সরকারিভাবে বলা হয়, পর্যটনের অপার সম্ভাবনাময় জেলা বান্দরবান। অপার সম্ভাবনাময় এ জেলায় রয়েছে একের পর এক চমকজাগানো হূদয়স্পর্শী অকৃত্রিম প্রাকৃতিক সৌন্দর্য। পাহাড়ের আনাচে-কানাচে লুকিয়ে রয়েছে কত ইতিহাস ও ঐতিহ্য। এছাড়া শুধু বান্দরবানেই রয়েছে ১১টি পাহাড়ি জনগোষ্ঠীর স্বাতন্ত্রিক জীবন ধারা, প্রথা, কৃষ্টি ও বৈচিত্র্যপূর্ণ সংস্কৃতির সহাবস্থান। এ বহুমাত্রিক আকর্ষণ প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি এ জেলার পর্যটনের অপার সম্ভাবনাকে করেছে সমৃদ্ধ। এসব কিহুকে কেন্দ্র করেই বান্দরবানে গড়ে উঠেছে পর্যটন শিল্প। প্রতি বছর এ জেলার বিভিন্ন পর্যটন স্পট দর্শন করতে ও বেড়াতে আসেন কয়েক লাখ পর্যটক।
সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগে পর্যটক ও ভ্রমণপিপসুসহ নাগরিকের সুবিধা নিশ্চিত করে স্থাপনা নির্মিত হয়েছে। একই সঙ্গে শিশুদের বিনোদনের জন্য নির্মাণ করা হয়েছে নানা দৃষ্টিনন্দন স্থাপনা। একইভাবে গড়ে উঠেছে আধুনিক হোটেল, মোটেল, পাহাড়ি শিল্পের দোকান, রেস্টুরেন্ট প্রভৃতি। উন্নত হয়েছে সড়ক ও যানবাহন ব্যবস্থাপনাসহ সাঙ্গু নদে নৌ-ভ্রমণের ব্যবস্থা। রয়েছে কমিউনিটি বেইজ ট্যুরিজম বা সম্প্রদায়ভিত্তিক পর্যটন। যেখানে স্থানীয় জনগণের সঙ্গে অবস্থান করে সেখানকার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ ও বৈচিত্র্যময় জীবনযাপন দর্শনসহ পাহাড়ে ট্রেকিং হাইকিং করার অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করা। এসব উপভোগ করতে ভ্রমণে না গিয়ে কেবল অনুভবে কখনো পূরণ হওয়ার নয়।
ভ্রমণে মিলবে দৃষ্টিনন্দন পাহাড়, পাহাড়ি সবুজের কোলঘেঁষে চলা আঁকাবাঁকা-উঁচু-নিচু পথ, পথ চলতে চলতে মেঘ ছুঁতে পারার অমলিন স্মৃতি, পাহাড়ের ভাঁজে ভাঁজে মনোমুগ্ধকর দৃশ্য, অরণ্যঘেরা জলপ্রপাত, ঘন সবুজ বন, বুনো পরিবেশে বুক ভরে নির্মল বাতাস নেয়ার সুখানুভূতি। পাহাড় থেকে পাহাড়ে হেঁটে পাহাড়ি পাড়া থেকে পাড়ায় বেড়ানোর দুঃসাহসিক অভিযানে বন্যপ্রাণী ও উদ্ভিদসম্ভার দেখা যায়।
দেশের অর্থনীতিতে নানাভাবে অবদানের ক্ষেত্রে পর্যটন শিল্প একটি গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম। এ প্রেক্ষাপটে উপযুক্ত পদক্ষেপ নিতে সরকার বান্দরবানে সড়ক, অবকাঠামোসহ নানামুখী উন্নয়ন করে চলেছে, যা এ জেলার পর্যটন শিল্প বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে। বান্দরবানে দর্শনীয় ও আকর্ষণীয় স্থানগুলোর মধ্যে রয়েছে হলুদিয়ার প্রান্তিক লেক, বান্দরবান প্রবেশের পূর্বে মেঘলা, নীলাচল পর্যটন স্পট রয়েছে। জেলা শহরের স্বর্ণ মন্দির, বৌদ্ধ জাদি মন্দির, বান্দরবান-থানচি সড়কের শৈল প্রপাত, চিম্বুক, নীলগিরিসহ একাধিক ভিউ পয়েন্ট। রোয়াংছড়ির দেবতা কুম, শীল বান্ধা ও রুমা উপজেলার রিঝুক ঝরনা, বগালেক, কেওক্রাডং, তাজিংডং, জাদিপাই ঝরনা, ফাইপি ঝরনা, তিনাপ সাইতার ঝরনা, ডাবল ঝরনা প্রভৃতি। থানচি উপজেলার নীল দিগন্ত, নাফা খুম, বড় পাথর, রেমাক্রি, তিন্দু, অমিয়া খুম প্রভৃতি। লামা উপজেলার মিরিঞ্জা, এছাড়া মাতামুহুরী নদীতে নৌ-ভ্রমণের ব্যবস্থা। আলীকদমে রয়েছে আলীর সুড়ঙ্গ, উপবন লেক, দামতুয়া ঝরনা প্রভৃতি। থানচি-আলীকদম সড়কের মাঝামাঝি রয়েছে সুউচ্চ ডিম পাহাড়।
বান্দরবানে পর্যটন শিল্পের বিকাশের সঙ্গে সঙ্গে বাণিজ্যিক কর্মকাণ্ড সম্প্রসারণ ও মানবসম্পদ উন্নয়নও পরিলক্ষিত হচ্ছে। তবে বৈচিত্র্যময় অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড সৃষ্টিতে কুটির শিল্প ও মাঝারি শিল্পের উল্লেখযোগ্য প্রতিষ্ঠান এখনো তেমন গড়ে ওঠেনি। পর্যটকের কাছে বিশেষ আকর্ষণ ও চাহিদার মধ্যে আদিবাসীদের নিজস্ব রীতির হস্তশিল্পে তৈরি রকমারি পোশাক উল্লেখযোগ্য।
করোনা মহামারীতে গত দুই বছর বান্দরবানের পর্যটন স্পটগুলো বন্ধ রাখে সরকার। তবে এর আগে প্রতি বছর এ জেলার বিভিন্ন পর্যটন স্পট দর্শন করতে ও বেড়াতে আসেন কয়েক লাখ পর্যটক। বান্দরবানে পর্যটন স্পটগুলোর মধ্যে বাংলার দার্জিলিংখ্যাত নীলাচল, পাহাড়ের রানী চিম্বুক, মেঘলা, প্রান্তিক লেক, মিরিঞ্জা জেলা প্রশাসন কর্তৃক পরিচালিত হচ্ছে। মূলত জেলা প্রশাসনের হাত ধরে বান্দরবানে পর্যটন শিল্পের সূচনা ঘটে। এর মধ্যে মেঘলা পর্যটন কমপ্লেক্স বান্দরবানের প্রথম পর্যটন স্পট। জেলার বিভিন্ন পর্যটন স্পটকে ঘিরে গড়ে ওঠে হোটেল, মোটেল, রেস্টুরেন্ট, দোকান, যানবাহনসহ নৌ-ভ্রমণ ব্যবস্থাপনা গোড়াপত্তন হয়। এতে করে বাণিজ্যিক এসব ব্যবস্থাপনায় কর্মসংস্থান হয়েছে শত শত মানুষের। জেলা প্রশাসনের নেজারত ডেপুটি কালেক্টর (এনডিসি) শেখ আব্দুল্লাহ আল মামুন। তিনি বণিক বার্তাকে বলেন, করোনকালীন দুই বছর জেলার সব পর্যটন স্পট বন্ধ ছিল। করোনা-পরবর্তী বর্তমানে পরিস্থিতি আগের মতো স্বাভাবিক হয়েছে। করোনা মহামারীর আগে প্রতি বছর বান্দরবানে কয়েক লাখ পর্যটক আসতেন। আসছে শীত মৌসুমে পর্যটক বৃদ্ধি পাবে বলে আশা করছি।