পতেঙ্গা সৈকত ভ্রমণের টুকিটাকি

বেশ কয়েকটি সমুদ্র সৈকতের মধ্যে চট্টগ্রামের পতেঙ্গা সৈকত বেশ জনপ্রিয়। তাই বছরের যেকোনো সময় জনসমাগম বা ভিড়ও খানিকটা বেশিই থাকে। চলুন জেনে নেওয়া যাক এই সৈকত ভ্রমণের টুকিটাকি।

চট্টগ্রাম শহর থেকে প্রায় ১৪ কিলোমিটার দক্ষিণে অবস্থিত সৈকতটি এই জেলার মানুষের কাছে ঘোরাঘুরির জন্য অন্যতম স্থান দখল করে আছে। শুধু কি চট্টগ্রামেরই মানুষ! সেই সঙ্গে বাইরের বিভিন্ন জেলা থেকেও পর্যটক ঘুরতে আসছেন এখানে। কাছেই আবার শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর হওয়ায় জেলার বাইরের পর্যটকেরা খুব সহজেই এক দিনের ট্যুরে সমুদ্রের পাড়ে বেরিয়ে যান। থাকে কমবেশি বিদেশিদের আনাগোনাও।

যেভাবে আসবেন

আপনি যদি চট্টগ্রাম শহরের বাসিন্দা হন তবে শহরের যেকোনো প্রান্ত থেকেই খুব সহজেই লোকাল বাস, অটো, টেম্পু কিংবা ব্যক্তিগত গাড়িতে আসতে পারেন।

আর যদি ঢাকা থেকে আসতে চান তবে আপনি বাস, ট্রেন কিংবা বিমান এই তিন যানেই আসতে পারবেন। বাসের জন্য সায়েদাবাদ বাস টার্মিনাল থেকে আপনি জনপ্রতি ৬০০ টাকা থেকে ২৫০০ টাকা পর্যন্ত সিট ভাড়ায় এসি, নন এসি বাস পেয়ে যাবেন। কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন থেকে সহজেই ট্রেনের টিকেট পাবেন। তবে বাস ও রেলের ক্ষেত্রে রাতের ভ্রমণই বেশি সুবিধাজনক। এ ক্ষেত্রে দিনের ভেতর সম্পূর্ণ জায়গাটি ঘুরে দেখা সম্ভব। আবার আকাশপথে খুব সহজেই ৪০ থেকে ৫০ মিনিটের মধ্যে আপনি ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম পৌঁছাতে পারেন। নভোএয়ার, ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্স, বাংলাদেশ বিমানসহ আরও বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠান ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম সরাসরি ফ্লাইট পরিচালনা করে।

কোথায় খাবেন, কী খাবেন

পতেঙ্গা সৈকতেই অসংখ্য ভ্রাম্যমাণ স্থানীয় খাবার দোকান বা হোটেল রয়েছে। খাবারের দোকানগুলোকে রেস্টুরেন্ট না বলে হোটেল বললেই যেন বেশি মানানসই শোনায়। যা-ই হোক, এ হোটেলগুলো থেকে আপনি ভাত, তরকারি, ডাল থেকে শুরু করে বিরিয়ানি পর্যন্ত মোটামুটি সব রকমের খাবারই কম বেশি পেয়ে যাবেন।। তবে খাবারের মান ও পরিবেশ নিয়ে পর্যটকদের মনে প্রশ্ন থেকেই যায়। সেই সাথে খাবারের আকাশচুম্বী দাম তো রয়েছেই। কিন্তু, তারপরও ঘোরার জন্য এ জায়গার সুপারিশ তো করাই যায়। কেননা, বিশাল এই সমুদ্রের পাড়ে আপনি যখন সূর্যোদয় ও সূর্যাস্ত দেখবেন, তখন এর সৌন্দর্যের কাছে এসব ছোটখাটো বিষয় তেমন গুরুত্ব নাও রাখতে পারে।

সৈকতের পাশেই আপনি ভাত-মাছ ছাড়াও পাবেন বিভিন্ন রকমের স্ট্রিড ফুড। এসবের মধ্যে জনপ্রিয় কয়েকটি খাবার হচ্ছে কাঁকড়া ভাজা, চিংড়ি ভাজা, হরেক রকমের বার্মিস আচার, চটপটি, ফুচকা, বাদাম, আইসক্রিমসহ ঠাণ্ডা পানীয়।

তবে এসবের বাইরে আপনি যদি ভালো মানের কোনো রেস্টুরেন্টে খেতে চান, তবে অবশ্যই ঢুঁ মারতে পারেন কাছেই বারকোড, ফ্লাই ভিউ, রিভার ভিউর মতো রেস্টুরেন্টগুলোতে।

কেনাকাটার জন্য যা থাকছে

ঘোরাঘুরির সময় আশপাশেই পর্যটকদের জন্য রয়েছে নানা রকমের দোকানপাট। এগুলোকে একসাথে বার্মিজ মার্কেট বলা হয়। এখানে আপনি জামাকাপড়, জুতা থেকে শুরু করে নিত্যপ্রয়োজনীয় বিভিন্ন রকমের প্রসাধনসামগ্রী পেয়ে যাবেন। তবে পর্যটকেরা মূলত এখান থেকে বার্মিজ আচার, চকলেট, কফি ও বার্মিজ প্রসাধনসামগ্রী বেশি কিনে থাকেন। এ ছাড়া কিছু কিছু নির্দিষ্ট দোকানে আপনি টুকটাক বার্মিজ ধাঁচের পোশাকও পেয়ে যাবেন।

উপভোগের জন্য যা থাকছে

পতেঙ্গা সৈকতে আসতেই সবার আগে যে জিনিসটি আপনার নজর কাড়বে তা হচ্ছে আকাশে উড়ন্ত রং-বেরঙের ঘুড়ি। মাছ, পুতুল, পাখি, প্রজাপতিসহ নানা রকমের বিশাল বিশাল ঘুড়ি আকাশে উড়তে দেখে আপনি মুগ্ধ হবেন। এ ছাড়া থাকছে সাগরে ভাসমান ছোট বড় নানা রকম জাহাজ। পর্যটকদের বিনোদনের জন্য রয়েছে স্পিডবোটসহ বিভিন্ন রকম নৌকার সুব্যবস্থা। পর্যটকেরা এসবে চড়ে সমুদ্রে ঘুরে বেড়াতে পারেন একটি নির্দিষ্ট সময়ের জন্য। আর সমুদ্রতীরে ঘোরার জন্য রয়েছে ঘোড়া ও ইজিবাইক। এ ছাড়া আপনি ছবি তোলার জন্যও এখানে অসংখ্য ডিজিটাল ক্যামেরা বা ডিএসএলআরধারী ফটোগ্রাফার পাবেন। যারা খুব অল্প সময়ের মধ্যেই আপনাকে ছবি প্রিন্ট করে দিয়ে দেবে। তবে অবশ্যই ছবি তোলার আগে ছবি প্রতির মূল্য জেনে নিয়ে এরপর তুলবেন।

যেখানে থাকবেন

পতেঙ্গার আশপাশে থাকার জন্য তেমন সুব্যবস্থা বলতে গেলে নেই। তবে মোটামুটির মধ্যে সৈকতের কাছাকাছি অবস্থিত বাটারফ্লাই পার্ক হোটেলে থাকতে পারেন। এ ছাড়া থাকার জন্য শহরের বিভিন্ন জায়গায় বাজেটমতো পর্যাপ্ত হোটেল পাওয়া যায়। আগ্রাবাদের হোটেল ল্যান্ডমার্ক, জিইসি মোড়ে হোটেল সি এ্যান্ড বি, লালখানবাজারে হোটেল রেডিসন ব্লুতে রাত্রি যাপনের জন্য প্যাকেজসহ বিভিন্ন সুব্যবস্থা রয়েছে।

সতর্কতা

চট্টগ্রামের পতেঙ্গা সৈকত আমাদের দেশের অন্যতম প্রাকৃতিক সম্পদ। পর্যটন হিসেবেও এর গুরুত্ব অনেক বেশি। তাই ভ্রমণের সময় আমরা ব্যক্তিগত যেকোনো বর্জ্য যেমন প্লাস্টিক, পলিথিন প্রভৃতি ফেলার ক্ষেত্রে অবশ্যই বিশেষ সতর্কতা অবলম্বন করব।

আরও