টি-টোয়েন্টিতে মাহমুদউল্লাহ অধ্যায়ের সমাপ্তি

গোয়ালিয়র ও দিল্লিতে টানা দুই ম্যাচ হারের পর গতকাল হায়দরাবাদে সিরিজের তৃতীয় ও শেষ টি-টোয়েন্টি ম্যাচ খেলেছে বাংলাদেশ।

গোয়ালিয়র ও দিল্লিতে টানা দুই ম্যাচ হারের পর গতকাল হায়দরাবাদে সিরিজের তৃতীয় ও শেষ টি-টোয়েন্টি ম্যাচ খেলেছে বাংলাদেশ। রাজীব গান্ধী ইন্টারন্যাশনাল স্টেডিয়ামে এ ম্যাচটি ছিল মাহমুদউল্লাহর ১৪১তম ও শেষ আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি ম্যাচ।

দীর্ঘ ১৭ বছরের আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি ক্যারিয়ারের সমাপ্তি ঘটল মাহমুদউল্লাহর। বয়স তার ৩৯ ছুঁইছুঁই। ৩৮ বছর পেরিয়ে জাহাঙ্গীর শাহ ১৯৯০-এর দিকে খেলেছিলেন তিনটি ওয়ানডে ম্যাচ। মাহমুদউল্লাহ অবশ্য ৩৮ পেরিয়ে খেলেছেন ২১ ম্যাচ। গতকাল সেটি হয়ে যাওয়ার কথা ২২।

মাহমুদউল্লাহ ছাড়া ১৭ বছরের বেশি ক্যারিয়ার আছে শুধু বাংলাদেশের সাকিব আল হাসান (১৭ বছর ২০৯ দিন) ও নিউজিল্যান্ডের শন উইলিয়ামসের (১৭ বছর ১৬৬ দিন)।

মাহমুদউল্লাহ এ ফরম্যাটে লম্বা সময় ছিলেন বাংলাদেশ দলের অধিনায়ক। ২০১৮ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত ৪৩টি টি-টোয়েন্টিতে বাংলাদেশ দলকে নেতৃত্ব দিয়েছেন তিনি। ২০২১ সালে সংযুক্ত আরব আমিরাতে অনুষ্ঠিত বিশ্বকাপে টাইগারদের নেতৃত্ব দেন তিনি। বাংলাদেশের অধিনায়ক হিসেবে সবচেয়ে বেশি জয়ও মাহমুদউল্লাহর। তবে এ রেকর্ডের একজন ভাগীদার আছেন। তার সমান ১৬টি জয় পেয়েছেন সাকিব আল হাসানও। অধিনায়ক হিসেবে মাহমুদউল্লাহ হেরেছেন ২৬ ম্যাচে।

টি-টোয়েন্টিতে মাহমুদউল্লাহর অভিষেক ২০০৭ সালের সেপ্টেম্বরে কেনিয়ার বিপক্ষে নাইরোবিতে। গতকাল ম্যাচের আগ পর্যন্ত ১৪০টি টি-টোয়েন্টিতে ১১৭.৫১ স্ট্রাইক রেটে ও ২৩.৬৫ গড়ে ২ হাজার ৩৯৫ রান করেছেন তিনি। রানে তিনি বাংলাদেশে দ্বিতীয় স্থানে রয়েছেন। ২ হাজার ৫৫১ রান করে শীর্ষে সাকিব।

মাহমুদউল্লাহ গতকাল খেলেছেন ১৪১তম ম্যাচ। বিশ্বে তার চেয়ে বেশি আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি খেলার রেকর্ড আছে মাত্র তিনজনের। ভারতের রোহিত শর্মা ১৫৯ ম্যাচ, আয়ারল্যান্ডের পল স্টার্লিং ১৪৭ ম্যাচ ও একই দেশের জর্জ ডকরেল ১৪১ ম্যাচ খেলেছেন। গতকাল ডকরেলকে ছুঁয়ে ফেলে যুগ্মভাবে তিনে উঠে যান মাহমুদউল্লাহ।

বাংলাদেশ টি-টোয়েন্টি দলে মাহমুদউল্লাহ ছিলেন ফিনিশারের ভূমিকায়। বারবার তিনি এটি প্রমাণ করেছেন। ২০১৮ সালে শ্রীলংকার মাঠে নিদাহাস ট্রফির ফাইনালে উঠতে জিততেই হতো বাংলাদেশকে। এমন সমীকরণে স্বাগতিকদের বিপক্ষে ম্যাচে ১৮ বলে ৪৩ রানের হার না মানা ইনিংস বাংলাদেশকে ফাইনালে তুলেছিলেন তিনি।

এ বছর ওয়েস্ট ইন্ডিজ ও যুক্তরাষ্ট্রের মাঠে অনুষ্ঠিত টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে সেই শ্রীলংকার বিপক্ষে খেলেন আরেকটি ম্যাচে জেতানো ইনিংস। রান মাত্র ১৬ হলেও এর গুরুত্ব অনেক। ১৮তম ওভারে পরপর ২ উইকেট হারায় বাংলাদেশ। দলের পতন ঘটে অষ্টম উইকেটের। শেষ দুই ওভারে লাগে ১১ রান। ১৯তম ওভারে দাসুন শানাকার প্রথম বলেই ছক্কা মারেন মাহমুদউল্লাহ, ম্যাচ শেষ করে দেন সেই ওভারেই। এ জয় বাংলাদেশের সুপার এইটে ওঠায় বড় ভূমিকা রাখে।

এখন পর্যন্ত বাংলাদেশের হয়ে তিন ফরম্যাটের ক্রিকেট মিলিয়ে চার শতাধিক ম্যাচ খেলা তিন ক্রিকেটারের একজন হলেন মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। ২০০৭ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশের হয়ে ৪২২ ম্যাচ খেলেছেন তিনি (টেস্ট ৫০, ওয়ানডে ২৩২ ও টি-টোয়েন্টি ১৪০)। আজ মাঠে নামলে সংখ্যাটি হয়ে যাবে ৪২৩। দেশের হয়ে তিন ফরম্যাটে সর্বোচ্চ ৪৬৫ ম্যাচ খেলেছেন মুশফিকুর রহিম। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৪৪৭ ম্যাচ খেলেছেন সাকিব।

টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটের ইতিহাসে একক ভেন্যুতে সবচেয়ে বেশি রান সংগ্রহের তালিকায় বাংলাদেশী খেলোয়াড়দের মধ্যে শীর্ষে মাহমুদউল্লাহ। মিরপুর শেরেবাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে ২০১১ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত ৩৯ ম্যাচ খেলে ৮০৪ রান করেছেন তিনি। তিন ফিফটিতে রান তুলেছেন ৩৬.৫৪ গড়ে। এই মাঠে ৬৩টি বাউন্ডারি ও ২৪টি ছক্কা হাঁকিয়েছেন ডানহাতি এ ব্যাটার। এছাড়া মিরপুরে সাকিব ৩৪ ম্যাচে ৫৪৭, লিটন দাস ১৮ ম্যাচে ৫১০, বিরাট কোহলি ১১ ম্যাচে ৪৭২ রান, মুশফিকুর রহিম ৩২ ম্যাচে ৪৬১ রান করেছেন।

বিশ্বের সব ক্রিকেট খেলুড়ে দেশ মিলিয়ে এ তালিকায় ৪ নম্বরে আছেন মাহমুদউল্লাহ। শীর্ষ তিনে আবার টেস্ট খেলুড়ে দেশের কেউ নেই। তাঞ্জানিয়ার ইভান সেলেমানি (৯২৫), কাতারের মুহাম্মদ তানভীর (৮৪১) ও উগান্ডার সিমন সেসাজি (৮০৬) শুধু এক ভেন্যুতে মাহমুদউল্লাহর চেয়ে বেশি রান করেছেন।

আবার আন্তর্জাতিক ও ঘরোয়া টি-টোয়েন্টি মিলিয়ে এক ভেন্যুতে সর্বোচ্চ রানের রেকর্ডটা কোহলির। বেঙ্গালুরুর চিন্নাস্বামী স্টেডিয়ামে তিনি করেছেন ৩,৪৫৬ রান। এ তালিকায় ইংল্যান্ডের জেমস ভিন্স দ্বিতীয় (৩,২৫৩, রোজ বোল, সাউদাম্পটন); একই দেশের অ্যালেক্স হেলস তৃতীয় (৩,২৪১, ট্রেন্ট ব্রিজ, নটিংহ্যাম); বাংলাদেশের মুশফিকুর রহিম চতুর্থ (৩,২৩৯, মিরপুর), তামিম ইকবাল পাঁচে (৩,০২০, মিরপুর) ও মাহমুদউল্লাহ ৬ নম্বরে (৩,০১২, মিরপুর)।

অবসরের ঘোষণার দিন মাহমুদউল্লাহ বেশ কয়েকজন ব্যাটারের নাম উল্লেখ করেছেন, যারা তার জায়গা নিতে পারেন। যদিও বাংলাদেশ পুরো মিডল অর্ডার ব্যাটিং নিয়েই ভাবছে। কেননা মুশফিকের পর সাকিব ও এবার মাহমুদউল্লাহর বিদায় ঘটল। বাংলাদেশ কিছু ব্যাটার পেয়েছে সত্যি, যারা আধুনিক টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে দলের চাহিদা পূরণের সামর্থ্য রাখেন। যদিও মাহমুদউল্লাহ ফিনিশারের যে ভূমিকা সফলভাবে পালন করেছেন, সেই জায়গাটিতে যোগ্য কাউকে কি খুঁজে পেয়েছে বাংলাদেশ?

বিশেষ করে ১৪ থেকে ২০ ওভারের স্পেশালিস্ট হয়ে উঠেছিলেন মাহমুদউল্লাহ। ২০১৬ থেকে ২০১৯ সালের মধ্যে তিনি স্ট্রাইক রেট ১০৩.৭৮ থেকে ১৩২.৩৩-এ উন্নীত করেছিলেন। যদিও গত চার বছরে তা আবার ১১০.২০-তে নেমে এসেছে। এটা হয়তো তার বিদায়ের ইঙ্গিতই দিয়েছে।

আরও