ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগের (আইপিএল-২০২৫) মেগা নিলামের আগে ধরে রাখা খেলোয়াড়ের তালিকা জমা দিতে ১০টি ফ্র্যাঞ্চাইজিকে গত ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত সময় বেঁধে দিয়েছিল ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ড। শেষ দিনেই ফ্র্যাঞ্চাইজিগুলো তা নিশ্চিত করেছে। ১০ দল মোট ৪৬ জন খেলোয়াড়কে ধরে রেখেছে।
রাখা খেলোয়াড়দের মধ্যে সবচেয়ে দামি সানরাইজার্স হায়দরাবাদের দক্ষিণ আফ্রিকান ব্যাটার হেনরিখ ক্লাসেন। তাকে ২৩ কোটি রুপিতে ধরে রাখে সানরাইজার্স। এর পরই রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্সের বিরাট কোহলি ও লক্ষ্ণৌ সুপার জায়ান্টসের নিকোলাস পুরান। দুজনের দাম পড়েছে ২১ কোটি রুপি।
মুম্বাই ইন্ডিয়ান্স: ধরে রেখেছে পাঁচজনকে: জসপ্রীত বুমরাহ (১৮ কোটি), সূর্যকুমার যাদব (১৬.৩৫ কোটি), হার্দিক পান্ডিয়া (১৬.৩৫ কোটি), রোহিত শর্মা (১৬.৩০ কোটি), তিলক ভার্মা (৮ কোটি)। নিলামের জন্য তহবিল আছে: ৪৫ কোটি রুপি। রাইট টু ম্যাচ (আরএমটি) অপশন বাকি: একটি। ছেড়ে দেয়া বড় নাম: ইশান কিশান, টিম ডেভিড। বড় সিদ্ধান্ত: ২০২৫ সালের আইপিএলে মুম্বাইকে নেতৃত্ব দেবেন হার্দিক পান্ডিয়া। আর দলটি খেলোয়াড় ধরে রাখতে সবচেয়ে বেশি ব্যয় করেছে জসপ্রীত বুমরাহর জন্য। মুম্বাইয়ের জন্য চ্যালেঞ্জ ছিল দেশী তারকাদের ৭৫ কোটির মধ্যে ধরে রাখা। তারা সেটি পেরেছে বলে খুশি। বাকি ৪৫ কোটি নিয়ে তারা ২০২৫ সালের মেগা নিলামে অংশ নেবে।
সানরাইজার্স হায়দরাবাদ: ধরে রেখেছে পাঁচজনকে: হেনরিখ ক্লাসেন (২৩ কোটি), প্যাট কামিন্স (১৮ কোটি), অভিষেক শর্মা (১৪ কোটি), ট্রাভিস হেড (১৪ কোটি) ও নিতিশ কুমার (৬ কোটি)। নিলামের জন্য তহবিল আছে: ৪৫ কোটি। রাইট টু ম্যাচ অপশন বাকি: একটি। ছেড়ে দেয়া বড় নাম: ওয়াশিংটন সুন্দর, টি নটরাজন ও ভুবনেশ্বর কুমার। দলটির হাতে আছে: ৪৫ কোটি। রাইট টু ম্যাচ অপশন বাকি: একটি। গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত: বিরাট কোহলি ও নিকোলাস পুরানকে পেছনে ফেলেছেন হেনরিখ ক্লাসেন। ধরে রাখা সবচেয়ে ব্যয়বহুল খেলোয়াড় এখন এ দক্ষিণ আফ্রিকান তারকা। ১০ দলের মধ্যে তিনজন বিদেশীকে ধরে রেখেছে সানরাইজার্স।
চেন্নাই সুপার কিংস: চেন্নাই সুপার কিংস ধরে রেখেছে পাঁচজনকে: ঋতুরাজ গায়কোয়াড় (১৮ কোটি), রবীন্দ্র জাদেজা, মাথিসা পাথিরানা (১৩ কোটি), শিভাব দুবে (১২ কোটি) ও এমএস ধোনি (৪ কোটি)। দলটির হাতে আছে: ৫৫ কোটি রুপি। রাইট টু ম্যাচ (আরএমটি) অপশন বাকি: একটি। ছেড়ে দেয়া বড় নাম: ডেভন কনওয়ে, রাচিন রবীন্দ্র, মুস্তাফিজুর রহমান, দিপক চাহার, শার্দূল ঠাকুর, মহেশ থিকসানা, তুষার দেশপান্ডে। গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত: চেন্নাইকে পাঁচবার শিরোপা জেতানো এমএস ধোনিকে মাত্র ৪ কোটি রুপিতে ‘আনক্যাপড’ খেলোয়াড় কোটায় দলভুক্ত করেছে চেন্নাই। পাঁচ বছর জাতীয় দলে খেলেন না এমন কোনো ভারতীয়কে ‘আনক্যাপড’ হিসেবে দলে টানা যাবে। এছাড়া বাংলাদেশের তারকা মুস্তাফিজুর রহমানকে ছেড়ে দিয়েছে তারা। গতবার ২ কোটি রুপিতে চেন্নাইতে খেলেন তিনি। যদিও জাতীয় দলের প্রয়োজনে তিনি আইপিএলে পুরো মৌসুম খেলতে পারেননি।
রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরু: ধরে রেখেছে তিনজনকে: বিরাট কোহলি (২১ কোটি), রজত পতিদার (১১ কোটি) ও ইয়াশ দয়াল (৫ কোটি রুপি)। নিলামের জন্য তহবিল বাকি: ৮৩ কোটি রুপি। রাইট টু ম্যাচ বাকি: তিনটি। ছেড়ে দেয়া বড় নাম: গ্লেন ম্যাক্সওয়েল, মোহাম্মদ সিরাজ, ফাফ ডু প্লেসি ও ক্যামেরন গ্রিন। বড় সিদ্ধান্ত: মাত্র তিনজন খেলোয়াড়কে ধরে রেখেছে বেঙ্গালুরু, যা পাঞ্জাব কিংসের পর সবচেয়ে কম। ধরে রাখা একমাত্র বড় নাম বিরাট কোহলি, যার জন্য দলটির খরচ ২১ কোটি রুপি। এবার তিনি অধিনায়ক হয়ে ফিরছেন।
দিল্লি ক্যাপিটালস: ধরে রেখেছে চারজনকে: অক্ষর প্যাটেল (১৬.৫০ কোটি), কুলদীপ যাদব (১৩.২৫ কোটি), ত্রিস্তান স্টাবস (১০ কোটি) ও অভিষেক পোরেল (৪ কোটি)। তহবিল বাকি: ৭৩ কোটি রুপি। রাইট টু ম্যাচ বাকি: দুটি। ছেড়ে দেয়া বড় নাম: ঋষভ পন্ত, ডেভিড ওয়ার্নার, এনরিখ নরকিয়া। বড় সিদ্ধান্ত: দিল্লির তারকা ঋষভ পন্তকে ধরে রাখেনি দিল্লি ক্যাপিটালস। অর্থাৎ নতুন মৌসুমে তাদের নতুন অধিনায়ক লাগবে। তবে তাকে নিলাম থেকে কিনে অধিনায়ক করার সুযোগ আছে, যদিও সেই সম্ভাবনা কম।
কলকাতা নাইট রাইডার্স: ধরে রেখেছে ছয়জনকে: রিংকু সিং (১৩ কোটি), বরুন চক্রবর্তী (১২ কোটি), সুনিল নারাইন (১২ কোটি), আন্দ্রে রাসেল (১২ কোটি), হরষিত রানা (৪ কোটি) ও রমনদীপ সিং (৪ কোটি)। নিলামের জন্য তহবিল বাকি: ৫১ কোটি রুপি)। রাইট টু ম্যাচ: শূন্য। ছেড়ে দেয়া বড় নাম: শ্রেয়াস আইয়ার, মিচেল স্টার্ক, ফিল সল্ট, ভেঙ্কটেশ আইয়ার, নিতিশ রানা। বড় সিদ্ধান্ত: শেষ মুহূর্তের সিদ্ধান্তে আন্দ্রে রাসেলকে ধরে রেখেছে কলকাতা। ধরে রাখাদের মধ্যে সবচেয়ে দামি রিংকু সিং। আইপিলের শিরোপাজয়ী অধিনায়ক শ্রেয়াস আইয়ার কিংবা আইপিএলের ইতিহাসে সবচেয়ে দামি খেলোয়াড় মিচেল স্টার্ককে তারা ধরে রাখেনি। গত মৌসুমে কোয়ালিফায়ার-১ ও ফাইনালে ম্যাচ উইনিং স্পেল করেন স্টার্ক। রাজস্থান রয়্যালসের মতো কলকাতাও ছয়জন খেলোয়াড়কে ধরে রেখেছে, যদিও তাদের পেছনে দলটির ব্যয় মাত্র ৫৭ কোটি রুপি।
রাজস্থান রয়্যালস: ধরে রেখেছে ছয়জনকে: সাঞ্জু স্যামসন (১৮ কোটি), যশস্বী জয়সোয়াল (১৮ কোটি), রাইয়ান পরাগ (১৪ কোটি), ধ্রুব জুরেল (১৪ কোটি), শিমরন হেটমায়ের (১১ কোটি), সন্দীপ শর্মা (৪ কোটি)। নিলামের জন্য তহবিল বাকি: ৪১ কোটি রুপি। রাইট টু ম্যাচ: শূন্য। ছেড়ে দেয়া বড় নাম: যুজবেন্দ্র চাহাল, জস বাটলার, রবিচন্দ্র অশ্বিন। বড় সিদ্ধান্ত: পাঁচজন ব্যাটারকে ধরে রেখে ব্যাটিংকে সমৃদ্ধ করেছে। আর একজন বোলারকে ধরে রেখেছে তারা। কেকেআরের সঙ্গে সর্বোচ্চ ছয়জনকে ধরে রেখেছে তারা। রিটেনশনে বড় লাভ হয়েছে ধ্রুব জুরেলের, তিনি পেয়েছেন ১৪ কোটি রুপি।
গুজরাট টাইটান্স: ধরে রেখেছে পাঁচজনকে: রশিদ খান (১৮ কোটি), শুবমন গিল (১৬.৫০ কোটি), সাই সুদর্শন (৮.৫০ কোটি), রাহুল তেবাশিয়া (৪ কোটি), শাহরুখ খান (৪ কোটি)। নিলামের জন্য তহবিল বাকি: ৬৯ কোটি রুপি। রাইট টু ম্যাচ: একটি। ছেড়ে দেয়া বড় নাম: মোহাম্মদ শামি, ডেভিড মিলার। বড় সিদ্ধান্ত: লম্বা সময় ধরে ইনজুরির সঙ্গে লড়াই করা মোহাম্মদ শামিকে ছেড়ে দিয়েছে গুজরাট। দলটি যে পাঁচ খেলোয়াড়কে ধরে রেখেছে তাদের মধ্যে কোনো ফাস্ট বোলার নেই।
লক্ষ্ণৌ সুপার জায়ান্ট: ধরে রেখেছে পাঁচজনকে: নিকোলাস পুরান (২১ কোটি), রবি বিষ্ণোই (১১ কোটি), মায়াঙ্ক যাদব (১১ কোটি), মহসিন খান (৪ কোটি), আয়ুশ বাদোনি (৪ কোটি)। নিলামের জন্য তহবিল বাকি: ৬৯ কোটি রুপি। রাইট টু ম্যাচ: একটি। ছেড়ে দেয়া বড় নাম: লোকেশ রাহুল, মার্কাস স্টয়নিস, কুইন্টন ডি কক, ক্রুনাল পান্ডিয়া। বড় সিদ্ধান্ত: লোকেল রাহুলকে ধরে না রাখায় আগামী মৌসুমে নতুন অধিনায়ক খুঁজতে হবে লক্ষ্ণৌ সুপার জায়ান্টকে। এ দলের নিকোলাস পুরান এবারের আইপিএলে ধরে রাখা খেলোয়াড়দের মধ্যে যুগ্মভাবে দ্বিতীয় ব্যয়বহুল। শীর্ষে ক্লাসেন।
পাঞ্জাব কিংস: ধরে রেখেছে দুজনকে: শশাঙ্ক সিং (৫.৫ কোটি), প্রাভসিমরান সিং (৪ কোটি)। নিলামের জন্য তহবিল বাকি (১১০.৫ কোটি)। রাইট টু ম্যাচ: চারটি। ছেড়ে দেয়া বড় নাম: হার্শাল প্যাটেল, অর্শদীপ সিং, স্যাম কারান, জনি বেয়ারস্টো, লিয়াম লিভিংস্টোন, কাগিসো রাবাদা। বড় সিদ্ধান্ত: এবার সবচেয়ে কম, দুজন খেলোয়াড় ধরে রেখেছে পাঞ্জাব কিংস। ফলে নিলামে তারাই সবচেয়ে বড় বাজেট নিয়ে খেলোয়াড় কিনতে পারবে। তাদের হাতে আছে ১০০ কোটি রুপিরও বেশি। তাদের নতুন অধিনায়ক তো বটেই, বলতে গেলে পুরো স্কোয়াডই নতুন করে সাজাতে হবে।