হত্যাকাণ্ডের বিচার চায় শিল্পীসমাজ

কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলন চলছে বেশ কয়েক সপ্তাহ ধরেই। এরই মধ্যে কোটা সংস্কার ইস্যুতে রায় হয়েছে।

কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলন চলছে বেশ কয়েক সপ্তাহ ধরেই। এরই মধ্যে কোটা সংস্কার ইস্যুতে রায় হয়েছে। শিক্ষার্থীদের এ আন্দোলন ঘিরে হতাহত হয়েছেন শিক্ষার্থীসহ আরো অনেকে। আন্দোলনে যারা নিহত হয়েছেন তাদের সুষ্ঠু বিচারসহ আরো কয়েক দফা দাবিতে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন শিক্ষার্থীরা। এরই মধ্যে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের সঙ্গে সংহতি জানিয়ে মাঠে নেমেছে বিভিন্ন পেশাজীবীরা। এবার শিক্ষার্থীদের প্রতিটি দাবির প্রতি সমর্থন জানিয়েছেন দেশের চলচ্চিত্র ও নাট্যজনরা। ‘‌দৃশ্যমাধ্যম শিল্পীসমাজ’-এর ব্যানারে বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদ ভবনের সামনে শোবিজ অঙ্গনের ব্যক্তিত্বদের শিক্ষার্থীদের সমর্থনে বেলা ১১টায় বিক্ষোভ কর্মসূচি করার কথা থাকলেও পরে রাজধানীর ফার্মগেট আনন্দ সিনেমা হলের সামনে তারা কর্মসূচি পালন করেন। 

বিক্ষোভ কর্মসূচিতে হত্যাকাণ্ডের বিচারের পাশাপাশি, গুম ও গণগ্রেফতারের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের হয়রানি বন্ধ ও আটককৃতদের মুক্তির দাবি তোলা হয়। শোবিজ তারকারা বলেন, স্বাধীনতার পর থেকে গত পাঁচ দশকে বাংলাদেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও রাষ্ট্রে যে লাগাতার নৈরাজ্য চলেছে, হলগুলোয় ক্ষমতাসীন ছাত্রসংগঠনের যে সুপরিকল্পিত নিপীড়ন চলেছে, সেসব কিছুকে পাল্টে নতুন ইতিহাস লেখার পথ তৈরি করেছেন এ শিক্ষার্থীরা। সে শিক্ষার্থীদের প্রতিটি দাবিকে আমরা সমর্থন জানাই।’

মোশাররফ করিম বলেন, ‘যে অবস্থা বর্তমানে শুরু হয়েছে আমরা ঘরে বসে থাকার অবস্থায় নেই। আমরা শান্তি চাই, রক্ত দিতে চাই না। মোবাইলে এসব জিনিস দেখতে দেখতে আমি মানসিকভাবে অস্বস্তিবোধ করছি।’ ছাত্রদের আন্দোলনে যারা সমর্থন জানিয়েছেন তাদের রাজাকার হিসেবে আখ্যায়িত করা হচ্ছে, এ নিয়ে আপনার মন্তব্য কী, এমন প্রশ্নের জবাবে মোশাররফ করিম বলেন, ‘আমিও তো অনেককে অনেক কিছু বলতে পারি, কিন্তু সেগুলো তো সিদ্ধ হতে হবে। প্রমাণ না থাকা সত্ত্বে আমরা কিছু বলতে পারি না।’ 

অভিনেতা সিয়াম বলেন, ‘এখানে আমার পক্ষ থেকে আলাদা করে কিছু বলার নাই। পুরো দেশের মানুষ এখন একটাই কথা বলছে। আর যখন দেশের মানুষ একটা ন্যায্য দাবি রাখে তখন বোঝা উচিত, এটা ফেলে দেয়ার মতো না। আমাদের যে ভাই-বোনেরা মারা গেলেন, এটা মেনে নেয়ার মতো না। যদি আপনি সুস্থ স্বাভাবিক মানুষ হন তবে রাতে ঘুমাতে পারবেন না। আমার এখনো কানে আসে “‍কারো পানি লাগবে?”এটা মাথায় যতদিন থাকবে, দেশের মানুষ শান্তিতে থাকতে পারবে না। আমরা যারা বিনোদন দুনিয়ায় কাজ করি, দেশের মানুষের জন্য করি। তরুণরা আমাদের মূল দর্শক, আজ আমরা যদি তাদের সঙ্গে দাঁড়াতে না পারি, তাহলে আমরা কী কাজ করলাম?’

আজমেরী হক বাঁধন বলেন, ‘আমি এ দেশের বাসিন্দা। এ দেশেই থাকব এবং এ দেশ আমার। এ দেশের সংস্কার করার দায়িত্বও আমাদের। বর্তমানে সাধারণ জনগণের সঙ্গে যা হয়েছে এবং হচ্ছে, সেটা কোনোভাবেই একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র ব্যবস্থার প্রতিচ্ছবি হতে পারে না। আমি এসব অন্যায়ের সুষ্ঠু তদন্ত চাই এবং সংশ্লিষ্ট সবাইকে বিচারের আওতায় আনা হোক। যতদিন ছাত্ররা মাঠে আছেন, আমি তাদের সঙ্গে আছি।’ 

নাজিয়া হক অর্ষা বলেন, ‘আমরা যে শুধু আজ এখানে এসে দাঁড়িয়েছি, তা নয়। শিক্ষার্থীদের অধিকারের বিষয়ে এর আগেও আর্টিস্টরা কথা বলেছেন। শিক্ষার্থীরা আমাদের ভবিষ্যৎ। আমাদের ভবিষ্যৎকে যখন এভাবে রাস্তায় গুলিবিদ্ধ অবস্থায় দেখি আমাদের প্রশাসন দ্বারা, এটা কখনো কাম্য নয়। আমি বিশ্বাস করি, এ দুর্দিনের একটা সমাধান হবে। কিন্তু সেটা খুব দ্রুত হোক। এভাবে আর রক্তক্ষরণ না হোক, এটাই প্রত্যাশা করি।’ 

মিথিলা বলেন, ‘এভাবে শিক্ষার্থীদের প্রাণ যাচ্ছে, এমন যেন আর না হয়। এটা খুবই দুঃখজনক ঘটনা। যেকোনো মননশীল ও বিবেকসম্পন্ন মানুষ চাইবে যেন এ ঘটনা আর না ঘটে।’ 

তারা দাবি জানান, ছাত্রদের মৃত্যুতে যেকোনো পদধারী, নেতা বা আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য জড়িত থাকলে সবাইকে বিচারের আওতায় আনা হোক। কর্মসূচিতে উপস্থিত ছিলেন মামুনুর রশীদ, মোশাররফ করিম, সিয়াম, মম, মিথিলা, আশফাক নিপুন, অমিতাভ রেজা চৌধুরী, সাবিলা নূরসহ আরো অনেকে।

আরও