ভারতের অন্যতম প্রতিভাবান অভিনেতা মোহাম্মদ জিশান আইয়ুব। দর্শকের নজরে এসেছেন ‘রইস’, ‘তাণ্ডব’, ‘আর্টিকেল ফিফটিন’ প্রভৃতি সিনেমা ও সিরিজে অভিনয় করে। আইএমডিবি বলছে, তিনি এখন পর্যন্ত ৩৮টি কনটেন্টে (সিনেমা, ওয়েব ও টিভি সিরিজ) অভিনয় করেছেন। তারকা তোষণের ইন্ডাস্ট্রিতে স্বাভাবিক নিয়মেই কেন্দ্রীয় চরিত্র খুব বেশি পাননি জিশান, কিন্তু পার্শ্ব চরিত্রেই নিজের অভিনয় প্রতিভার প্রমাণ দিয়েছেন। তারই স্বীকৃতি হিসেবে এবার পেলেন সেপটিমিয়াস অ্যাওয়ার্ড। ‘স্কুপ’ সিরিজে অন্যতম প্রধান চরিত্রে অভিনয়ের জন্য সেরা এশীয় অভিনেতা হয়েছেন জিশান। পুরস্কার পাওয়ার অভিব্যক্তি হিসেবে জিশান বলেন, ‘কেউ নিরন্তর চেষ্টা চালিয়ে গেলে একদিন পুরস্কৃত হয়।’
সেপটিমিয়াস অ্যাওয়ার্ডের এবারের আসর বসেছিল ১৯-২০ আগস্ট। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের ফিচার ফিল্ম, সিরিজ, ড্রামা, ডকুমেন্টারিকে পুরস্কারের জন্য বিবেচনা করা হয় এ পুরস্কার অনু্ষ্ঠানের জন্য। সেখানেই জিশান মনোনীত হন সেরা অভিনেতাদের তালিকায়। জিশান সেরা অভিনেতার পুরস্কার পাওয়ার খবর প্রকাশ করেন স্কুপের নির্মাতা হানসল মেহতা। এক্সে (সাবেক টুইটার) তিনি লেখেন, ‘একজন ভালো মানুষকে আড়ালে রাখা যায় না। অভিনন্দন জিশান আইয়ুব। দেরিতে হলেও তুমি তোমার প্রাপ্য পেয়েছ। এটা সেই সব জুরির জন্য শিক্ষা, যারা একটা অসাধারণ পারফরম্যান্সকে এড়িয়ে যায়।’
জিগনা বোহরার আত্মজৈবনিক স্মৃতিচারণ ‘বিহাইন্ড বারস ইন বাইকুল্লা: মাই ডেজ ইন প্রিজন’ থেকে ‘স্কুপ’ নির্মাণ করেছিলেন হানসল মেহতা। সিরিজটিতে অভিনয় করেন কারিশমা তান্না, জিশান আইয়ুব, হারমান বাওয়েজা, তন্নিষ্ঠা চ্যাটার্জি প্রমুখ। সংবাদপত্র, গণমাধ্যমের দুর্নীতি ও গলা টিপে ধরার মতো বিষয়গুলো উঠে এসেছিল সিরিজে। জিশান অভিনয় করেছিলেন একজন সৎ, নিষ্ঠাবান সম্পাদক ইমরান সিদ্দিকী চরিত্রে।
অ্যাওয়ার্ড নিতে আমস্টারডাম যেতে পারেননি জিশান। হিন্দুস্তান টাইমসের সঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, ‘হানসল স্যার আমাকে জানিয়েছিলেন যে সেখানে আমি মনোনীত হয়েছি। যাওয়ার পরিকল্পনাও করেছিলাম, কিন্তু পরে ব্যস্ততার কারণে হয়ে ওঠেনি। তাছাড়া আমাকে তেমন কিছু জানানো হয়নি যে গরজ করে যাব। পরে তিনি যখন বিজয়ীদের তালিকা দেখালেন, আমি অবাকই হয়েছিলাম।’
জিশান অভিনয় করেছেন বেশকিছু জনপ্রিয় সিনেমায়। এর মধ্যে শাহরুখ খান ও নওয়াজউদ্দিন সিদ্দিকী অভিনীত রইস অন্যতম। এতে তিনি ছিলেন শাহরুখের বন্ধুর চরিত্রে। সাদিক চরিত্রে অভিনয় করে এ সিনেমার মাধ্যমে জিশান দর্শকের নজরে এসেছিলেন। নিজের ক্যারিয়ারে শাহরুখ খানের অনেক অবদান আছে এমন কথা বহুবার বলেছেন জিশান। সেই সঙ্গে কৃতজ্ঞতাও জানিয়েছেন তার প্রতি।
জিশান দারুণ প্রতিভাবান অভিনেতা। তার প্রমাণ আনন্দ এল রাইয়ের ‘রাঞ্ঝানা’য় দিয়েছেন। জনপ্রিয় ও বিতর্কিত সিরিজ তাণ্ডবে দিয়েছেন। ছিলেন আর্টিকেল ফিফটিনেও। কিন্তু প্রতিটি কনটেন্টেই টাইপকাস্ট ছিলেন জিশান। মূল চরিত্রের বন্ধু বা বিপ্লবী চরিত্র দেয়া হয়েছে তাকে। শাহরুখের ‘জিরো’তেও ছিলেন। অন্যদিকে ‘সামির’ সিনেমায় মূল চরিত্রে থাকলেও সিনেমাটি দর্শকপ্রিয়তা পায়নি বা আলোচনায় আসেনি।
পুরস্কার অনুষ্ঠানেও জিশানকে বরাবর রাখা হতো পার্শ্ব-অভিনেতার বিভাগে। এ নিয়ে তিনি বলেন, ‘সবসময় তারা আমাকে পার্শ্ব-অভিনেতা হিসেবেই বিবেচনা করেছে। কখনো কেন্দ্রীয় চরিত্রে ভাবেনি। এ কারণে স্যার (হানসল মেহতা) ও আমি বিরক্ত ছিলাম।’
তবে পুরস্কার নিয়ে এত মাথা ঘামান না জিশান। তিনি বলেন, ‘পুরস্কার এমন বড় কিছু না। আমরা কাজটাকেই সঙ্গে রাখি বা আমাদের সঙ্গে থাকে। তবে পুরস্কার মূলত একজনের কাজের স্বীকৃতি।’ সাম্প্রতিক পুরস্কারটিকে নিজের কাজ ও চেষ্টার স্বীকৃতি মনে করেন তিনি। জিশান বলেন, ‘১৫ বছর ইন্ডাস্ট্রিতে কাজ করার পর একটা স্বীকৃতি পেলাম। কিন্তু এ পুরো সময় মানুষের ভালোবাসা পেয়েছি আরো বেশি। ইরফান সাহেব, পঙ্কজ কাপুর সাহেব, মনোজ বাজপেয়ী সাহেবের প্রশংসা পেয়েছি। আমার কাছে অ্যাওয়ার্ডের চেয়ে তাদের প্রশংসা বেশি দামি।’