বোহেমিয়ান অন্দরমহল

আধুনিক সাজসজ্জার অন্যতম স্বতন্ত্র একটি ধারার নাম বোহেমিয়ান ধারা। সংক্ষেপে যা বোহো থিম হিসেবে পরিচিত। তরুণদের পোশাক, অনুষঙ্গ থেকে শুরু করে অন্দরমহলেও দিনদিন জনপ্রিয় হয়ে উঠছে বোহো থিম।

অন্দরের সজ্জা হিসেবে বোহেমিয়ান শৈলী কল্পনাপ্রসূত, আউট অব দ্য বক্স ও ফ্রি হুইলিং ডিজাইন ব্যবহার করে আধুনিক ধারণাকে অস্বীকার করে। মূলত যারা একটু অপ্রথাগত জীবনযাপন করতে পছন্দ করেন তারাই বোহো থিমে বেশি আকৃষ্ট হন।

বহুমাত্রিক উপাদান

বোহেমিয়ান শৈলীর অন্দরসজ্জার মধ্যে নানা রঙের মিশ্রণ, বিভিন্ন সাংস্কৃতিক উপাদানের সমন্বয় এবং পরিবেশবান্ধব উপকরণের ব্যবহার গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে।

রঙের মিশ্রণ

বোহো থিমে অন্দর সাজাতে হলে সর্বপ্রথম মাথায় রাখতে হয় রঙের বিষয়টি। বোহেমিয়ান অন্দরে বরাবরেই উজ্জ্বল রঙ প্রাধান্য পায়। তবে রঙগুলো এক্ষেত্রে কখনোই প্রথাগতভাবে সাজানো হয় না। বরং প্রতিটি রঙের নিজস্ব স্বাতন্ত্র্য বজায় রেখে একটি প্রাণবন্ত এবং আধুনিক পরিবেশ তৈরি করা হয়। একে অপরের বিপরীত রং এবং শেডের ব্যবহার ঘরের অভ্যন্তরীণ পরিবেশকে প্রাণবন্ত করে তোলা হয়।

সাংস্কৃতিক মিশ্রণ

বোহো থিমের দ্বিতীয় গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, এতে বিভিন্ন সাংস্কৃতিক উপাদানের মিশ্রণ থাকে। বোহো শৈলীতে আফ্রিকা, মেক্সিকান বা দক্ষিণ-পূর্ব এশীয় নকশার ব্যবহার বেশি প্রচলিত। চাইলে বাঙালিয়ানা উপাদান দিয়েও বোহো থিমে অন্দরের সজ্জা সম্ভব।

বোহো থিমের এ বৈচিত্র্যময়তা এটিকে এক ধরনের অনন্যতা প্রদান করে, যা প্রতিটি ব্যক্তির স্বতন্ত্রকে তুলে ধরে।

আসবাব

বোহোতে ব্যবহৃত আসবাব সাধারণত পুনঃব্যবহারযোগ্য বা পরিবেশবান্ধব উপকরণ থেকে তৈরি হয়। কাঠের আসবাব, বেতের চেয়ার এবং হ্যান্ড মেইড ফার্নিচার বোহো থিমের অবিচ্ছেদ্য অংশ হিসেবে বিবেচিত হয়।

টেক্সটাইল ও কাপড়ের ব্যবহার

বোহো থিমের গৃহসজ্জার মধ্যে বিভিন্ন টেক্সটাইল ও কাপড়ের ব্যবহার অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ভিন্ন ভিন্ন প্রিন্ট, হ্যান্ডওয়েভেন কুশন, কোরশিভাল কুশন এবং বিছানার চাদর ইত্যাদি বোহো থিমে বেশি গুরুত্ব পায়। বোহো থিমে সাধারণত বিছানা মেঝেতে রাখা হয়। মেঝেতে কম্বো বা কোটন ম্যাট্রেস এবং নানা ধরনের কুশন দিয়ে সাজানো থাকে। উলের বা তুলার গালিচা এবং প্রাচীন গালিচা ইত্যাদি ঘরের উষ্ণতা এবং আরামের মাত্রা বৃদ্ধি করে।

প্রাকৃতিক উপাদানের ব্যবহার

প্রাকৃতিক উপাদানের ব্যবহার বোহো থিমের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ দিক। আসবাব এবং সাজসজ্জার মধ্যে বিভিন্ন ধরনের নকশা ও কারুকার্য এখানে প্রাধান্য পায়। এতে হ্যান্ডক্রাফটেড আইটেম, কুটির শিল্প এবং ঐতিহ্যবাহী নকশার অন্তর্ভুক্তি থাকে, যা ঘরের পরিবেশকে আরো বেশি ব্যক্তিগত এবং এক্সক্লুসিভ করে তোলে।

গাছের ব্যবহার

বোহো থিমের অন্দর সজ্জার প্রায় সবটা জুড়েই থাকে নানান আকারের ও প্রজাতির ইনডোর প্লান্ট। এসব গাছ ঘরে একটি প্রাকৃতিক আবহ তৈরিতে সহায়তা করে।

নরম আলো

বোহো সজ্জার প্রাণবন্ততার সঙ্গে নরম আলোর যোগাযোগ খুবই গবীর। নিয়মিত আলোর পরিবর্তে স্ট্রিং লাইট, লণ্ঠন বা এমনকি সুগন্ধযুক্ত মোমবাতির মতো অপ্রচলিতগু আলোগুলোই এই শৈলীতে প্রাধান্য পায়।

কোন স্থানে কেমন বোহো সজ্জা হতে পারে-

বোহো থিম সম্পর্কে প্রাথমিক জানাশোনার পর যে কেউই চাইলে নিজের ঘরটিকে এই থিমে সাজিয়ে নিতে পারে। কোথায়, কীভাবে এই নান্দনিকতার ছোঁয়া থাকতে পারে তার সম্ভাব্যতা নিয়ে রইল পরবর্তী আলোচনা-

বসার ঘর

বসার ঘরে বোহেমিয়ান স্পর্শ যোগ করতে বিভিন্ন রঙ এবং প্যাটার্নের বিভিন্ন কুশনের সঙ্গে যুক্ত একটি উজ্জ্বল রঙের খাট রাখতে পারেন। কম উচ্চতার সেন্ট্রাল ও সাইড টেবিল যোগ করতে পারেন। সেগুলোকে বই, পাত্রযুক্ত গাছপালা এবং অন্যান্য ছোট শোপিসের মিশ্রণ দিয়ে সাজিয়ে নিতে পারলে ঘরে একটি নান্দনিক আভাস ফুটে উঠবে। ঘরের দেয়ালের জন্য এমব্রয়ডারি করা ট্যাপেস্ট্রি ব্যবহার করতে পারেন। কিংবা দেয়ালে রাখতে পারেন কয়েকটি অ্যাবস্ট্রাক্ট আর্ট।

শোবার ঘর

বোহো শৈলীতে সাজাতে চাইলে শোবার ঘরে খাটের পরিবর্তে কেবল ম্যাট্রেস ব্যবহার করতে পারেন। খাট ব্যবহার করতে চাইলে, কম উচ্চতার খাট ব্যবহার করুন। এর সঙ্গে মানানসই বহুমাত্রিক টেক্সচারের বেশ কয়েকটি কুশন রাখুন। হালকা রঙের ড্রেপস বা পাতলা উপাদান দিয়ে তৈরি পর্দা ব্যবহার করুন যা পর্যাপ্ত পরিমাণে প্রাকৃতিক আলো প্রবেশ করতে দেয়। ঘরে ব্যবহার করুন নরম আলো।

খাবার ঘর

খাবার টেবিলের ক্ষেত্রে প্রথাগত চারকোণা শেইপের টেবিল চেয়ারের পরিবর্তে অন্য কোনো শেইপের ডাইনিং টেবিল রাখতে পারেন। টেবিলের জন্য রঙিন স্প্রেড এবং ম্যাট ব্যবহার করুন। আলোর জন্য ব্যবহার করতে পারেন নান্দনিক টেবিল ল্যাম্প। ঘরের সঙ্গে মিলিয়ে ডিনারওয়্যার এবং ক্রোকারিজ ব্যবহার করুন।

রান্নাঘর

চাইলে কিন্তু রান্নাঘরেও বোহো থিম ইনস্টল করা সম্ভব। ভিনটেজ কাটলারি এবং কাচের পাত্র দিয়ে ক্যাবিনেটগুলো সাজিয়ে নিলেই একটা বোহো লুক চলে আসবে। সেই সঙ্গে টেক্সটাইল-থিমযুক্ত তোয়ালে এবং ওভেন মিটগুলো ব্যবহার করতে পারেন। মশলা রাখার জন্য ব্যবহার করুন মাটির বা কাঠের উজ্জ্বল রঙের পাত্র।

আরও