উঁচু পর্বতে ট্রেকিংয়ের স্বপ্ন বেশ আগে থেকেই ছিল। কিন্তু সময় অর্থ আর ভারতীয় ভিসা সব একসঙ্গে মেলানো আগে বেশ দুঃসাধ্য ব্যাপার হওয়ায় স্বপ্নটা পূরণ হতে সময় নিচ্ছিল। মনে মনে প্রতিজ্ঞা করলাম, পর্বতে আমি যাচ্ছি। গন্তব্য ঠিক করলাম ‘রুপিন পাস’। এটা ভারতের হিমাচল প্রদেশে অবস্থিত। ‘পাস’ বলতে মূলত প্রাচীন ব্যবসার রুট বুঝানো হয়, যেখান দিয়ে এক অঞ্চলের মানুষ বহু দূরের অন্য কোনো অঞ্চলের মানুষের সঙ্গে ব্যবসার জন্য যাওয়া-আসা করে। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে অনেক উচ্চতায় (৫ থেকে ১১ হাজার ৫০০ ফুট উচ্চতা) যারা থাকেন, তাদের কাছে এ ধরনের রাস্তা কিছুই না। কিন্তু সমতলে বসবাসকারী কারো জন্য এটা যথেষ্ট চ্যালেঞ্জিং। তার পরও এ চ্যালেঞ্জটাই এবার নিতে চাইলাম। গত সংখ্যার পর...
পঞ্চম দিনে আমরা যাত্রা করলাম রুপিন জলপ্রপাতের নিচের অংশের উদ্দেশে (১১ হাজার ৭০০ ফুট উচ্চতা)। এদিন এতটাই অসাধারণ ছিল যে প্রত্যেকটা ঘটনার বিবরণ দিতে গেলেও লেখা বেশ লম্বা হয়ে যাবে। সংক্ষেপে বললে এদিন আমরা কিছুদূর এগোনোর পরই রুপিন জলপ্রপাত যে পর্বত থেকে নেমে এসেছে তার দেখা পেলাম, কালো পর্বত সাদা বরফে ছেয়ে আছে। পাহাড় থেকে নেমে আমরা একটা বিস্তৃত তৃণভূমি পার হলাম, এরপর এক জায়গায় নদী পার হতে হলো। নদী পার হয়ে আমরা আবার হেঁটে যে জায়গায় পৌঁছলাম, সেখানে একটা বরফের সেতু পার হয়ে আমাদের আবার অনেকখানি উপরে উঠতে হবে। উপরে ওঠার পর যে দৃশ্য চোখে পড়ল, তাতেই বুঝলাম কেন রুপিন পাসে মানুষ আসতে চায়।
পঞ্চম দিনের বাকিটা সময় এবং ষষ্ঠ দিন পুরোটা সময় উচ্চতার সঙ্গে খাপ খাওয়াতে (১১ হাজার ৭০০ ফুট উচ্চতায় চলে এসেছি) আমরা কাটিয়ে দিলাম ক্যাম্পসাইটেই, কারণ পরের তিনদিন আমাদের শরীর ঠিক রাখাটা জরুরি। একই সঙ্গে তাপমাত্রা নেমে এসেছে শূন্যের নিচে। তার পরও বেশ উত্তেজিত লাগছিল, যে জায়গায় ছিলাম তার কারণে। রুপিন জলপ্রপাতের নিচের অংশে কয়েক কিলোমিটারজুড়ে বিস্তৃত তৃণভূমি, তার মাঝ দিয়ে বয়ে চলেছে রুপিন নদী। তৃণভূমির দুই পাশে খাড়া উঠে গেছে পর্বত, তাই দেখতে অনেকটা ইংরেজি ‘ইউ’ অক্ষরের মতো লাগে। ক্যাম্প থেকে ২০-২৫ মিনিট দূরত্বেই আছে রপিন জলপ্রপাত, যদিও প্রথমে মনে হয় ক্যাম্পের একেবারে সঙ্গেই বুঝি। পুরো ভ্যালিজুড়ে ছোট-বড় অসংখ্য জলধারা নেমে এসেছে পর্বতের চূড়া থেকে।
মাঝরাতে আকাশ পরিষ্কার হয়ে যাওয়ায় চাঁদের আলোয় পর্বতের চূড়াগুলো থেকে আলো প্রতিফলিত হয়ে এমন এক অবতারণা করল, যেন মনে হলো স্বর্গে চলে এসেছি। সেসঙ্গে এ রকম জায়গা থেকে মিল্কিওয়ের গ্যালাক্সি দেখতে পেলে ব্যাপারটা যে কেমন হয়, তা নিশ্চয়ই অনুমান করতে পারা যায়। সপ্তম দিন আমাদের লক্ষ্য ছিল জলপ্রপাতের উপরের অংশে পৌঁছানো, যার উচ্চতা ১৩ হাজার ৩৮৫ ফুট। প্রায় ৪ ঘণ্টা ধরে খাড়া ১ হাজার ৬০০ ফিটেরও বেশি উঠতে হবে। এদিন যতটা কষ্ট হবে ভেবেছিলাম, ততটা অবশ্য কষ্ট লাগেনি। বরং জলপ্রপাতের উপরের অংশে ওঠার পর যা দেখলাম, তা এতদিনের সবকিছুকেই