শিক্ষার্থীদের বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের মুখে ৫ আগস্ট প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করে দেশ ছাড়েন শেখ হাসিনা। দেশে ক্ষমতার পালাবদলে পরিবর্তন হতে দেখা যাচ্ছে অনেক কিছু। আওয়াজ উঠেছে রাষ্ট্র সংস্কারের। এমন সময়ে এসে রাজনৈতিক পরিচয় ও আওয়ামী রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকায় অনেক শিল্পী পড়েছেন সংকটে। অনেকে আছেন নিভৃতে, আবার কেউ কেউ মামলার মুখোমুখি হয়েছেন।
সদ্য ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ততা থাকায় সরকার পতনের পর আত্মগোপনে আছেন ঢাকার বিনোদন জগতের অনেক শিল্পী। দেশও ছেড়েছেন অনেকে। ২০১৮ সাল থেকে গত বছর পর্যন্ত মহিলা আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সংস্কৃতিবিষয়ক সম্পাদক ছিলেন অভিনেত্রী রোকেয়া প্রাচী। ১৪ আগস্ট বিকালে তিনি ধানমন্ডি ৩২ নম্বরের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্মৃতি বিজড়িত বাসভবনের সামনে হাজির হন। সেখানে তার ওপর হামলা চালানো হয় বলে অভিযোগ তোলেন তিনি।
বাড়িতে হামলা হওয়ার অভিযোগ করেছেন অভিনেত্রী সুবর্ণা মুস্তাফা। একাদশ জাতীয় সংসদে আওয়ামী লীগের সংরক্ষিত মহিলা আসনের সংসদ সদস্য ছিলেন এ অভিনেত্রী। এদিকে ৫ আগস্টের পর আত্মগোপন করেছেন সংগীতশিল্পী মমতাজ ও চিত্রনায়ক রিয়াজ। মমতাজ মানিকগঞ্জে তার নিজ আসনে দুবার সংসদ সদস্য ছিলেন। রিয়াজ প্রকাশ্যে আওয়ামী লীগের স্বৈরশাসনের সমর্থন দিয়ে গেছেন। চিত্রনায়ক ফেরদৌস রয়েছে আত্মগোপনে। সর্বশেষ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের হয়ে ঢাকা-১০ আসনের সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন তিনি।
আওয়ামী রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান ই-কমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ই-ক্যাব) সভাপতির পদ থেকে পদত্যাগ করেছেন শমী কায়সার। রাজনীতির সঙ্গে কোনো সম্পৃক্ততা না থাকলেও শেখ হাসিনার সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা ও আন্দোলনের সময় শিক্ষার্থীদের সমর্থন না করায় রোষানলে পড়েছেন অভিনেতা চঞ্চল চৌধুরী। এরই মধ্যে দেশ ছেড়েছেন আওয়ামী ঘনিষ্ঠ অভিনেত্রী নিপুণ আক্তার ও অরুণা বিশ্বাস।
সিনেমাসংশ্লিষ্টরা বলছেন, শিল্পীদের দলীয় রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত থাকায় সমস্যার কিছু নেই, কারণ শিল্পীদের রাজনীতির বাইরে গিয়ে শিল্পচর্চা করা অসম্ভব।
এ বিষয়ে নাট্য ও চলচ্চিত্র পরিচালক শিহাব শাহীন বণিক বার্তাকে বলেন, ‘শিল্পীদের রাজনীতি সচেতন অবশ্যই হতে হবে। শিল্পীরা রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত থাকলে কোনো কালেই ক্ষতি হয় না। রাজনৈতিক অসচেতনতা ও জনবিচ্ছিন্ন হয়ে বসে থাকাটাই বরং শিল্পীর জন্য ক্ষতিকর। শিল্পী মানুষের কাছাকছি থাকবে, মানুষের কথা বলবে, মানুষের পক্ষ নেবে এটাই স্বাভাবিক। শিল্পীরা কোনো ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান কিংবা দলীয় স্বার্থ রক্ষার জন্য অন্যায়কে সমর্থন করে যাবে, সেটা গ্রহণযোগ্য নয়। শিল্পীদের দলীয় রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত থাকলেও সমস্যা নেই, কারণ শিল্পীদের রাজনীতির বাইরে গিয়ে শিল্পচর্চা অসম্ভব। তবে রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত থেকে অন্যায়ের বিরোধিতা করবে না, এটা তো হতে পারে না।’
এ বিষয়ে লেখক ও নির্মাতা আশফাক নিপুন বণিক বার্তাকে বলেন, ‘রাজনৈতিক চর্চায় কোনো বাধা নেই। বাংলাদেশের সংবিধানে যেকোনো সাধারণ মানুষেরই রাজনৈতিক আদর্শ লালন ও সক্রিয় রাজনীতি করার অধিকার আছে। তবে শিল্পীদের দায়িত্ব সাধারণ মানুষের চেয়ে বেশি। প্রত্যেকের রাজনৈতিক আদর্শ থাকতেই পারে। সে আদর্শের প্রতি কারো একাত্মতা থাকাটাও স্বাভাবিক। কিন্তু শিল্পীদের মাথায় রাখা উচিত, তার রাজনীতি যেন গণমানুষের ন্যায্যতার পক্ষে থাকে। তাদের অধিকার আদায় ও সমুন্নত রাখার যে রাজনীতি, শিল্পীদের রাজনীতি সেটা হওয়াই কাম্য, শুধু কোনো দলভিত্তিক রাজনীতি নয়।’
বাংলাদেশে রাজনৈতিক দলের সঙ্গে শিল্পীদের সংশ্লিষ্টতা নিয়ে তিনি বলেন, ‘রাজনৈতিক দলগুলো তো চাইবেই যে শিল্পীরা তাদের হয়ে কথা বলুক। কিন্তু শিল্পীদের তার ঊর্ধ্বে গিয়ে গণমানুষের হয়ে কথা বলতে হবে, গণমানুষের হকের কথা বলতে হবে।’