বাংলাদেশের পর্যটনে ব্র্যান্ড স্পট কক্সবাজার

ভুটান, নেপাল, থাইল্যান্ডসহ বিশ্বের বেশকিছু দেশের জাতীয় আয়ের প্রধান উৎস পর্যটন খাত। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে কক্সবাজার এমন একটি জেলা, যেখানে পর্যটনই স্থানীয় অর্থনীতির প্রধান স্তম্ভ। দেশের প্রধান পর্যটন ব্র্যান্ড স্পট কক্সবাজার। এখানকার মানুষের অর্থনৈতিক পরিমণ্ডলও পর্যটনকে ঘিরে। সবচেয়ে দীর্ঘ সমুদ্রসৈকতের কারণে বাংলাদেশসহ বিশ্বব্যাপী


ভুটান, নেপাল, থাইল্যান্ডসহ বিশ্বের বেশকিছু দেশের জাতীয় আয়ের প্রধান উৎস পর্যটন খাত। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে কক্সবাজার এমন একটি জেলা, যেখানে পর্যটনই স্থানীয় অর্থনীতির প্রধান স্তম্ভ। দেশের প্রধান পর্যটন ব্র্যান্ড স্পট কক্সবাজার। এখানকার মানুষের অর্থনৈতিক পরিমণ্ডলও পর্যটনকে ঘিরে। সবচেয়ে দীর্ঘ সমুদ্রসৈকতের কারণে বাংলাদেশসহ বিশ্বব্যাপী কক্সাবাজার পর্যটকদের জন্য আকর্ষণীয়।

কক্সবাজার জেলায় প্রতিদিন অন্তত ১৫-২০ হাজার পর্যটক ভ্রমণ করে। সাপ্তাহিক ছুটির দিনগুলোয় সেটি আরো বাড়ে। আর জাতীয় উৎসবকেন্দ্রিক ছুটিতে কক্সবাজারে পর্যটকদের রাখাই দায় হয়ে পড়ে স্থানীয় হোটেল-মোটেলগুলোর। সাম্প্রতিক সময়ে বেশ কয়েকটি জাতীয় উৎসবে কক্সবাজারে পর্যটকরা হোটেল না পেয়ে সড়কে অবস্থান করার নজিরও গড়েছে।


বিশ্বের দীর্ঘতম ১২০ কিলোমিটার সৈকতকে বুকে ধরে বিশ্ববাসীকে সম্মোহনের জালে আহ্বান করেই যাচ্ছে কক্সবাজার। সৈকতের টানে দেশ পেরিয়ে বিদেশের বিপুল পর্যটক ছুটে আসে কক্সবাজারে। নান্দনিক সৌন্দর্যের প্রবাল দ্বীপ সেন্ট মার্টিন ভ্রমণপিয়াসী মানুষকে বারবার নিয়ে আসে কক্সবাজারে। কক্সবাজার জেলায় ১০ লাখের বেশি রোহিঙ্গা শরণার্থীর অবস্থান। চার-পাঁচ হাজার বিদেশী নিয়মিত কক্সবাজারে অবস্থান করেন, যা পর্যটন নগরী হিসেবে কক্সবাজারকে বিশ্বজুড়ে বিদেশী পর্যটকবান্ধবের তকমা পরিয়েছে। কয়েক বছর আগে নির্মিত মেরিন ড্রাইভ সড়ক, হিমছড়ি, ইনানী সমুদ্রসৈকত, টেকনাফসহ বিভিন্ন পর্যটন স্পট কক্সবাজারকে সারা দেশের মধ্যে সবচেয়ে আকর্ষণীয় করে তুলেছে। এছাড়া টেকনাফ, উখিয়া, কক্সবাজার সদর এলাকার বেশ কয়েকটি বিস্তীর্ণ সংরক্ষিত বনাঞ্চল পর্যটক আকর্ষণে ভিন্ন মাত্রা যোগ করেছে।

পর্যটন স্পট হিসেবে কক্সবাজারে এমনিতে রয়েছে বিমানবন্দর। কয়েক বছর ধরে চট্টগ্রাম থেকে সরাসরি কক্সবাজার ভ্রমণের সুযোগ, কক্সবাজার বিমানবন্দর থাকলেও এটিকে সম্প্রসারণ প্রকল্প, রেলপথে ঢাকার সঙ্গে রেলপথে কক্সবাজারের যোগাযোগে প্রকল্প বাস্তবায়ন, ঢাকা-চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের উন্নয়ন, চট্টগ্রাম থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত মেরিন ড্রাইভ সড়ক নির্মাণের পরিকল্পনা, কক্সবাজার-টেকনাফ সড়ক সম্প্রসারণ প্রকল্প, টেকনাফকে পর্যটনমুখী করার পরিকল্পনা সামগ্রিকভাবে কক্সবাজারের পর্যটন শিল্পকে কয়েক গুণ বাড়িয়ে দেবে। এছাড়া কক্সবাজার থেকে সরাসরি সেন্ট মার্টিন যাওয়ার সুযোগ থাকায় পর্যটকদের ঢল বেড়েছে জেলায়।

সংশ্লিষ্ট সূত্রের তথ্যে জানা গিয়েছে, সরকারের বাস্তবায়নাধীন প্রকল্পের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে মহেশখালীর মাতারবাড়ী তাপভিত্তিক কয়লাবিদ্যুৎকেন্দ্র প্রকল্প। এছাড়া মাতারবাড়ীতে ৭০০ মেগাওয়াড আল্ট্রা সুপার ক্রিটিক্যাল কোল ফায়ার্ড নামে আরো একটি নতুন বিদ্যুৎ প্রকল্প বাস্তবায়ন হচ্ছে। কক্সবাজার বিমানবন্দরকে করা হচ্ছে এশিয়ার বৃহত্তম রানওয়ে, যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উদ্বোধন করেছেন। কক্সবাজার থেকে দ্রুত সময়ের মধ্যে পার্বত্য বান্দরবান ভ্রমণের সুযোগ, সেন্ট মার্টিনে যাওয়ার অন্যতম রুট অঞ্চলের পর্যটনকে সারা দেশের মধ্যে ঈর্ষণীয় পর্যায়ে নিয়ে গিয়েছে। ধীরে হলেও ব্যক্তি উদ্যোগে গড়ে উঠেছে নানামুখী পর্যটনবান্ধব অবকাঠামো। সাম্প্রতিক সময়ে সরকারিভাবে কক্সবাজারের পর্যটন সম্ভাবনাকে বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে দিতে নেয়া হয়েছে টেকসই উন্নয়ন পরিকল্পনা। গঠন করা হয়েছে কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ। পরিকল্পিতভাবে কক্সবাজারের অবকাঠামো উন্নয়ন পর্যটন সম্ভাবনাকে কাজে লাগানো গেলে স্থানীয় মানুষের কর্মসংস্থান ছাড়াও দেশের অর্থনীতিতে কক্সবাজারের পর্যটন বড় অবদান রাখতে সক্ষম হবে।

এদিকে কক্সবাজারের পর্যটনকে সমৃদ্ধ করতে টেকনাফে চলমান রয়েছে সাবরাং অর্থনৈতিক জোন। তার কাজও চলছে ধীরে ধীরে। এছাড়া টেকনাফ হ্নীলা মৌজার জালিয়ার দ্বীপে ২৭১ একর জমিতে স্থাপিত হচ্ছে জালিয়ার দ্বীপ অর্থনৈতিক জোন। সেই কাজও চলমান রয়েছে। তবে উন্নয়নের মাত্রা হিসেবে যোগ হয়েছে সেনাবাহিনীর বাস্তবায়নে স্বপ্নের টেকনাফ-কক্সবাজার মেরিন ড্রাইভ সড়ক। অগ্রাধিকার ভিত্তিতে এগিয়ে চলছে কক্সবাজার বিমানবন্দরকে আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে উন্নীতকরণের কাজ। সেই কাজও প্রায় শেষের দিকে। দোহাজারী-ঘুমধুম রেললাইন প্রকল্পও শেষের দিকে, যার সুফল পাওয়া যাবে ২০২৩ সালের ডিসেম্বরে।

এত উন্নয়নের পরও বরাবরই অভিযোগ থেকে যাচ্ছে, যে সমুদ্রসৈকত কক্সবাজারকে বিশ্বপ্রান্তরে মর্যাদা ছড়িয়ে দিয়েছে, সেই সৈকতের প্রত্যাশিত কোনো উন্নয়ন এখন পর্যন্ত হয়নি। দীর্ঘদিন ধরে অভিযোগ করে আসছেন কক্সবাজারের পর্যটন-সংশ্লিষ্টরা। পর্যটনকে কেন্দ্র করে কক্সবাজারে বেসরকারি পর্যায়ে রয়েছে ব্যবসায়ীদের অ্যাসোসিয়েশন। সংগঠনটি পর্যটকবান্ধব সেবা প্রদানসহ পর্যটক আকর্ষণে নানামুখী প্রচেষ্টা চালালেও সেটি পর্যাপ্ত নয়। কক্সবাজারের মূল একাধিক সমুদ্রসৈকত পয়েন্টকে ঘিরে বিনোদন সমুদ্রকে কেন্দ্র করে পর্যটক আকর্ষণের কোনো ব্যবস্থা না থাকায় সুযোগ থাকা সত্ত্বেও পর্যটক সমাগম কাঙ্ক্ষিত করা যায়নি। বিশুদ্ধ পানির জন্য ভূগর্ভস্থ নির্ভরশীলতার কারণে স্থানীয় এলাকার মানুষের স্বাভাবিক কৃষিসহ নানামুখী কর্মকাণ্ড ব্যাহত হচ্ছে। একটি বৃহৎ নগরী দেশের প্রধানতম পর্যটন নগরী হিসেবে সুপেয় পানির আধুনিক সরবরাহ ব্যবস্থাপনা না থাকায় শিল্পের সম্প্রসারণে বাধা সৃষ্টি করছে।

সাবরাং ট্যুরিস্ট জোনে বিনিয়োগ হচ্ছে হাজার ৮৭৬ কোটি টাকা কক্সবাজারকে ঘিরে অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি পর্যটনকে আরো বেশি এগিয়ে নিতে টেকনাফের সাবরাং পর্যটন অঞ্চলের কাজ চলছে পুরোদমে। এরই মধ্যে মাটি ভরাটের প্রথম ধাপের কাজ শেষ হয়েছে আর প্রকল্প এলাকার সার্বিক অগ্রগতি হয়েছে ৫০ শতাংশের বেশি। এখন পর্যন্ত ১৮টি দেশী-বিদেশী কোম্পানি সাবরাংয়ে বিনিয়োগের অনুমোদন পেয়েছে। বাস্তবায়নকারী সংস্থাগুলো আগামী বছরের শুরুর দিকে বিনিয়োগকারীরা স্থাপনা নির্মাণের কাজ শুরু করতে পারবে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ (বেজা)

আরও