উচ্চশিক্ষায় অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে আইআইইউসি

দেশের প্রথম সারির ও প্রথম দিককার বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের তালিকায় প্রথম সারিতে রয়েছে আন্তর্জাতিক ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় চট্টগ্রাম (আইআইইউসি)। দেশী-বিদেশী প্রতিষ্ঠান বা সংস্থার সহযোগিতা ও অর্থায়নে পরিচালিত হওয়া আন্তর্জাতিক মানদণ্ডের বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে অগ্রগামী বেসরকারি এ বিশ্ববিদ্যালয়। চট্টগ্রামে প্রতিষ্ঠিত বিশ্ববিদ্যালয়টি ১৯৯৫ সালের ১১

দেশের প্রথম সারির প্রথম দিককার বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের তালিকায় প্রথম সারিতে রয়েছে আন্তর্জাতিক ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় চট্টগ্রাম (আইআইইউসি) দেশী-বিদেশী প্রতিষ্ঠান বা সংস্থার সহযোগিতা অর্থায়নে পরিচালিত হওয়া আন্তর্জাতিক মানদণ্ডের বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে অগ্রগামী বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়। চট্টগ্রামে প্রতিষ্ঠিত বিশ্ববিদ্যালয়টি ১৯৯৫ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি আনুষ্ঠানিকভাবে যাত্রা শুরু করে। যদিও ১৯৯২ সালে বাংলাদেশ সরকারের করা বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইনে আইআইইউসি অনুমোদন পেয়েছে।

চট্টগ্রাম থেকে কার্যক্রম পরিচালনা করা হলেও দেশের শীর্ষস্থানীয় বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর অন্যতম আইআইইউসি। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে সর্ববৃহৎ নান্দনিক নিজস্ব ক্যাম্পাসের কারণে বিশ্ববিদ্যালয়টি দেশে বিদেশে সুনাম কুড়িয়েছে। এই বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন অনুষদে দেশী-বিদেশী ১২ হাজারেরও বেশি শিক্ষার্থী একই সময়ে অধ্যয়ন করতে পারে। যুগের চাহিদা শিক্ষা-গবেষণা খাতে অবদান রাখতে প্রতিনিয়ত নতুন নতুন বিষয় কারিকুলাম প্রবর্তনের মাধ্যমে আইআইইউসি নিজেদের অনন্য উচ্চতায় নিয়ে যেতে কাজ করছে। বেসরকারি খাতের বিশ্ববিদ্যালয় হলেও পাঁচটি সুবিশাল ছাত্রাবাসের মাধ্যমে আবাসিক সুবিধা দেয়া দেশে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় খাতে অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে আইআইইউসি।

দেশের প্রথম কোনো বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে আইআইইউসি দেশী-বিদেশী সংস্থার সঙ্গে যুগপত্ভাবে শিক্ষা গবেষণা কার্যক্রম পরিচালনা শুরু করেছে। বহির্বিশ্বের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে শিক্ষাসংক্রান্ত আদান-প্রদান ছাড়াও ধর্মীয় মূল্যবোধকে প্রাধান্য দিয়ে বৃহৎ পরিসরে আধুনিক শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনার নজির স্থাপন করেছে আইআইইউসি। তাছাড়া বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় হলেও শিক্ষা বাণিজ্যকে প্রাধান্য না দিয়ে যুগোপযোগী শিক্ষা বিস্তারে বিশ্ববিদ্যালয়ের মোট আয়ের সর্বোচ্চ পরিমাণ অর্থ অবকাঠামো খাত ছাড়াও শিক্ষার প্রসারে পুনর্বিনিয়োগের দৃষ্টিভঙ্গি পোষণ করে আইআইইউসি।

সারা বিশ্বের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে নিয়ে জরিপ করে এমন একটি গবেষণা সংস্থা ওয়েবম্যাট্রিক্সর‍্যাংকিং অব ওয়ার্ল্ড ইউনিভার্সিটিজ-এর সর্বশেষ জরিপ অনুযায়ী বাংলাদেশের সরকারি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে আইআইইউসির স্থান ২৫তম। এছাড়া বেসরকারি সংস্থার জরিপে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাটাগরিতে আইআইইউসির অবস্থান ১১তম। ২০০৪ সালে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন (ইউজিসি) পরিচালিত একটি জরিপে দেশের শীর্ষ ৯টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের তালিকায় অন্যতম ছিল আইআইইউসি। আইআইইউসি থেকে এখন পর্যন্ত ৩৫ হাজারের বেশি শিক্ষার্থী উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করেছেন। আইআইইউসি থেকে ডিগ্রি অর্জন করা শিক্ষার্থীরা সরকারি চাকরি ছাড়াও জাতীয় আন্তর্জাতিক স্বনামধন্য বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের উচ্চপদে কর্মরত আছেন। এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন শিক্ষার্থীরা আমেরিকা, কোরিয়া জাপানের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে অধ্যাপনা করছেন। বাংলাদেশে বেসরকারি খাতে উচ্চশিক্ষায় আন্তর্জাতিক ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় চট্টগ্রাম অগ্রণী ভূমিকা পালন করছে।

আইআইইউসিতে বর্তমানে ছয়টি ফ্যাকাল্টির অধীনে ১৪টি ডিপার্টমেন্টে শিক্ষাদানে ৪৩৫ জন (৩৫২ জন পূর্ণকালীন) শিক্ষক রয়েছেন। নিয়োজিত শিক্ষকদের শতাধিক পিএইচডি ধারী। দেশীয় শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি ভারত, নেপাল, শ্রীলংকা, মালদ্বীপ, সোমালিয়া, ইথিওপিয়া, নাইজেরিয়া সুদানের প্রায় কয়েকশ শিক্ষার্থী এখানে অধ্যয়ন করছেন। আইআইইউসি থেকে প্রতি বছর দরিদ্র মেধাবী শিক্ষার্থীদের উচ্চশিক্ষা নিশ্চিত করতে প্রায় কোটি ৬০ লাখ টাকার আর্থিক সুবিধা বৃত্তি প্রদান করা হয়। এছাড়া মুক্তিযোদ্ধার সন্তানরা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে কোনো ফি দিতে হয় না। যা দেশের অপরাপর বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে অনন্য।

শুরুতে চট্টগ্রাম মহানগরের অভ্যন্তরে ক্যাম্পাসের মাধ্যমে কার্যক্রম পরিচালনা করা হলেও ২০১০ সালে সংশোধিত বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইন অনুযায়ী শাখা ক্যাম্পাসে কার্যক্রম পরিচালনা পাঠদান বাধ্যতামূলক করা হলে ২০১৬ সালে চট্টগ্রামের বাইরে থাকা ঢাকা ক্যাম্পাসসহ চট্টগ্রাম শহরের অভ্যন্তরে থাকা নারী ক্যাম্পাস চকবাজার এলাকায় স্থাপিত প্রথম  ক্যাম্পাস বন্ধ করে দেয়া হয়। এরপর চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড উপজেলার কুমিরা ইউনিয়নে ৬০ একর জমিতে নিজেদের স্থায়ী ক্যাম্পাসে বিশ্ববিদ্যালয়টির সার্বিক কার্যক্রম নিয়ে যাওয়া হয়। সীতাকুণ্ড পাহাড়ের পাদদেশে আইআইইউসির স্থায়ী ক্যাম্পাসটি দেশের যেকোনো সরকারি-বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে নান্দনিকতার বিচারে প্রথম সারিতে থাকবে। ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক ঢাকা-চট্টগ্রাম প্রধান রেলপথের সঙ্গে প্রতিষ্ঠিত বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য একটি বিশেষায়িত রেলওয়ে স্টেশন স্থাপনের কাজ শুরু হয়েছে। এটি চালু হলে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের পর দেশে দ্বিতীয় কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য বিশেষায়িত শাটল ট্রেন সার্ভিস চালুর পরিকল্পনা রয়েছে আইআইইউসি কর্তৃপক্ষের। ২০২১ সালের মার্চে প্রফেসর . আবু রেজা মুহাম্মদ নেজামুদ্দিন নদভী, সাংসদকে চেয়াারম্যান করে বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন ট্রাস্টি বোর্ড অনুমোদন করে সরকার। ২০২২ সালের ১১ সেপ্টেম্বর বিশ্ববিদ্যালয়টি নিজেদের পঞ্চম সমাবর্তন আয়োজন করে। ওই সমাবর্তনে সারা বিশ্বের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ছাড়াও দাতা দেশগুলোর প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।

আইআইইউসির ক্যাম্পাস মেল ফিমেল এই দুই একাডেমিক জোনে বিভক্ত। বিশ্ববিদ্যালয়টিতে পৃথক একাডেমিক ভবনে পুরুষ নারী শিক্ষার্থীদের আলাদাভাবে পাঠদান করা হয়। সুবিশাল এলাকায় পাঁচটি আবাসিক হল, পাঁচটিরও অধিক একাডেমিক ভবন, পাঁচটি অনুষদ ভবন, একটি সুবিশাল গ্রন্থাগার ভবন, কেন্দ্রীয় মসজিদ অডিটোরিয়াম নিয়ে চলছে বিশ্ববিদ্যালয়ের সব কার্যক্রম। ২০২২ সালে অনুষ্ঠিত আইআইইউসির পঞ্চম সমাবর্তনে মোট ১৫ হাজার ৩৬১ জনকে সনদ বিতরণ করা হয়। এদের মধ্যে স্নাতক পর্যায়ে হাজার ৪৫৯, স্নাতকোত্তর পর্যায়ে হাজার ৯০২ জনকে সনদ দেয়া হয়। যা দেশের যেকোনো বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে অনন্য কীর্তি।

আরও