প্রকৃতির মাঝে ঘুরে বেড়ানোর শখ সেই ছোটকাল থেকে।
বাসায় তখন যে পত্রিকা রাখা হতো, সেটাতে প্রতি সপ্তাহে ভ্রমণবিষয়ক একটা পাতা থাকত।
আমি পেপার কাটিং করে সেগুলো সংগ্রহ করে রাখতাম আর ভাবতাম বড় হয়ে আমিও এসব জায়গায় ঘুরতে যাব।
বড়
হলাম, কিন্তু মা-বাবা একা কোথাও যেতে দিতেন না।
সেই কমন ডায়ালগ—‘বিয়ের পর জামাইয়ের সঙ্গে যাইস।’
আল্লাহ হয়তো আমার এ হা-হুতাশ দেখেই এমন একজন জীবনসঙ্গী পাঠালেন, যে কিনা আমার মতোই ভ্রমণ পাগল।
আলহামদুলিল্লাহ ও আমার জীবনে আসার পর অনেক জায়গা দেখার সৌভাগ্য হয়েছে।
প্রকৃতির সৌন্দর্য মন ভরে উপভোগ করতে পেরেছি।
বিভিন্ন এলাকার মানুষের খাবার, কথাবার্তা, সংস্কৃতি সম্পর্কে জানতে পেরেছি, যেটা নিজে কাছ থেকে না দেখলে কখনই অনুধাবন করা যাবে না।
বিয়ের পর ভারতের মেঘালয় ছিল আমাদের প্রথম ট্যুর, তাই অনুভূতিটাও ছিল অন্যরকম।
বর্ডারে ইমিগ্রেশনের কাজ শেষ করে ভারতে প্রবেশের পর আমরা একটা মিনিবাস রিজার্ভ করে নিই।
প্রথম দিন দেখি সোনেংপেডেং, বরহিল ফলস, এশিয়ার পরিচ্ছন্ন গ্রাম মাওলিনং, লিভিং রুট ব্রিজসহ আরো কিছু জায়গা।
তখনি প্রথমবার ঝরনা দেখার অভিজ্ঞতা হয়েছিল, সেই প্রথম দেখাতেই আমি ঝরনার প্রেমে পড়ে যাই।
সেদিন জায়গাগুলোয় ঘুরে আমরা রাতে শিলং শহরে আসি।
ভ্রমণের দ্বিতীয় দিন আমরা নিজেদের মতো শিলং শহরটা ঘুরে দেখি।
কেনাকাটা করার জন্য জায়গাটা তেমন সুবিধার না, এর পরও টুকটাক কিছু কেনাকাটা করে নিই।
শিলং শহরের সবকিছুই ভালো লেগেছে, শুধু খাবার ছাড়া।
কারণ হালাল খাবার এতটা সহজলভ্য না।
আমরা তিনদিন ভাত, সবজি আর ফলমূল খেয়েই ছিলাম।
পরদিন যাই চেরাপুঞ্জি।
পৃথিবীর সর্বাধিক বৃষ্টিবহুল এলাকা।
মেঘালয় ভ্রমণের এটাই ছিল বেস্ট পার্ট।
সারা দিন আমাদের চারপাশে ছিল মেঘের আনাগোনা।
মেঘ কখনো আমাদের একটু উপরে, কখনো আমাদের নিচে, কখনো আমাদের গাড়ির ভেতর ঢুকে বসে আছে আবার কখনোবা আমরাই মেঘের ভেতর ডুবে গিয়েছি।
দূর আকাশের তুলার মতো মেঘ ছুঁয়ে দেয়ার যে প্রবল ইচ্ছা, সেটা পূরণ হওয়ার অনুভূতি লিখে প্রকাশ করার মতো নয়।
শীতল মেঘের স্পর্শের কথা চিন্তা করলে এখনো হূদয় শান্ত হয়ে যায়।
চেরাপুঞ্জির মূল আকর্ষণ হলো সেভেন সিস্টারস ফলস আর নোহকালিকায় ফলস।
কিন্তু আফসোস মেঘের কারণে এ দুটি বিখ্যাত ঝরনার একটাও দেখা হয়নি।
মেঘেরা ঝরনাগুলো ঢেকে রেখে তাদের চেহারা দেখানোতেই ব্যস্ত ছিল।
তিনদিনের ভ্রমণ শেষে আসার পথে মেঘগুলো যেন বিদায় দিয়ে বলছিল আবার এসো আমাদের ঘরে।
আমিও হেসে বলে এসেছি,
তোমাদের আদর ছুঁয়ে নিতে আবার আসব।
জীবনটাকে উপভোগ করার জন্য কিছুটা সময় সবারই দেয়া উচিত।
ব্যস্ততা তো থাকবেই, ব্যস্ততা জীবনেরই অংশ।
তাই বলে কি ব্যস্ততা নিয়েই জীবন কাটাতে হবে? কখনই না।
মেয়েদের জন্য ভ্রমণ করার সুযোগ সহজে আসে না।
পড়ালেখা, চাকরি, সংসার, বাধা-নিষেধ... একটা না
একটা ঝামেলা থাকেই।
এর
মাঝেই সময় বের করে নিতে হবে।
শুধু নিজের জন্য।
ভ্রমণ করে আপনি যে প্রশান্তিটা পাবেন, যে স্মৃতিগুলো মনে ধারণ করবেন, সেটা অন্য কিছুর সঙ্গে তুলনা হয় না, কখনই না।