স্বাগতিক নেপালকে ফাইনালে হারিয়ে দ্বিতীয়বারের মতো দক্ষিণ এশিয়ার শ্রেষ্ঠত্বের মুকুট জিতে গতকাল দুপুরে দেশে ফিরেছে বাংলাদেশ নারী ফুটবল দল। এ সাফল্যের পর থেকে প্রশংসায় ভাসতে থাকেন নারী ফুটবল তারকারা। অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস থেকে শুরু করে সরকার ও ক্রীড়াঙ্গন থেকে সবার অভিনন্দনে সিক্ত হন সাবিনা খাতুন, মনিকা চাকমা ও তাদের সতীর্থরা। তবে নারী ফুটবলারদের প্রতি দেশবাসীর সত্যিকারের ভালোবাসার স্ফুরণ ঘটল গতকাল তারা দেশে ফেরার পর। ফুলেল শুভেচ্ছা, ভালোবাসায় ফুটবলের এ সূর্যসন্তান, বীরাঙ্গনাদের বরণ করে নেয়া হয়।
দুপুরে ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করে সাবিনাদের বহনকারী উড়োজাহাজ। শত মিডিয়াকর্মী ও বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের কর্মকর্তারা তাদের বরণ করে নেয়ার অপেক্ষায় ছিলেন। ইমিগ্রেশন কার্যক্রম সম্পন্ন করে বেলা ২টায় বেরিয়ে এলে তাদের ফুল দিয়ে বরণ করে নেয়া হয়।
বিমানবন্দরে সংবাদ সম্মেলন করে বিজয়ের অনুভূতি প্রকাশ করেন মেয়েরা। এরপর বিকাল ৪টার দিকে ছাদ খোলা বাসে বিমানবন্দরের টার্মিনাল থেকে ফুটবল তারকারা বের হয়ে এলে অভূতপূর্ব দৃশ্যের অবতারণা ঘটে। বিমানবন্দরে তাদের বরণ করে নিতে আসে ফুটবল সমর্থকদের সংগঠন ‘আলট্রাস’ ও সাধারণ জনতা। ফুটবলপ্রেমীরা ‘বাংলাদেশ, বাংলাদেশ, চ্যাম্পিয়ন, চ্যাম্পিয়ন’ স্লোগানে ফুটবল দলকে অভিনন্দন জানায়। তারা লাল ও সবুজ রঙ ছুড়ে অভিবাদন জানায় ফুটবল তারকাদের। সাবিনা, সানজিদা, ঋতুপর্ণা, মনিকারাও হাত নেড়ে সমর্থকদের ভালোবাসার জবাব দেন। এসব দৃশ্য ফুটবলাররা নিজ নিজ মোবাইলেও ধারণ করেন।
বিমানবন্দর থেকে বাফুফের উদ্দেশে রওনা হয় দলটি। মতিঝিলে যাওয়ার পথে বিভিন্ন ফুটওভার ব্রিজে সেতুতে অপেক্ষা করছিল মানুষ। তারা সাফজয়ী মেয়েদের অভিনন্দন জানাতে চেয়েছিল। যদিও তাদের আশাহত করা হয়। বিমানবন্দর থেকে বেরিয়ে হঠাৎ করেই সাবিনাদের বহন করা ছাদখোলা বাসটি এক্সপেসওয়েতে উঠে পড়ে। এ নিয়ে রাস্তায় অপেক্ষমাণ সংবাদকর্মী ও সমর্থকরা যারপরনাই হতাশ হয়ে পড়েন।
জানা গেছে, সিদ্ধান্তটা নিয়েছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি)। সাবিনাদের বিজয়যাত্রার কারণে যানজট সৃষ্টি হওয়ার শঙ্কা থেকেই ডিএমপি জানিয়ে দেয়, ফুটবল দলকে বহনকারী বাসটি কোন পথে যাবে। সেখানেও বাসটি ধীরে ধীরে চলতে থাকায় এক্সপ্রেসওয়ের একটা অংশে যানজট তৈরি হয়। এফডিসি মোড়ে নেমে মগবাজার ফ্লাইওভার দিয়ে কাকরাইল হয়ে পল্টনে যায় বাসটি। এরপর নটর ডেম কলেজের সামনে দিয়ে শাপলা চত্বর পার হয়ে বাসটি প্রবেশ করে মতিঝিল বাফুফে ভবনে। টানা দ্বিতীয়বার দক্ষিণ এশিয়া জয় করে ফেরা মেয়েদের বাফুফে ভবনে বরণ করে নেন ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া।
বাংলাদেশ দলের ইংলিশ কোচ পিটার বাটলার গতকাল বিমানবন্দরে সংবাদমাধ্যমকে বলেছেন, ‘এ শিরোপা বাংলাদেশের মানুষেরই।’ সাফ চ্যাম্পিয়নশিপে বাংলাদেশের মেয়েদের খেলায় মুগ্ধ এ কোচ বলেন, ‘বাংলাদেশ এ টুর্নামেন্টে শিরোপা জিতেছে। তবে শিরোপা জেতাটা বড় কথা নয়, যে ধরনের ফুটবল মেয়েরা খেলেছে, সেটাই আনন্দের জায়গা।’
বাংলাদেশের সবচেয়ে অভিজ্ঞ খেলোয়াড় ও অধিনায়ক সাবিনা খাতুন দেশে ফিরে সংবাদমাধ্যমকে বলেন, ‘আমরা এ শিরোপা জিততে পেরে অত্যন্ত আনন্দিত। আমরা দেশের মানুষের কাছে আশীর্বাদ চাই, যেন এমন সাফল্য আরো উপহার দিতে পারি।’
সাফজয়ী নারী ফুটবল দলকে ১ কোটি টাকা পুরস্কার দেয়ার ঘোষণা দিয়েছে যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়। এদিকে, সাফজয়ী মেয়েদের জন্য ২০ লাখ টাকা বোনাস দিচ্ছে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)। গতকাল বিসিবির পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বিসিবি সভাপতি ফারুক আহমেদ বলেছেন, ‘মেয়েদের এ অর্জনে আমরা গর্বিত। তাদের এ জয় গোটা দেশের ক্রীড়াঙ্গন, বিশেষ করে নারীদের অত্যন্ত অনুপ্রাণিত করবে বলে আমরা মনে করি। বিসিবি সবসময়ই খেলায় নারীদের অংশগ্রহণকে উৎসাহিত করে। এ ঐতিহাসিক জয় দেশব্যাপী নারীদের খেলার প্রতি আগ্রহ ও সমর্থন বাড়বে বলে আমরা মনে করি।’