ফিল্ম হেরিটেজ ফাউন্ডেশন পুনরুদ্ধার করল আরেকটি সিনেমা। ১৯৭৭ সালে গিরিশ কাসারাবল্লি নির্মাণ করেছিলেন ‘ঘটশ্রদ্ধা’। এটিকে কন্নড় সিনেমার অন্যতম ক্ল্যাসিক বলে ধরা হয়। সিনেমাটিতে ব্রাহ্মণ্যবাদী আচরণ তুলে ধরা হয়েছে। দীর্ঘদিন সাদাকালো এ সিনেমার ভালো কোনো প্রিন্ট দর্শকের জন্য ছিল না। গিরিশ কাসারাবল্লিকে সঙ্গে নিয়ে ফিল্ম হেরিটেজ ফাউন্ডেশন এটি পুনরুদ্ধার করেছে।
ঘটশ্রদ্ধা নির্মাণ হয়েছে ইউআর অনন্তমূর্তির লেখা একই নামের ছোটগল্প থেকে। মূলত এ সিনেমা কর্ণাটকের একটি বৈদিক ঘরানার পরিবারকে নিয়ে আবর্তিত হয়। এতে অভিনয় করেছিলেন অজিত কুমার। কেন্দ্রীয় চরিত্র যমুনার রূপদান করেছিলেন মিনা কুটাপ্পা।
ফিল্ম হেরিটেজ ফাউন্ডেশনের মাথায় ঘটশ্রদ্ধা পুনরুদ্ধার করার বিষয়টি অনেক দিন ধরেই ছিল। ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা শিবেন্দ্র সিং দুঙ্গারপুর নিজে এ নিয়ে আগ্রহী ছিলেন। কিন্তু তিনি জানান, এ সিনেমার যেসব প্রিন্ট পাওয়া যেত, সবই ছিল বাজেভাবে নষ্ট হয়ে যাওয়া। প্রতিটিতেই ছিল দাগ, শব্দেও ছিল সমস্যা। এরপর তারা সারা বিশ্বে সিনেমাটির কপি খোঁজ করা শুরু করেন।
এ সিনেমার সংস্কার প্রসঙ্গে দুঙ্গারপুর বলেন, ‘যুক্তরাজ্যের দ্য লাইব্রেরি অব কংগ্রেসে সিনেমার একটা ভালো প্রিন্ট ছিল। সেটাকে আমরা শব্দ সংযোজনের কাজে ব্যবহার করেছি। এছাড়া কালার গ্রেডিংয়ে বেশ পরিশ্রম করতে হয়েছে। আমরা চেয়েছি গিরিশ যেভাবে সাদাকালো সিনেমাটি নির্মাণ করেছিলেন তার গ্রেডিংয়ে কোনো পরিবর্তন না করে সিনেমাটি সংস্কার করতে। এছাড়া সর্বশেষে গিরিশকে সঙ্গে নিয়েই সাবটাইটেলের কাজ করেছি।’
সত্তরের দশক ভারতের সিনেমার জন্য গুরুত্বপূর্ণ ছিল। এ সময় সমাজের নানা অসংগতির বিষয় সিনেমায় উঠে এসেছিল। দক্ষিণের সিনেমার তখন খুব বেশি উন্নতি হয়নি। তখন সত্যজিৎ রায়, মৃণাল সেনের নাম দক্ষিণের নির্মাতারা জানতেন, কিন্তু তাদের সিনেমা খুব বেশি দেখার সুযোগ হয়নি। দক্ষিণের জন্য সিনেমার ল্যান্ডমার্ক হিসেবে বিবেচনা করা হতো ‘দো বিঘা জমিন’ বা ‘জাগতে রাহো’-কে। অর্থাৎ তারা পঞ্চাশের দশকেই আটকে ছিলেন। সে সময় গিরিশ নিয়ে এসেছিলেন ঘটশ্রদ্ধা। এ সিনেমায় ব্রাহ্মণ্যবাদ ও সামাজিক সংকট, নারীর দুরবস্থার মতো বিষয়গুলো উঠে এসেছিল। ফলে সে সময়েই সিনেমাটি নিয়ে প্রশংসা হয়। কিন্তু তারপর নানা কারণেই এর প্রিন্ট নষ্ট হয়ে গিয়েছিল।
সিনেমা নির্মাণের সময় নির্মাতা গিরিশ কাসারাবল্লি এমন একটা গল্প খুঁজছিলেন, যার মাধ্যমে সমাজের নগ্ন সত্য তুলে ধরা যায়। তখনই তিনি অনন্তমূর্তির গল্পটিকে তার সিনেমার জন্য উপযুক্ত মনে করেন। এর পরের গল্প নিয়ে গিরিশ বলেন, ‘আমার এক সাংবাদিক বন্ধু আমাকে সান্ধানা সুবর্ণার সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেয়। তিনি নিজের লেখা একটি নাটক থেকে সিনেমা নির্মাণ করতে চেয়েছিলেন। এস রামচন্দ্রনকে সিনেমাটোগ্রাফার নিযুক্ত করেছিলেন। রামচন্দ্রনের সিনেমাটোগ্রাফির দুটি সিনেমায় আমি ছিলাম সহকারী পরিচালক। সান্ধানাকে আমি ঘটশ্রদ্ধার চিত্রনাট্য দিই। তার কাছে মাত্র ৬০ হাজার রুপি ছিল। তিনি বলেছিলেন, ধার নিয়ে সিনেমাটা করবেন। অবশেষে আমরা ২ লাখ রুপিতে সিনেমার কাজ শেষ করি।’
ঘটশ্রদ্ধার পুরনো প্রিন্টে দেখা যায়, সিনেমার প্রায় প্রতিটি ছবিতেই আছে দাগ। সেই সঙ্গে বেশির ভাগ অংশই অস্পষ্ট। ফিল্ম হেরিটেজ ফাউন্ডেশন ভারত ও ভারতের বাইরে সিনেমাটির একাধিক প্রিন্ট নিয়ে কাজ করেছে। এছাড়া শব্দ সংযোজনের প্রক্রিয়া তো উল্লেখ করাই হলো। প্রতিষ্ঠানটি পুরনো ও গুরুত্বপূর্ণ সিনেমা সংস্কারে পরিশ্রম করছে। এর আগে তারা সংস্কারের মাধ্যমে পুনরুদ্ধার করেছে অরবিন্দন গোবিন্দনের ‘কুমাট্টি’ ও ‘থাম্প’। এছাড়া গত বছর পুনরুদ্ধার করা হয় আরিবাম শ্যাম শর্মার ‘ইশানোউ’ ও নীরদ মহাপাত্রর ‘মায়ামৃগ’।