২০০১ সালে বাংলাদেশে চা উৎপাদন হয়েছিল মাত্র ৫৩ দশমিক ১৫ মিলিয়ন কেজি। ৩৬ দশমিক ৯৫ মিলিয়ন কেজি ভোগের বিপরীতে বাংলাদেশ ওই বছর চা রফতানি করেছে ১২ দশমিক ৯২ মিলিয়ন কেজি। পরের বছর (২০০২) উৎপাদন হয়েছিল ৫৩ দশমিক ৬২ মিলিয়ন কেজি। ওই সময় ৪১ দশমিক ৫০ মিলিয়ন কেজি ভোগের বিপরীতে রফতানি হয় রেকর্ড ১৩ দশমিক ৬৫ মিলিয়ন কেজি। উৎপাদন উল্লেখযোগ্য পরিমাণ না বাড়লেও পরবর্তী তিন বছর বাংলাদেশ থেকে চা রফতানি ছিল যথাক্রমে ১২ দশমিক ১৮, ১৩ দশমিক ১১ ও ৯ দশমিক শূন্য ১ মিলিয়ন কেজি।
২০০৬ সালে চা রফতানি হঠাৎ করেই কমে ৪ দশমিক ৭৯ মিলিয়নে নেমে আসে। ২০০৭ সালে রফতানি বেড়ে ১০ দশমিক ৫৬ মিলিয়ন কেজি ও ২০০৮ সালে রফতানি হয় ৮ দশমিক ৩৯ কেজি। এর পর থেকে দেশের চা রফতানি আশঙ্কাজনক হারে কমে যায়। মূলত অভ্যন্তরীণ ভোগ দ্রুত বাড়লেও উৎপাদন আশানুরূপ না হওয়ায় রফতানিতে ভাটা পড়ে। এতে আমদানির পরিমাণও বাড়তে থাকে। এ সময়ে দেশে অভ্যন্তরীণ ভোগের পরিমাণ বেড়ে সর্বশেষ ২০১৯ সালে এসে দাঁড়িয়েছে ৯৫ দশমিক ২০ মিলিয়ন কেজিতে। দেশের আমদানিনির্ভরতা কমাতে হলে উৎপাদন বাড়ানোর বিকল্প নেই বলে মনে করছেন খাতসংশ্লিষ্টরা।
চা বোর্ডের হিসাবে দেখা গেছে, ২০১১ সালে দেশে চা আমদানি হয়েছিল ৪ দশমিক ৯৮ মিলিয়ন কেজি। এ ধারা অব্যাহত থাকায় ২০১৫ সালে দেশে চা আমদানির পরিমাণ বেড়ে যায় রেকর্ড ১১ দশমিক ৪ মিলিয়ন কেজিতে। তবে অভ্যন্তরীণ উৎপাদন বৃদ্ধির পাশাপাশি আমদানিতে নিয়ন্ত্রণমূলক শুল্ক আরোপের ফলে দেশে চা আমদানি সাম্প্রতিক সময়ে কমতে কমতে সর্বশেষ ২০২০ সালে নেমে এসেছে দশমিক ৬৮ মিলিয়ন কেজিতে। পাশাপাশি দীর্ঘদিন রফতানি প্রায় শূন্যের কোটায় অবস্থান করলেও ২০২০ সালে চা রফতানি বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২ দশমিক ১৭ মিলিয়নে কেজিতে। লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী চা উৎপাদনের পরিকল্পনা বাস্তবায়ন হলে আমদানির পরিবর্তে বাংলাদেশ চা রফতানির হারানো গৌরব ফিরে পাবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
দেবব্রত রায়: সাংবাদিক
বাংলাদেশের চা খাতের কিছু তথ্য
১: মোট চা বাগান-১৬৭টি
২: চা বাগানের মোট ভূমির পরিমাণ-২,৮৩,০৫১.৭৬ একর
৩: মোট চা চাষযোগ্য ভূমির পরিমাণ-১,৫৯,৮৭৭.১৩ একর
৪: মোট চা চাষাধীন ভূমির পরিমাণ-১,৫৩,৬২১.৬২ একর
৫: ভবিষ্যতে রোপণযোগ্য ভূমির পরিমাণ-৬,২৫৫.৫১ একর
৬: অন্যান্য কাজে ব্যবহূত ভূমির পরিমাণ-১,২৯,৪৩০.১৪ একর
৭: চা বাগানের শ্রমিকের সংখ্যা-১,৪০,১৮৪ জন
৮: নারী শ্রমিকের সংখ্যা-৫০ শতাংশ
৯: চা বাগানের মোট জনসংখ্যা-৪,৭২,১২৫ জন
১০: মোট ক্ষুদ্রায়তন চা চাষীর সংখ্যা-৭,০০০ জন
১১: ক্ষুদ্রায়তন চা চাষাধীন জমির পরিমাণ-৮,০৫৭ জন
১২: ক্ষুদ্রায়তন সম্প্রসারণযোগ্য চা চাষাধীন জমির পরিমাণ-৫০,০০০ একর
১৩: চা নিলামকেন্দ্রের সংখ্যা-২টি
১৪: বাংলাদেশ থেকে চা রফতানি হয়-২২টি দেশে
১৫: রফতানীকৃত চায়ের ব্র্যান্ড-মির্জাপুর, ইস্পি সুপার, তেঁতুলিয়া অর্গানিক, সিলন টি, ওরিয়ন টি ও টেটলি টি
(সূত্র: বাংলাদেশ চা বোর্ড)