জাপানের ফুকুই প্রদেশ ঐতিহ্য, উদ্ভাবন এবং প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের এক অনন্য মিশ্রণ। দর্শনীয় স্থান, ঐতিহ্যগত কারিগরি শিল্প, সুস্বাদু খাবার- সবকিছুই আছে এখানে। আর কেউ যদি হন একজন একজন চশমা প্রেমী তাহলে তার জন্য রয়েছে জাপানি চশমার আঁতুড়ঘর সাবায়ে। মূলত জাপানের এ অঞ্চলটি সবার জন্যই কিছু না কিছু অফার করে।
সাবায়ে- ঐতিহ্যের সঙ্গে প্রযুক্তির মেলবন্ধন ঘটে যেখানে
জাপানের ফুকুই প্রদেশের কেন্দ্রে অবস্থিত নিভৃত শহর সাবায়ে। সাবায়ে মূলত বিখ্যাত চশমার জন্য। এটি জাপানের চশমা রাজধানী। শত বছরেরও বেশি সময় ধরে এই ছোট্ট শহরটি পৃথিবীর সেরা চশমাগুলো তৈরি করে আসছে। এসব চশমায় প্রাচীন কারিগরি কৌশলের সঙ্গে মেলবন্ধন ঘটেছে আধুনিক প্রযুক্তির।
শতবর্ষী ঐতিহ্য
সাবায়ের এই যাত্রা শুরু হয়েছিল ১৯০৫ সালে। তখন সাবায়ের স্থানীয় কর্মকর্তারা দক্ষ কারিগরদের আমন্ত্রণ জানান তাদের কারুশিল্প ভাগ করে নেয়ার জন্য। বর্তমানে এই শহরে ১০০টিরও বেশি কোম্পানি রয়েছে যারা সম্মিলিতভাবে উচ্চমানের চশমা তৈরি করে। যদিও আধুনিক যন্ত্রপাতি উৎপাদন প্রক্রিয়ায় একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে, তবুও চশমা বানানোর ক্ষেত্রে মানবিক স্পর্শ এখনো অপরিহার্য।
ফ্রেম ডিজাইনের শিল্প
চশমা তৈরির প্রক্রিয়াটি বেশ জটিল। প্রায়ই প্রাথমিক ডিজাইন থেকে চূড়ান্ত পণ্য তৈরি করতে এক বছরেরও বেশি সময় লাগে। মূলত প্রাচীন জাপানি স্থাপত্য ও প্রাকৃতিক উপাদান থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে নকশা করা হয় চশমার ফ্রেমের। সেই সঙ্গে আবার ব্যবহার করা হয় কার্বন ফাইবারের মতো উদ্ভাবনী উপকরণও।
চশমা সংস্কৃতির গভীরে যাত্রা
সাবায়ের চশমা ঐতিহ্য সত্যিকারভাবে উপলব্ধি করতে হলে মেগানে মিউজিয়াম (চশমা জাদুঘর) পরিদর্শন করা অত্যাবশ্যক। এই চমৎকার জাদুঘরটি প্রাচীনকাল থেকে আধুনিক উদ্ভাবন পর্যন্ত চশমার বিবর্তনকে তুলে ধরে। দর্শকরা নিজেদের ফ্রেম তৈরি করার কর্মশালায় অংশ নিতে পারেন, যা একটি অনন্য স্মারক হিসেবে রাখা যায়।
সাবায়ের মেগানে মিউজিয়াম (চশমা জাদুঘর), , চশমা তৈরি প্রক্রিয়ার অসংখ্য ধাপকে তুলে ধরে এবং চশমা নির্মাণের শিল্পের প্রতি উৎসর্গীকৃত বিভিন্ন ইভেন্টের আয়োজন করে। এখানে বস্টন ক্লাবসহ অন্যান্য ব্র্যান্ডকে তাদের ডিজাইন প্রদর্শনের জন্য প্রায়ই পপ-আপ শপে আমন্ত্রণ জানানো হয়।
জাদুঘরটি তাদের জন্য কর্মশালার আয়োজন করে যারা নিজেদের ফ্রেম তৈরি করতে চায়। তবে সেজন্য দর্শকদের আগাম বুকিং করতে হয়। হাতে কম সময় থাকা দর্শার্থঅরাও অনসাইট শপ পরিদর্শন করতে পারেন। সেখানে প্রায় ৫০টি ভিন্ন ফুকুই প্রিফেকচারের নির্মাতাদের তৈরি হাজার হাজার ফ্রেম রয়েছে।
বহুমাত্রিক ফুকুই প্রদেশ
সম্প্রতি হোকুরিকু শিনকানসেন লাইনের সম্প্রসারণের ফলে ফুকুই প্রদেশ আগের চেয়ে আরো সহজলভ্য হয়ে উঠেছে। এই অঞ্চলটি প্রাকৃতিক সৌন্দর্য থেকে শুরু করে সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের এক বৈচিত্র্যময় অভিজ্ঞতা প্রদান করে।
ডাইনোসর প্রেমীদের স্বর্গ
ফুকুই প্রদেশের ডাইনোসর মিউজিয়ামে এশিয়ার বৃহত্তম ডাইনোসর সংগ্রহ রয়েছে, যেখানে বিরল ফসিল এবং সম্পূর্ণ কঙ্কালও দেখা যায়।
চেরি ফুলের মোহনীয়তা
বসন্তকালে আসুওয়া নদী চেরি ফুলের করিডোরে রূপান্তরিত হয়, যা দূরদূরান্ত থেকে দর্শকদের আকর্ষণ করে।
ঐতিহাসিক স্থান ও মন্দির
ভালভাবে সংরক্ষিত মারুওকা ক্যাসল এবং প্রশান্ত এহেইজি মন্দির। মন্দির দুটি এই অঞ্চলের দুটি আইকনিক স্থান।
সমুদ্রতীরের সৌন্দর্য
তোজিনবো-এর খাড়া পাথুরে ক্লিফ এবং মনোরম মিকাতা গোকো হ্রদ প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের মনোমুগ্ধকর দৃশ্য প্রদান করে জাপানের ফুকুই।
সামুদ্রিক খাবারের স্বর্গ
এই অঞ্চলে ভ্রমণে গেলে অবশ্যই চেখে দেখতে হবে বিখ্যাত এচিজেন কাঁকড়া।মিষ্টি ও রসালো মাংসের জন্য প্রশংসিত এই এচিজেন পৃথিবীব্যাপী পর্যটকদের মনযোগ আকর্ষণ করেছে।
ঐতিহ্য, ইতিহা, প্রাকৃতিক বৈচিত্র্য ও প্রযুক্তির অসাধারণ মেলবন্ধন ঘটে জাপানের ফুকুই প্রদেশে। অঞ্চলটিতে সব ধরনের মানুষের জন্যই রয়েছে ভ্রমণ উপভোগের সর্বোচ্চ সুযোগ।