টানা দ্বিতীয়বার সাফ শিরোপা জিতে গতকাল কাঠমান্ডু থেকে দেশে ফিরে এসেছেন বাংলাদেশের নারী ফুটবলাররা। ফিরে দিনভর ফুলেল শুভেচ্ছা ও ভালোবাসায় সিক্ত হয়েছেন তারা। সেই সঙ্গে আর্থিক পুরস্কারের একাধিক ঘোষণাও এসেছে। সাফজয়ীদের যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয় দিচ্ছে ১ কোটি টাকা আর ২০ লাখ টাকা দিচ্ছে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)।
এ ঘোষণায় কিশোরী আর তরুণী ফুটবলাররা হয়তো খুশি। তবে তাদের কোমল হৃদয়ে কিছু অব্যক্ত ব্যথাও লুকিয়ে আছে। ক্রিকেটের মতো এত বেশি আয়রোজগার মেয়েদের ফুটবলে নেই। অল্প বেতন, তাও আবার নিয়মিত না পাওয়ার অভিযোগ খেলোয়াড়দের।
নারী ফুটবলাররা বর্তমান বাস্তবতায় খুব বেশি বেতন পান না। অধিনায়ক সাবিনা খাতুনসহ সিনিয়র কয়েকজন খেলোয়াড় মাসে পান ৫০ হাজার টাকা করে। এছাড়া বাকিরা জ্যেষ্ঠতার ভিত্তিতে ৪০, ৩০ হাজার টাকা করে পান। আবার এমনও অভিযোগ রয়েছে, তিন মাস ধরে বকেয়া মেয়েদের বেতন। তাদের বকেয়া পরিশোধের পাশাপাশি সাফজয়ীদের বেতন বাড়ানোরও দাবি উঠেছে।
বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের (বাফুফে) একটি সূত্র জানিয়েছে, যেহেতু ফিফার একটি ফান্ড থেকে মেয়েদের বেতন পরিশোধ করা হয়, তাই প্রক্রিয়ার কারণে কখনো কখনো একটু বিলম্ব হয়। তবে সেটি খুব বেশি বিলম্ব হয় না। বর্তমানে তাদের বেতন আগস্ট পর্যন্ত ক্লিয়ার রয়েছে।
অধিনায়ক সাবিনার কথায়ও এর সঙ্গে অনেকটা মিল খুঁজে পাওয়া যায়। কাঠমান্ডুতে সাফ গেমস চলাকালে তিনি এক সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছিলেন, তারা এখনো সেপ্টেম্বরের বেতন পাননি। বেতনটা একটু আগেভাগে পরিশোধ করলে ভালো হয়।
সে হিসেবে ফুটবলারদের দুই মাসের বেতন বকেয়া। এ ব্যাপারে জানতে নারী ফুটবলের দায়িত্বে থাকা বাফুফের পরিচালক মাহফুজা আক্তার কিরণকে ফোন করা হলেও তাকে পাওয়া যায়নি।
এদিকে, সাফজয়ী নারী দলের হেড কোচের দায়িত্বে থাকা পিটার বাটলারের চাকরি ছাড়া নিয়েও গুঞ্জন। যদিও তার দায়িত্ব ছিল মূলত বাফুফের এলিট একাডেমিকেন্দ্রিক। নারী দলের হেড কোচ গোলাম রব্বানী ছোটন বিদায় নেয়ার পর যে শূন্যতা তৈরি হয় সেটি সাইফুল বারী টিটু পূরণ করতে পারছিলেন না পুরোপুরি। ফলে বাটলারকে মেয়েদের জাতীয় দলের দায়িত্ব দেয়া হয়। যেহেতু তিনি বাফুফের চুক্তিবদ্ধ কোচ তাই তাকে জাতীয় দলের কোচের দায়িত্ব দেয়াটা অস্বাভাবিক ছিল না। বাফুফের সঙ্গে তার চুক্তির মেয়াদ গতকাল শেষ হয়ে গেছে।
জানা গেছে, এখন বাফুফের কর্মকর্তাদের সঙ্গে বাটলারের বৈঠক হবে। বাফুফে চাইলে তিনি কোনো ভূমিকায় হয়তো থাকবেন কিংবা বিদায় নেবেন।
বাটলার কাঠমান্ডুতে থাকাকালেই জানিয়েছিলেন, তিনি মেয়েদের দায়িত্বে আর থাকতে চান না। তিনি এলিট একাডেমি কিংবা অন্য কোনো দায়িত্বে ফিরে যাবেন। তবে মেয়েদের সাফ জেতানোর পর গুঞ্জন ওঠে, বাংলাদেশের চাকরি ছেড়ে দিয়ে বাটলার ইংল্যান্ড চলে যাচ্ছেন। এমনকি দেশের একটি জাতীয় দৈনিক তাকে উদ্ধৃত করে লিখেছে, ‘আমি ক্লান্ত। আর পারছি না। তিন মাস ধরে বেতন পাই না। এরপর অনেকের খবরদারি। সব মিলিয়ে আমি কিছুটা হতাশ।’
বাফুফের এক সূত্র বণিক বার্তাকে জানিয়েছে, বাটলার বাফুফের আগের কমিটির সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ এবং বর্তমান কমিটি চাইলে তার কাজ করতে কোনো আপত্তি নেই। তবে তিনি নারীদের দায়িত্বটা ছাড়তে চান এবং এটা পূর্বনির্ধারিত। তিনি সাফ মিশনে যাওয়ার আগেই এ কথা বাফুফে কর্মকর্তাদের জানিয়েছিলেন।
দল নির্বাচনে কর্মকর্তাদের নাক গলানোর বিষয়টি তার পছন্দ হয়নি বলে আগে বলেছেন। সর্বশেষ সাফজয়ী মেয়েদের মধ্যে অনেক সিনিয়র সদস্য এ কোচের প্রতি ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন। তিনি পাকিস্তানের বিপক্ষে ম্যাচে বেশকিছু সিনিয়র খেলোয়াড়কে বসিয়ে রেখে জুনিয়রদের নিয়ে একাদশ গড়েন। ম্যাচে বাংলাদেশ ড্র করে। তখন মনিকা চাকমা মিডিয়াকে জানান, পিটার বাটলার সিনিয়রদের পছন্দ করেন না। তখন বাটলার অভিযোগ করেন, বাইরে থেকে কেউ মেয়েদের উসকে দিচ্ছে।
সেই থেকে কোচের সঙ্গে সিনিয়র খেলোয়াড়দের একটা কোন্দল শুরু হয়ে যায়। সিনিয়ররা প্রকাশ্যেই সাবেক কোচ ছোটনের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। এটা বাটলারকে হয়তো ব্যথিত করে। সব মিলিয়ে পরিবেশটা নিজের জন্য হয়তো ‘বৈরী’ মনে করছিলেন বাটলার। তাই তিনি দায়িত্ব ছাড়ার এবং সম্ভবত বাংলাদেশ থেকে চলে যাওয়ার কথাও বলেছেন।
গতকাল সাফজয়ী দল দেশে ফেরার পর বিমানবন্দরে বেশ হাসিখুশি দেখা যায় বাটলারকে। তিনি সংবাদমাধ্যমকে বলেছেন, ‘এ শিরোপা বাংলাদেশের মানুষেরই। বাংলাদেশ এ টুর্নামেন্টে শিরোপা জিতেছে। তবে শিরোপা জেতাটা বড় কথা নয়, যে ধরনের ফুটবল মেয়েরা খেলেছে, সেটাই আনন্দের জায়গা।’