রাজধানীর গুলশান-১, নিকেতন ও মহাখালী ডিওএইচএস এলাকায় ফাইবার অপটিক্যাল কেবল সরানোর জন্য ভূগর্ভস্থ ফাইবার অপটিক্যাল কেবল স্থাপন করেছিল টেলিকমিউনিকেশন ট্রান্সমিশন নেটওয়ার্ক (এনটিটিএন) অপারেটর ফাইবার অ্যাট হোম। আন্ডারগ্রাউন্ড কেবল স্থাপনের আট বছর পার হয়ে গেলেও এসব কেবল অব্যবহৃত অবস্থায় পড়ে আছে। সংশ্লিষ্টরা জানান, মনোপলি আচরণ ও আইএসপি অপারেটররা লাস্ট মাইল কানেকশন (অফিস, বাসাবাড়ির সংযোগ) গ্রহণে অপারগতা প্রকাশ করলে এ সেবা ভেঙে পড়ে।
অপারেটররা জানান, ফাইবার অ্যাট হোম ভূগর্ভস্থ কেবল স্থাপন করলেও সেবার দাম বেশি নির্ধারণ করেছে। অনেক সময় একেক অপারেটরের কাছ থেকে একেক মূল্যনির্ধারণ করেছে। এজন্য পরে বিপাকে পড়ে যায় আইএসপি অপারেটররা। পরে অপারেটররা ফাইবার অ্যাট হোমের সেবা না নিয়ে ওভারহেড কেবল (রাস্তার ওপরে খুঁটি দিয়ে পরিবাহিত কেবল) দিয়ে সংযোগ শুরু করে।
ফাইবার অ্যাট হোমের তথ্যানুযায়ী, মহাখালী ডিওএইচএস এলাকায় ২০১০ সালে, নিকেতন এলাকায় ২০১১ সাল ও গুলশানে ২০১৩ সালে ভূগর্ভস্থ কেবল স্থাপনের উদ্যোগ নেয়া হয়। প্রকল্প শুরুর পর ২০১৬ সালে প্রথমবারের মতো কার্যক্রম শুরু করে ভূগর্ভস্থ কেবলের সেবা দিতে শুরু করে ফাইবার অ্যাট হোম। কিন্তু কিছুদিন পরেই আইএসপি অপারেটররা সেবা নিতে অস্বীকৃতি জানায়। রাজধানীর গুলশান এলাকায় ভূগর্ভস্থ অপটিক্যাল কেবলের মাধ্যমে ইন্টারনেট সেবা প্রদান করে আইএসপি অপারেটর আইএসপি কমিউনিকেশন লিমিটেড। ২০১৯ সালে শুরু করা এ সেবা ৯৯৯ টাকায় ১৫ মেগাবাইট গতির ইন্টারনেট সেবা দিত। এত দামে গ্রাহকরা সেবা নিতে আগ্রহী না হওয়ায় ভূগর্ভস্থ কেবলের বদলে ওভারহেড কেবলের মাধ্যমে সেবা দেয়া শুরু করে তারা।
আইএসপিএবির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ এ রাশেদ বণিক বার্তাকে বলেন, ‘ভূগর্ভস্থ কেবল সংযোগ হওয়ায় হাতেগোনা কিছু আইএসপি অপারেটরকে সেবা দেয়া শুরু করে ফাইবার অ্যাট হোম। যার কারণে আমরা অনেকেই ওখানে প্রথম দিকে সংযোগই দিতে পারিনি। পরবর্তী সময় ওভারহেড কেবল নিয়ে যেতে বাধ্য হই। যে দু-একজনকে তারা সেবা দিত, ইন্টারনেটের দাম বেশি হওয়ায় গ্রাহকও তাদের কাছ থেকে সেবা নেয়া বন্ধ করে দেন।’
ফাইবার অ্যাট হোমের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ভূগর্ভস্থ কেবল সংযোগ দিতে নিকেতনের মতো জায়গায় প্রায় ৯ কোটি টাকা খরচ করেছে কোম্পানিটি। শুধু সংযোগের ব্যয় বহনের পাশাপাশি এর ব্যবস্থাপনা, মেইনটেন্যান্সে ব্যয় অনেক বেশি ছিল।
জানতে চাইলে ফাইবার অ্যাট হোমের চিফ অব গভর্নমেন্ট অ্যান্ড রেগুলেটরি অ্যাফেয়ার্স আব্বাস ফারুক বণিক বার্তাকে বলেন, ‘এতদিন পর্যন্ত আইএসপি অপারেটররা ক্যাপাসিটি চার্জ বেশি বলে আসছিল। সেজন্য তারা সেবা নিতে চায়নি। এখন তো বিটিআরসি ট্যারিফ নির্ধারণ করে দিয়েছে।’
ফাইবার অ্যাট হোম মহাখালী ডিওএইচএস এলাকায় নেটওয়ার্ক সম্প্রসারণ করলে আইএসপি অপারেটর ও ফাইবার অ্যাট হোমের মধ্যে দ্বন্দ্ব তৈরি হয়। দ্বন্দ্ব নিরসনে ২০২১ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি বৈঠক করে মহাখালী ডিওএইচএস পরিষদ। সভা সূত্রে জানা যায়, ডিওএইচএস এলাকায় কোন আইএসপি অপারেটর সেবা প্রদান করবে তা ফাইবার অ্যাট হোম নির্ধারণ করে দিত। গ্রাহককে ইন্টারনেট সংযোগ প্রদান, ভিন্ন আইএসপির কাছ থেকে ভিন্ন মূল্যনির্ধারণ, নিজস্ব নামে ইন্টারনেট সেবার প্রচারণার অভিযোগ ওঠে।
আইএসপিএবি সভাপতি ইমদাদুল হক বণিক বার্তাকে বলেন, ‘মেট্রোপলিটন ও সিটি করপোরেশন এলাকায় তিন কিলোমিটার এবং অন্য এলাকায় ছয় কিলোমিটার পর্যন্ত সংযোগ দেবে আইএসপি অপারেটররা। কিন্তু এনটিটিএন অপারেটররা আওতাধীন এলাকায় এসে মনোপলি কার্যক্রম শুরু করেছে। ডিওএইচএস, গুলশান, নিকেতনে আমরা এ অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হয়েছি। তারা একেকজনের কাছ থেকে একেক ধরনের মূল্যনির্ধারণ শুরু করে।’
বিটিআরসির সিস্টেমস অ্যান্ড সার্ভিসেস বিভাগ জানায়, আইএসপি অপারেটররা গ্রাহকের কাছ থেকে ‘এক দেশ এক রেট’ অনুযায়ী ফি নিতে পারবে, এর বেশি নয়। লাস্ট মাইল কানেন্টিভিটি সবসময় আইএসপি অপারেটররা দেবে।
২০১৮ সালের নির্বাচনী ইশতেহার অনুযায়ী ইন্টারনেটের মূল্য সহনীয় পর্যায়ে নিয়ে আসতে এক দেশ এক রেটের আওতায় অপারেটরদের ট্যারিফ নির্ধারণ করে দেয় বিটিআরসি। ট্যারিফ অনুযায়ী, নির্ধারিত রেটের বেশি কেউ আদায় করতে পারবে না।
বিটিআরসির কমিশনার প্রকৌশলী শেখ রিয়াজ আহমেদ বণিক বার্তাকে বলেন, ‘আমরা চেষ্টা করছি ওভারহেড কেবলগুলোকে ভূগর্ভস্থ কেবলে নিয়ে যেতে। ধানমন্ডিতে একটা ফাইলটিং প্রজেক্ট আমাদের হয়েছে। আইএসপির স্থানীয় শেয়ার বেসিসে তারা এ কেবল নিজেদের অর্থায়নে স্থাপন করবে এবং সেবা দেবে।’