেয়া হবে না। রাষ্ট্রে আমার সব ধরনের মানবিক স্বাধীনতা থাকবে। চলমান পরিস্থিতি দ্রুত ঠিক হয়ে যাক, এটা আমাদের সবারই লক্ষ্য। আমরা চাই, এ পরিস্থিতি দ্রুত সেরে যাক। প্রতিদিন মানুষ মরবে, রক্ত ঝরবে, এটা তো হতে পারে না। যেকোনো মানুষ, সে যেকোনো মতাদর্শেরই হোক না কেন, একটাও মরদেহ দেখতে চাই না আর।’
সিনেমা নির্মাণের ক্ষেত্রে কোটা সংস্কার আন্দোলন কতটা প্রভাব পড়েছে, এমন প্রশ্নের উত্তরে মনোজ প্রামাণিক বণিক বার্তাকে বলেন, ‘আন্দোলনের কারণে আমার শুটিং বন্ধ হয়ে গেছে। আন্তর্জাতিক পর্যায়ের কাজগুলো বন্ধ রয়েছে ইন্টারনেটের অভাবে। আন্দোলনের কারণে সব কাজই বন্ধ।’