চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড রেঞ্জকে বলা হয় ঝরনা উপত্যকা। এখানে আছে ছোটবড় অসংখ্য ঝরনা ও ঝিরি। এর মধ্যে অন্যতম আকর্ষণীয় কমলদহ ঝরনা। ট্র্যাকিং সহজ হওয়ায় কমলদহ ঝরনা অ্যাডভেঞ্চারপ্রেমীদের কাছে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। কমলদহ ঝরনার পথে আরো কিছু ছোটবড় ঝরনা ও পাহাড়ের দেখা পাওয়া যায়, যা প্রকৃতিপ্রেমীদের মুগ্ধ করে।
কীভাবে যাবেন
কমলদহ ঝরনায় যাওয়ার জন্য প্রথমে চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড উপজেলার বড়দারোগাহাট বাজারে যেতে হবে। ঢাকা থেকে চট্টগ্রামগামী বাসগুলো সায়েদাবাদ, আরামবাগ কিংবা ফকিরাপুল থেকে সহজে পাওয়া যায়। সেখান থেকে সীতাকুণ্ডের বড়দারোগাহাটে নেমে ঝরনার পথে যেতে হবে। রাতের বাসে যাত্রা করলে সাড়ে চার থেকে পাঁচ ঘণ্টার মধ্যে বড়দারোগাহাটে পৌঁছানো সম্ভব। বাসের মান অনুযায়ী বাস ভাড়া ৩০০ থেকে ১০০০ টাকার মধ্যে হয়।
ট্রেনে কমলদহ ঝরনা যাত্রা
ঢাকা থেকে সরাসরি বড়দারোগাহাট যাওয়ার কোনো ট্রেন নেই। তবে ঢাকা থেকে ফেনী পর্যন্ত ট্রেনে যেতে পারেন। ফেনী স্টেশনে নেমে মহিপাল থেকে চট্টগ্রামগামী বাস ধরে বড়দারোগাহাটে পৌঁছানো যায়। ট্রেনের আসনভেদে ভাড়া পড়বে ২০০ থেকে ৬০০ টাকা।
ঝরনায় পৌঁছানোর ট্রেইল
বড়দারোগাহাট থেকে মহাসড়কের পাশে একটি ইটভাটা থেকে মাটির রাস্তা ধরে ঝিরিপথ পর্যন্ত হাঁটতে হবে। এখান থেকেই শুরু হয় কমলদহ ঝরনার মূল ট্রেইল। এটি এক ঘণ্টার কিছু বেশি হাঁটা পথ। ঝিরিপথে এগিয়ে গেলে দেখা মিলবে কমলদহ ঝরনার আরো তিনটি ধাপের। প্রথম ধাপ নিচ থেকেই দেখা যায়। তবে বাকি ধাপগুলো দেখতে হলে উপরে উঠতে হবে।
কোথায় থাকবেন
থাকার জন্য বড়দারোগাহাট বাজারে কোনো আবাসিক হোটেল নেই। তবে সীতাকুণ্ড পৌরসভায় হোটেল সৌদিয়া ও হোটেল সাইমুনসহ কয়েকটি আবাসিক হোটেল রয়েছে। এগুলোতে রুম ভাড়া পড়বে ৩০০ থেকে ১ হাজার ৬০০ টাকার মধ্যে। ভালো মানের হোটেলে থাকতে চাইলে ৫০ কিলোমিটার দূরের চট্টগ্রাম শহরে যেতে হবে। তবে চাইলে কোথাও না থেকেই একদিনের ভেতর ঘুরে আসা সম্ভব।
খাওয়া-দাওয়ার সুযোগ
বড়দারোগাহাট বাজারে কিছু খাবারের দোকান থাকলেও ঝরনার পথে আর কোনো খাবারের দোকান নেই। তাই রওনা দেয়ার আগে খাবার সাথে নিয়ে নেয়া ভালো। তবে মাটির পথ শুরুর জায়গায় ছোট কিছু দোকান পাওয়া যায়। ট্রেইলের শুরুতে বলে রাখলে সেখান থেকে ফেরার পথে খাবার খেতে পারবেন ভ্রমণপিপাসুরা। তবে এক্ষেত্রে গুনতে হতে পারে অতিরিক্ত খাবার মূল্য।
ভ্রমণ টিপস
- সময় নির্বাচন: বর্ষাকালই কমলদহ ঝরনায় ভ্রমণের উপযুক্ত সময়। শুষ্ক মৌসুমে ঝরনায় পানি কম থাকে। তবে এই সময় ঘুরতে গেলে অবশ্যই বাড়তি সতর্কতা মেনে চলতে হবে।
- প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম: গ্রুপ করে ভ্রমণ করুন এবং ঝিরিপথে হাঁটার সময় সতর্ক থাকুন। স্থানীয় বাসিন্দাদের মধ্যে কাউকে গাইড হিসেবে নেয়া যেতে পারে। সঙ্গে অতিরিক্ত পানি বা স্যালাইনের বোতলসহ শুকনো খাবারও রাখা যেতে পারে।
- সচেতনতা: প্রাকৃতিক পরিবেশে কোনো ময়লা ফেলা যাবে না। ঝরনার আশপাশে আবর্জনা না ফেলার বিষয়ে সর্বোচ্চ সচেতন থাকতে হবে।
কাছাকাছি অন্যান্য দর্শনীয় স্থান
যাদের সাহস তুলনামূলক বেশি তারা কমলদহ পার হয়ে যেতে পারেন ছাগলকান্দা ঝরনা পর্যন্ত। এ পারের সর্বশেষ ঝরনা ছাগলকান্দা। এর বাইরে কমলদহ ঝরনা ভ্রমণের সঙ্গে সীতাকুণ্ড ও মিরসরাইয়ের অন্যান্য দর্শনীয় স্থানও ঘুরে দেখা যায়। খৈয়াছড়া, নাপিত্তাছড়া ঝরনা, চন্দ্রনাথ পাহাড়, গুলিয়াখালী সমুদ্র সৈকতসহ সীতাকুণ্ড ইকোপার্কের সুপ্তধারা ও সহস্রধারা ঝরনাও ভ্রমণ তালিকায় যুক্ত করে নেয়া যেতে পারে। তবে এ সব কিছু নির্ভর করবে সময় ব্যবস্থাপনার ওপর। ঝরনার ট্রেইল দ্রুত শেষ করতে পারলে আশপাশের জায়গাগুলোও ঘুরে দেখার যথেষ্ট সময় পাওয়া যায়। তবে কেউ যদি কমলদহতেই সময় বেশি নিয়ে ফেলেন, সেক্ষেত্রে অন্যান্য জায়গাগুলো দেখার জন্য সময় তেমন একটা নাও পাওয়া যেতে পারে।
ঢাকা থেকে কমলদহ ঝরনায় ভ্রমণ অ্যাডভেঞ্চারপ্রেমীদের জন্য একটি অসাধারণ অভিজ্ঞতা হতে পারে। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের মাঝে একদিন কাটিয়ে প্রকৃতির শোভা উপভোগ করতে চাইলে কমলদহ ঝরনা ভ্রমণ একটি ভালো সিদ্ধান্ত হতে পারে।