পাকিস্তানের মাটিতে টেস্ট সিরিজ জয়ের আত্মবিশ্বাস নিয়ে ভারত সফরে যায় বাংলাদেশ ক্রিকেট দল। নাজমুল হোসেন শান্তর দল প্রথমবারের মতো ভারতকে টেস্টে হারের স্বাদ দেবে—এমন আশায় ছিলেন সমর্থকরা। যদিও ১৫ টেস্টের দ্বৈরথে ভারতের বিপক্ষে জয় অধরাই থাকল। চেন্নাই ও কানপুরে টানা দুই টেস্টেই হেরেছে বাংলাদেশ। একই দলের বিপক্ষে এবার টি-টোয়েন্টি লড়াই। এবারের কাজটিও কঠিন। এ ফরম্যাটেও দ্বৈরথটা বড্ড একপেশে। ২০ ওভারের ক্রিকেটে বিশ্বের অন্যতম শক্তিশালী দলটি বর্তমান বিশ্ব চ্যাম্পিয়নও। আইপিএল খেলে অভিজ্ঞ একঝাঁক বিস্ফোরক ব্যাটার আর টি-টোয়েন্টি স্পেশালিস্ট বোলার নিয়ে গড়া ভারতের মুখোমুখি হচ্ছে বাংলাদেশ।
গোয়ালিয়র, দিল্লি ও হায়দরাবাদে তিনটি টি-টোয়েন্টি ম্যাচে মুখোমুখি হবে ভারত ও বাংলাদেশ। আজ গোয়ালিয়রে প্রথম ম্যাচ। এ সিরিজে কি বিশ্ব চ্যাম্পিয়নদের হারাতে পারবে টাইগাররা?
প্রতিপক্ষ হিসেবে বর্তমান বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন ও স্বাগতিক ভারতই এগিয়ে থাকবে। যদিও খেলা যেহেতু ২০ ওভারের, তাই আশা থাকছে বাংলাদেশের। তাওহীদ হৃদয়, রিশাদ হোসেন, তানজিদ হাসান তামিম ও জাকের আলীর মতো তরুণই নতুন আশা দেখান দলকে। তাদের ভালো একটি দিন প্রতিপক্ষকে বিপদে ফেলে দিতে পারে। সক্ষমতার প্রমাণ দিয়েই রিশাদ জায়গা করে নিয়েছেন অস্ট্রেলিয়ার বিগ ব্যাশে। জিম আফ্রো টি-টেন টুর্নামেন্টেও তিনি দল পেয়েছেন। হৃদয় খেলেছেন লংকান প্রিমিয়ার লিগে। আবার পেস সেনসেশন শরিফুল ইসলাম কিংবা তানজিম হাসান সাকিবের একটি দুর্দান্ত স্পেল ম্যাচের মোড় ঘুরিয়ে দিতে পারে।
এসব তরুণের সঙ্গে নাজমুল হোসেন শান্ত, লিটন দাস, মেহেদী হাসান মিরাজ, মাহমুদউল্লাহ, তাসকিন আহমেদ ও মুস্তাফিজুর রহমানের অভিজ্ঞ নামও থাকছে।
টাইগাররা লড়বেন আইপিএল স্টার সূর্যকুমার যাদব, রাইয়ান পরাগ, সাঞ্জু স্যামসন, অভিষেক শর্মা, শিবাম দুবে, রিংকু সিং, হার্দিক পান্ডিয়া, অর্শদীপ সিংদের সঙ্গে। ভারতীয় দলটি এ বছরই ওয়েস্ট ইন্ডিজের মাটিতে অনুষ্ঠিত টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের ফাইনালে দক্ষিণ আফ্রিকাকে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে। এটা ভারতের দ্বিতীয় টি-টোয়েন্টি আসর। ওই আসর শেষেই টি-টোয়েন্টি থেকে অবসর নিয়েছেন বিশ্বকাপজয়ী দলের অধিনায়ক রোহিত শর্মা ও ভারতের ইতিহাসে অন্যতম সেরা ব্যাটার বিরাট কোহলি। তাই সম্পূর্ণ বদলে যাওয়া একটি দলের মুখোমুখি হতে চলেছে বাংলাদেশ। এটাই বিরাট স্বস্তির যে রোহিত শর্মার মতো বিপজ্জনক আর কোহলির মতো ব্যাটিং মায়েস্ত্রোর মুখোমুখি হতে হবে না তাসকিন, মিরাজদের।
এ নিয়ে দ্বিতীয়বারের মতো টি-টোয়েন্টি সিরিজে মুখোমুখি হচ্ছে ভারত ও বাংলাদেশ। এর আগে ২০১৯ সালের ভারত সফরে প্রথমবার তাদের বিপক্ষে তিন ম্যাচের টি-টোয়েন্টি সিরিজ খেলেছে বাংলাদেশ। দিল্লিতে প্রথম ম্যাচেই ভারতকে ৭ উইকেটে হারিয়ে চমক দেখায় বাংলাদেশ। যদিও এরপর রাজকোট ও নাগপুরে টানা জিতে সিরিজ নিশ্চিত করে স্বাগতিকরা।
এখন পর্যন্ত ১৪ বারের মুখোমুখিতে ওই একটিই জয় বাংলাদেশের। বাকি ১৩টি ম্যাচে হেরেছে টাইগাররা। ২০০৯ সালে ইংল্যান্ডের নটিংহ্যামে এ ফরম্যাটে প্রথমবার মুখোমুখি হয় ভারত ও বাংলাদেশ। প্রথম দেখায় বাংলাদেশকে ২৫ রানে হারিয়েছিল ভারত। সর্বশেষ মোকাবেলাও হলো বিশ্বকাপে। এ বছর ওয়েস্ট ইন্ডিজের নর্থ সাউন্ডের সেই ম্যাচে বাংলাদেশ হেরেছে ৫০ রানে।
২০ ওভারের ফরম্যাটে দুই দলের লড়াইয়ে ভারতই সব দিক থেকে আধিপত্য করে এসেছে। শীর্ষ ১০টি দলীয় স্কোরের মধ্যে সাতটিই ভারতের। সর্বোচ্চ স্কোর ৫ উইকেটে ১৯৬ রান। এছাড়া ১৮৪, ১৮০, ১৭৬, ১৭৪, ১৬৮ ও ১৬৬ রানের স্কোর আছে ভারতের। বাংলাদেশ করেছে সর্বোচ্চ ১৬৬ রান। সর্বোচ্চ স্কোরে না পারলেও সর্বনিম্ন স্কোরে আবার আধিপত্য করেছে বাংলাদেশ। সর্বনিম্ন ছয়টি স্কোরই বাংলাদেশের! এ দ্বৈরথে সর্বনিম্ন ৯৬ রানের স্কোরটা করেছে বাংলাদেশ। অবশ্য একশর নিচে স্কোর একটিই। ভারতের সর্বনিম্ন স্কোর ৭ উইকেটে ১৪৬ রান।
রানে ভারতের সবচেয়ে বড় জয় ৫০ রানের এবং উইকেটে সবচেয়ে বড় জয় ৯ উইকেটের। এছাড়া ৮ উইকেটের তিনটি, ৭ উইকেট ও ৬ উইকেটের একটি জয় রয়েছে বর্তমান বিশ্ব চ্যাম্পিয়নদের।
ভারত-বাংলাদেশ দ্বৈরথে সর্বোচ্চ ৪৭৭ রান করেছেন ভারতের অধিনায়ক রোহিত শর্মা। ১৩ ম্যাচে ৩৬.৬৯ গড়ে ও ১৪৩.৬৭ স্ট্রাইক রেটে তিনি এ রান করেছেন পাঁচ ফিফটিতে। এছাড়া শিখর ধাওয়ান ২৭৭, সাব্বির রহমান ২৩৬, বিরাট কোহলি ২৩০ ও মুশফিকুর রহিম ২২৯ রান করেছেন।
ভারত-বাংলাদেশ দ্বৈরথে কোনো ব্যক্তিগত সেঞ্চুরি নেই। সর্বোচ্চ ৮৯ রানের ইনিংস খেলেছেন ভারতের অধিনায়ক রোহিত শর্মা। শীর্ষ তিনটি স্কোরই (৮৩, ৮৫, ৮৯) তার করা। বাংলাদেশের হয়ে সর্বোচ্চ ৮১ রানের ইনিংস খেলেছেন মোহাম্মদ নাঈম শেখ।
দুই দল মিলিয়ে সবচেয়ে বেশি উইকেট নিয়েছেন ভারতের স্পিনার যুজবেন্দ্র চাহাল। ৬ ম্যাচে ৯ উইকেট নিয়েছেন তিনি। এছাড়া দীপক চাহার ৮টি, বাংলাদেশের আল-আমিন হোসেন ৮টি, রুবেল হোসেন ৭টি উইকেট নেন। ভারতের মিডিয়াম পেসার দীপক চাহার ২০১৯ সালে নাগপুরে বাংলাদেশের বিপক্ষে মাত্র ৭ রান দিয়ে ৬ উইকেট শিকার করেন, যা এ দ্বৈরথের সেরা বোলিং ফিগার। এছাড়া আর কেউই ৫ উইকেট কিংবা ততোধিক উইকেট পাননি। বাংলাদেশের হয়ে সেরা বোলিং আল-আমিনের ৩৭ রানে ৩ উইকেট।
টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে মোট ১৭৬ ম্যাচ খেলে ৬৮টি জিতেছে বাংলাদেশ, হেরেছে ১০৪টি। জিম্বাবুয়ের সঙ্গে ২৫ ম্যাচে ১৭, শ্রীলংকার সঙ্গে ১৭ ম্যাচে ৬, আফগানিস্তানের সঙ্গে ১২ ম্যাচে ৫, আয়ারল্যান্ডের সঙ্গে ৮ ম্যাচে ৫, ওয়েস্ট ইন্ডিজের সঙ্গে ১৬ ম্যাচে ৫, অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে ১১ ম্যাচে ৪, নিউজিল্যান্ডের সঙ্গে ২০ ম্যাচে ৪, নেদারল্যান্ডসের সঙ্গে ৫ ম্যাচে ৪, ইংল্যান্ডের সঙ্গে ৪ ম্যাচে ৩, পাকিস্তানের সঙ্গে ১৯ ম্যাচে ৩, আরব আমিরাতের সঙ্গে ৩ ম্যাচে ৩, নেপালের সঙ্গে ২ ম্যাচে ২, ওমানের সঙ্গে ২ ম্যাচে ২, কেনিয়ার সঙ্গে ১ ম্যাচে ১, মালয়েশিয়ার সঙ্গে ১ ম্যাচে ১, পাপুয়া নিউগিনির সঙ্গে ১ ম্যাচে ১, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ৩ ম্যাচে ১টি জয় পেয়েছে বাংলাদেশ।
তবে তিনটি দেশের সঙ্গে কোনো জয় নেই। হংকংয়ের সঙ্গে ১ ম্যাচ, স্কটল্যান্ডের সঙ্গে ২ ম্যাচ ও দক্ষিণ আফ্রিকার সঙ্গে ৯ ম্যাচ খেলে জয়হীন বাংলাদেশ।
ভারতের অবশ্য জয়ের পাল্লাটাই ভারী। এখন পর্যন্ত ২৩৫ ম্যাচ খেলে জয় ১৫৪টি, হার ৬৯টি। ২০০৭ সালে মহেন্দ্র সিং ধোনির নেতৃত্বে ও ২০২৪ সালে রোহিত শর্মার নেতৃত্বে বিশ্বকাপ জয় করে ভারত। এ বছর বিশ্বকাপ জয়ের পর দুটি সিরিজ খেলেছে ভারত। জিম্বাবুয়ের মাটিতে ৪-১ ও শ্রীলংকার সঙ্গে ৩-০ ব্যবধানে সিরিজ জিতেছে সূর্যকুমার যাদবের দল। বিশ্ব চ্যাম্পিয়নদের সামনে এবার বাংলাদেশ।