‘লিকুইড সোসাইটি’ (Liquid Society) তত্ত্বের ধারণাটি দিয়েছেন প্রখ্যাত পোলিশ সমাজতাত্ত্বিক
যিগমুন্ট বাউম্যান তার ‘লিকুইড মডার্নিটি’ বইয়ে। ‘লিকুইড’ বা ‘তরল’ বলতে সাধারণ
অর্থে আমরা বুঝি পানি-জাতীয় পদার্থকে অর্থাৎ বিজ্ঞানের ভাষায় যেসব পদার্থের পরমাণুসমূহের
মধ্যকার বন্ধন খুব একটা জোরালো নয় এবং চাপ ও তাপপ্রয়োগের তারতম্যের কারণে এসব
পদার্থ তাদের আকার পরিবর্তন করে। আমাদের বর্তমান সমাজব্যবস্থাকে বাউম্যান তুলনা
করেছেন তরল পদার্থের সাথে যেখানে সমাজের প্রতিটি মানুষ তরল পদার্থের পরমাণুর মত
আচরণ করে অর্থাৎ তাদের মধ্যকার বন্ধন কঠিন পদার্থের মত শক্তিশালী নয় এবং বিভিন্ন
ধরনের বল প্রয়োগে সমাজ তার নিজস্ব অবস্থান ধরে রাখতে পারে না। বাউম্যান মনে করেন
সমাজের এই তরলীকরণ প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে আধুনিকতার নামে সমাজ ও রাষ্ট্রের চেহারা
বদলে ফেলার সময়কাল থেকে। এবং বাউম্যানের মতে এই ধরনের সমাজে মুখ্য ভূমিকা পালন করে
অনিরাপত্তা, অনিশ্চয়তা এবং ব্যক্তিস্বাতন্ত্র্যবাদের মতো বিভিন্ন উপাদান।
সমাজ আসলে কি? সমাজকে আমরা বলতে
পারি মানুষের মধ্যে অলিখিত চুক্তির মাধ্যমে গঠিত একটি ব্যবস্থা যেখানে সাধারণত
কিছু নির্দেশক কাজ করে; যেমন একটা সমাজের মানুষ একে অপরকে জানবে অর্থাৎ তাদের
মধ্যে ‘পারস্পরিক সচেতনতা’ কাজ করবে, সমাজের মানুষের মধ্যে এক ধরনের সংযোগ বা
সম্পর্ক থাকবে এবং ন্যূনতম পরিমাণে হলেও এক ধরনের সহযোগিতা কাজ করবে। এই সমাজ যেমন স্থানীয়
পর্যায়ে কাজ করতে পারে তেমনি রাষ্ট্রীয় এমনকি আন্তর্জাতিক পর্যায়েও বিভিন্ন সমাজের
অস্তিত্ব থাকতে পারে। সাম্প্রতিক সময়ে বলা হচ্ছে শিল্প বিপ্লবের শুরুর কাল থেকে
চারটি ধাপ পার করে বর্তমানে আমরা চতুর্থ শিল্প বিপ্লব দেখতে পাচ্ছি; যেখানে প্রযুক্তির
অভাবনীয় উন্নয়ন হয়েছে এবং একই সাথে দেশে দেশে সমাজের মৌলিক কাঠামোতেও হয়েছে
বিভিন্ন পরিবর্তন। তবে এসব পরিবর্তনের মধ্যে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য এবং সাধারণ যে
বৈশিষ্ট্য দেখা যাচ্ছে সেটি হচ্ছে সমাজের মানুষের মধ্যে সংযোগ বা সম্পর্কে পূর্বে
যে গভীরতা দেখা যেতো ছিলো সেটি ক্রমশ ফাঁপা হয়ে গেছে, সেখানে তৈরি হয়েছে নানা
ধরনের দূরত্ব এবং সামাজিক বন্ধনের মোটা ও শক্ত সুতোগুলো ধীরে ধীরে সরু ও দুর্বল
হয়ে গেছে।
শিল্প বিপ্লবের এই চতুর্থ স্তরে
এসে আমরা দেখতে পাই ইন্টারনেট অফ থিংস (Internet of
Things)-এর মত ধারণা যেখানে আমরা মানুষে-মানুষে সরাসরি মিথষ্ক্রিয়া
ব্যতীত শুধুমাত্র ইন্টারনেটের মাধ্যমে এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় বিপুল পরিমাণ
তথ্য, অর্থ কিংবা পণ্য পাঠিয়ে দিতে পারি। এছাড়াও মানুষকে আমরা প্রতিস্থাপিত করছি
আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স বা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা দিয়ে, বলা হচ্ছে এই কৃত্রিম
বুদ্ধিমত্তা অদূর ভবিষ্যতে মানবজাতির অনেক পেশার দখল নিয়ে নেবে। আরও কথা হচ্ছে ‘বিগ ডেটা’ (Big Data) নিয়ে যার মাধ্যমে নিকট ভবিষ্যতে পৃথিবীতে মানুষের
গতিবিধি নিয়ন্ত্রণ করবে প্রযুক্তি অথবা প্রযুক্তির নিয়ন্ত্রণে থাকা গুটিকয়েক মানুষ;
যেমনটা চীনে কিংবা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ইতোমধ্যে দেখা যাচ্ছে। এই নয়া প্রযুক্তির যুগে এসে তাই শিল্প সমাজের (Industrial
Society) রূপান্তর হয়ে নতুন এক সমাজব্যবস্থা তৈরি হয়েছে যার নাম
দেওয়া হয়েছে তথ্যভিত্তিক সমাজ (Information Society)। এই তথ্যভিত্তিক সমাজ ব্যবস্থা
আদতে কেমন? আমাদের পূর্বেকার সমাজ ব্যবস্থার উপরে এর প্রভাব কি? এর ফলে ভবিষ্যতে
আমরা কেমন সমাজ ব্যবস্থা পেতে যাচ্ছি?
টেলিগ্রাফ, টেলিগ্রাম, রেডিও,
টেলিভিশন, স্যাটেলাইট, আদি কম্পিউটার বা গণনাযন্ত্র ইত্যাদির যুগ পার হয়ে আমরা এখন
পৌঁছেছি অত্যাধুনিক কম্পিউটার, স্মার্টফোন আর ইন্টারনেটের যুগে। এই নব্য তথ্যভিত্তিক
সমাজ ব্যবস্থায় আমরা দেখতে পাচ্ছি যোগাযোগ ব্যবস্থার অভাবনীয় উন্নতির ফলে মানুষের
মধ্যে দূরত্ব ঘুচে গেছে। এখন চাইলেই আপনি বাংলাদেশে বসে সুদূর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে থাকা আপনার
পরিবারের কারো সাথে মেসেঞ্জার বা হোয়াটসঅ্যাপে ভিডিও কল করে কথা বলতে পারছেন।
ফেসবুকের মতো সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের কল্যাণে ভার্চুয়াল জগতে হরহামেশাই বিভিন্ন
মহাদেশের মানুষ আপনার বন্ধু হচ্ছে যা হয়তো বাস্তব পৃথিবীতে সম্ভব ছিলো না। গুগলের
মতো সার্চ ইঞ্জিনের কল্যাণে আপনি যেখানে-সেখানে বসেই সারা বিশ্বের খবর নিতে
পারছেন। এর ফলে ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রসার হচ্ছে খুব দ্রুতগতিতে, নতুন নতুন
উদ্যোক্তা তৈরি হচ্ছে আর একই সাথে গড়ে উঠছে বিভিন্ন বহুজাতিক বাণিজ্য ‘নেটওয়ার্ক’। নব্য-উদারবাদী অর্থনীতির সমর্থকেরা মনে করছেন এতে বিভিন্ন দেশের মধ্যে থাকা
রাজনৈতিক সীমানা অকার্যকর হয়ে যাচ্ছে, তৈরি হচ্ছে এক নতুন পৃথিবী। প্রযুক্তির
দ্রুতগামী এই উন্নয়নের কারণে বিশ্বায়ন আরো ত্বরান্বিত হচ্ছে যার সুফল পৌঁছে যাচ্ছে
সকল মানুষের কাছেই। কিন্তু প্রযুক্তির এই সর্বব্যাপী বিকাশের ফলে সমাজের মৌলিক
গঠনে কি ধরনের পরিবর্তন দেখা যাচ্ছে?
এখানেই বাউম্যান তার তত্ত্ব
নিয়ে হাজির হচ্ছেন। তথ্য-প্রযুক্তির উন্নয়নের ফলে একদিকে হয়তো মানুষের ভার্চুয়াল
সম্পর্কের নানামুখী বিস্তৃতি হয়েছে কিন্তু অন্যদিকে তার আশেপাশের মানুষের সাথে
তৈরি দৈনন্দিন সম্পর্কগুলোর বন্ধন ক্রমশ সরু ও দুর্বল হয়ে যাচ্ছে। মানুষ প্রতিনিয়ত
তার কাছের মানুষগুলো থেকে দূরে সরে যাচ্ছে, সম্পর্কগুলো ঠুনকো হয়ে যাচ্ছে এবং
দিনশেষে প্রত্যেকেই প্রচণ্ড একাকীত্বে ভুগছে। একই সাথে পুঁজিবাদী উন্নয়ন দর্শনের সর্বব্যাপী প্রসারের
ফলে মানুষ নিজের ভালোকেই সবচেয়ে বেশি প্রাধান্য দেয়, সমাজের বাকিদের কি পরিণতি হচ্ছে
সেটি নিয়ে কখনোই ভাবতে শেখায় না। বাউম্যানের মতে মানুষ শিল্প-সমাজের ‘কঠিন’
হার্ডওয়্যার-ভিত্তিক আধুনিকতার পরিবর্তে বর্তমানে তথ্যভিত্তিক সমাজের ‘তরল’
সফটওয়্যার-ভিত্তিক আধুনিকতার দিকে অগ্রসর হচ্ছে; এতে তৈরি হচ্ছে এক ‘লিকুইড
সোসাইটি’। এই লিকুইড সোসাইটির বৈশিষ্ট্য হলো এখানে বৈশ্বিক ব্যবস্থার অনিয়ন্ত্রিত ও
দূরবর্তী প্রক্রিয়ার সাথে যুক্ত হয়েছে অসংগঠিত এবং শিথিল বন্ধনযুক্ত সামাজিক
সম্পর্ক যা মানুষকে এক অনিশ্চিত ও অনিরাপদ জীবনের দিকে ঠেলে দিয়েছে। অর্থনৈতিকভাবে
অনুন্নত দেশের জনগণ অপ্রতুল সম্পদ নিয়ে অসম প্রতিযোগিতায় নেমে সবাই যার যার মতো
ভালো থাকতে চেষ্টা করার ফলে সেসব সমাজের মানুষ অনেক বেশি অনিশ্চয়তার সম্মুখীন
হচ্ছে। এই অনিশ্চয়তার কারণে একের পর এক উদ্ভব হচ্ছে ক্ষণস্থায়ী সমস্যার, তাই
মানুষও প্রতি মুহুর্তে উদ্বিগ্ন ও সতর্ক থাকে যে-কোনো বিষয় নিয়ে। একটি দুশ্চিন্তা
থেকে মুক্তি পেতে না পেতেই আরেকটি দুশ্চিন্তা ঘিরে ধরছে সবাইকে, কারণ এই নতুন
সমাজে প্রতিটি বিষয়ের উপর আরো অনেকগুলো বিষয় প্রভাব বিস্তার করে, প্রতিটি
ক্ষেত্রেই অনেক বেশি প্রভাবকের উপস্থিতি থাকায় সবকিছুতেই এক ধরনের অনিশ্চয়তা কাজ
করে, ব্যক্তির নিয়ন্ত্রণে কোনোকিছুই থাকে না এবং কখন কি হবে তা আগে থেকেই বুঝে ওঠা
যায় না। এর ফলে সমাজে ঝুঁকির পরিমাণ বেড়ে যায়, যাকে আলরিখ বেক বলছেন ‘রিস্ক সোসাইটি’। এই রিস্ক সোসাইটির
একটি গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য হলো এখানে সৃষ্ট নেতিবাচক ঝুঁকিগুলো মানুষের নিজেরই তৈরি!
পরিবেশ দূষণ, বৈশ্বিক উষ্ণায়ন, নিউক্লিয়ার রেডিয়েশন, যুদ্ধ, দুর্ভিক্ষ, জাতিগত
সহিংসতা, প্রয়োজনীয় সম্পদ ও সেবার অপ্রতুলতা, বিভিন্ন রোগের মহামারী আকার ধারণ
করার মতো মানবসৃষ্ট বিপর্যয় ও দুর্যোগ এধরনের সমাজে মানুষকে একা একাই সামলাতে হয়। এ
যেন মানুষের নিজের হাতেই রচিত এক ট্র্যাজেডি!
কভিড-১৯ এর কারণে সৃষ্ট অতিমারীও
কি মানুষের নিজের সৃষ্ট এক দুর্যোগ নয়? পরিবেশ ও প্রাণবৈচিত্র্যের সাথে ক্রমাগত যে
বৈরী আচরণ করে চলেছে অদূরদর্শী মানুষ তারই ফলাফল হিসেবে আজ সমগ্র বিশ্ব এক ভয়াবহ
সময় পার করছে। একদিকে যেমন বাউম্যানের ‘লিকুইড সোসাইটি’র মানুষ একা একাই এধরনের
দুর্যোগ মোকাবেলা করে, অন্যদিকে তেমন সমাজের অনিশ্চয়তাগুলোও যেন ভয়ংকরভাবে ফুলে
ফেঁপে প্রকাশ পেয়েছে এই অতিমারীর কল্যাণে। এই অনিশ্চয়তার উপস্থিতির প্রমাণ পাওয়া
যায় অতিমারীর কথা শুনেই অত্যধিক পরিমাণে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য মজুদ করা কিংবা বাজার
থেকে মাস্ক ও স্যানিটাইজার মুহুর্তেই শেষ হয়ে যাওয়ার মতো ঘটনার মাধ্যমে। এই
অনিশ্চয়তা আরো প্রকট আকার ধারণ করে যখন ভাইরাস নিয়ে বিভিন্ন পরস্পরবিরোধী তথ্য
উপস্থাপিত হয় গণমাধ্যমে, পারস্পরিক অবিশ্বাসের কারণে কোনটি সঠিক আর কোনটি ভুল তথ্য
তা নিয়ে প্রচণ্ড দ্বিধা-দ্বন্দ্বে ভুগতে থাকে সবাই। ঠিক কবে এই মহামারী শেষ হবে,
ভাইরাসের ভ্যাকসিন কবে নাগাদ আবিষ্কার হতে পারে, সেই ভ্যাকসিন সবার হাতে আদৌ
পৌঁছুবে কি না – সবকিছুই যেন অনিশ্চয়তার ঘেরাটোপে বন্দী। সমস্যার কোনো সমাধানই
কারো জানা নেই এবং পরিস্থিতি ব্যক্তিমানুষের নিয়ন্ত্রণের সম্পূর্ণ বাইরে। অপরদিকে
বাংলাদেশের মতো দেশগুলোতে যেখানে গণতন্ত্র, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার সংস্কৃতি গড়ে
ওঠেনি সেখানে মানুষ কেন পর্যাপ্ত নাগরিক সুবিধা পাচ্ছে না, কেন ভাইরাস আক্রান্ত
হলে অনেক হাসপাতালে জায়গা হচ্ছে না, কেন টেস্টের জন্য ঘুরতে ঘুরতে নিজের শরীরকে
আরো অরক্ষিত করতে হচ্ছে,
কেন বাজারে প্রয়োজনীয় ঔষধ, মাস্ক ইত্যাদির সরবরাহ থাকে না, কেন নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের পর্যাপ্ত সরবরাহ থাকা সত্ত্বেও আপনি তা
ন্যায্যমূল্যে কিনতে পারেন,
কেন ও কার স্বার্থে বাসভাড়া ৬০ শতাংশ বৃদ্ধি হয়, কেন পুলিশি
নির্যাতনে মানুষ নির্মমভাবে মৃত্যুবরণ করে - এসব প্রশ্ন করার জন্য মানুষ রাজনৈতিকভাবে
সংগঠিত হতে পারে না। কারণ একত্রিত হবার জন্য যে সামাজিক পুঁজির প্রয়োজন ছিলো তা যেন বহু আগেই
নিঃশেষ হয়ে গেছে। তাই ব্যক্তিগত ‘ঝুঁকি’ এড়াতে বেশিরভাগ মানুষ রাজনৈতিক মতামত
প্রদানে বিরত থাকে।
নব্য-উদার অর্থনীতির সমর্থকদের
অনুমানও ভুল প্রমাণিত হচ্ছে এই অতিমারীতে, রাজনৈতিক সীমানা লোপ পাওয়ার পরিবর্তে বরং আরো জোরালো হচ্ছে অতিমারীর কারণে। অর্থনৈতিকভাবে
সমৃদ্ধ রাষ্ট্রসমূহ নিজেদের অর্থনীতি রক্ষা করতে এবং সংকট সামাল দিতে না পেরে
অন্যের ঘাড়ে দোষ চাপাতেই ব্যস্ত; অর্থনৈতিকভাবে বিপর্যস্ত রাষ্ট্রসমূহের জন্য
বিন্দুমাত্র ভাবার সময় তাদের নেই এই মুহুর্তে। বৈশ্বিক কল্যাণের কথা না ভেবে
রাষ্ট্রসমূহ যেমন আলাদা হয়ে লড়ছে, তেমনি ব্যক্তিমানুষও একা লড়ছে অতিমারীর
বিরুদ্ধে। এই অতিমারী মানুষকে আগের চেয়ে আরো বেশি একা করে দিয়েছে। রাষ্ট্র বা সমাজ
কোনো দায়িত্ব নিচ্ছে না নাগরিকের; সম্পর্কের ঘাটতির কারণে প্রতিবেশীও উঁকি দিয়ে
দেখছেন না কেমন আছেন আপনি! উল্টো কিছু ক্ষেত্রে ভাইরাস দ্বারা আক্রান্ত হলে অনেককে
ঘরছাড়াও হতে হচ্ছে। রাষ্ট্রও দায়িত্ব নিতে না পেরে
‘হার্ড ইম্যুনিটি’ তত্ত্ব দাঁড় করিয়ে দিচ্ছে,
ফলে কার্যত একাই লড়তে হচ্ছে প্রত্যেককে। সবকিছু মিলে এক অনিশ্চিত ও অনিরাপদ জীবনের দিকে আরো দ্রুত
এগিয়ে যাচ্ছে সবাই, এমন এক সমাজ তৈরি হচ্ছে যেখানে ভবিষ্যতে মানুষ এক অপরকে আরো
বেশি অবিশ্বাস করবে, অনিশ্চয়তার কারণে নানাবিধ মানসিক সমস্যায় ভুগবে এবং সেটি সমাজে
এক ধরনের অস্থিতিশীল পরিবেশও সৃষ্টি করতে পারে!
রাষ্ট্রের নাগরিকগণ কতোখানি
অনিরাপদ ও অনিশ্চিত জীবনযাপন করছেন তা বারবার প্রমাণ হচ্ছে এই অতিমারীতে। মানুষের
মধ্যে আস্থা ও অনিশ্চয়তা দূর করতে মৌলিক চাহিদা পূরণের দিকে দৃষ্টি দিতে হবে – কভিড-১৯
যেন বারবার সেটি আমাদের চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিচ্ছে। রাষ্ট্রের তাই এই মুহুর্তে
প্রয়োজন নাগরিকদের অনিশ্চয়তা ও নিরাপত্তাহীনতা দূর হয় এমন কর্মসূচির দিকে মনোযোগী
হওয়া। উন্নত রাষ্ট্রের
চাপিয়ে দেওয়া উন্নয়নের মডেল অনুসরণ না করে স্থানীয় পর্যায়ে উন্নয়নের দর্শন তৈরি
করা যেখানে রাষ্ট্রের অর্থনৈতিক উন্নয়নের পাশাপাশি সমাজের মানুষের মধ্যে পারস্পরিক
সম্পর্ক আরো শক্তিশালী হবে, আস্থা বৃদ্ধি পাবে এবং সহযোগিতার নানা ক্ষেত্র তৈরি
হবে।
লেখক: শিক্ষক, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগ, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, গোপালগঞ্জ