শহরের কর্মব্যস্ত জীবনে একমাত্র শান্তির জায়গা নীড়। সারাদিনের ক্লান্তি শেষে বাড়ি ফিরে তাই চাই কিছুটা সজীবতা। ঘরের সজীবতা ধরে রাখতে অনেকেই ঘরের আনাচে কানাচে রাখেন নানা জাতের গাছ। তবে যেহেতু শহরের বাড়ি ঘরে আলোর অপ্রতুলতা অনেকটাই স্বাভাবিক ব্যাপার, ঘর সাজাতে গাছ নির্বাচন এবং স্থান নির্ধারণ খুবই গুরুত্বপূর্ণ। চলুন জেনে নিই ঘর সাজাতে ইনডোর প্ল্যান্টের খুঁটিনাটি।
ইনডোর প্ল্যান্টের সুবিধা
গাছের বেড়ে ওঠার জন্য সঠিক পরিমাণের আলো বাতাস প্রয়োজন, কিন্তু ইনডোর প্ল্যান্ট খুব বেশি আলো বাতাস ও যত্ন ছাড়াই ঘরের মধ্যেই বেঁচে থাকতে পারে। এছাড়াও ইনডোর প্ল্যান্টের রয়েছে আরো অনেক গুণ-
১. মানসিক চাপ কমায়
কাজের চাপ, পড়ালেখা, নিত্যনতুন ঝামেলা ইত্যাদি, যা থেকে কিছুটা হলেও মুক্তি দেয় ইনডোর প্ল্যান্ট। সাধারণত গাছপালা মানুষকে প্রশান্তি দেয় ও মনের চাপ কমায়। তাই সে গাছ যদি থাকে আপনার ঘরেই তাহলে দিন শেষে বাড়ি ফিরে কিছুটা প্রশান্তি উপভোগ করা যাবে৷ তাছাড়া গাছপালা উচ্চ রক্তচাপ কমাতেও সাহায্য করে৷
২. বাতাসকে বিশুদ্ধ করে
গবেষণায় দেখা গেছে, ইনডোর প্ল্যান্ট পরিবেশের ক্ষতিকর পদার্থ কার্বন মনোক্সাইড, ফর্মালডিহাইড, অ্যামোনিয়া, কার্বন ডাই অক্সাইডসহ আরো অনেক কিছু দূর করতে সাহায্য করে। এ পদার্থগুলো মূলত আমাদের স্বাস্থ্য ও পরিবেশ দুটোর জন্যই ক্ষতিকর। ইনডোর প্ল্যান্ট ঘরের অক্সিজেনকে বিশুদ্ধ করে৷
৩. সাশ্রয়ী
এলোভেরা, পুদিনা পাতা, তুলসী পাতা ইত্যাদির মতো কিছু ইনডোর গাছ ঘরে থাকলে খুব সহজেই ঘরোয়া পদ্ধতিতে রূপচর্চা করা যায়। তাছাড়া ইনডোর প্ল্যান্ট বেশ সাশ্রয়ীও।
ঘরের সাজে ইনডোর প্ল্যান্ট
গাছকে সযত্নে রাখার প্রথম মন্ত্র হলো গাছের নিয়মিত পরিচর্যা এবং সঠিক স্থান নির্ধারণ। সঠিক তাপমাত্রা, আর্দ্রতা এবং পানি দেয়ার ওপর গাছের বেড়ে ওঠা নির্ভর করে। ইনডোর প্ল্যান্ট বিভিন্ন আকার, আকৃতি, রঙ কিংবা টেকশচারের হতে পারে, যা আপনার ঘরের কম্বিনেশন বা স্টাইল অনুযায়ী আপনি বেছে নিতে পারেন। তবে এক্ষেত্রে মাথায় রাখুন কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয়-
১. ঘরের আলোর অবস্থান
ঘরে নতুন কোনো গাছ নিয়ে আসার আগে ঘরের আলোর অবস্থান সম্পর্কে বোঝা খুবই জরুরি। ঘরের ইনডোর প্ল্যান্টের জন্য আলো কম লাগলেও আলো অবশ্যই প্রয়োজন। আর আপনার ঘরে যদি পর্যাপ্ত পরিমাণে আলোর ব্যবস্থা না থাকে তবে সেক্ষেত্রে ‘গ্রো প্ল্যান্ট লাইট’ আপনার জন্য খুবই কার্যকরী। এ লাইটগুলো গাছকে সূর্যের মতো আলো দিয়ে থাকে এবং গাছগুলোকে সুন্দরভাবে বেড়ে উঠতে সাহায্য করে।
২.নকশা এবং রঙের ব্যবহারে সৃজনশীলতা
গাছ দিয়ে ঘর সাজানোর মাধ্যমে ঘরে নিয়ে আসে ভ্যারিয়েশন বা নতুনত্ব। বিভিন্ন ধরনের আকার ও আকৃতির গাছ আকর্ষণীয় এবং সুন্দর টবে সাজানো যেতে পারে। ঝোপালো গাছের সঙ্গে সুন্দর পাতার গাছ আপনার ঘরের কর্নারে নিয়ে আসতে পারে নান্দনিক সৌন্দর্য। বাহারি টব কিংবা ঝুলন্ত টবের মধ্যে দিয়েও আপনি ঘরে নিয়ে আসতে পারেন নতুনত্ব। রঙিন টব কিংবা জ্যামিতিক নকশার টব স্যাকুলেন্ট প্রকৃতির গাছের সঙ্গে খুব সুন্দর মানিয়ে যায়। রঙ এবং টেকশচার নিয়ে কাজ করা খুবই আনন্দদায়ক, টবে এক্ষেত্রে ফুলদানীগুলোর মাঝে সমন্বয়ও খুবই জরুরি।
৩. ঝুলন্ত টবের ব্যবহার
আপনার ঘরের স্পেসটি যদি ছোট হয়ে থাকে টবে ঝুলন্ত গাছ এবং ঝুলন্ত শেল্ফ আপনার জন্যই। জায়গার ব্যবহার কম হওয়াতে এগুলো ছোট বাসার জন্যও উপযোগী এবং গাছের টব বা প্ল্যান্টার ঘরের ইন্টেরিয়রকে করে তোলে আরো আকর্ষণীয়। এছাড়া হাতে বোনা ম্যাক্রেমে বা বাঁশের তৈরি প্ল্যান্টার আপনার ঘরে নিয়ে আসতে পারে গ্রামীণ আবহ। তবে ঝুলন্ত টবের ক্ষেত্রে খেয়াল রাখুন যাতে তা শক্ত করে বাঁধা থাকে। নাহলে ঘটতে পারে দুর্ঘটনা।
৪. টব নির্বাচন
ইনডোর প্ল্যান্টের টব হিসেবে সাধারণত সিরামিক বা মাটির টবই ব্যবহৃত হয়। তবে যেহেতু ঘরের নানা পজিশনে টব রাখা হবে, তাই ঘরে শিশু থেকে থাকলে টব নির্বাচন এবং স্থান নির্ধারণে আরেকটু সচেতন হওয়া প্রয়োজন। এক্ষেত্রে সিরামিক বা মাটির পরিবর্তে প্লাস্টিকের বাহারি রঙের টব ব্যবহার করতে পারেন।
৫. পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা
ঘরের সাজসজ্জা যেমনই হোক না কেন, ঘরের পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতাই প্রথম প্রায়োরিটি হওয়া উচিত। ইনডোর প্ল্যান্ট ঘরে বেশি থাকলে সেগুলো প্রতিনিয়ত পরিস্কার রাখা ও যত্ন নেয়ার ব্যাপারে সচেতন থাকুক। তা নাহলে ধুলো জমে ঘর নান্দনিকতা হারিয়ে গাছের জঞ্জালে পরিণত হবে।