শহরজুড়ে আসি আসি করছে শীত। দেশের উত্তরাঞ্চলে এরই মধ্যে বইতে শুরু করেছে শীতের হাওয়া। রুক্ষ, শুষ্ক এই আবহাওয়াও ঘর রঙিন ও প্রাণবন্ত রাখতে চাইলে ঘরের বারান্দায়ই কিন্তু করতে পারেন শীতকালীন ফুলের চাষ। তবে শীতকালে যেহেতু বাতাসের আদ্রতা বেশি থাকে, গাছের নিতে হবে আলাদা যত্ন।
শীতকালে চাষ করতে পারেন যেসব ফুল
শীতকালে টবে গাঁদা, গোলাপ, ন্যাস্টারশিয়াম, প্যানজি, পিটুনিয়া, ভারবেনা, ক্যামেলিয়া, ডালিয়া, চন্দ্রমল্লিকা, কারনেশন, স্যালভিয়া, গোলাপ, জারবেরা, এজালিয়া প্রভৃতি লাগাতে পারেন।
অর্কিড
অর্কিড ফুলপ্রেমী মানুষের কাছে বিশেষ আকর্ষণের। এবং শীতকালে রংবেরঙের অর্কিড আপনার বাগানকে উজ্জ্বল করে রাখতে পারে। শুধু দরকার অল্প একটু দেখাশোনার। শীতের মাসগুলোতে বেশির ভাগ অর্কিডই তাদের বৃদ্ধিকে শ্লথ করে দেয়, এমনকি সুপ্ত অবস্থায়ও চলে যায়। তাই প্রতি সপ্তাহে পানি দেওয়ার পরিবর্তে শীতকালে প্রতি ১০ দিন অন্তর অর্কিডগুলোকে পানি দেওয়াই ভালো।
পিটুনিয়া
শীতের দেশের ফুল হলেও পিটুনিয়া এখন উপযুক্ত তদারকিতে এ দেশের আবহাওয়াতেও ফুটিয়ে তোলা সম্ভব। নানা রঙের এক ঝাঁক পেটুনিয়া শুধু যে আপনার বারান্দা বা ছাদের ধারকে আকর্ষণীয় করে তুলবে, তা ই নয়, মন ভালো রাখতেও এই ফুলের জুড়ি মেলা ভার।
গাঁদাফুল
এই গাঁদাফুল বাগানে রাখা কিন্তু মোটেই সহজ নয়। তবে শহরে যারা ফুলের সঙ্গে বেশ কিছুক্ষণ সময় কাটান এবং ফুলগাছের যত্ন করতে পারেন, নিজের ছাদবাগানে বা বারান্দায় তারা লাগিয়ে ফেলতেই পারেন হলুদ, কমলা, সাদা বিভিন্ন রঙের গাঁদা ফুল।
আরও যত ফুল
চন্দ্রমল্লিকা, ডালিয়া, অ্যাস্টার, ডেইজি, কসমস, সিলভিয়া, অ্যান্টিরিনাম, ন্যাস্টারশিয়াম, প্যানজি, ডায়ান্থাস, ফ্লক্স, ভারবেরা, কারনেশান, পপি, সূর্যমুখী, পর্টুলেকা, ক্যালেন্ডুলা, হলিহক, সুইট পি, অ্যাজালিয়া, জারবেরা, গ্ল্যাডিওলাস এমনকি গোলাপকেও শীতের ফুলের সঙ্গী করতে পারেন।
টবে গাছ লাগাবেন যেভাবে
১) প্রথমে গাছের সঙ্গে মানানসই সাইজের টব সংগ্রহ করতে হবে। তবে ছোট গাছের জন্য বড় টব হলে ক্ষতি নেই, কিন্তু বড় গাছের জন্য ছোট টব কিন্তু চলবে না।
২) প্রতি টবের জন্য দো-আঁশ মাটির সঙ্গে তিন ভাগের এক ভাগ পরিমাণ জৈব সার বা পচা গোবর মিশিয়ে মাটি তৈরি করতে হবে। এর সঙ্গে একমুঠো হাড়ের গুঁড়ো, দুই চা-চামচ চুন, দু মুঠো ছাই মেশাতে পারলে ভালো হয়। এতে টবের মাটি দীর্ঘদিন উর্বর থাকবে।
৩) মৌসুমি ফুলের ক্ষেত্রে মাসখানেক বয়সের ফুলের চারা টবে রোপণ করা উচিত। অন্য চারার বেলায় অল্পবয়সী ও তরতাজা দেখে চারা বা কলম লাগানো ভালো।
৪) চারা লাগানোর পর আস্তে আস্তে চাপ দিয়ে গোড়ার মাটি শক্ত করে দিতে হবে। লাগানোর পর গোড়ায় পানি দিতে হবে।
৫) গাছকে খাড়া রাখার জন্য অবলম্বনের প্রয়োজন হয়। গাছের চারা অবস্থা থেকেই এ ব্যবস্থা করতে হয়। এ কাজে বাঁশের কঞ্চি বা স্টিক ব্যবহার করা যেতে পারে।
৬) টবে গাছের গোড়ার মাটি একেবারে গুঁড়ো না করে চাকা চাকা করে খুঁচে দেওয়া ভালো। এক্ষেত্রে মাটি খোঁচানোর গভীরতা হবে ৩-১০ সেন্টিমিটার বা ১ থেকে ৪ ইঞ্চি। এ কাজটি প্রতি ১০ দিনে একবার করে করতে হবে।
কতটুকু সার প্রয়োজন
কুঁড়ি আসা শুরু করলে ৫০ গ্রাম টিএসপি, ১০০ গ্রাম ইউরিয়া ও ২৫ গ্রাম এমওপি মিশিয়ে প্রতি গাছে এক চা-চামচ করে ১০ দিন অন্তর দিতে হবে। এক মৌসুমে এ রাসায়নিক সার ৩ বারের বেশি দেয়ার দরকার নেই। সার যেন কোনোভাবেই শেকড়ের ওপর না পড়ে।