বিশ্বব্যাপী সেমিকন্ডাক্টর শিল্পে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে তাইওয়ান। পূর্ব এশিয়ার দেশটি বিশ্বের বেশির ভাগ কম্পিউটার চিপ তৈরি করে। এসব চিপ স্মার্টফোন থেকে শুরু করে কম্পিউটার পর্যন্ত বিভিন্ন ডিভাইসে অত্যাবশ্যক। কিন্তু সম্প্রতি তাইওয়ান যে বিদ্যুৎ সংকটের মুখোমুখি হচ্ছে, তা চিপ উৎপাদন বজায় রাখার ক্ষমতাকে হুমকির মুখে ফেলছে। এ ঘাটতি বৈশ্বিক প্রযুক্তি সরবরাহে গুরুতর প্রভাব ফেলতে পারে, কারণ অনেক শিল্প তাইওয়ানে তৈরি চিপের ওপর নির্ভর করে। খবর ওয়্যার্ড।
তাইওয়ান সরকার বলছে, তারা দ্বীপটিকে (তাইওয়ান) এআই শীর্ষস্থানীয় করে তুলতে আগ্রহী ও এর প্রযুক্তি খাতের সাফল্যের ওপর নির্ভরতা বাড়াতে চায়। তবে এখানে সমস্যা হলো রাজাধানী তাইপেতে একটি একক ডাটা সেন্টারের জন্য ১৩ হাজার বসতবাড়ির সমান বিদ্যুৎ শক্তি প্রয়োজন। দ্বীপটি প্রায় ৯০ শতাংশ শক্তির জন্য আমদানীকৃত জীবাশ্ম জ্বালানির ওপর নির্ভরশীল। এদিকে তারা চীনের পক্ষ থেকে অবরোধ, কোয়ারেন্টাইন বা আক্রমণের ক্রমবর্ধমান হুমকির মুখোমুখি। এছাড়া রাজনৈতিক কারণে সরকার ২০২৫ সালের মধ্যে পারমাণবিক শক্তি বন্ধ করার অঙ্গীকার করেছে। দেশটির পাওয়ার গ্রিডের অপারেটিং মার্জিনও উদ্বেগজনকভাবে কম, কখনো কখনো ৫ শতাংশ পর্যন্তও নেমে গেছে, যা ব্ল্যাকআউট ও ব্রাউনআউটের ঝুঁকি নির্দেশ করছে।
দেশটির জলবায়ু ও শক্তি নীতিবিষয়ক বিশ্লেষক নিকোলাস চেন জানান, গত আট বছরে চারটি বড় বিদ্যুৎ বিভ্রাট হয়েছে। কারণ সরকার বিদ্যমান চাহিদার সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে ব্যর্থ হচ্ছে। সাংবাদিক এঞ্জেলিকা উঙ্গ দুটি বড় বিদ্যুৎ বিভ্রাটের কথা উল্লেখ করেছেন, যা গত কয়েক বছরে লাখ লাখ বাড়িঘরে প্রভাব ফেলেছে। তিনি বলেন, ‘এসব বিদ্যুৎ বিভ্রাট তাইওয়ানের দুর্বল শক্তি ব্যবস্থার সংকেত দেয়।’ প্রযুক্তিসংশ্লিষ্টরা বলছেন, উন্নত কম্পিউটার চিপ উৎপাদনের ক্ষেত্রে বিশ্বের সবচেয়ে বড় উৎপাদক হিসেবে এ সমস্যাগুলো ভবিষ্যতে একটি গুরুতর শক্তি সংকটের দিকে নিয়ে যেতে পারে।
তাইওয়ানে অবস্থিত সিনচু সায়েন্স পার্ক একটি সুপরিচিত এলাকা, যা প্রযুক্তি কোম্পানিগুলোকে বেড়ে উঠতে সাহায্য করে। ১৯৮০ সালে প্রতিষ্ঠিত এ প্রযুক্তি ও শিল্প এলাকাটির লক্ষ্য ছিল গবেষণা ও উৎপাদনকে একত্র করে একটি প্রযুক্তির কেন্দ্র তৈরি করা। ইয়েল এনভায়রনমেন্ট থ্রিসিক্সটির প্রতিবেদন বলছে, বর্তমানে এ সায়েন্স পার্কে এক হাজারের বেশি কোম্পানি রয়েছে, যারা প্রতি বছর প্রায় ১৩ হাজার কোটি ডলার আয় করছে। আর এর মধ্যে রয়েছে তাইওয়ান সেমিকন্ডাক্টর ম্যানুফ্যাকচারিং কোম্পানি (টিএসএমসি), যা বিশ্বের ৯০ শতাংশ উন্নত কম্পিউটার চিপ তৈরি করে। সব মিলিয়ে বিশ্বব্যাপী চিপ উৎপাদনের ৬৮ শতাংশ বাজার হিস্যা থাকে তাইওয়ানের কোম্পানিগুলোর।
প্রকাশিত প্রতিবেদনে অনুযায়ী, তাইওয়ানের প্রযুক্তি খাত, বিশেষ করে সেমিকন্ডাক্টর উৎপাদনে প্রতিবন্ধকতা তৈরি হচ্ছে। এমন পরিস্থিতি কোম্পানির ভবিষ্যতের জন্য হুমকি হতে পারে। বিদ্যুৎ শক্তি বেশি ব্যবহার করে এমন প্রযুক্তি যেমন কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার (এআই) প্রবৃদ্ধির কারণে তাইওয়ান একটি শক্তি সংকটে পড়েছে। তাইওয়ানের দুই কোটির বেশি জনসংখ্যা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মতোই শক্তি ব্যবহার করে। তবে সেই ব্যবহারের একটি বড় অংশ—প্রায় ৫৬ শতাংশ যায় শিল্প খাতে, বিশেষ করে টিএসএমসির মতো কোম্পানি তাইওয়ানের মোট বিদ্যুতের প্রায় ৯ শতাংশ ব্যবহার করে। গ্রিনপিসের একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০৩০ সালে তাইওয়ানের সেমিকন্ডাক্টর শিল্প সম্ভবত ২০২১ সালে নিউজ়িল্যান্ডের মোট বিদ্যুৎ ব্যবহারের দ্বিগুণ ব্যবহার করবে।