মুলতান টেস্টের প্রথম ইনিংসে পাকিস্তান ৫৫৬ রানের সৌধ গড়ার পর কি কেউ ভেবেছিলেন, এই টেস্টে ইনিংস ব্যবধানে হারতে পারে পাকিস্তান? এখন সেই সম্ভাবনা জোরালো। ইনিংস ব্যবধান এড়াতে এখনো ১১৬ রান করতে হবে, হাতে আছে ৫ উইকেট।
আজ বৃহস্পতিবার হ্যারি ব্রুকের ট্রিপল ও জো রুটের ডাবল সেঞ্চুরিতে ভর করে ইতিহাসে চতুর্থ সর্বোচ্চ স্কোর (৮২৩/৭.ডি) গড়ে ইংল্যান্ড। রান পাহাড়ে চাপা পড়া পাকিস্তান দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাটিংয়ে নেমে ৮২ রানে হারিয়ে ফেলে ৬ উইকেট। এরপর ১০.৪ ওভারে ৭০ রানের পার্টনারশিপ গড়ে দলের সংগ্রহ দেড়শ পার করান আগা সালমান (৪১*) ও আমের জামাল (২৭*)। দুই ইনিংস মিলে এখনো ইংল্যান্ডের প্রথম ইনিংস থেকে ১১৫ রানে পিছিয়ে স্বাগতিকরা।
এর আগে ইংল্যান্ডের ইতিহাসে ষষ্ঠ ও সব মিলে ২৮তম ব্যাটার হিসেবে টেস্টে ট্রিপল সেঞ্চুরি করার কৃতিত্ব দেখান ২৫ বছর বয়সী ব্রুক। আজ চতুর্থ দিন দ্বিতীয় সেশনে তিনি ৩০০ পূর্ণ করেন মাত্র ৩১০ বলে। ৩২২ বলে ৩১৭ রান করে তিনি আউট হয়ে যান। ব্রুক আউট হলেও ইংল্যান্ড পেরিয়ে যায় ৮০০ রান (৮২৩/৭/ডিক্লেয়ারড)। এটা টেস্টের চতুর্থ সর্বোচ্চ দলীয় স্কোর। আগের আটশোর্ধ্ব তিন স্কোরের দুটিই ইংল্যান্ডের। সর্বোচ্চ ৯৫২ রান শ্রীলংকার গড়া।
এ পথে জো রুটের সঙ্গে ৪৫৪ রানের মহাকাব্যিক জুটি গড়েন ব্রুক। রুট ক্যারিয়াসেরা ২৬২ রান করে আউট হয়ে গেলেও ব্রুক দুরন্ত গতিতে করেন ট্রিপল সেঞ্চুরি। ব্রুকের আগের সর্বোচ্চ স্কোর ১৮৬ রানের। আজ ক্যারিয়ারসেরা ইনিংসটাকে তিনি প্রথমে ডাবলে ও পরে ট্রিপলে রূপ দেন। এ পথে গড়েছেন অনেক রেকর্ড।
টেস্টে ২৮ জন ব্যাটার মিলে ৩২টি ট্রিপল সেঞ্চুরি করেছেন। ব্রুকের আগে ইংল্যান্ডের লিওনার্ড হিউটন, ওয়ালী হ্যামন্ড, গ্রাহাম গুচ, অ্যান্ড্রু স্যান্ডহাম ও জন হিউ এনড্রিচ ট্রিপল সেঞ্চুরি করেন। অস্ট্রেলিয়ান ডন ব্র্যাডম্যান, ভারতের বিরেন্দর শেবাগ, ওয়েস্ট ইন্ডিজের ক্রিস গেইল ও ব্রায়ান লারার রয়েছে দুটি করে ডাবল সেঞ্চুরি।
ব্রায়ান লারা খেলেছেন টেস্টের সর্বোচ্চ ইনিংস ৪০০ রান। তিনিই একমাত্র ব্যাটার হিসেবে ৪০০ রান করার কৃতিত্ব দেখান। ইংল্যান্ডের সর্বোচ্চ স্কোর হিউটনের ৩৬৪ রান।
এর আগে ক্যারিয়ারের ষষ্ঠ ডাবল সেঞ্চুরি করেন রুট।
ব্রুক ও রুটের বীরত্বে ২৬৭ রানের লিড নিয়ে ইনিংস ঘোষণা করে ইংল্যান্ড। আজ মাত্র ৪৯ ওভারে ৬.৭৫ গড়ে ৩৩১ রান তুলেছে ইংল্যান্ড! এরপর দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাটিংয়ে নেমে স্বাগতিকরা কোনো রান তোলার আগেই হারায় শফিক আব্দুল্লাহকে। তাকে বোল্ড করেন ক্রিস ওকস। এরপর গাস অ্যাটকিনসন, ব্রাইডন কার্স ও জ্যাক লিচ পাকিস্তানের ৫ উইকেটের পতন ঘটান।
রুট ও ব্রুক চতুর্থ উইকেট জুটিতে ৪৫৪ রানের জুটিতে দলকে এনে দেন বিশাল সংগ্রহ। টেস্ট ইতিহাসে চতুর্থ সর্বোচ্চ রানের জুটি গড়লেন রুট ও ব্রুক। সর্বোচ্চ তিনটির মধ্যে দুটি শ্রীলংকার ব্যাটারদের। ২০০৬ সালে কলম্বোয় দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ৬২৪ রানের জুটি গড়েছিলেন লংকান ব্যাটিং মায়েস্ত্রো কুমার সাঙ্গাকারা ও মাহেলা জয়াবর্ধনে। এর আগে ১৯৯৭ সালে কলম্বোয় ভারতের বিপক্ষে ৫৭৬ রান করেছিলেন সনাথ জয়সুরিয়া ও রোশান মহানামা।
রুট ১৭৬ ও ব্রুক ১৪১ রান নিয়ে চতুর্থ দিন ব্যাটিংয়ে নামেন। দুজনই প্রথম সেশনে ডাবল সেঞ্চুরি পূর্ণ করে নেন। রুট ৩০৫ বলে ও ব্রুক ২৪৫ বলে ২০০ রান ছুঁয়েছেন। এটা রুটের ষষ্ঠ ও ব্রুকের প্রথম ডাবল সেঞ্চুরি। পরে রুট ক্যারিয়ারের সর্বোচ্চ স্কোর গড়েছেন। ২০১৬ সালে ওল্ড ট্র্যাফোর্ডে পাকিস্তানের বিপক্ষে খেলেছিলেন ২৫৪ রানের ইনিংস। আজ সেই পাকিস্তানের বিপক্ষেই নিজের আগের রেকর্ডটা ভাঙলেন।
সর্বশেষ ৪০ বছর আগে একই ইনিংসে ইংল্যান্ডের দুজন ডাবল সেঞ্চুরি করেছিলেন। ১৯৮৫ সালে চেন্নাই টেস্টে ডাবল করেছিলেন ইংল্যান্ডের মাইক গ্যাটিং ও গ্রায়েম ফাউলার।
ইংলিশ গ্রেট স্যার অ্যালিস্টার কুকের ছিল পাঁচটি ডাবল সেঞ্চুরি। দেশের হয়ে কুকের সর্বোচ্চ টেস্ট রানের রেকর্ড ভাঙার পর এবার ডাবলেও তাকে টপকে গেলেন রুট। ডাবল সেঞ্চুরি করায় ইতিহাসে যুগ্মভাবে সপ্তম স্থানে উঠে গেলেন তিনি। ইংল্যান্ডের ব্যাটারদের মধ্যে ওয়ালি হ্যামন্ডই (৭টি) শুধু রুটের চেয়ে বেশি ডাবল সেঞ্চুরি করেছেন।
ডন ব্র্যাডম্যান ১২টি, কুমার সাঙ্গাকারা ১১টি, ব্রায়ান লারা ৯টি, হ্যামন্ড, বিরাট কোহলি ও মাহেলা জয়াবর্ধনে ৭টি করে ডাবল সেঞ্চুরি করেছেন। ৬টি করে ডাবল সেঞ্চুরি আছে রুটসহ আটজনের।