১৯৮৬ সালে রাঙ্গামাটি জেলা শহরের তবলছড়িতে দুই পাহাড়ের মাঝখানে ৩৩৫ ফুট দীর্ঘ একটি ঝুলন্ত সেতু নির্মাণ করা হয়। বাংলাদেশ পর্যটন করপোরেশনের নির্মিত ঝুলন্ত সেতুটি ‘সিম্বল অব রাঙ্গামাটি’ হিসেবে দেশে-বিদেশে পরিচিতি পেয়েছে। তবে কাপ্তাই হ্রদ ব্যবস্থাপনার বিধিনিষেধ উপেক্ষা করে ‘অপরিকল্পিতভাবে’ নির্মাণের ফলে প্রায় প্রতি বছরই ডুবছে ‘সিম্বল অব রাঙ্গামাটি’খ্যাত ঝুলন্ত সেতুটি। একে তো বছরের একটা সময়ে ডুবে থাকে, অন্যদিকে পুরনো জরাজীর্ণ লোহা ও কাঠের পাটাতনের সেতুটি দিনে দিনে সৌন্দর্য হারাচ্ছে। যে কারণে ‘সিম্বল অব রাঙ্গামাটি’ দেখতে পাহাড়ে আসা অনেক পর্যটকই হতাশ হয়েছেন। পর্যটন করপোরেশনের এ এক সেতু ছাড়া রাঙ্গামাটিতে উল্লেখজনকভাবে পর্যটন শিল্পের তেমন প্রসার ঘটেনি। তবে বিগত কয়েক বছর ধরে রাঙ্গামাটির পর্যটন বিকাশে মেগা প্রকল্প আসছে এমন আশার বাণী শোনা গেলেও সেটি এখনো আলোর মুখ দেখেনি।
সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গিয়েছে, কাপ্তাই হ্রদে উচ্চতায় ১২০ মিনস সি লেভেল (এমএসএল) পানি ধারণ সক্ষমতা রয়েছে। কাপ্তাই হ্রদ ব্যবস্থাপনা ও পরিচালনা কমিটির সিদ্ধান্ত মোতাবেক হ্রদে ১২০ ফুটের নিচে সরকারি-বেসরকারি যেকোনো স্থাপনা নির্মাণে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। অপরিকল্পিতভাবে পর্যটন করপোরেশনের ঝুলন্ত সেতুটি নির্মাণের ফলে কাপ্তাই হ্রদে ১০৩-৪ এমএসএল পানি হলেই সেতুর পাটাতন পানিতে তলিয়ে যায়। তবে সেতু যে স্ট্রাকচারে নির্মাণ করা হয়েছে, এতে নতুন সেতু নির্মাণ ছাড়া এটি সংস্কার করে ওপরে তোলার কোনো সুযোগ নেই বলে মনে করেন প্রকৌশলীরা।
বিষয়টি প্রসঙ্গে জানতে চাইলে রাঙ্গামাটি পর্যটন হলিডে কমপ্লেক্সের ব্যবস্থাপক সৃজন বিকাশ বড়ুয়া বণিক বার্তাকে জানান, অনেকটা অপরিকল্পিতভাবে নির্মাণের ফলে পর্যটন ঝুলন্ত সেতুটি প্রায় বছরই বর্ষা মৌসুমে দু-একবার পানিতে তলিয়ে যায়। আমি রাঙ্গামাটিতে যোগদান করার পর কয়েকবার পর্যটন করপোরেশনে চিঠি লিখেছি। তবে প্রকৌশলীরা জানান, সেতুটি এখন আর ওপরে তোলার সুযোগ নেই।
পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি মোতাবেক পাহাড়ের পর্যটন শিল্প পার্বত্য জেলা পরিষদে হস্তান্তরিত বিভাগ। তবে রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদের বিগত বছরগুলোর বার্ষিক বাজেটে পর্যটন খাতে ১ শতাংশ বরাদ্দ রাখা হলেও সেটি ব্যয় হয় না। সবশেষ ২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেটেও পর্যটন খাতে ১ শতাংশ হিসাবে ৬৮ লাখ টাকা বরাদ্দ রেখেছে জেলা পরিষদ। কিন্তু ২০২১-২২ অর্থবছরে পর্যটন খাতে কোনো ব্যয় করেনি জেলা পরিষদ।
রাঙ্গামাটির পর্যটন উদ্যোক্তা ও রাইন্যা টুগুন ইকো রিসোর্টের স্বত্বাধিকারী ললিত সি. চাকমা বলেন, রাঙ্গামাটির পর্যটনে সরকারের পৃষ্ঠপোষকতার প্রয়োজন অনেক বেশি।
রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদ সূত্রে জানা গিয়েছে, রাঙ্গামাটি জেলায় পর্যটন শিল্পের উন্নয়নের লক্ষ্যে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে ১২০০ কোটি টাকার একটি বৃহৎ উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব (ডিপিপি) করেছে জেলা পরিষদ। প্রকল্পটি পাস হলে রাঙ্গামাটির পর্যটনে একটি গুণগত পরিবর্তন আসবে বলে মনে করছে প্রতিষ্ঠানটি। এরই মধ্যে উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাবের জন্য মাঠ জরিপ ও কনসালট্যান্ট খরচে ৫০ লাখ টাকা ব্যয় করেছে জেলা পরিষদ। এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান অংসুইপ্রু চৌধুরী বলেন, খাগড়াছড়ি-বান্দরবানের তুলনায় রাঙ্গামাটির পর্যটন শিল্প আশানুরূপভাবে এগোয়নি। আমরা এরই মধ্যে রাঙ্গামাটির পর্যটনে কাজ করার লক্ষ্যে ১২০০ কোটি টাকার ডিপিপি পাঠিয়েছে। এটি পাস হলে রাঙ্গামাটির পর্যটন আরো সমৃদ্ধ হবে।