অলাভজনক কৃষিতে আগ্রহ নেই নতুন প্রজন্মের

আজ থেকে ৫২-৫৩ বছর আগে পাকিস্তান আমলে একজন কৃষি শ্রমিকের দৈনিক মজুরি ছিল মাত্র দেড় টাকা। কৃষি শ্রমিকরা তখন খুব সকালে কাজ শুরু করতেন। মাগরিবের আজান দেয়ার সঙ্গে সঙ্গে কাজ শেষ করে ১ টাকায় এক কেজি চাল, সামান্য মসুর ডাল কিংবা ছোট মাছ, সামান্য কেরোসিন ও একটু লবণ কিনে বাড়ি ফিরতেন। সকালের নাশতা ও দুপুরের খাবার খেতেন কৃষকের বাড়িতে।

আজ থেকে ৫২-৫৩ বছর আগে পাকিস্তান আমলে একজন কৃষি শ্রমিকের দৈনিক মজুরি ছিল মাত্র দেড় টাকা। কৃষি শ্রমিকরা তখন খুব সকালে কাজ শুরু করতেন। মাগরিবের আজান দেয়ার সঙ্গে সঙ্গে কাজ শেষ করে টাকায় এক কেজি চাল, সামান্য মসুর ডাল কিংবা ছোট মাছ, সামান্য কেরোসিন একটু লবণ কিনে বাড়ি ফিরতেন। সকালের নাশতা দুপুরের খাবার খেতেন কৃষকের বাড়িতে। তখন ফসলের উৎপাদন ছিল কম। বিঘায় ধান হতো সাত-আট মণ। বোরো ধানের তেমন প্রচলন ছিল না। শাকসবজির এত আবাদ ছিল না। ছিল না বাণিজ্যিক ভিত্তিতে পুকুরে মাছ চাষ। ছিল না গ্রামে গ্রামে লেয়ার, ব্রয়লার মুরগি পালন দুগ্ধখামার। সে সময় দেশের ৮০-৮৫ শতাংশ লোক গ্রামে বাস করত এবং তাদের প্রধান পেশাই ছিল কৃষি। তখন দেশে এত মিল-কারখানা ছিল না। রাস্তাঘাট ছিল না। তৈরি পোশাক কারখানা ছিল না। মোটরগাড়ি, ব্যাটারিচালিত ভ্যান-রিকশার প্রচলন ছিল না। দেশে এত পাকাবাড়ি দালানকোঠা ছিল না। গ্রামের ধনীদের বাড়ি ছিল টিনের চালার। আর গরিব মানুষের বাড়ি ছিল খড়ের বা ছনের চালার। দিনাজপুর, রংপুর বগুড়া জেলায় অনেক মানুষ মাটির ঘরে বসবাস করতেন। বিদ্যুৎ না থাকার কারণে গ্রামগঞ্জে ছোটখাটো ব্যবসা বাণিজ্য ক্ষুদ্র শিল্পেরও সুযোগ ছিল না। গ্রামের বধূরা ঢেঁকিতে ধান ভানতেন।

বেশি দিনের কথা নয়; আজ থেকে ২০-২৫ বছর আগে ময়মনসিংহের ত্রিশাল উপজেলার উজানপাড়া গ্রামের মো. মুসা মিয়া, মো. কালু মিয়া, মুকলেছুর রহমান, দুলাল মিয়া, মো. মফিজ উদ্দিনসহ প্রায় ৫০ জন কৃষি শ্রমিকের কাজ করতেন। ওই সময় তারা দৈনিক মজুরি পেতেন মাত্র ২০০ টাকা। সচ্ছলতা না থাকলেও ওই ২০০ টাকাতেই তাদের পরিবারের দৈনিক ভরণপোষণ চলত। তাদের কথা, কৃষি শ্রমিকের কোনো সামাজিক মর্যাদা নেই। মানুষ তাদের তাদের সন্তানদের অবহেলার চোখে দেখে। স্থানীয় ভাষায় কৃষি শ্রমিকদের বলা হয় চুক্তি কামলা চুক্তি কামলার ছেলে-মেয়ের সঙ্গে কেউ বিয়ে-শাদি দিতে চায় না। এছাড়া বর্তমানে একজন কৃষি শ্রমিকের দৈনিক মজুরি মাত্র ৫০০ টাকা। অথচ কৃষি শ্রমিকরা পেশা পরিবর্তন করে কেউ কেউ লোকনাথ খাদ্যভাণ্ডারের মতো ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানে কুলির কাজ করে দৈনিক গড়ে ৮০০-১০০০ টাকা আয় করছেন। কেউ কেউ রাজমিস্ত্রি, রঙমিস্ত্রির কাজ করে দৈনিক উপার্জন করছেন ৭০০ টাকা। কেউ রিকশা-ভ্যান চালিয়ে আয় করছেন ৬০০-৭০০ টাকা। তারা আরো বলেন, সারা বছর কৃষি শ্রমিকের কাজ থাকে নাএটাও পেশা পরিবর্তনের অন্যতম কারণ।

শ্রম জরিপ ২০১৬-এর হিসাবমতে, দেশের মোট শ্রমশক্তির ৪০ দশমিক শতাংশ এখনো কৃষিকাজে নিয়োজিত। বিবিএসের ২০১০ সালের শ্রমশক্তি জরিপে দেখা গেছে, দেশের কৃষিকাজে নিয়োজিত শ্রমশক্তির সংখ্যা কোটি ৫৬ লাখ। এর মধ্যে নারী কোটি লাখ। এক দশক আগেও নারীদের সংখ্যা ছিল ৩৮ লাখ। এক দশক ধরে প্রতি বছর কৃষিকাজে শতাংশ হারে কৃষি শ্রমিক বাড়লেও তা মূলত নারীনির্ভর।

২০১৯-২০ অর্থবছরে জিডিপিতে কৃষি খাতের অবদান ছিল ১৩ দশমিক ৬০ শতাংশ। বাংলাদেশে খাদ্য উৎপাদনে অভূতপূর্ব সাফল্য দেখিয়েছে কৃষি। জাতিসংঘের খাদ্য কৃষিনিরাপত্তা রিপোর্ট-২০১৫ অনুসারে খাদ্যনিরাপত্তায় বাংলাদেশের সফলতা দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে সর্বোচ্চ। ধান সবজি উৎপাদনে বাংলাদেশ বিশ্বে তৃতীয়, আম উৎপাদনে সপ্তম, পেয়ারা উৎপাদনে অষ্টম, আলু উৎপাদনে সপ্তম মাছ উৎপাদনে পঞ্চম। এসব অর্জনের পেছনে কৃষি শ্রমিকের রয়েছে অনন্য অবদান। বিশ্ববাংকের প্রতিবেদন অনুসারে, দেশজ উৎপাদন, জিডিপিতে অবদান কমলেও দারিদ্র্য বিমোচন কর্মসংস্থানে এখনো মুখ্য ভূমিকা পালন করছে কৃষি। গ্রামাঞ্চলের প্রায় ৮৭ শতাংশ পরিবারের জীবনযাপন এখনো কৃষিনির্ভর। গ্রামে কৃষিতে বেড়েছে কর্মসংস্থান, যা শহরের মোট কর্মসংস্থানের দ্বিগুণ।

কৃষি খাতে সরকারের নানা সহায়তা, বিনিয়োগ বৃদ্ধি, অবকাঠামো উন্নয়ন, গবেষণা মানবসম্পদ উন্নয়নের ফলে ২০১০ থেকে ২০১৪ সালে কৃষি খাতে প্রবৃদ্ধি হয়েছে দশমিক শতাংশ। সেচ ব্যবস্থার সম্প্রসারণ, প্রযুক্তির ব্যবহার আর বাজার বহুমুখী হওয়ায় কৃষি উৎপাদন বেড়েছে আগের চেয়ে অনেক বেশি। কৃষি খাতই ২০০০ সাল থেকে গত দুই দশকে বাংলাদেশে দারিদ্র্য বিমোচনে প্রধান ভূমিকা পালন করেছে।

করোনা মহামারীর কারণে কাজ হারিয়ে শহর ছেড়ে গ্রামে চলে গেছেন অনেক শ্রমিক। জীবিকার তাগিদে তাদের বড় অংশই গ্রামে কৃষি শ্রমিকের কাজে যুক্ত হয়েছেন। ফলে কৃষি শ্রমিকের সংকট হয়নি এবার। বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের (ব্রি) এক গবেষণা থেকে জানা যায়, করোনাকালে বোরো মৌসুমে কৃষি শ্রমিকের মজুরি সবচেয়ে বেশি কমেছে সিলেট, রাজশাহী রংপুর অঞ্চলে। অন্যদিকে ঢাকা, চট্টগ্রাম কুমিল্লায় বিভিন্ন মাত্রায় মজুরি বেড়েছে। মজুরি অপরিবর্তিত ছিল যশোর রাঙ্গামাটি অঞ্চলে। কভিড-১৯ যুগে খাদ্যনিরাপত্তা: বাংলাদেশ কি শিগগিরই খাদ্য সংকটে পড়েছে? শীর্ষক গবেষণায় ২০১৯ সালের বোরো মৌসুমের কৃষি শ্রমিকের মজুরির পার্থক্য তুলে ধরেছে ব্রি। সারা দেশকে ১৪টি কৃষি অঞ্চলে বিভক্ত করে পরিচালিত গবেষণায় দেখা যায়, সিলেট রাজশাহী অঞ্চলে কৃষি শ্রমিকের মজুরি কমেছে প্রায় ১৭ শতাংশ। এছাড়া রংপুর অঞ্চলে ১৫ শতাংশ, বগুড়ায় ১৩ শতাংশ, দিনাজপুরে ১১ শতাংশ, ফরিদপুরে ১০ শতাংশ, বরিশালে শতাংশ, ময়মনসিংহে শতাংশ খুলনা অঞ্চলে শতাংশ হারে মজুরি কমেছে। কারণ হিসেবে জানা যায়, এবার গ্রামে কৃষি শ্রমিক অনেক বেশি ছিল। নভেল করোনাভাইরাসের প্রভাবে শহর ছেড়ে অনেকেই গ্রামে ফিরে কৃষিকাজে যুক্ত হয়েছেন। আবার বালি পাথর শ্রমিকসহ অন্য শ্রমিকরা কর্মহীন হয়ে ধান কাটায় যুক্ত হয়েছেন। অন্য যেকোনো খাতের শ্রমিকদের থেকে অনেক কম মজুরি পান কৃষি শ্রমিকরা। দেশের অধিকাংশ অঞ্চলে কৃষি শ্রমিকের মজুরি কমলেও চট্টগ্রামে ১৩ শতাংশ, কুমিল্লায় শতাংশ ঢাকা অঞ্চলে কৃষি শ্রমিকের মজুরি বেড়েছে শতাংশ। তবে মহামারীতে কৃষি শ্রমিকের মজুরির ওপর প্রভাব ফেলতে পারেনি যশোর রাঙ্গামাটি অঞ্চল। সেখানে মজুরি অপরিবর্তিত ছিল।

বাংলাদেশে অন্য খাতের তুলনায় কৃষি খাতের শ্রমিকদের অবস্থা অত্যন্ত নাজুক। যেমন. বাংলাদেশে কৃষি শ্রমিকের আইনগত কোনো স্বীকৃতি নেই। ফলে শ্রমিক হিসেবে আইনের আশ্রয় নেয়ার অধিকার নেই। শ্রমিক হিসেবে সংঘবদ্ধ হওয়া ট্রেড ইউনিয়ন গঠনের অধিকার নেই। . বছরের প্রায় অর্ধেক সময় কৃষি শ্রমিকের কোনো কাজ থাকে না। অভাবের সময় কম দামে আগাম শ্রম বিক্রি করতে হয়। সরকারি ঋণ সুবিধা তাদের ভাগ্যে জোটে না, মহাজনী বেসরকারি ঋণে শোষণের শিকার, প্রাকৃতিক দুর্যোগ, অসুস্থতায় কোনো নিরাপত্তা নেই কৃষি শ্রমিকের। . অনেক সময় কাজের ন্যায্য মজুরি পায় না। কাজের নির্দিষ্ট কোনো সময় সীমা নেই। নারী-পুরুষ মজুরিবৈষম্য বিদ্যমান। সামাজিক প্রতিবন্ধকতার কারণে দেশের সব এলাকায় নারীদের মাঠে কাজ করার সুযোগ নেই।

আমাদের দেশে কৃষি শ্রমিকের ন্যূনতম মজুরি সম্পর্কে কোনো বিধিবদ্ধ আইন ছিল না। ১৯৮৪ সালে কৃষিশ্রম (ন্যূনতম মজুরি) অধ্যাদেশ ১৯৮৪ জারি করা হয়। একজন কৃষি শ্রমিকের একদিনের মজুরি হিসেবে কেজি ২৭০ গ্রাম চাল অথবা স্থানীয় বাজারে ওই পরিমাণ চালের যে বাজারমূল্য, সমপরিমাণ টাকা প্রদানের কথা অধ্যাদেশে বলা হয়। এছাড়া কৃষি শ্রমিকের ন্যূনতম মজুরির হার সময়ে সময়ে অফিশিয়াল গেজেটে প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে পুনর্নির্ধারণের কথাও বলা হয়েছিল। কিন্তু পরবর্তী সময়ে কৃষি শ্রমিকের মজুরি পুনর্নির্ধারণ কিংবা ন্যূনতম মজুরি ঘোষণার ক্ষেত্রে আর কোনো আইনি উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়নি। কৃষি শ্রমিকের ন্যূনতম মজুরি নির্ধারণের কিছু মানদণ্ড এরই মধ্যে গবেষক নীতিনির্ধারকরা নির্ধারণ করেছেন। দৈনিক হাজার ৬০০ ক্যালরি পরিমাণ খাদ্য উপাদান গ্রহণকে দারিদ্র্য পরিস্থিতি পরিমাপের যে মানদণ্ড নির্ধারণ করেছেনকৃষি শ্রমিকের পরিবারগুলো সেই মানদণ্ডের নিচের দিকে পড়ে গেছে। শ্রমিকের বেঁচে থাকার প্রয়োজন মেটানোটাই ন্যূনতম মজুরি নির্ধারণের ক্ষেত্রে ভিত্তি হওয়া উচিত। একজন শ্রমিক দৈনিক ঘণ্টা কাজ করে চারজনের পরিবারের ব্যয় বহন করতে পারলে সেটা হয় আদর্শ ন্যূনতম মজুরি। অনেকে কৃষি শ্রমিকের ন্যূনতম মজুরি নির্ধারণের ক্ষেত্রে তাদের শারীরিক পরিশ্রমের সক্ষমতা অর্জনের জন্য তাকে যে খাদ্যসামগ্রী গ্রহণ করতে হয় তার দাম হিসাব করতে বলেছেন। হিসাব কষে দেখা গেছে, বর্তমানে এর পেছনে একজন মানুষের খরচ পড়ে ন্যূনতম দৈনিক ৯০ টাকা। এর সঙ্গে আছে বাসস্থান, কাপড়-চোপড়, চিকিৎসা, শিক্ষা প্রভৃতির খরচ। শ্রমশক্তিকে উপযুক্ত দক্ষতাসম্পন্নভাবে থাকার জন্য এসব খরচ অপরিহার্য। হিসাব করে দেখা গেছে, আহারের পেছনে ৫৪ শতাংশ খরচ হলে, অবশিষ্ট খরচ ৫৫ শতাংশ। অর্থাৎ সাকুল্যে খরচ পড়ে ১৮০-১৯০ টাকা। তারপর আছে শ্রমশক্তিকে বংশ পরম্পরায় অব্যাহত রাখার প্রয়োজনে পরিবার রক্ষা ভরণপোষণের খরচ। চারজনের একটি পরিবারের জন্য সেই হিসেবে খরচ দাঁড়ায় দৈনিক ৭৫০ টাকার মতো। যদি কোনো পরিবারে দুই জনকে কর্মক্ষম ধরা হয়, খরচ বহনের জন্য একেকজনের আয় করতে হবে ৩৭৫ টাকা। অর্থাৎ প্রতি মাসে ১১ হাজার ২৫০ টাকা। এটা একজন মানুষের শ্রমশক্তি পুনরুৎপাদনের প্রকৃত মূল্য। এটাই হওয়া উচিত একজন শ্রমিকের ন্যূনতম মজুরির হার। আমরা মনে করি, শ্রমশক্তি দিয়ে যা উৎপাদন হয় এবং জীবনধারণ করতে যা যা প্রয়োজন তার মূল্য বিবেচনা করে শ্রমিকের সর্বনিম্ন মাসিক মজুরি ১৫ হাজার টাকা হওয়া উচিত। জরুরি ভিত্তিতে কৃষি শ্রমিকের ন্যূনতম মজুরিরও মূল্য পরিষদ গঠন করার মধ্য দিয়ে মজুরি নির্ধারণ বাস্তবায়নের ব্যবস্থা করা যেতে পারে। কৃষি ক্ষেত্রে নিয়োজিত শ্রমিকের স্বীকৃতি, ন্যূনতম মজুরি ঘোষণা এবং সমকাজে সমমজুরি নিশ্চিত করার লক্ষ্যে একটি নীতিমালা প্রণয়নের ক্ষেত্রে নিম্নলিখিত বিষয়গুলো যথাযথভাবে বিবেচনা করা উচিত।

. কৃষিতে নিয়োজিত শ্রমিকদের অধিকার, শ্রমিক নিয়োগ, মালিক শ্রমিকের সম্পর্ক, সর্বনিম্ন মজুরির হার নির্ধারণ, কৃষি শ্রমিকের ট্রেড ইউনিয়ন গঠন, শ্রমঘণ্টা, ছুটি বিশ্রাম, কৃষি শ্রমিকের কাজের পরিবেশ, শ্রমিকের কল্যাণ, খাদ্যনিরাপত্তাসহ কৃষি উৎপাদন অব্যাহত সৃজনশীল খাত হিসেবে কৃষি শ্রমিককে শ্রম আইনের আওতাভুক্ত করে কৃষি শ্রমিকের আইন সুরক্ষা প্রদান করা। . কৃষি শ্রমিকের অধিকার নিশ্চিতকরণে কর্মক্ষেত্রে স্বাস্থ্যগত নিরাপত্তা নিশ্চিত করা দরকার। নারী শ্রমিকের জন্য শিশুর যত্ন সুবিধা প্রদান, যৌন হয়রানি প্রতিরোধে কার্যকর ব্যবস্থা, মৌসুমে স্থানান্তরিত শ্রমিকের সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিতকরণের বিষয়গুলো গুরুত্ব দেয়া। . সামাজিক নিরাপত্তাবেষ্টনীতে নারী শ্রমিকদের অগ্রাধিকার দেয়া। বিশেষ করে মাতৃত্বকালীন সময়ে নারী শ্রমিকদের ভাতা নিশ্চিত করতে হবে। . নারী কৃষক শ্রমিকদের প্রজনন স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিতে প্রয়োজনীয় সচেতনতা সেবা প্রদান করা, বিভিন্ন জাতীয় আন্তর্জাতিক দিবসে নারী শ্রমিকদের অধিকার সেবা সম্পর্কে সচেতনতা অ্যাডভোকেসি করা। পারিবারিক পর্যায়ে নারী-পুরুষের ভূমিকা দায়িত্ব সমবণ্টনের মানসিকতা চর্চা তৈরিতে সচেতনতা তৈরি করা। . নারীবান্ধব কৃষিপ্রযুক্তি ব্যবহার বৃদ্ধি করা। নারী কৃষক শ্রমিক সংগঠন তৈরিতে প্রণোদনা সহায়তা প্রদান করা। . কৃষি শ্রমিকের জীবিকার নিরাপত্তা বিধানের জন্য বছরে কমপক্ষে ১০০ কর্মদিবসের কর্মসংস্থান নিশ্চিত করা। কৃষি শ্রমিককে নতুন নতুন যন্ত্র-প্রযুক্তির সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেয়া, প্রযুক্তি ব্যবহারে প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ প্রদান, কৃষি বীমা চালু করা, মৌসুমভিত্তিক সুদবিহীন কৃষিঋণ প্রদানের ব্যবস্থা করা। . সরকার বাংলাদেশ শ্রমিক কল্যাণ ফাউন্ডেশন আইন ২০০৬ বাংলাদেশ শ্রমিক কল্যাণ ফাউন্ডেশন বিধিমালা ২০১০-এর সঙ্গে সংগতি রেখে গেজেটের মাধ্যমে কৃষি শ্রমিকের কল্যাণে বিধিবিধান জারি করতে পারে। . কৃষি খাতের চলমান দুর্দশা লাঘবে খাতে আরো বেশি ভর্তুকি প্রদান, কৃষি শ্রমিকের সহজ শর্তে ঋণ প্রদান এবং উৎপাদিত পণ্যের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিতে কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য একটি কমিশন গঠন করা। কমিশন কৃষি শ্রমিকদের স্বার্থ সংরক্ষণের বিষয়গুলো খতিয়ে দেখবে।

আমার দেখা নয়া চীন গ্রন্থে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ঠিকই বলেছিলেন, কৃৃষক যে জিনিস উৎপাদন করেন তার দাম আমাদের দেশের মতো কম হতে পারে না। আমাদের দেশে যখন ধান-পাট চাষীর ঘরে থাকে, তখন দাম অল্প হয়। যখন মহাজনের ঘরে থাকে তখন দাম বাড়তে থাকে। চাষী উৎপাদন খরচও পান না। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, বর্তমানে হিমাগারে প্রতি কেজি আলু বিক্রি হচ্ছে ১৩ টাকা দামে। অথচ আলুর উৎপাদন খরচ পড়েছে প্রতি কেজি ১৮ টাকা। ঘন ঘন প্রাকৃতিক দুর্যোগ, কৃষি শ্রমিকের সংকট, কৃষিপণ্যের ন্যায্যমূল্য না পাওয়া, উৎপাদন উপকরণের (বিশেষ করে কীটনাশক, ছত্রাকনাশক আগাছানাশক) মূল্যবৃদ্ধি, কৃষিপণ্যের উপযুক্ত সংরক্ষণ ব্যবস্থার অভাব, প্রয়োজনীয় কৃষি প্রক্রিয়াজাত শিল্প-কারখানা স্থাপন না হওয়া, কৃষিপণ্য রফতানির পরিমাণ বৃদ্ধি না পাওয়া, ক্ষুদ্র খণ্ডিত জমিতে কৃষি যন্ত্রপাতির সঠিক ব্যবহার না হওয়া, ক্ষুদ্র প্রান্তিক চাষীদের প্রয়োজনীয় কৃষিঋণ না পাওয়া, মধ্যস্বত্বভোগীদের দৌরাত্ম্য প্রভৃতি কারণে কৃষি আজ এক অলাভজনক পেশায় পরিণত হয়েছে। যদি কৃষিপণ্য বিক্রি করে কৃষক উৎপাদন খরচ তুলতে না পারেন, তাহলে কেন তিনি বারবার কৃষিপণ্য উৎপাদন করে লোকসানের সম্মুখীন হবেন? প্রশ্ন আজ নতুন প্রজন্মকে ভীষণভাবে ভাবিয়ে তুলেছে। কারণে নতুন প্রজন্মের তরুণ-তরুণীদের মধ্যে কৃষি নিয়ে কোনো আগ্রহ নেই। নেই কোনো নতুন চিন্তাভাবনা। সমস্যা সমাধানে কৃষিবিজ্ঞানী, সরকারের নীতিনির্ধারক কৃষক নেতাদের অবশ্যই অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে হবে।

 

নিতাই চন্দ্র রায়: বঙ্গবন্ধু জাতীয় কৃষি পুরস্কারপ্রাপ্ত কৃষিবিদ

আরও