রফতানিতে সম্ভাবনাময় মুরারিকাটির টালি

দেশের একমাত্র রফতানিজাত মাটির টালি উৎপাদন হয় সাতক্ষীরার মুরারিকাটি গ্রামে। এই টালি শিল্প রফতানি খাতে খুবই সম্ভাবনাময় হিসেবে দেখছেন জেলার ব্যবসায়ী ও উদ্যোক্তারা। বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের পাশাপাশি অসংখ্য মানুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টি হতে পারে এখানে। এজন্য বড় বড় উদ্যোক্তাকে এগিয়ে আসতে হবে।

দেশের একমাত্র রফতানিজাত মাটির টালি উৎপাদন হয় সাতক্ষীরার মুরারিকাটি গ্রামে। এই টালি শিল্প রফতানি খাতে খুবই সম্ভাবনাময় হিসেবে দেখছেন জেলার ব্যবসায়ী ও উদ্যোক্তারা। বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের পাশাপাশি অসংখ্য মানুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টি হতে পারে এখানে। এজন্য বড় বড় উদ্যোক্তাকে এগিয়ে আসতে হবে। 

দুই দশক আগেও মুরারিকাটি গ্রামের কুমার (মৃৎশিল্পী) পল্লীতে তৈরি হতো মাটির হাঁড়ি, পাতিল, কলস, সরা, ফুলদানিসহ বিভিন্ন প্রকার পণ্যসামগ্রী। এখন আর সেখানে উৎপাদন হয় না সাংসারিক কাজে ব্যবহৃত এসব মাটির পণ্য।

মুরারিকাটি কুমারপল্লী এখন পরিচিতি পেয়েছে ইটালি নামে। এখানকার মৃৎশিল্পীরা এখন ব্যস্ত রফতানিজাত টালি তৈরিতে। ইউরোপ-আমেরিকার স্থাপনায় ব্যবহৃত হচ্ছে এখানকার উৎপাদিত বিভিন্ন প্রকার দৃষ্টিনন্দন টালি। এসব টালির মধ্যে ফেক্স অ্যাংগুলার টালি, হেড ড্রাগুলার, স্কাটিং, স্টেম্প, স্কয়ার, রুপ, ব্রিকস ও ফ্লোর টালি উল্লেখযোগ্য।

এ টালি উৎপাদন করে বদলে গেছে মুরারিকাটি গ্রামের কুমারদের জীবনমান। চারচালা ঘর থেকে এখন বিল্ডিং বাড়িতে বসবাস করছে মুরারিকাটি পল্লীর মৃৎশিল্পী পরিবারগুলো।

তবে রফতানিজাত এ টালি উৎপাদন এখন আর মুরারিকাটি গ্রামের কুমারদের হাতেই সীমাবদ্ধ নেই। এ সম্ভাবনাময় শিল্পকে কাজে লাগাতে অনেকেই এগিয়ে আসছেন। কোটি কোটি টাকা বিনিয়োগ করা হচ্ছে রফতানিজাত টালি উৎপাদনে। গড়ে উঠেছে অসংখ্য ছোট-বড় ফ্যাক্টরি। এসব ফ্যাক্টরিতে উৎপাদিত হচ্ছে প্রচুর পরিমাণ রফতানিজাত টালি। 

সাতক্ষীরার কলারোয়া উপজেলা সদরের মুরারিকাটি গ্রামে অবস্থিত মেসার্স কলারোয়া টালি ঘরের স্বত্বাধিকারী ও তরুণ উদ্যোক্তা মো. আবুল হোসেন। গড়ে তুলেছেন মুরারিকাটি গ্রামে তিনটি রফতানিজাত টালি উৎপাদন ফ্যাক্টরি। উদ্যোক্তা আবুল হোসেন জানান, প্রতি মাসে সাত-আট লাখ টালি উৎপাদন হয় তার ফ্যাক্টরিতে। তার উৎপাদিত বিভিন্ন প্রকার টালি নিচ্ছে খুলনার রফতানিকারক প্রতিষ্ঠান জে.কে ইন্টারন্যাশনাল, আরনো এক্সপোর্ট ইমপোর্ট, ইকো এন্টারপ্রাইজ, নিকেতা ইন্টারন্যাশনাল, শুভ ট্রেডার্স ও পোলো ইপিও। এসব রফতানিকারক প্রতিষ্ঠান আবুল হোসেনের উৎপাদিত টালি কিনে তা ইতালি, অস্ট্রেলিয়া ছাড়াও ইউরোপ-আমেরিকার বিভিন্ন দেশে রফতানি করছে। আবুল হোসেন আরো জানান, রফতানিতে অনেক বড় সম্ভাবনা রয়েছে এখানকার মাটির টালির। দরকার শুধু উদ্যোক্তাদের এগিয়ে আসা।

মুরারিকাটি গ্রামের আরো এক উদ্যোক্তা শেখ এবাদুল ইসলাম। তিনি জানান, ‌বছরে উল্লেখযোগ্য পরিমাণ রফতানিজাত টালি উৎপাদন করেন তিনি। এবাদুল আরো জানান, মুরারিকাটি গ্রামে প্রথম রফতানিজাত টালি উৎপাদন করেন ২০০০ সালের দিকে মৃৎশিল্পী লক্ষ্মণ কুমার পাল। বরিশালের রুহুল কুদ্দুস নামে এক রফতানিকারক লক্ষ্মণ পালের কাছ থেকে রফতানিজাত মাটির টালি উৎপাদন করে রফতানি করেন। পরবর্তী সময়ে লক্ষ্মণ পালের দেখাদেখি অনেকে এগিয়ে আসেন এ টালি উৎপাদনে। এখন কুমারদের চেয়ে অন্য সম্প্রদায়ের মানুষ বেশি উৎপাদন করছে এ টালি। এখানে ৪০-৪৫টি ফ্যাক্টরি হয়েছে। এখানকার টালি রফতানিতে খুবই সম্ভাবনাময়। তবে করোনা-পরবর্তী সময়ে অসম প্রতিযোগিতার কারণে বর্তমানে কিছুটা সংকটে পড়েছে এ শিল্প। 

সাতক্ষীরা জেলা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের সভাপতি নাসিম ফারুক খান মিঠু জানান, মুরারিকাটির মাটির টালি রফতানি করে বছরে উল্লেখযোগ্য পরিমাণে বৈদেশিক মুদ্রা আসছে। এটি রফতানিতে খুবই সম্ভাবনাময়। ইউরোপ-আমেরিকায় অনেক চাহিদা মুরারিকাটির টালির। এখানে অন্য উদ্যোক্তারা এগিয়ে এলে এ টালি শিল্পের আরো প্রসার ঘটবে। 


লেখক: সাংবাদিক

আরও