কাতার বিশ্বকাপের প্রথম পাঁচটি ম্যাচের কথাই তোলা যাক। হিসাব করলে দেখবেন, মাঠে
বল গড়ানোর মোট সময়ের চেয়ে ৮৫ মিনিট বেশি খেলা দেখেছে দর্শক!
আরো স্পষ্ট করে বললে, ফুটবলের আদর্শ দৈর্ঘ্য হলো ৯০ মিনিট। কিন্তু ইংল্যান্ড ও
ইরানের খেলার দৈর্ঘ্য দাঁড়ায় ১১৭ মিনিট ১৬ সেকেন্ড। অর্থাৎ প্রায় দুই ঘণ্টা। ওই খেলায়
ইরানের গোলকিপার মাথায় আঘাত পাওয়ার খানিকটা সময় খেলা বন্ধ ছিল। সেই সময় পরে যোগ করে
দেয় ফিফা।
মূলত এ ধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনায় নষ্ট হওয়া সময় খেলোয়াড়দের ফিরিয়ে দিতেই অতিরিক্ত
সময়ের উদ্যোগ। কিন্তু এ কারণে প্রায় সব খেলায় গড়াচ্ছে বাড়তি সময়ে। এ নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায়
আপত্তিও লক্ষ্য করা গিয়েছে।
গতকাল সৌদি আরব আর আর্জেন্টিনার খেলায় প্রথমার্ধে সাত মিনিট ও দ্বিতীয়ার্থে ১৪
মিনিট যোগ হয়।
আঘাতপ্রাপ্ত খেলোয়াড়দের ধকল সামলে উঠা, ভিডিও অ্যাসিস্ট্যান্ট রেফারির সিদ্ধান্ত
নেয়া, বিকল্প খেলোয়াড়ের প্রবেশ, পেনাল্টি ও লাল কার্ড প্রদর্শনকালে কিছু সময় নষ্ট হয়
বলে ধারণা ফিফার। এ ছাড়া কখনো কখনো খেলোয়াড়রাও ইচ্ছাকৃতভাবে সময় নষ্ট করে।
বিশ্ব ফুটবলের নিয়ন্ত্রক সংস্থাটির রেফারি কমিটির চেয়ারম্যান পিয়েরলুইগি কলিনা
গত সপ্তাহে জানান, কাতারে টুর্নামেন্ট চলাকালে নষ্ট হওয়া সময় টুকে রেখে পরে তা যোগ
করা হবে।
২০১৮ সালে রাশিয়ার বিশ্বকাপেও এই চেষ্টা লক্ষ্য করা যায়। ওই সময় এর ব্যাপ্তি ছিল
৬-৮ মিনিট। কিন্তু এবার আধাঘণ্টার কাছাকাছি পৌঁছে যাওয়ায় অনেকের চোখে লাগছে।
কলিনা বলেন, ভেবে দেখুন আপনি যদি প্রথমার্ধে তিনটি গোল করেন। তবে উদযাপন ও আবার
খেলা শুরুর জন্য সম্ভবত চার বা পাঁচ মিনিট হারিয়ে ফেলেন।
১৯৬৬ সালের প্রথম বিশ্বকাপ থেকে এ পর্যন্ত একক বিশ্বকাপে সর্বোচ্চ স্টপেজ টাইমের
পাঁচটিই হয়েছে এই সোমবার ও মঙ্গলবার। এগুলো হলো- ইংল্যান্ড বনাম ইরানের প্রথমার্ধ
(১৩ দশমিক ৫৯ মিনিট), আর্জেন্টিনা বনাম সৌদি আরবের দ্বিতীয়ার্ধ (১৩ দশমিক ৫৩ মিনিট),
ইংল্যান্ড বনাব ইরানের দ্বিতীয়ার্ধ (১৩ দশমিক ০৫ মিনিট), যুক্তরাষ্ট্র বনাম ওয়েলসের
দ্বিতীয়ার্ধ (১০ দশমিক ৩২ মিনিট) ও সেনেগাল বনাম নেদারল্যান্ডস (১০ দশমিক ০৩ মিনিট)।
চমকপ্রদই বলা যায়, এই সব অতিরিক্ত সময় খেলাকে গোলের দিকে এগিয়ে নিয়েছে।
ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে ইরানের মেহদি তেরেমির পেনাল্টি হয় ১০২ মিনিট ৩০ সেকেন্ডের
মাথায়। ড্র-জনিত এক্সটা টাইম বাদ দিলে বিশ্বকাপে এটিই সর্বশেষ গোলের রেকর্ড। এরপরই
আছে নেদারল্যান্ডসের ডেভি ক্লাসেনের ৯৮ মিনিট ১৭ সেকেন্ডে দেয়া গোল।
পদ্ধতিটি সোশ্যাল মিডিয়ায় আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। কেউ কেউ ফিফার প্রশংসা করেছেন,
আবার কেউ মনে করছেন এটি খেলাকে অপ্রয়োজনীয়ভাবে দীর্ঘ করছে। তবে যা-ই ভাবুন না কেন,
নব্বই মিনিটের মাথায় খেলা ছেড়ে গেলে অনেক কিছু মিস হতে পারে; আপাতত সেটাই মাথায় রাখুন।