মুঘল-এ-আজম থেকে শোলে। গত শতকের শেষ দিকের হাম আপকে হ্যায় কৌন বা দিলওয়ালে দুলহানিয়া লে জায়েঙ্গে। এসব সিনেমার খ্যাতি থেকে মনে হতে পারে ভারতীয় সম্ভাব্য সব দর্শকই এগুলো দেখে ফেলেছেন। এর কোনোটি তো টানা সিকি শতাব্দি হলে প্রদর্শিত হওয়ার রেকর্ড গড়েছে। এছাড়া তখন বিনোদন বলতে সিনেমার প্রভাব এখানকার চেয়ে বেশিই ছিল। তা সত্ত্বেও ভারতয় বক্স অফিসে প্রথম শতকোটি পেতে এ শতকের শুরুর দশক পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হয়েছে।
সর্বশেষ ‘স্ত্রী টু’র মাধ্যমে বলিউড হিন্দিভাষী বলয়ে নতুন মাইলফলক পেয়েছে। মূল বাজারে এ সিনেমার আয় ৬০০ কোটি রুপির বেশি। এ উদাহরণ সামনে এনে মিন্ট অনুসারে এক প্রতিবেদনে হিন্দুস্তান টাইমস বলছে, এ সিনেমা প্রচুর আয় করলেও দর্শক সংখ্যার নিরিখে পিছিয়ে আছে।
কারণ ৩০০, ৫০০ বা ১ হাজার কোটি রুপির ব্যবসা নির্ধারিত হচ্ছে টিকিটের দামের ওপর। কত দর্শক শেষ পর্যন্ত একটি ছবি দেখে তার প্রভাব থাকলেও দিন দিন টিকিট বিক্রির হার কমছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, সাম্প্রতিক বলিউডে হিট ছবিগুলো ৫০০-৬০০ কোটি রুপি ব্যবসার ঘরে ঢুকে পড়লে ছবিগুলোর ফুটফল ১৯৯০ বা ২০০০ এর দশকের ছবিগুলোর ফুটফলের কাছাকাছিও যাচ্ছে না।
সিনেমার বাণিজ্য বিশ্লেষকদের মত হলো, আজকাল যে ছবি হিট করছে তার পেছনে বিপুল সংখ্যক দর্শক নেই। বরং আছে টিকিটের ব্যাপক দাম। অনেক বেশি দামে আজকাল এক-একটি সিনেমার টিকিট বিক্রি হয়।
শুরুতে উল্লেখ করা ‘স্ত্রী টু’র কথা ধরা যাক। ছবিটি ভারতীয় বক্স অফিসে ৩ কোটি ফুটফল ক্রস করতে চলেছে। অর্থাৎ ৩ কোটি কিছু বেশি দর্শক প্রেক্ষাগৃহে গিয়ে ছবিটি দেখেছে। গত বছরের রেকর্ড গড়া দুই হিট ‘গদর টু’ বা ‘জওয়ানের’ ক্ষেত্রেও সংখ্যাটা তাই। সেখানে ১৯৯৪ সালে মুক্তি পেয়ে ক্লাসিক তকমা পাওয়া ‘হাম আপকে হ্যায় কৌনের’ ফুটফল ছিল ৭ কোটি ৩৯ লাখ। এরপর আছে ‘বাহুবলী টু’, এ ছবি সোয়া ৫ কোটি দর্শক দেখেছেন। আবার সিক্যুয়েলের তুলনায় নেহায়েত সামান্য আয় করা ‘গদর এক প্রেম কথা’ দেখেছিলেন ৫ কোটি ৫ লাখ দর্শক।
সবচেয়ে বেশি দর্শক দেখা হিন্দি সিনেমা ‘হাম আপকে হ্যায় কৌনের’ দৃশ্য ছবি: ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস
এ হিসেবে ভারতীয় সিনেমার দর্শকদের সংখ্যা যে কমছে সেটা স্পষ্ট। কিন্তু একই সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে সিনেমা হলের টিকিটের দাম।
প্রতি বছর ভারতের মাল্টিপ্লেক্সগুলোয় টিকিটের দাম বাড়ছে ১০-১৫ শতাংশ। আবার দেখা যাচ্ছে, সিঙ্গেল স্ক্রিনে টিকিটের দাম কম থাকায় একই সংখ্যক ফুটফল পাওয়া দুই সিনেমার ব্যবসা দুই রকম। এ ক্ষেত্রে ‘জওয়ান’ ও ‘গদর টু’ ব্যবসা পাশাপাশি রাখা যায়। এর মধ্যে শাহরুখ খানের সিনেমাটি দেখেছে ৩ কোটি ১০ লাখ দর্শক। অন্যদিকে ‘গদর টু’ দর্শক ছিল সাড়ে ৩ কোটি। কিন্তু ‘গদর টু’ তুলনায় ‘জওয়ান’-এর ব্যবসা কয়েকশ কোটি রুপি বেশি। অন্যদিকে মাল্টিপ্লেক্সের কল্যাণে ২ কোটি ৯০ দর্শক নিয়েও ‘পাঠান’ ও ‘অ্যানিমেল’ রেকর্ড ব্যবসা করেছে।
পরিসংখ্যান থেকে দেখা যাচ্ছে, ২০১৯ সাল থেকে এ বছরে ভারতীয় সিনেমা হলে ফুটফল কমেছে প্রায় ৮ শতাংশ। অন্যদিকে প্রাক-কভিড সময়ের তুলনায় টিকিটের দাম বেড়েছে প্রায় ২২ শতাংশ।