এবছর মুক্তি পেল না শাহরুখ খানের কোনো সিনেমা। তবু প্রায় সপ্তাহেই খবরের শিরোনামে থাকেন তিনি। গত ডিসেম্বরে ‘ডাঙ্কি’ সেমি হিট হয়েছে, কিন্তু সে সিনেমা নিয়ে এখনো অনেকে কথা বলেন। তার আগে দিয়েছিলেন বছরের সেরা দুই হিট—পাঠান ও জওয়ান। নতুন কী সিনেমা আসছে তা নিয়ে চলছে জল্পনা। তাকে নিয়ে আলোচনার কারণ, নব্বইয়ের দশকে বলিউডকে বদলে দেয়া শাহরুখ আজও প্রাসঙ্গিক।
লাভার বয় হোক বা ডন—কিং খানকে বলিউডে বহুদিন পাওয়া যায়নি। তবে শাহরুখ তো শাহরুখ। রীতিমতো একটা ব্র্যান্ড। তিনি ফিরে আসেন নতুন করে। পাঠান দিয়েই শুরু হয়েছিল তা। ২০২৩ সালের শুরুটা হয়েছিল বাদশাহর হাত ধরে। মজার ব্যাপার পাঠান মুক্তির পর থেকে রাতারাতি তিনি বাদশাহ থেকে পাঠান হয়ে গেলেন। মূলত একেই বলে ট্রেন্ডসেটার। তারপর জওয়ান মুক্তির পর তো একে একে ভাঙল নানা রেকর্ড। জওয়ান হয়ে উঠল বাণিজ্যিক অ্যাকশন সিনেমার উদাহরণ।
‘শাহরুখের ক্যারিয়ার শেষ’—এমন একটা কথা পাঠানের আগে কয়েক বছর মিডিয়ায় খুব প্রচারিত ছিল। কেননা তার আগের ১২ বছরে তার কোনো সিনেমা শাহরুখের ক্যালিবার অনুসারে না হয়েছে ‘ভালো সিনেমা’, না হয়েছে ‘ব্যবসাসফল’। পুরো ভারত যখন দক্ষিণী সিনেমার প্রশংসায় মুখে ফেনা তুলে বলিউডের সৎকার করে ফেলছে, সে সময়ও শাহরুখের দুটো সিনেমা নিয়ে দর্শক আগ্রহী ছিলেন। এটা শাহরুখের স্টারডম নয়, তার প্রতি দর্শকের আশাবাদ। কেননা ৩০ বছরের ক্যারিয়ারে শাহরুখ খান বলিউড ও ভারতীয় সিনেমাকে যা দিয়েছেন, এমনকি বহির্বিশ্বে ভারতীয় সিনেমাকে যেভাবে প্রমোট করেছেন তা বলিউড বা ভারতের অন্য কোনো সিনেমা স্টারের পক্ষে সম্ভব হয়নি। ভক্তদের কাছে তার আবেদন তো অন্য মাত্রার।
পাঠান-জওয়ানের আগে এক দশক শাহরুখের কোনো ভালো সিনেমা আসেনি বলাটা ভুল। ডন টু সে হিসেবে খারাপ সিনেমা না। ব্যবসাও তুলনামূলক কম করেনি। রইসের প্রতি দর্শকের এক ধরনের আগ্রহ ছিল। সিনেমা হিসেবে ডিয়ার জিন্দেগি সময়োপযোগী। এর মধ্যেই শাহরুখ করেছিলেন ফ্যানের মতো নিরীক্ষাধর্মী সিনেমা, যা ওটিটি যুগের আগে এবং ওটিটি যুগেও পড়তি ক্যারিয়ার বাদে কোনো স্টার ধরার সাহস করতেন না। প্রশংসা পেলেও অবশ্য বক্স অফিসে সিনেমাটি খুব ভালো করেনি। বাকি থাকে জাব হ্যারি মেট সেজাল বা দিলওয়ালের মতো সিনেমা শাহরুখ কেন করলেন তা অবশ্য অনেকেরই প্রশ্ন। গত দিনগুলোয় তার স্ক্রিপ্ট বাছাই ভুল ছিল বলে এক বাক্যে মন্তব্য করে থাকেন সবাই। কিন্তু শাহরুখ নতুন কী করবেন?
করার হয়তো অনেক কিছুই ছিল। কিন্তু শাহরুখ খান মূলত সময় থেকে এগিয়ে। অনেক কিছু তিনি আগেই করে ফেলেছেন। ২০১১ সালে তার করা রা. ওয়ান বক্স অফিস বা দর্শকের কাছে পাত্তা পায়নি। ২০২২ সালে এসে বিগ বাজেট সিনেমা আদিপুরুষের ভিএফএক্স দেখে দর্শক বলছেন রা. ওয়ান থেকে তাদের শেখা উচিত ছিল। বলিউডে যখন দক্ষিণী সিনেমার রিমেক চলছে, শাহরুখ তখন দক্ষিণ ভারতের যুক্ত গল্পে নির্মিত চেন্নাই এক্সপ্রেসে অভিনয় করেছিলেন। ফ্যানের মতো সিনেমা করেছেন তিনি। একজন সুপারস্টারের জন্য এ রকম আউট অব দ্য বক্স সিনেমায় (ফ্যানডম নিয়ে নির্মিত) অভিনয় করাতে ‘রিস্ক’ থাকে। কিন্তু রিস্ক কবে নেননি শাহরুখ? নব্বইয়ের দশকে শাহরুখ যখন লাভার বয় হিসেবে স্বীকৃত, সে সময় তিনি ডন, আনজামের মতো সিনেমায় খল চরিত্রে অভিনয় করেছেন। সুপারস্টার হয়েছেন বহু আগে, তার পরও ক্যামিওতে তাকে দেখা গেছে বারবার।
সিনেমাকে বর্তমানে ব্যবসার মানদণ্ডে মাপা হয়। পাঠান আর জওয়ান দিয়ে নিজেকে বক্স অফিসে প্রমাণ করেছেন শাহরুখ। পপুলারলি নিজেকে আরো পপুলার করে তুলেছেন। ছেলের মামলায় কোনো রকম মিডিয়া স্টেটমেন্ট না দিয়ে পুরো বিষয়টি নীরবে সমাধান করেছেন। ২০২৩ সালে ফিরে এসেছিলেন রাজার বেশেই। আবার তাই নতুন করে শাহরুখকে নিয়ে চর্চা শুরু হয়েছে গত বছরই।
আজ শাহরুখ খানের ৫৯তম জন্মদিন। এখনো তরুণদের মতো এনার্জি নিয়ে পারফর্ম করেন স্টেজে। উপস্থিত বুদ্ধিতে আজও হারাতে পারেনি শাহরুখকে কোনো সাংবাদিক। ইন্ডাস্ট্রিকে অনেক দিয়েছেন শাহরুখ। সিনেমার পাশাপাশি তৈরি করেছেন অভিনেতা, পরিচালক। মন্দিরা বেদি থেকে দীপিকা পাড়ুকোন, আনুশকা শর্মা; আজকের জিশান আউয়ুব, জয়দীপ আহেলওয়াতরা নিজেদের ক্যারিয়ারে শাহরুখের অবদানের কথা বলেন। গত বছর তিন সিনেমার সফলতার পর নতুন করে শুরু হয়েছে তাকে নিয়ে আলোচনা। ২০২৪ সালে এসে তাকে নিয়ে তাই বলিউডের তরুণ অভিনেতারা শাহরুখকে মাথায় করেই রাখছেন এবং তারাই বলেন, ‘আরো বহুদিন শাহরুখ খান বাদশার মতোই রাজত্ব করবেন।’